পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
প্রতিদিনই যেন ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যায় রেকর্ড হচ্ছে। আর সারাদেশে বাড়ছে ডেঙ্গুর ভয়াবহতা। ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। এই বৃদ্ধির সংখ্যা জ্যামিতিক বৃদ্ধির হারকেও হার মানিয়েছে। সরকারি ও বেসরকারি মিলিয়ে প্রতি ঘণ্টায় হাসপাতালগুলোতে একশর বেশি ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হচ্ছেন বলে মনে করা হচ্ছে। স্বাস্থ্য অধিদফতরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন্স সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের ডা. আয়শা আক্তারের তথ্য অনুাযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় (মঙ্গলবার সকাল আটটা থেকে বুধবার সকাল আটটা) সারাদেশে ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছেন দুই হাজার ৪২৮ জন। আর চলতি মাসের প্রথম সাত দিনেই (৭ আগস্ট পর্যন্ত) পূর্ববর্তী মাস জুলাইয়ের প্রায় সমান ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। গত জুলাই মাসে যেখানে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ছিলে ১৬ হাজার ২৫৩ জন, সেখানে আগস্টের প্রথম সাত দিনেই সারাদেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন ১৫ হাজার ৮৭৯ জন। যদিও স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক প্রফেসর ডা. আবুল কালাম আজাদ বলেন, গত কয়েকদিন যাবত রাজধানীসহ সারাদেশে ডেঙ্গু প্রতিরোধে একাধিক মন্ত্রণালয় ও অধিদফতরসহ সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ডেঙ্গু প্রতিরোধে গৃহীত বিভিন্ন জনসচেতনতামূলক কার্যক্রম গ্রহণের ফলে খুব শিগগিরই ডেঙ্গু পরিস্থিতির উন্নতি ঘটবে। তিনি বলেন, অতিরিক্ত গরম আবহাওয়া ও অতিবৃষ্টিতে ডেঙ্গু মশার প্রজনন কমে। গত কয়েকদিন যাবত যে গরম আবহাওয়া বিরাজ করছে তা অব্যাহত থাকলে ডেঙ্গুর প্রকোপ কমে যাবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন ডা. আবুল কালাম আজাদ।
সরকারি হিসাব বলছে, ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয়ে চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত মোট মৃত্যু হয়েছে ২৩ জনের। এরমধ্যে গত এপ্রিলে ২ জন, জুনে তিন জন, জুলাইতে ১৫ জন এবং আগস্টে তিন জন মারা গেছেন। যদিও বিভিন্ন পত্রিকার হিসেবে এই সংখ্যা প্রায় ৭০ জন। গতকালও দেশের বিভিন্ন স্থানে ৩ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। যদিও এই হিসেব স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যে নেই।
চলতি বছরের শুরু থেকে এ পর্যন্ত ডেঙ্গুতে মোট আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ৩২ হাজার ৩৪০ জন, আর হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফিরেছেন ২৩ হাজার ৬১০ জন।
রাজধানী ঢাকা বিভিন্ন সরকারি, বেসরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত ৪০টি হাসপাতালে বর্তমানে ভর্তি থাকা রোগীর সংখ্যা আট হাজার ৭০৭ জন। আর ঢাকা শহর ছাড়া সারাদেশে ভর্তি থাকা রোগীর সংখ্যা তিন হাজার ৩১৮ জন।
এদিকে ডেঙ্গুর ভুক্তভোগী শুধু বড়রাই নয়; নিষ্পাপ শিশুদেরও এর মাশুল গুনতে হচ্ছে। জন্মের ২/১ পরই ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন শিশু এমন খবরও আছে। রাজধানীর ঢাকা শিশু হাসপাতালে প্রতিদিন গড়ে ৪০ থেকে ৫০ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত শিশু ভর্তি হচ্ছে বলে জানিয়েছেন হাসপাতালের পরিচালক প্রফেসর সৈয়দ সফি আহমেদ। গতকাল বুধবার পর্যন্ত এই হাসপাতালে ১৬৪ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত শিশু ভর্তি রয়েছে। এদের মধ্যে ২৫ জনের অবস্থা গুরুতর। এখন পর্যন্ত ৬৫৩ জনকে ডেঙ্গুর চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে বলে তিনি নিশ্চিত করেছেন।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের হিসাবে দেখা যায়, গত ২৪ ঘণ্টায় আক্রান্ত হওয়া মোট রোগীর মধ্যে ঢাকা শহরের ১১টি সরকারি-স্বায়ত্তশাসিত ও ২৯টি বেসরকারি হাসপাতালে মোট ভর্তি হয়েছেন এক হাজার ২৭৫ এবং ঢাকা শহর ছাড়া মোট আট বিভাগে ভর্তি হয়েছেন এক হাজার ১৫৩ জন। ঢাকার ২৯টি বেসরকারি হাপসাতাল ভর্তি হয়েছেন ৪৩০ জন, আর বর্তমানে এসব হাসপাতালগুলোতে ভর্তি আছেন দুই হাজার ১০৩ জন, চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফিরেছেন আট হাজার ৮০৯ জন।
এদিকে, সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত হাপসাতালগুলোর মধ্যে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে গত ২৪ ঘণ্টায় ভর্তি হয়েছেন ১৬২ জন, বর্তমানে ভর্তি আছেন ৭২১ জন, মিটফোর্ড হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ১৩৮ জন আর বর্তমানে ভর্তি আছেন ৪৮৫ জন। ঢাকা শিশু হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ৪৪ জন, বর্তমানে ভর্তি আছে ১৬৮ জন। শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৯৭ জন, বর্তমানে ভর্তি আছেন ৪১৭ জন। বারডেম হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ২৫ জন আর বর্তমানে ভর্তি আছেন ৭০ জন।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) ভর্তি হয়েছেন ৩৫ জন আর বর্তমানে ভর্তি আছেন ১৩৬ জন। পুলিশ হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৪২ জন আর বর্তমানে ভর্তি আছেন ১৫৯ জন। মুগদা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ১৩৯ আর বর্তমানে ভর্তি আছেন ৪৭৯ জন। বিজিবি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৮ জন আর বর্তমানে ভর্তি আছেন ২৪ জন।
সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৪৫ জন আর বর্তমানে ভর্তি আছেন ১৯৭ জন। কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ১১০ জন আর বর্তমানে ভর্তি আছেন ৪৩০ জন।
এদিকে, গত ২৪ ঘণ্টায় রাজধানী ঢাকা শহর ছাড়া ঢাকা বিভাগে ২৯৯ জন ভর্তি হয়েছেন, বর্তমানে রোগী ভর্তি আছেন ৭০০ জন। চট্টগ্রাম বিভাগে গত ২৪ ঘণ্টায় ১৮৭ জন, বর্তমানে ভর্তি আছেন ৬৭২ জন। খুলনা বিভাগে গত ২৪ ঘণ্টায় ভর্তি হয়েছেন ১৮৬ জন আর ভর্তি আছেন মোট ৫৩৬ জন।
রংপুর বিভাগে গত ২৪ ঘণ্টায় ৯১ জন ভর্তি হয়েছেন আর বর্তমানে ভর্তি আছেন ২৬৪ জন। রাজশাহী বিভাগে গত ২৪ ঘণ্টায় ভর্তি হয়েছেন ১২৮ জন আর মোট ভর্তি আছেন ৪২৫ জন।
বরিশাল বিভাগে গত ২৪ ঘণ্টায় ১৫৯ জন আর ভর্তি আছেন ৪০২ জন। সিলেট বিভাগে গত ২৪ ঘণ্টায় ভর্তি হয়েছেন ৩৪ জন আর বর্তমানে ভর্তি আছেন ৯২ জন। ময়মনসিংহ বিভাগে গত ২৪ ঘণ্টায় ৬৯ রোগী ভর্তি হয়েছেন, আর মোট ভর্তি আছেন ২২৭ জন।
ঝিনাইদহ : বুধবার নতুন রোগী ৯ জন ভর্তি হয়েছে। এই নিয়ে মোট আক্রান্তের সংখ্যা দাড়ালো ৮৮ জন। বর্তমানে ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে ২৯ জন রোগী। ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালের পরিসংখ্যান অফিসার আব্দুল কাদের এই তথ্য জানান।
কুমিল্লা : গত ২৪ ঘণ্টায় (মঙ্গলবার থেকে বুধবার বিকেল ৩টা পর্যন্ত) কুমিল্লা মেডিক্যালসহ জেলার ৩টি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ৩০ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছেন বলে জানা গেছে। সব মিলিয়ে কুমিল্লায় ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা ৩২৫ জনেরও বেশি। যাদের সিংহভাগই চিকিৎসাধীন কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ (কুমেক) হাসপাতালে।
কুমেকের ভর্তি নিবন্ধন খাতা থেকে জানা যায়, ২৩ জুলাই থেকে গতকাল পর্যন্ত গত দুই সপ্তাহে শুধুমাত্র কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালেই ২৯৫ জন রোগী ডেঙ্গু চিকিৎসার জন্য ভর্তি হয়েছেন। এদের মধ্যে ৮ শিশু ও ৩০ জন নারী ও ২৫৭ জন পুরুষ। অপরদিকে দাউদকান্দি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ১৫ জন, চান্দিনায় ৫ জন, হোমনায় ৫ জন এবং তিতাস উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ২ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত ব্যক্তি চিকিৎসা নেন বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে। এ চারটি উপজেলায় এখনো ১০/১২ জন ডেঙ্গু রোগী চিকিৎসাধীন আছেন। এ ছাড়া কুমিল্লা নগরীর অন্তত তিনটি বেসরকারি হাসপাতালে ৫ জন ডেঙ্গু রোগীর চিকিৎসা নেওয়ার খবর পাওয়া গেছে। যাদের একজনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় নিয়ে যাওয়ার পথে মারা যান তিনি।
চাঁদপুর : চাঁদপুরের হাজীগঞ্জে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে এক বৃদ্ধার মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে হয়েছে। গত মঙ্গলবার ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মনোয়ারা বেগমের (৭৫) মৃত্যু হয়। মনোয়ারা বেগম হাজীগঞ্জ উপজেলার আহাম্মদপুর গ্রামের আবদুল হাইয়ের স্ত্রী। মনোয়ারা বেগম ৫ মেয়ে ও ৪ ছেলে সন্তানের জননী।
ছেলে মোশারফ হোসেন সেলিম জানান, গত শনিবার মাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। মঙ্গলবার রাতে তিনি মারা যান। সন্ধ্যায় উপজেলার আহাম্মদপুর গ্রামের পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়।
নাসিরনগর (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) : ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর উপজেলায় এ পর্যন্ত ৯ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীকে শনাক্ত করা হয়েছে। আক্রান্তরা হলেন আশুরাইল গ্রামের রাজিব মিয়া (১৮), রুয়েল মিয়া (১৪), মাছুম মিয়া (১৫), নূরপুরের হাকিম মিয়া (১৪), সাইফুল (২০), ব্রাহ্মণশাসনের রুমান মিয়া (২২), কুন্ডা গ্রামের তফাজ্জল (১৫), শ্রীঘর গ্রামের ফরিদ মিয়া (২৫), এবং দৌলতপুর গ্রামের নাজমা (১৮)।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।