পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
ঈদুল আজহার আর মাত্র ছয় দিন বাকি। এরই মধ্যে রাজধানীর অস্থায়ী হাটগুলোতে কোরবানির পশু উঠতে শুরু করেছে। কয়েকটি হাট ঘুরে দেখা গেছে, গতবারের তুলনায় এবার পশুর আমদানি বেশি। হাটগুলোতে এখন ক্রেতার চেয়েও দর্শনার্থী বেশি। বিক্রেতারা বলছেন, হাটে এখন যারা আসছে তারা শুধু দাম জেনেই চলে যাচ্ছে। কেউ কিনছে না। তবে দু-একদিন পর থেকে ক্রেতা আসতে শুরু করবে।
এ সপ্তাহের শেষের দিকে হাট পুরোপুরি জমে উঠবে বলে প্রত্যাশা তাদের। এবার কোরবানির পশুর দামও কমবে। কারণ পশুর আমদানি বেশি থাকলে দাম কমাই স্বাভাবিক বলে ইজারাদারদের ধারণা। রাজধানীর শনির আখড়া হাটের কয়েকজন পাইকারের সাথে কথা বলে জানা গেছে, উত্তরাঞ্চলে বন্যার কারণে এবার তুলনামূলক কম দামেই তারা গরু কিনতে পেরেছেন। লালমনিরহাটের পাইকার দোলা মিয়া জানান, ডেঙ্গু ভীতিতে তারাও আতঙ্কিত। সামান্য লাভেই গরু বিক্রি করে দিয়ে বাড়ি ফিরতে চান তারা। এবারের ঈদে কোরবানির গরুর সঙ্কট হবে বলে বাজারে যে কথা প্রচারণা ছিল, তা একেবারেই মিথ্য প্রমাণিত হয়েছে। রাজধানীর প্রতিটি হাটই দেশি গরুতে ভরতে শুরু করেছে। কোরবানির হাটের জন্য নির্দিষ্ট সীমানার বাইরে না যেতে সিটি কর্পোরেশন ও পুলিশ প্রশাসন থেকে বারবার কঠোর নির্দেশনা দেয়া হলেও তা মানছে না ইজারাদাররা। প্রভাবশালীদের দাপটে ক্রমেই হাটগুলো নির্ধারিত এলাকা ছেড়ে পাড়া-মহল্লা ও সড়কের ওপর চলে যাচ্ছে। ভারতীয় গরু ব্যবসায়ীরা এবারের কোরবানির ঈদে মোটেও সুবিধা করতে পারছে না বলে জানা গেছে।
ঈদুল আজহা উপলক্ষে রাজধানীর একমাত্র স্থায়ী পশুর হাট গাবতলী ইতোমধ্যে জমে উঠেছে। খুচরা ক্রেতা-বিক্রেতা ও পাইকারদের সরব গুঞ্জনে মুখর হয়ে উঠেছে হাটের পরিবেশ। দেশের নানা প্রান্ত থেকে গরু, ছাগল ও মহিষ নিয়ে এ হাটে এসেছেন ব্যবসায়ীরা। হাটে আনা পশুর মধ্যে গরুর সংখ্যাই বেশি। নানা আকারের গরু আনা হয়েছে এ হাটে। এসবের মধ্যে সবচেয়ে বড় গরুটির নাম বীর বাহাদুর। গাবতলীর হাটে এখন পর্যন্ত এটাই সবচেয়ে বড় গরু। হাটে ঢুকতেই বাম পাশে রাখা হয়েছে বীর বাহাদুরকে। সকাল থেকেই বীর বাহাদুরকে দেখতে অনেকেই সেখানে ভিড় জমাচ্ছেন। গতকাল সোমবার সকালে পাবনার ঈশ্বরদী থেকে মোহাম্মদ সানজু ইসলাম বীর বাহাদুরকে নিয়ে গাবতলীর পশুর হাটে আসেন। বীর বাহাদুরের মালিক সানজু বলেন, চলতি বছর গাবতলী পশুর হাটের বড় গরুগুলোর মধ্যে অন্যতম হয়ে থাকবে গরুটি। তাই চিন্তা-ভাবনা করেই এর নাম রেখেছি বীর বাহাদুর। তিনি জানান, প্রায় ৩৮ মণ ওজনের বীর বাহাদুরের দাম চাওয়া হচ্ছে ২৫ লাখ টাকা। তবে ২৩ লাখ টাকা দাম পেলে বিক্রি করে দেবেন। এই হাটে আর একটি বিশাল আকৃতির গরু এসেছে কিশোরঞ্জ থেকে। এ গরুটির নাম রাখা হয়েছে শান্ত। শান্ত’র মালিক এর দাম ১২ লাখ টাকা হাঁকাচ্ছেন। তবে এখনো কেউ দাম বলেননি। গাবতলী হাটের ইজারাদার জানান, আর একদিন পর থেকেই জমে উঠবে দেশের সবচেয়ে বড় হাটটি। আর কাল থেকেই হাটে মিলবে গরু, ছাগল, দুম্বা, উটসহ কোরবানি উপযোগী পশু।
রাজধানীর বছিলা পশুর হাট কানায় কানায় ভরে উঠেছে। এরপরও ট্রাকে ট্রাকে গরু আসছে। শহীদ বুদ্ধিজীবী সড়কের দু’পাশের খালি জায়গায় শেড তৈরি করে অত্যন্ত চমৎকারভাবে পশু রাখার জায়গা করা হয়েছে। এবার সড়কে পশু উঠানোর ব্যাপারে কঠোর নিষেধাজ্ঞা থাকায় হাট ইজারাদাররা সেটা এখনো মেনে চলার চেষ্টা করছেন। তবে শেষমেশ সেটা থাকবে কি না, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। কবরস্থান সংলগ্ন পশুর শেডে কথা হয় পাবনার বেড়ার বাসিন্দা সিরাজুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি বলেন, কোরবানির উদ্দেশ্যে ১০টি গরু নিজ বাড়িতে লালন-পালন করেছি। ট্রাকে করে সে গরু ঢাকার হাটে নিয়ে এসেছি। এখনো একটিও বিক্রি হয়নি। আশা করছি, দু-একদিনের মধ্যে গরুগুলো বিক্রি করতে পারব। তবে আগ্রহী গ্রাহকরা দামাদামি করছে। অনেক ক্রেতা দু-তিনবার করেও তার গরু দেখেছেন বলে জানান। বড় সাইজের গরুগুলো ৮০ থেকে এক লাখ টাকার মধ্যে দাম পেলেই বিক্রি করে দেবেন বলে জানান তিনি।
হাজারীবাগের কোরবানির হাট ঘুরে দেখা গেছে ভিন্ন চিত্র। নিয়ম ভেঙে নির্ধারিত জায়গা ছাড়িয়ে রাস্তা দখল করে বসানো হয়েছে হাট। লেদার টেকনোলজি কলেজের পাশের রাস্তা (বটতলা) দখল করে প্রায় এক কিলোমিটারেরও বেশি রাস্তা জুড়ে রয়েছে এ হাট। হাজারীবাগ বাজার, ৫ নং বিডিয়ার গেট, প্রধান সড়কে পশুর হাট বসানো হয়েছে।
হাটের দায়িত্বে থাকা ইজারাদারের এক সহযোগী বলেন, আমাদের এই রাস্তাতেই হাট বসানোর অনুমতি দেয়া হয়েছে। লেদার কলেজের পাশের রাস্তা ধরেই হাট শুরু।
১৮টি গরু নিয়ে কুষ্টিয়ার গরু ব্যবসায়ী ইসমাইল এসেছেন আফতাবনগর গরুর হাটে। এর মধ্যে ১০টি বড় গরু রয়েছে, যার দাম ২ লাখ টাকার ওপরে। আর দু’টি গরু রয়েছে ৩ লাখ টাকা করে। তিনি বলেন, এবার গরু লালন পালনে বেশি খরচ পড়েছে। কেননা গরুর খাবারের দাম বেশি। ১ বস্তা ভুসি ১ হাজার ৫০০ টাকা। খুদের ভাত, চালের কুড়া, খেসারির ডাল সবকিছুরই দাম বেশি। তাই গরুর দাম বেশি পড়বে।
আফতাবনগর গরুর হাটের হাসিল আদায়কারী রবিউল বারী বলেন, আমাদের হাটের কাজ এখনো চলছে। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ব্যবসায়ীরা গরু নিয়ে আসছেন। সিটি কর্পোরেশন থেকে ৭ তারিখ থেকে গরু বিক্রি করার কথা বলা হয়েছে। আমরা আমাদের শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি নিয়ে কাজ করছি। তবে হাট জমতে আরও ৩-৪ দিন লাগবে। আফতাবনগর হাটে এবারও প্রচুর গরু আসবে বলে জানান তিনি। দাম কেমন জানতে চাইলে তিনি বলেন, গতবারের তুলনায় কমই হবে বলে মনে হচ্ছে।
হাজারীবাগ বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন বেড়িবাঁধ হাটেও প্রচুর গরু উঠেছে। হাট ব্যবস্থাপনার সঙ্গে জড়িত আব্দুল হালিম বলেন, ঈদের এখনো সপ্তাহখানেক বাকি। এ কারণে কোরবানির পশু এখনো ধীরগতিতে আসছে। ব্যবসায়ীদের সঙ্গে যোগাযোগ হচ্ছে দু-একদিনের মধ্যেই পশুতে হাট কানায় কানায় ভরে যাবে।
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পাশেই বসেছে শনিরআখড়ার হাট। এ হাটে পর্যাপ্ত গরু এসেছে। এখনো আসছে। মহাসড়কের দু’পাশ ছাপিয়ে হাট চলে গেছে দনিয়া এলাকার ভেতরে। হাটের পাইকাররা জানান, দেশের মধ্য ও উত্তরাঞ্চলে বন্যার কারণে এবার আগেভাগেই গরু নিয়ে এসেছেন তারা। কারণ আবারও বন্যার আশঙ্কা থাকায় পাইকাররা আতঙ্কের মধ্যে ছিলেন। সরবরাহ বেশি থাকায় এবার গরুর দাম তুলনামূলক কম হবে বলে জানান পাইকাররা। ইদ্রিস নামে রাজশাহীর এক পাইকার জানান, আগের বছরের তুলনায় কম দামেই তারা গরু কিনতে পেরেছেন।
জানা যায়, ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) এলাকার নয়টি অস্থায়ী পশুর হাট আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়েছে গতকাল সোমবার। আর ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের (ডিএসসিসি) ১৪টি হাটের আনুষ্ঠানিকভাবে হাট শুরু হবে আজ মঙ্গলবার থেকে।
রাজধানীর বিভিন্ন পয়েন্টে দেখা গেছে, কয়েক দিন ধরেই রাজধানীর এই হাটগুলোতে ট্রাক ভরে আসছে গরু, ছাগল, উট ও মহিষ। গতকাল সোমবার রাজধানীর শাহজাহানপুর মৈত্রী সংঘ মাঠের অস্থায়ী হাটে গিয়ে দেখা যায়, বিভিন্ন এলাকা থেকে ট্রাকে করে গরু নিয়ে আসছেন বিক্রেতারা। তবে দীর্ঘ যাত্রায় অনেক গরু দুর্বল হয়ে পড়ে। ট্রাক থেকে নামানোর সময় পাটাতনে শুয়ে পড়া একটি গরু অনেকক্ষণ টানাটানি করেও নামাতে পারছিলেন না কুষ্টিয়া থেকে আসা ব্যবসায়ী আবুল কাসেম ও তার সঙ্গীরা। এ ব্যবসায়ী জানান, যানজটের কারণে হাটে আসতে তিন দিন সময় লেগেছে। এ সময় নিজেদের ও গরুর খাওয়াতে তাদের অনেক কষ্ট হয়েছে। এর সাথে তীব্র গরমে গরুগুলো একেবারে কাহিল হয়ে গেছে।
ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, রাজধানীর বিভিন্ন হাটে গরু উঠেছে ৪০-৪৫ হাজার টাকা থেকে শুরু করে ১৫ লাখ টাকা পর্যন্ত। ছোট আকৃতির গরু পাওয়া যাচ্ছে ৪০-৪৫ থেকে ৫০-৫৫ হাজার টাকায়। আর মাঝারি আকৃতির গরু পাওয়া যাচ্ছে ৬০-৬৫ থেকে ৮০-৮৫ হাজার টাকায়। বড় আকৃতির গরুর দাম ১ লাখ টাকার উপরে। তবে এবারের হাটগুলোতে ১ থেকে ৩ লাখ টাকার মধ্যে বেশি গরু পাওয়া যাচ্ছে। এর চেয়েও বেশি দামের পর্যাপ্ত গরু রয়েছে হাটগুলোতে। রাজধানীর মেরাদিয়া ও গাবতলী হাটে ৫ লাখ, ৬ লাখ, ৭ লাখ টাকার অনেকে গরুর দেখা মিলেছে। বিশেষ করে গাবতলী হাটে একটি গরুর দাম ২৫ লাখ টাকা হাঁকিয়েছেন একজন ব্যবসায়ী। তবে অন্য ব্যবসায়ীরা বলছেন, আলোচনায় আসার জন্য ওই ব্যবসায়ী গরুটির দাম এত টাকা হাঁকিয়েছেন। সর্বোচ্চ ওই গরুটির দাম হবে সাড়ে ৮ থেকে ১০ লাখ টাকা।
এদিকে ক্রেতারা যেন হাটে এসে নির্বিঘ্নে পছন্দমতো পশু কিনতে পারেন, সেজন্য রাজধানীর সকল হাটে সর্বোচ্চ নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছে। র্যাব-পুলিশ ও গোয়েন্দা পুলিশের একাধিক টিম সক্রিয় রয়েছে। পশু কেনাবেচার সময় যাতে টাকা পরিবহন ও জাল টাকা নিয়ে কোনো সমস্যায় পড়তে না হয় সেজন্যও কাজ করছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।