Inqilab Logo

বুধবার ০৬ নভেম্বর ২০২৪, ২১ কার্তিক ১৪৩১, ০৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সিসিটিভি এসএমএস কালো মাইক্রোবাসে ঘুরছে তদন্ত

প্রকাশের সময় : ৮ জুন, ২০১৬, ১২:০০ এএম

রফিকুল ইসলাম সেলিম : সিসিটিভি ফুটেজ, মোবাইল এসএমএস আর কালো মাইক্রোবাসেই ঘুরপাক খাচ্ছে জননন্দিত পুলিশ সুপার বাবুল আক্তারের স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতু হত্যার রহস্য। দেশজুড়ে তোলপাড় সৃষ্টিকারী এই লোমহর্ষক হত্যাকা-ের তিনদিন পার হলেও এখনও অন্ধকারে পুলিশ। খুনের নেপথ্যে কারা তাও নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
প্রথমে সন্দেহের তীর ছিল জঙ্গিদের দিকে, একদিন পরে তার সাথে যুক্ত হয় শিবির। এখন নতুন করে সন্দেহের তালিকায় যোগ হয়েছে স্বর্ণ চোরাচালানি চক্র। তবে কোন কিছুইতে স্থির হতে পারছে না মামলার তদন্ত ও তদারকির সাথে সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর কর্মকর্তারা। এটি কি কোন জঙ্গি সংগঠনের কাজ, নাকি অন্য কোন সংক্ষুব্ধ পক্ষ পেশাদার খুনি ভাড়া করে এই হত্যাকা- ঘটিয়েছে তা এখনও নিশ্চিত করে বলতে পারছে না পুলিশ।
বিষয়টি স্বীকার করে চট্টগ্রাম মেট্টোপলিটন পুলিশ (সিএমপি) কমিশনার মো. ইকবাল বাহার গতকাল (মঙ্গলবার) সাংবাদিকদের বলেন, আমরা মূল জায়গায় পৌঁছাতে পারিনি, এটাই বাস্তবতা। তবে তথ্যগত এবং বস্তুগত কিছু অগ্রগতি আছে। আমরা আরও পর্যবেক্ষণ, বিচার-বিশ্লেষণ করে একটা জায়গায় পৌঁছাতে চাই। পুরোপুরি নিশ্চিত না হয়ে আমরা কাউকে অযথা হয়রানি করতে চাই না। হত্যাকা-ের সম্ভাব্য সব কারণ খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
তিনি বলেন, প্রথমত জঙ্গি সম্পৃক্ততার একটা বিষয় আমরা বলেছি। তারপর জামায়াত-শিবির আছে। এর বাইরে আরও যে যে অপশন আছে সেগুলো আমরা খতিয়ে দেখছি। কোন দৃষ্টিভঙ্গিতে এই গৃহবধূর উপর হামলা হয়েছে সেটাই আগে আমরা বের করার চেষ্টা করছি। সেটা বের করতে পারলে অনেক কিছুই সহজ হয়ে যাবে। কারা এসএমএস পাঠাল, অপারেটর কোম্পানি থেকে কি এসএমএস এসেছিল, বাবুল আক্তারের স্ত্রীর মোবাইল ফোনটা পাওয়া যাচ্ছেনা কেন, তিনি কেন ছেলে নিয়ে আগেভাবে বের হলেন সব বিষয় আমরা খতিয়ে দেখছি। আরও সিসি ক্যামেরার ফুটেজ আমরা সংগ্রহ করেছি। আশা করি খুনিদের স্পষ্ট ছবিও পেয়ে যাব।
রোববার সকাল ৭টার আগে বন্দরনগরীর ব্যস্ততম জিইসি মোড়ের অদূরে ও আর নিজাম রোডে নির্মম হত্যাকা-ের শিকার হন মাহমুদা খানম মিতু। ছেলেকে স্কুল বাসে তুলে দিতে বাসা থেকে হেঁটে সেখানে আসতেই একটি মোটরসাইকেল দিয়ে তাকে ধাক্কা মেরে রাস্তায় ফেলে দেয়া হয়। এরপর কুপিয়ে ও গুলি করে এক মিনিটের কম সময়ে মৃত্যু নিশ্চিত করে পালিয়ে যায় খুনীরা। ওইদিন সেখান থেকে একটি সিসিটিভির ফুটেজ সংগ্রহ করে পুলিশ। তাতে দেখা যায় এক যুবক আগে থেকেই সেখানে অবস্থান করে মোবাইলে কথা বলছিলো।
মিতু ছেলেকে নিয়ে রাস্তার পাশে আসতেই জিইসি মোড় হতে মোটরসাইকেলে দুই যুবক এসে তার উপর হামলা শুরু করে। অন্যদিকে মোবাইলে কথা বলতে বলতেই হামলায় অংশ নেয় এ যুবক। হত্যাকা- শেষে তিনজনই একটি মোটরসাইকেলে করে গোলপাহাড়ের দিকে পালিয়ে যায়। এই ফুটেজ দেখে প্রাথমিকভাবে হত্যাকা-ে তিনজন জড়িত থাকার বিষয়টি নিশ্চিত হয় পুলিশ। কিন্তু এর মধ্যে আরও একটি ফুটেজে একটি কালো মাইক্রোবাসের অস্তিত্ব পাওয়া যায়। ফুটেজে দেখা যায়, হত্যাকা-ের স্থানের একটু দূরে মাইক্রোবাসটি দাঁড়িয়েছিল। হত্যাকা- শেষে তিন খুনী মোটরসাইকেলে চলে যাওয়ার সময় ওই মাইক্রোবাসটি চলতে শুরু করে। সেটি মিতুর লাশের পাশে এসে কিছুটা গতি থামিয়ে ফের দ্রুতগতিতে ধাবমান মোটরসাইকেলটিকে অনুসরণ করে গোলপাহাড়ের দিকে চলে যায়।
পুলিশ এখন ওই মাইক্রোবাসটিকেও জোর সন্দেহের মধ্যে রেখেছে। পুলিশ কমিশনার ইকবাল বাহার বলেন, মাইক্রোবাসটির গতিবিধি দেখে আমরা এ ঘটনায় জড়িত বলে সন্দেহ করছি। প্রতিদিন একজন পুলিশ কনস্টেবল মিতুর ছেলেকে মাহিকে বাসা থেকে ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুলের গাড়িতে তুলে দিত। কিন্তু ওইদিন পুলিশ কনস্টেবল আসেনি, মিতু নিজেই ছেলেকে বাসে তুলে দিতে যান। প্রতিদিন তিনি ৭টার পরে গেলেও ওইদিন তিনি ৭টার আগে ছেলেকে নিয়ে হাজির হন। মিতুর পরিবারের সদস্যরা বলছে, শনিবার রাতেই স্কুল বাসের শিডিউল পরিবর্তন হয়েছে মর্মে তার মোবাইলে একটি এসএমএস আসে। ওই বিল্ডিংয়ে থাকা আরও কয়েকজন অভিভাবকের কাছেও একই ধরনের এসএমএস আসে। তবে ক্যান্টনমেন্ট স্কুল কর্তৃপক্ষ স্কুল বাসের শিডিউল পরিবর্তন হওয়া কিংবা পরিবর্তিত শিডিউলের বিষয়টি এসএমএসে জানিয়ে দেয়ার বিষয়টি অস্বীকার করে।
তারা বলছেন, তাদের বাসের শিডিউল পরিবর্তন হয়নি, তারা এ ধরনে এসএমএসও দেয়নি। তাহলে এ এসএমএসের সাথে খুনীচক্রের সদস্যদের কোন যোগসূত্র আছে কিনা তা খতিয়ে দেখছে পুলিশ। খুনের পর থেকে মিতুর মোবাইল ফোনটি হাওয়া হয়ে যায়। ধারণা করা হচ্ছে খুনীরা সেটা নিয়ে গেছে। মিতুর একজন প্রতিবেশী জানান, এ এসএমএস খুনীদের সম্পর্কে বড় ধরনের ক্লু হতে পারে। প্রথম জব্দ করা সিসিটিভির ফুটেজে দেখা যাচ্ছে ঘটনাস্থলে আগে থেকে এক যুবক অপেক্ষা করছে এবং সে সার্বক্ষণিক মোবাইলে কথা বলছে। সব মোবাইল এখন রেজিস্ট্রেশন করা এ অবস্থায় ওই এলাকায় ওই সময়ে মোবাইল কল লিস্ট থেকে ওই খুনীর মোবাইলটি শনাক্ত করা সম্ভব।
পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, এসএমএস এবং মোবাইল ফোন রেকর্ড যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। এদিকে হত্যাকা-ের একদিন পর হত্যাকা-ে ব্যবহৃত মোটরসাইকেল উদ্ধারের দাবি করা হলেও সেটি নিয়েও এখন সন্দেহ সৃষ্টি হয়েছে। পুলিশের দাবি, এ মোটরসাইকেলটি হত্যাকা-ে ব্যবহার হয়েছে। তবে কিভাবে পুলিশ তা নিশ্চিত হয়েছে তা কর্মকর্তারা স্বীকার করছে না। কারণ সিসিটিভির অস্পষ্ট ফুটেজে হত্যাকা-ে ব্যবহৃত মোটরসাইকেলের নাম্বার দেখা যাচ্ছে না। সোমবার ভোরে নগরীর বাদরতুলা এলাকার বড় গ্যারেজ নামক স্থান থেকে পরিত্যক্ত মোটরসাইকেলটি উদ্ধার করে পুলিশ।
গতকাল মোটরসাইকেলের মালিক সন্দেহে দেলোয়ার নামে একজনকে আটক করে পুলিশ। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। সিএমপির উপকমিশনার (উত্তর) পরিতোষ ঘোষ বলেন, দেলোয়ারের বাড়ি বোয়ালখালীর কধুরখীল উপজেলায়। থাকেন নগরীর জামালখানে। তবে জিজ্ঞাসাবাদে তিনি জানিয়েছেন ছয় বছর আগে মোটরসাইকেলটি বিক্রি করে দিয়েছেন। এরপর কয়েক হাত ঘুরে এখন মোটর সাইকেলটি কার কাছে আছে সে জানেনা। মোটরসাইকেলটিতে যে নাম্বার প্লেট লাগানো হয়েছে সেটিও ভুয়া। এদিকে মিতু হত্যাকা-ের প্রতিবাদে তার খুনীদের গ্রেফতার দাবিতে চট্টগ্রামে সভা-সমাবেশ ও মানববন্ধন অব্যাহত আছে। গতকালও বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করা হয়। এসব প্রতিবাদ কর্মসূচিতে অবিলম্বে খুনীদের গ্রেফতার করার দাবি জানানো হয়।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: সিসিটিভি এসএমএস কালো মাইক্রোবাসে ঘুরছে তদন্ত
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ