পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
ইনকিলাব ডেস্ক : চট্টগ্রামে পুলিশ কর্মকর্তা’র স্ত্রী এবং নাটোরে খ্রিষ্টান ব্যবসায়ী হত্যার একদিন পরই ঝিনাইদহে এক হিন্দু পুরোহিতকে মোটরসাইকেল আরোহীরা গলা কেটে হত্যা করেছে। ‘বন্দুকযুদ্ধে’ দুই জঙ্গি নিহত হয়েছে বলে দাবি করেছে পুলিশ। ঝিনাইদহে নিহত ও পুরোহিতের নাম অনন্ত গোপাল গাঙ্গুলি। পুলিশ জানিয়েছে, অনন্ত গাঙ্গুলি ঝিনাইদহ সদর উপজেলার নলডাঙ্গা মন্দিরের পুরোহিত ছিলেন। সকাল ৯টার দিকে তিনি সদরের করাতিপাড়ার বাড়ি থেকে সাইকেলে করে মন্দিরে যাওয়ার সময় মহিষাডাঙ্গা গ্রামে মাঠের ভেতরে তার ওপর হামলা চালানো হয়। সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) গোপীনাথ কানজিলাল সংবাদমাধ্যমকে জানান, ‘মোটরসাইকেলে করে আসা তিন যুবক পুরোহিতের ওপর হামলা চালায়। তারা প্রথমে বাঁশ দিয়ে মাথায় আঘাত করে, তারপর তাকে কুপিয়ে ও জবাই করে হত্যার পর দুর্বৃত্তরা মোটরসাইকেলে করে চলে যায়।’
এএসপি জানান, ‘সাম্প্রতিক সময়ের বিভিন্ন হত্যাকা-ের ধরনের সঙ্গে পুরোহিত হত্যার মিল রয়েছে। এই হত্যাকা-ের পেছনেও জঙ্গিদের হাত থাকতে পারে বলে সন্দেহ করছি।’ চলতি বছরের জানুয়ারিতে এই ঝিনাইদহ সদরেই বালেখাল বাজারে সমির আলী নামের এক হোমিওপ্যাথ চিকিৎসককে হত্যা করা হয়। ধর্মান্তরিত হওয়া এবং খ্রিষ্টান ধর্ম প্রচারের অভিযোগে তাকে হত্যা করা হয়। আইএস তাকে হত্যার দায় স্বীকার করে।
গত বছরের জানুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত সারাদেশে একই কায়দায় ৪৬টি হামলার ঘটনা ঘটেছে। এতে মোট ৪৮ জন নিহত হন। গত আড়াই মাসে হত্যা করা হলো ১১ জনকে। এসব হামলার অনেকগুলোরই দায় স্বীকার করেছে আইএস ও আল-কায়েদার ভারতীয় উপমহাদেশের কথিত বাংলাদেশ শাখা আনসার আল ইসলাম। তবে সরকার বাংলাদেশে আইএসের অস্তিত্ব অস্বীকার করছে। এদিকে পুলিশ এসব ঘটনার তদন্ত এবং অপরাধীদের আটকে উল্লেখ করার মতো কোনো সাফল্য দেখাতে না পারলেও তারেক হোসেন মিলু ওরফে ইসমাইল এবং সুলতান মাহমুদ ওরফে রানা ওরফে কামাল নামে দু’জন ‘জঙ্গি নেতা’ ক্রসফায়ারে নিহত হয়েছে বলে দাবি করেছে। ঢাকার পল্লবী এলাকায় মঙ্গলবার ভোররাতে ‘কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম’ (সিটিটিসি) ইউনিটের সদস্যদের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে তারা নিহত হয় বলে সিসিটিসি প্রধান মনিরুল ইসলাম দাবি করেছেন। এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘নিহত তারেক হোসেন মিলু ওরফে ইসমাইল রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক রেজাউল করিমকে কুপিয়ে হত্যা করেছে। ওই ঘটনায় পরিকল্পনার নেতৃত্বে ছিলেন তিনি৷ বন্দুকযুদ্ধে নিহত আরেকজন সুলতান মাহমুদ ওরফে রানা, ওরফে কামাল বগুড়া শিয়া মসজিদে গুলি চালিয়ে ১ জনকে হত্যা করে। এরা দু’জনই জেএমবির সদস্য।’
এদিকে গত দুই মাসে এ ধরনের হত্যাকা-ের জন্য দায়ী সহিংস গোষ্ঠীগুলোর বিরুদ্ধে চূড়ান্ত ব্যবস্থা নিতে বাংলাদেশ সরকার ব্যর্থ হয়েছে বলে দাবি করেছে যুক্তরাজ্যভিত্তিক মানবাধিকার সংগঠন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল। এর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে এক ধরনের দায়মুক্তির পরিবেশ তৈরি হয়েছে বলে মনে করছে সংগঠনটি৷
একুশে বইমেলা থেকে ফেরার পথে ২৭ ফেব্রুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে খুন হন ব্লগার এবং লেখক অভিজিৎ রায়। কমপক্ষে দুই দুর্বৃত্ত তাকে কুপিয়ে হত্যা করে। এসময় তার স্ত্রী বন্যা আহমেদও গুরুতর আহত হন। বাংলাদেশী মার্কিন এই নাগরিককে হত্যার দায় স্বীকার করেছে নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি গোষ্ঠী ‘আনসারুল্লাহ বাংলা টিম’। পুলিশ হত্যাকা-ের সঙ্গে জড়িত সন্দেহে একাধিক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করেছে।
মঙ্গলবার অ্যামনেস্টির ওয়েবসাইটে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে সংস্থার দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক আঞ্চলিক পরিচালক চম্পা প্যাটেল দাবি করেন, ‘বাংলাদেশ সরকারের কাছে অসহিষ্ণুতার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার দাবি জানানো হলেও তারা তেমন সাড়া দিচ্ছে না। ধারাবাহিক এসব হত্যাকা- বন্ধে ব্যবস্থা নেয়ার পরিবর্তে তারা নিজেদেরই আত্মরক্ষার কথা বলছেন, যা মত প্রকাশের স্বাধীনতা এবং ধর্মীয় অধিকারের সুরক্ষায় আন্তর্জাতিক রীতিনীতির লঙ্ঘন।’
আর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাধ বিজ্ঞান এবং আইনের অধ্যাপক শেখ হাফিজুর রহমান ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘এটা স্পষ্ট যে, জঙ্গিরা তাদের টার্গেট এরিয়া বিস্তৃত করছে। তারা অপ্রতিরোধ্য এটা বলা না গেলেও তারা যে চরম আতঙ্ক সৃষ্টি করতে পেরেছে তা নিশ্চিত।’
তিনি বলেন, ‘তাদের হত্যার ধরন এবং টার্গেটের বিস্তৃতি দেখে মনে হচ্ছে তারা সহসাই থামবে না। তারা নতুন নতুন টার্গেটে হামলা করবে। তারা হামলার নতুন নতুন টার্গেট দিয়ে জানিয়ে দিচ্ছে কেউই নিরাপদ নয়, তাদের টার্গেটের বাইরে কেউ নেই।’ অধ্যাপক শেখ হাফিজুর রহমান আরো বলেন, ‘সরকারের উচিত হবে এই ভয়াবহ পরিস্থিতি স্বীকার করে নেয়া। তারপর গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় এর সমাধান খোঁজা। আর অপরাধীদের আইনের আওতায় আনাটা জরুরি, তা না হলে ভবিষ্যতে পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ হতে পারে।’
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।