Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

হাজার ছাড়ালো ডেঙ্গুরোগী

রফিকুল ইসলাম সেলিম | প্রকাশের সময় : ৬ আগস্ট, ২০১৯, ১২:০১ এএম

চট্টগ্রামে ডেঙ্গু ভয়াবহ আকার ধারণ করছে। গতকাল সোমবার বিকেল পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় আরও ১৬০ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা সোয়া এক হাজার ছাড়িয়ে গেছে। দ্রুত ডেঙ্গু ছড়িয়ে পড়ায় সর্বত্র উদ্বেগ উৎকন্ঠা ও আতঙ্ক বিরাজ করছে। শহরের মতো গ্রামেও বাড়ছে ডেঙ্গুর প্রকোপ। ঈদ সামনে রেখে শুরু হচ্ছে ঘরে ফেরা। এরমধ্যে ডেঙ্গুর ভয়ানক বিস্তারে মানুষ চরম শঙ্কিত। এ সময়ে ডেঙ্গু আরও বেশি ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।

সরকারি বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকে রোগীর ভীড় বাড়ছে। প্রতিদিন অসংখ্য মানুষ হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে রক্ত পরীক্ষার জন্য লাইন ধরছেন। তবে পর্যাপ্ত কিট না থাকায় রক্ত পরীক্ষা ব্যাহত হচ্ছে। ডেঙ্গু টেস্টে সরকারি নির্দেশনা অমান্য করে অতিরিক্ত ফি আদায় করা হচ্ছে। পরিস্থিতি দিনে দিনে প্রকট হলেও নেই সমন্বিত কোন কার্যক্রম। ফলে পরিস্থিতি দ্রুতই নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। ডেঙ্গু রোগের বাহক মশা নিধনেও নেই কার্যকর উদ্যোগ। চলছে লোক দেখানো কার্যক্রম। মশা নিধনের মূল দায়িত্ব চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের। অথচ কর্পোরেশনের মশক নিয়ন্ত্রণ বিভাগ অকার্যকর ১৫ বছর ধরে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর চট্টগ্রাম বিভাগের পরিচালক ডা. হাসান শাহরিয়ার কবির দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, দুপুর ১২টা পর্যন্ত চমেক হাসপাতাল ছাড়া চট্টগ্রাম বিভাগের বিভিন্ন জেলায় ১৫১ জন নতুন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। এ সংখ্যা বাড়ছে জানিয়ে তিনি বলেন, শহরের মতো জেলাতেও রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। সরকারি হাসপাতালের পাশাপাশি বেসরকারি হাসপাতালগুলোতেও ডেঙ্গু রোগীদের চিকিৎসায় বিশেষ ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। ডেঙ্গু পরীক্ষায় কিট সঙ্কট থাকলেও বিকল্প ব্যবস্থায় ডেঙ্গু শনাক্ত করা হচ্ছে বলে জানান তিনি। গতকাল পর্যন্ত চট্টগ্রাম বিভাগে এক হাজার ১০৯ জন ডেঙ্গু আক্রান্তের তথ্য পাওয়া গেছে জানিয়ে তিনি বলেন, এ পর্যন্ত একজনের মৃত্যু হয়েছে।

নগরীর সরকারি হাসপাতালের পাশাপাশি চমেক হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগীদের চিকিৎসা চলছে। শুরুতে হাসপাতালের তিনটি ব্লকে ডেঙ্গু রোগীদের চিকিৎসার ব্যবস্থা থাকলেও এখন ডেঙ্গু রোগীদের জন্য একটি ওয়ার্ড চালু করা হয়েছে। চমেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মহসিন উদ্দিন আহমেদ দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, ১৩নং ওয়ার্ডের একশ’ শয্যায় ডেঙ্গু রোগীদের চিকিৎসা চলছে। রক্ত পরীক্ষায় কিটের সঙ্কট রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, বিকল্প ব্যবস্থায় রোগ শনাক্ত করা হচ্ছে। চমেক হাসপাতালে বিনামূল্যে রক্ত পরীক্ষার ব্যবস্থা থাকায় যাদের জ্বর নেই তারাও এসে রক্ত পরীক্ষার জন্য ভিড় করছেন। হাসপাতালের পরিচালক জানান, অতিরিক্ত রোগীর চাপ সামাল দিতে চমেক হাসপাতালে সকল প্রস্তুতি রয়েছে। গতকাল শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত চমেক হাসপাতালে নতুন করে নয়জন রোগী ভর্তি হয়েছে। এ নিয়ে গত কয়েকদিনে সেখানে ২০২ জন রোগী ভর্তি হয়েছে। তাদের মধ্যে ৯৫ জন হাসপাতাল ছেড়ে গেছে।

ডেঙ্গুর প্রকোপ ভয়াবহ রূপ নিলেও এখনও পর্যন্ত সমন্বিত কার্যক্রম চোখে পড়ছে না। সমন্বয়হীনতার কারণে সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী চিকিৎসা পাচ্ছেন না আক্রান্তরা। ডেঙ্গু পরীক্ষায় ফি নির্ধারণ করে দেয়া হলেও বেসরকারি হাসপাতালগুলো তা মানছে না। এ বিষয়টি তদারক করারও যেন কেউ নেই। বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ও সিভিল সার্জনের কার্যালয় থেকে চট্টগ্রাম বিভাগ ও জেলার সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। স্বাস্থ্য বিভাগের পক্ষ থেকে প্রতিদিনই রোগীদের তথ্য সরবরাহ করা হয়। এক্ষেত্রে ব্যতিক্রম চমেক হাসপাতাল। হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. আখতারুল ইসলাম প্রথম কয়েকদিন রোগীদের ব্যাপারে তথ্য জানালেও গতকাল তিনি তথ্য দিতে অপারগতা প্রকাশ করেন। চমেক হাসপাতালে গিয়েও তথ্য পেতে চিকিৎসকদের সহযোগিতা পাওয়া যায়নি।

মশা নিধনে সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে ক্রাশ প্রোগ্রাম নেয়ার কথা বলা হলেও বাস্তবে তেমন কিছু দেখা যাচ্ছে না। নগরীর বেশিরভাগ এলাকায় এ ধরনের কার্যক্রম চোখে পড়ছে না। স্থানীয়দের অভিযোগ, সিটি কর্পোরেশন লোক দেখানো কর্মসূচি পালন করছে। কর্পোরেশনের মশক নিধন বিভাগটি অচল থাকায় স্বাস্থ্য বিভাগ মশা মারার কাজ করছে। কখন মশার লার্ভা জন্মায়, কখন ম্যালেরিয়া উপদ্রব হয়, মাঠ পর্যায়ের গবেষণা ও পরীক্ষানিরীক্ষার মাধ্যমে সেটা জানা মশক বিভাগের দায়িত্ব। ওই বিভাগের প্রতিবেদন পরই সিটি কর্পোরেশন মশক নিধনে কার্যক্রম শুরু করে। কিন্তু লোকবল না থাকায় গত ১৫ বছর ধরে এ সংক্রান্ত কোনো কাজ না হওয়ায় শুধুমাত্র ধারণার ওপর ভিত্তি করেই মশক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম চলছে।

সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সামসুদ্দোহা বিষয়টি স্বীকার করে দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, ম্যালেরিয়া ও মশক নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তা না থাকায় মশা নিধনের কাজে কোনো প্রভাব পড়ছে না। পরিচ্ছন্নতা বিভাগ মশা নিধনের কাজ করছে। নগরীর ৪১টি ওয়ার্ডে মশা ও মশার ডিম ধ্বংসে কার্যক্রম চলছে জানিয়ে তিনি বলেন, সিটি কর্পোরেশনের মশার মারার ওষুধের কোন সঙ্কট নেই।

অন্যদিকে মশার কয়েল থেকে শুরু করে মশা নিধনের সব উপকরণের দাম হঠাৎ বাড়িয়ে দেয়া হয়েছে। ব্যবসায়ীরা জানান, কার্টন প্রতি কয়েলের মূল্য ১০০ টাকা বাড়ানো হয়েছে। বেড়েছে সব ধরনের স্প্রের দামও। মশা প্রতিরোধে ব্যবহৃত ৯০ টাকা দামের লোশন বিক্রি হচ্ছে ৪০০-৫০০ টাকায়।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ডেঙ্গু

২৭ জানুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ