Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ফালুজায় শিয়া মিলিশিয়াদের নির্যাতন ও হত্যার শিকার শত শত বেসামরিক সুন্নী

প্রকাশের সময় : ৮ জুন, ২০১৬, ১২:০০ এএম

ইনকিলাব ডেস্ক : ফালুজার শত শত বেসামরিক সুন্নী শিয়া মিলিশিয়াদের নির্যাতনের শিকার হয়েছে বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। শিয়া মিলিশিয়ারা ইসলামিক স্টেট (আইএস) অধিকৃত ফালুজার দিকে অগ্রসর হওয়ার সময় তাদের হাতে অসংখ্য সুন্নী আটক হয়। স্থানীয় কর্তৃপক্ষ বহু লাশ উদ্ধার করেছে যাদের নির্যাতন করে হত্যা করা রয়েছে।
স্থানীয় কর্মকর্তারা নিশ্চিত করেছেন যে লড়াই চলাকালে শিয়া মিলিশিয়ারা নিকটস্থ শহর সাকলাবিয়া থেকে প্রায় ৬শ’ লোককে আটক করে।
আনবার প্রাদেশিক পরিষদের এক সদস্য শেখ রাজা আল ইসাবি বলেন, রোববার রাতে আটক লোকদের আল মারজা সেনা ঘাঁটিতে নেয়া হয়। সেখানে শিয়া মিলিশিয়ারা তাদের উপর প্রচ- নির্যাতন চালায় বলে ধারণা করা হচ্ছে।
নিকটস্থ এক হাসপাতালের এক নার্স জানান, তার হাসপাতালে গুরুতর আহত কয়েক ডজন লোককে আনা হয়েছে। তাদের সাথে নির্যাতনে নিহত ৪ জনের লাশও আনা হয়।
মধ্য ফালুজায় প্রায় ৫০ হাজার লোককে আইএস আটকে রেখেছে বলে ইরাকি কর্তৃপক্ষ বলছে। এদিকে গোষ্ঠিগত রক্তপাতের আশংকার মধ্যে হাজার হাজার ইরাকি সৈন্য, পুলিশ অফিসার ও শিয়া মিলিশিয়া ফালুজায় চূড়ান্ত অভিযানের প্রস্তুতি নিচ্ছে।
এদিকে শহরের মধ্যে আইএসের মানব ঢাল হিসেবে ব্যবহারের হাত থেকে বাঁচতে পলায়নরত বেসামরিক লোকেরা তাদের প্রচ- গুলিবর্ষণের শিকার হয় বলে জানা যায়। নার্স বলেন, তিনি অনেক লোকের চিকিৎসা করেছেন যারা নিরাপত্তা লাভের আশায় শিয়া মিলিশিয়াদের কাছে এসেছিলেন।
দি টেলিগ্রাফ সোমবার আটকাবস্থা থেকে মুক্তি পাওয়া ৭ ব্যক্তির ছবি প্রকাশ করেছে। তারা সবাই রক্তাক্ত ও শরীরে ব্যান্ডেজ বাঁধা রয়েছে। কয়েকজনের শরীরে গভীর ক্ষত ও কাটাকুটি রয়েছে। একজনের শরীরের মাংসের উপরিভাগ অপসারণ করা হয়।
নার্স বলেন, হাসপাতালে আসা লোকেরা বলেছে তারা লোকজনের মৃত্যুদ- কার্যকর করা দেখেছে। তিনি বলেন, যাদের হত্যা করা হয়েছে তাদের লাশ পাওয়া যায়নি।
শিয়া মিলিশিয়াদের বিরুদ্ধে সুন্নী বেসামরিক লোকদের উপর ভয়াবহ নির্যাতন চালানোর অভিযোগ রয়েছে। সুন্নীরা ২০১৪ সালে ফালুজা দখলে আইএসকে সাহায্য করেছিল।
শিয়া মিলিশিয়ারা সুন্নী মুসলমানদের উপর নির্যাতন চালানোর কথা অস্বীকার করেছে। ইরাক সরকার বলেছে, গোষ্ঠিগত প্রতিশোধের আশংকায় ফালুজায় চূড়ান্ত হামলা চালানো বন্ধ রাখবে।
শিয়া আবু ফাযিল আল-আব্বাস মিলিশিয়া গ্রুপের প্রধান আউস আল খাফাজি গত সপ্তাহে ফালুজার সুন্নীদের ক্যান্সার বলে আখ্যায়িত করে গোষ্ঠিগত উত্তেজনায় নতুন করে ইন্ধন যোগান।
বিগত দু’বছর ইরাক ও সিরিয়ায় আইএস নিজেদের শিয়া সরকার ও শিয়া মিলিশিয়াদের কবল থেকে সুন্নীদের রক্ষাকারী হিসেবে উপস্থাপন করে।
ওয়াশিংটন ইনস্টিটিউট ফর নিয়ার ইস্ট পলিসির শিয়া জিহাদি গ্রুপ সম্পর্কে বিশেষজ্ঞ ফেলো ফিলিপ স্মাইথ বলেন, ফালুজার বাইরে বেসামরিক সুন্নীদের আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ ও হত্যার ঘটনা বহু সুন্নীর মনে এ আশংকাই সৃষ্টি করবে যে আইএসের বিদায় তাদের দুর্ভোগের নতুন অধ্যায়ের সৃষ্টি করবে।
তিনি বলেন, ফালুজার বেসামরিক লোকেরা এমনিতেই আইএসের শাসনে ভালো ছিল না। আমি নিশ্চিত যে এখন শিয়া মিলিশিয়াদের নির্যাতন এখন তাদের সে বিশ্বাসকেই দৃঢ় করবে যে আইএস বিতাড়িত হওয়ার পর শিয়া মিলিশিয়াদের হাতেও তারা নির্যাতনের শিকার হবে।
ইরাকের প্রধানমন্ত্রী হায়দার আল এবাদির এক মুখপাত্র রোববার বলেন যে বেসামরিক নাগরিকদের রক্ষার নির্দেশ লংঘনের যে কোনো ঘটনা একটি মানবাধিকার কমিটি পরীক্ষা করবে।
সুন্নী বেসামরিক লোকদের উপর মিলিশিয়াদের নির্যাতন বন্ধে ইরাক সরকারের অক্ষমতার আশংকা থেকে যুক্তরাষ্ট্র তাদের ফালুজা পুনর্দখলের আক্রমণ থেকে সরিয়ে আনা হলে আইএসের বিরুদ্ধে মার্কিন বিমান হামলা জোরদার করার প্রস্তাব দিয়েছে। গত বছর রামাদি পুনর্দখলের লড়াইয়ের সময়ও তাই করা হয়েছিল।
তবে সোমবার রাতেও এ রকম কিছু ঘটেনি। হাসপাতালের নার্স জানান, ফালুজার ১০ মাইল উত্তরপশ্চিমে আল-গারমাতে অন্য বেসামরিক লোকদের আটক ও নির্যাতন করা হচ্ছে।
২০১৪ সালে আইএস মসুল দখল করার পরও অনুরূপ ঘটনা ঘটেছিল। নির্যাতনের শিকার বেসামরিক সুন্নীরা বলেন, আইএস বাগদাদের দক্ষিণে ইউসুফিয়া শহরে সিøপার সেল প্রতিষ্ঠা করেছে এ আশংকায় শিয়া মিলিশিয়ারা তাদের স্বীকারোক্তি আদায়ের জন্য বিচার বহির্ভূত নির্যাতন চালায়। -সূত্র দি টেলিগ্রাফ।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ফালুজায় শিয়া মিলিশিয়াদের নির্যাতন ও হত্যার শিকার শত শত বেসামরিক সুন্নী
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ