Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার, ২৭ জুন ২০২৪, ১৩ আষাঢ় ১৪৩১, ২০ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

ওষুধের দেখা নেই

প্রতি ঘণ্টায় ৭৯ ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৫ আগস্ট, ২০১৯, ১২:১০ এএম

পৃথিবীর সবচেয়ে ভয়ঙ্কর প্রাণী কোনটি? আমাজনের পাইথন, এনাকোন্ডা, সুন্দরবনের বাঘ, আফ্রিকার সিংহ নাকি হিংস্র হায়েনা? রাজধানী ঢাকার যে কোনো শিক্ষার্থীকে এ প্রশ্ন করলে উত্তর মেলবে সবচেয়ে ভয়ঙ্কর প্রাণীর নাম ‘এডিস মশা’। সত্যিই তাই-ই। ছোট্ট প্রাণী এডিস মশার হিংস্রতার শিকার হয়ে ডেঙ্গু জ্বরে যারা আক্রান্ত হচ্ছেন; তারা বুঝে গেছেন মানুষ খেকো এমন হিংস্র প্রাণী জগতে কমই রয়েছে। বাঘ-সিংহ-এনাকোন্ডার বসবাস বনজঙ্গল ও নদীতে; কিন্তু এডিস মশার বাস এই রাজধানী ঢাকায়। বাসাবাড়ি, অলিগলিতে এরা অনায়াসে ঘুরে রক্ত চুষে মানুষ খুন করে। এডিস মশা নিধন এবং নিয়ন্ত্রণ করা যাদের দায়িত্ব সেই মন্ত্রী, মেয়রগণ কেউ টিভি ক্যামেরায় ফটোসেশনের মাধ্যমে মশা নিধন করছেন, গাড়ির বহর নিয়ে রাজধানীর অলিগলি ঘুরছেন, কেউ গলাবাজি করছেন; কেউবা নিজের ব্যর্থতা আড়াল করতে অন্যের ঘাড়ে দোষ চাপাচ্ছেন। ডাক্তাররা বলছেন, ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত আশঙ্কাজনকভাবে বাড়ছে। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, মশা মারার ওষুধ ছিঁটানোর কার্যকর ব্যবস্থা না করে মেয়রগণ এডিস মশা নিয়ে করছেন মস্করা!

এডিস মশার আক্রমণে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তির সংখ্যা প্রতিদিন বাড়ছেই। রাজধানী ঢাকা থেকে এই রোগ ছড়িয়ে পড়েছে সারা দেশে। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে শুধু হাসপাতালেই ভর্তি হয়েছেন প্রায় ২৫ হাজার (২৪৮০৪ জন) রোগী। এর বাইরে কয়েক হাজার রোগী রক্ত পরীক্ষার পর বাসায় চিকিৎসা নিচ্ছেন। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশনস সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের গতকালের তথ্য হলো ২৪ ঘণ্টায় (৪ আগস্ট) রাজধানীসহ সারা দেশে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে ১৮৭০ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এটা রেকর্ড। ঘণ্টায় ভর্তি হচ্ছেন ৭৯ জন ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত রোগী। এর মধ্যে রাজধানী ঢাকাতেই ১,০৫৩ জন রোগী এবং ঢাকার বাইরে ভর্তি হন ৮১৭ জন। ৩ আগস্ট ডেঙ্গুু আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ১৬৮৭ জন। তার আগের দিন ২ আগস্ট হাসপাতালে ভর্তি হন ১৬৮৭ জন।

ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছেই। ভাইরাস জ্বরে আক্রান্ত হয়ে হাজার হাজার আতঙ্কিত মানুষ ডেঙ্গু পরীক্ষা করছেন। এখন মানুষের উদ্বেগ নিরসনে রাজধানীর অলিগলিতে এডিস মশা মারার কার্যকার ওষুধ ছিঁটানো প্রয়োজনে। কিন্তু দুই মেয়র মশা মারতে প্রতিদিন কামান দাগাচ্ছেন; টিভি পর্দায় সরব উপস্থিত হচ্ছেন; ওষুধের দেখা নেই। টেলিভিশনের পর্দায় মাঝে মাঝে নগরবাসী ও দর্শক ওষুধ ছিঁটানোর ক্যামেরা স্যুটিং দেখছেন বটে; কিন্তু সেটা কোথায় হচ্ছে এবং সুফল কারা পাচ্ছেন কেউ জানেন না। দায়িত্বশীল মন্ত্রী-মেয়রগণ নিজ নিজ সভাসদ সঙ্গে নিয়ে টিভি ক্যামেরার সামনে ঘুরে বেড়াচ্ছেন।

এডিস মশা নিধনে ওষুধ ছিঁটানোর ব্যাপারে হাইকোর্টকে হস্তক্ষেপ করতে হয়েছে। পহেলা আগস্ট আদালতকে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন জানিয়েছে চীন থেকে তারা মশা মারার ওষুধের নমুনা (স্যাম্পল) আনার ব্যবস্থা করেছে। সে স্যাম্পল বাংলাদেশের পথেই। ওই ওষুধ পরীক্ষা এবং ব্যবহারের জন্য অনুমোদন পেতে অন্তত ১৪ কার্যদিবস লাগবে। এদিকে পত্রিকায় খবর বের হয়েছে দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন ভারত থেকে মশা মারার নমুনা ওষুধ এনেছে। ওই ওষুধ পানিতে মিশিয়ে ছিঁটাতে হয়। কিন্তু পানি মিশ্রিত ওষুধ ছিঁটানো যায় দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের এমন সচল মেশিন চালু রয়েছে মাত্র একশ’।

ডেঙ্গু আক্রান্ত বাড়ছে আর মন্ত্রী-মেয়রগণ মশা নিধনে ওষুধ ছিঁটানোর বদলে প্রতিদিন আদেশ উপদেশ কখনো বাড়িওয়ালাদের হুমকি-ধমকি দিচ্ছেন। কেউ আবার ভ্রম্যমাণ আদালত বসিয়ে শাস্তি দেয়ার হুঙ্কার দিচ্ছেন। এডিস মশার কামড় থেকে রক্ষা পেতে ঢাকা দক্ষিণের মেয়র সাঈদ খোকন গতকাল নগরবাসীকে লম্বা পায়জামা পাঞ্জাবী পরিধানের পরামর্শ দিয়েছেন। বলেছেন, একটু সচেতন হয়ে লম্বা পায়জামা পাঞ্জাবী পড়লে এডিস মশার কামড় থেকে রক্ষা পেতে পারি। ঢাকা উত্তরের মেয়র আতিকুল ইসলাম কলকাতা থেকে মশা মারার এক্সপার্ট হায়ার করে আনার ঘোষণা দিয়েছেন। তিনি সেমিনার করেও মশা তাড়ানোর চেষ্টা করছেন। কিন্তু এডিস মশা নিধনে রাজধানীর অলিগলি-বাসাবাড়িতে যে ওষুধ ছিঁটানো অপরিহার্য সেই ওষুধ ছিঁটানো হচ্ছে না। মশা প্রতিরোধে দায়িত্বশীলদের এতো বাগড়াম্বর টিভির পর্দায় দেখা গেলেও বাস্তবে ওষুধ ছিঁটানোর দৃশ্য রাজধানীবাসী দেখতে পারছেন না। শুধু তাই নয়, জেঙ্গু পরীক্ষার জন্য আতঙ্কিত মানুষ বেসরকারি হাসপাতালে ভিড় করছেন; অনেকগুলো হাসপাতালই ‘কিট’ এর অভাবে ডেঙ্গু পরীক্ষা করতে পারছেন না। অসহায় মানুষ আল্লাহর ওপর ভরসা করেই দিনযাপন করছেন। স্বাস্থ্যমন্ত্রী দাবি করেছেন কিট আসছে কিন্তু কখন কেউ জানে না।

রাজধানী ঢাকাকে ডেঙ্গু জ্বর মুক্ত করতে হলে এডিস মশা নিধন অপরিহার্য। প্রতিবছর সিটি কর্পোরেশন ঘোষিত বাজেটে ‘মশা নিধনে’ বিশাল অংকের অর্থ বরাদ্দ রাখা হয়। কিন্তু মশার বাড়বাড়ন্ত বেড়েই চলছে। মশা মারার কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া হয় না। সম্প্রতি ঢাকা উত্তরের মেয়র এক সেমিনারে জানান, গত কয়েক বছর ধরে ঢাকা সিটিতে মশা নিধণের ওষুধ সরবরাহ করে মাত্র ২টি প্রতিষ্ঠান। তাদের একটি প্রতিষ্ঠানকে আগেই অযোগ্য ঘোষণা করা হয়েছে। থাকে মাত্র এক। সেই প্রতিষ্ঠানের ওপর মশা নিধন নির্ভরশীল! যদিও মেয়র দাবি করেন তিনি সিন্ডিকেট ভেঙ্গে দিয়েছেন।

রাজধানী থেকে এডিস মশা সারা দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। এডিস মশা নিয়ে রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশের মানুষ যখন উদ্বিগ্ন; তখন মশা মারার ওষুধ আমদানি করবে কে এ নিয়ে ফাইল ঠেলাঠেলি হয় অনেকদিন। এ অবস্থায় ওষুধ আমদানি প্রসঙ্গে হাইকোর্ট স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সচিবের কাছে জানতে চেয়েছেন বিদেশ থেকে মশার কার্যকর ওষুধ আমদানি করবে কে, মন্ত্রণালয় না সিটি কর্পোরেশন? প্রশ্নের উত্তর দেয়ার জন্য স্থানীয় সরকার সচিবকে আদালতে তলব করা হয়। সন্তোষজনক উত্তর মেলেনি। স্থানীয় সরকার বিভাগের সঙ্গে ঠেলাঠেলির পর বিদেশ থেকে মশা মারার ওষুধ আনার দায়িত্ব ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশনের ওপরই বর্তেছে; সরকারের দুই দপ্তরকে এ বিষয়ে সিটি কর্পোরেশনকে সব ধরণের সহযোগিতা দিতে নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট। গত বৃহস্পতিবার তিন দফা শুনানিতে দুই সিটি করপোরেশন এবং স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সচিবের বক্তব্য শুনে বিচারপতি তারিক-উল হাকিম ও বিচারপতি মো. সোহরাওয়ার্দীর বেঞ্চ এই আদেশ দেয়।

ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্তের ভয়াবহ চিত্র অনুধাবন করে আদালত বলেছে, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এবং স্থানীয় সরকার বিভাগ মশা মারার ওষুধ দ্রুত আনার ব্যাপারে ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশনকে ‘লাইসেন্স’ ও ‘ক্লিয়ারেন্স’সহ সার্বিক সহযোগিতা দেবে। ‘সম্ভব হলে’ এডিস মশা নিধনে ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশনসহ দেশের অন্যান্য সব সিটি কর্পোরেশন, পৌরসভা ও দেশব্যাপী ওই ওষুধ সরবরাহ করতে হবে। তবে ঢাকার বাইরে সারা দেশের জন্য ওষুধ আনার বিষয়টি সরকার বিবেচনা করতে পারে বলে মত দিয়েছে আদালত।

পাশাপাশি ঢাকা মহানগরীর সব সরকারি হাসপাতালে একজন করে চিকিৎসককে ডেঙ্গু চিকিৎসার বিষয়ে সার্বক্ষণিক তদারকির দায়িত্ব দিতে বলা হয়েছে; যিনি পদমর্যাদায় অন্তত সহযোগী অধ্যাপকের সমান হবেন। সরকারি সব হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগীদের জন্য অতিরিক্ত বেডের ব্যবস্থা রাখতে স্বাস্থ্য সচিব ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। আদেশে বলা হয়, ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত একজন রোগীও যেন চিকিৎসা না পেয়ে ফেরত না যায়। এছাড়া ডেঙ্গু পরীক্ষার কিট আমদানি করে যাতে স্বল্পমূল্যে দ্রæত সরবরাহ করা হয়, সরকারকে তা নিশ্চিত করতে বলা হয় আদেশে।

হাইকোর্টে হাজিরা এবং আদালতের আদেশের পর স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সচিব হেলালুদ্দিন আহমেদ বলেছেন, হাইকোর্ট আমাকে জিজ্ঞাসা করলেন সরকারি পর্যায়ে অর্থাৎ জি-টু-জি পদ্ধতির মাধ্যমে মশার ওষুধ আনতে অসুবিধা কোথায়। আমি বললাম এটা আমার জানতে হবে। এ জন্য আমাকে এক ঘণ্টা সময় দিলেন। এক ঘণ্টা সময়ের মধ্যে আমি সকল মহলের সঙ্গে এবং বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে কথা বলে জানাই দুই সিটি কর্পোরেশনকেই ওষুধ আমদানি করতে হবে। মশা মারার জন্য যে কীটনাশক আমদানি করতে হবে, তা উৎপাদিত হয় বেসরকারিভাবে। ফলে সরকারি পর্যায়ে বা জি-টু-জি পদ্ধতিতে তা আনা সম্ভব নয়। আমরা দুই সিটি কর্পোরেশনকে লাইসেন্স ও ক্লিয়ারেন্স দিয়ে দিয়েছি। এরপরও যত ধরণের সহযোগিতা করা দরকার তার সবটুকুই করব ওষুধ আনার ব্যাপারে।

সূত্র জানায়, গত পহেলা আগস্ট বৃহস্পতিবার ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে আদালতকে জানানো হয়, চীন থেকে তারা মশা মারার ওষুধের নমুনা (স্যাম্পল) আনার ব্যবস্থা করেছে। সেই স্যাম্পল বাংলাদেশের পথেই রয়েছে। এটা পরীক্ষা করে ব্যবহার উপযোগী কি না সেই অনুমোদন পেতে অন্তত ১৪ কার্যদিবস লাগবে। আর গণমাধ্যমের সংবাদ অনুযায়ী ভারত থেকে মশা মারার নমুনা ওষুধ এনেছে দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন। খোঁজ নিতে গিয়ে জানা যায় যে ওষুধের নমুনা আনা হয়েছে তা পানিতে মিশিয়ে দিতে হয়। দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ওষুধ ছিঁটানোর মেশিন আছে প্রায় ৯শ’। যার অর্ধেকই অকেজো। পানি মিশ্রিত ওষুধ ছিঁটানো যায় এমন সচল মেশিন চালু রয়েছে একশ’। বাকি সচল মেশিনগুলো ডিজেল মিশ্রিত ওষুধ ছিঁটানোর উপযোগী।

ঢাকা দক্ষিণের মেয়র সাঈদ খোকন ঘোষণা দিয়েছেন ১১টি ওয়ার্ড ডেঙ্গুমুক্ত। কিন্তু ইনকিলাবের অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে বলা হয় মেয়র সাঈদ খোকনের ঘোষিত ডেঙ্গু মুক্ত ওয়ার্ডগুলোতে শত শত মানুষ ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন।

অবশ্য ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেছেন, দুয়েক দিনের মধ্যেই মশক নিধনের নতুন ওষুধ আসবে। গতকাল রাজধানীর উত্তরায় মশক নিধন কার্যক্রম উদ্বোধন অনুষ্ঠানে তিনি এ তথ্য জানিয়ে আরো বলেন, বেশ কয়েকটি কোম্পানির ওষুধের নমুনা নিয়ে গবেষণা চলছে। কার্যকর ওষুধ কিনতে পরীক্ষা-নিরীক্ষাও চলছে। মশার ওষুধ কেনা নিয়ে সিন্ডিকেট ভেঙে দিয়েছি।

প্রায় প্রতিদিনই ডেঙ্গ জ্বরে আক্রান্ত রোগী ভর্তি বাড়ছে। স্বাস্থ্য অধিদফতরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার অ্যান্ড কন্ট্রোল রুমের হিসাব অনুযায়ী গত ২৪ ঘণ্টায় ভর্তি ১ হাজার ৮৭০ জনের হাসপাতালে ভর্তির মধ্যে ঢামেক হাসপাতালে ১৩৪, মিটফোর্ডে ৯৭, ঢাকা শিশু হাসপাতালে ৩৯, শহীদ সোহরাওয়ার্দীতে ৫৫, হলি ফ্যামিলি রেড ক্রিসেন্টে ৩০, বারডেমে ১৩, বিএসএমএমইউতে ২৬, পুলিশ হাসপাতাল রাজারবাগে ১৭, মুগদা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ৮৩, বিজিবি হাসপাতাল পিলখানায় ৭, সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে ৩৬, কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে ১১৩ জন মোট ১ হাজার ৫০ জন সরকারি হাসপাতালে ভর্তি হন। এ ছাড়া বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকে ৪০০ এবং দেশের অন্যান্য বিভাগে ৮১৭ জন ভর্তি হয়েছেন।

মশা নিধণের ওষুধের দেখা নেই; অথচ এডিস মশা মরতে কামান দাগানোর প্রক্রিয়া চলছে। বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশনের সাভারস্থ পরমাণু শক্তি গবেষণা প্রতিষ্ঠানের খাদ্য ও বিকিরণ জীববিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের কিট জীব প্রযুক্তি বিভাগের বিজ্ঞানীরা এডিস মশা নিয়ন্ত্রণের দাবি জানিয়েছেন। গত ৩ আগস্ট সাভারের গণকবাড়ীতে পরমাণু শক্তি গবেষণা প্রতিষ্ঠান থেকে মশা নিয়ন্ত্রণের ঘোষণা দেয়া হয়। মন্ত্রী ইয়াফেস ওসমানের উপস্থিতিতেই বিজ্ঞানীরা দাবি করেন এডিস মশা নিয়ন্ত্রণে স্টরাইল ইনসেক্ট টেকনিক (এসআইটি) পদ্ধতির প্রায়োগিক বিষয়ে গবেষণা কার্যক্রম সফল হয়েছে। এ পদ্ধতিতে পুরুষ জাতীয় এডিস মশাকে গামা রশ্মি প্রয়োগের মাধ্যমে বন্ধ্যাকরণ করা হয়। পরে বন্ধ্যাকরণ মশাগুলো ছেড়ে দিলে স্ত্রী এডিস মশার সঙ্গে মিলিত হবে এবং স্ত্রী জাতীয় এডিস মশা যে ডিম বা লার্ভা নির্গত হবে তা থেকে এডিস মশার বংশ বিস্তার হবে না। এর ফলে স্ত্রী জাতীয় এডিস ডিম বা লার্ভা নিষিক্ত হবে না এবং মশার পরিমাণ হ্রাস পাবে। ভুক্তভোগীদের বক্তব্য মশা মারতে কামান দাগা নয়; আগে ওষুধ ছিঁটিয়ে এডিস মশার হাত থেকে দেশবাসীকে রক্ষা করুন।

চট্টগ্রাম : চট্টগ্রামে নতুন করে আরও ২৩ জন ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়েছে। গতকাল (রোববার) সিভিল সার্জন কার্যালয়ের কন্ট্রোল রুম সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। এরমধ্যে আগ্রাবাদ মা ও শিশু হাসপাতালে ২ জন, চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে ১ জন, ইউএসটিসি হাসপাতালে ১ জন, ম্যাক্স হসপিটালে ১ জন, ন্যাশনাল হাসপাতালে ২ জন, সিএসসিআরে ১ জন, পিপলস হাসপাতালে ১ জন, বন্দর হাসপাতালে ১ জন ও মেট্রোপলিটন হাসপাতালে ২ জন রোগী ভর্তি হয়েছে। এছাড়া উপজেলার পটিয়ায় ২ জন ও হাটহাজারীতে ১ জন ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত করা হয়েছে।

এছাড়া চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে নতুন করে আরও ৮ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছে। সব মিলিয়ে চট্টগ্রাম মহানগর ও উপজেলায় ২৩ জন ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত করা হয়েছে। এ নিয়ে সরকারি হিসেবে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা ২৩৮ জন। তবে বাস্তবে নগরীর বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকে চিকিৎসাধীন ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা অনেক বেশি বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে।

এদিকে চমেক হাসপাতালের ১৩ নম্বর ওয়ার্ডকে পুরোপুরি ডেঙ্গু কর্ণার হিসেবে ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ। বরাবরের মত ডেঙ্গু পরীক্ষা করাতে গিয়ে ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন বলে অভিযোগ করেছেন রোগীর স্বজন ও সাধারণ মানুষ।

খুলনা : খুলনায় ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয়ে গতকাল ভোরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় এক বৃদ্ধা ও স্কুলছাত্রের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। নিহতরা হলেন- ইসমাইল সরদারের স্ত্রী মর্জিনা বেগম (৭০) এবং রূপসার খাজা ডাঙ্গা গ্রামের বাবুল শেখের ছেলে ও খাজদিয়া সরকারি হাইস্কুলের দশম শ্রেণির ছাত্র মঞ্জুর শেখ (১৩)। মর্জিনা এক সপ্তাহ আগে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হন ও আজ ভোরে মৃত্যুবরণ করেন। এ তথ্য নিশ্চিত করেন হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের সহকারী রেজিস্ট্রার ডা. পার্থ প্রতিম।

অন্যদিকে মঞ্জুর গত শনিবার রাত ১১টার দিকে বেসরকারি গাজী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে ভর্তি হন। গতকাল ছয়টার দিকে তার মৃত্যু হয় বলে জানান হাসপাতালের চেয়ারম্যান গাজী মিজানুর রহমান।

মাগুরা : মাগুরা সদর উপজেলার পুটিয়া গ্রামে জয়া সাহা নামে এক গৃহবধূ ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে গতকাল ভোরে ঢাকায় একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেছেন। তিনি মাগুরার সদর উপজেলার বেরইল পলিতা ইউনিয়নের পুটিয়া গ্রামের চঞ্চল সাহার স্ত্রী। জয়ার পরিবার জানায়, তার জ্বর হলে গত শনিবার সকালে ফরিদপুরে একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসার পর অবস্থার অবনতি হলে তাকে ঢাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় রবিবার ভোরে সাড়ে তিনটার দিকে তার মৃত্যু হয়। মাগুরার সিভিল সার্জন ডা. প্রদীপ কুমার সাহা জানান, ওই নারীর মৃত্যুর খবর পেয়ে সেখানে স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তা পাঠানো হয়েছে। তারা জানতে পারেন, পুটিয়া গ্রামে জয়া সাহা নামে এক গৃহবধ‚ ঢাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রবিবার ভোরে মারা গেছেন।

ভেড়ামারা (কুষ্টিয়া) : এবার ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে কুষ্টিয়ার চৌধুরী নুরুল নাহার হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার ও ভেড়ামারা প্রেসক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ডা. এ কে এম কাওছার হোসেনের মেয়ে জামাই ডা. রাশেদুজ্জামান রিন্টুর মৃত্যু হয়েছে। গত শনিবার বিকালে কুষ্টিয়া সদর হাসপাতালে তিনি মারা যান বলে নিশ্চিত করেছেন তার এক আত্মীয়। ডা. এ কে এম কাওছার হোসেন জানান, কুষ্টিয়ার চৌধুরী নুরুল নাহার হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার ডা. রাশেদুজ্জামান রিন্টু গত এক সপ্তাহ ধরে জ্বরে আক্রান্ত হয়ে অসুস্থ হয়ে পড়ে। তিনি তার নিজের চিকিৎসা নিজে করে আসছিলো। শুক্রবার রাতে ডা. রাশেদুজ্জামান রিন্টু অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে কুষ্টিয়ার চৌধুরী নুরুল নাহার হাসপাতালের ভর্তি করা হয়। গত শনিবার তার অবস্থা আশঙ্কাজনক হলে তাকে সনো টাওয়ারে নেওয়া হয়। সেখানে রিন্টু রক্ত বমি করতে থাকে। অবস্থা বেগতিক দেখে তাকে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করলে সেখানেই তিনি মারা যান।



 

Show all comments
  • Ahsanul Moyeen ৫ আগস্ট, ২০১৯, ১:৪০ এএম says : 0
    এডিস মশার বংশ বৃদ্ধিতে সিটি কর্পোরেশন দ্বয় চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।এতে সফলও হয়েছেন। ১৫দিন আগে যেখানে দৈনিক ৪০০/৫০০ রুগী হসপিটালে ভর্তি হতো সেখানে গতকাল ১৮০০ এর বেশী রোগী ভর্তি হচ্ছে এটা একটা যুগান্তকারী অগ্রগতি। এ পর্যন্ত ২৩,০০০ লোক আক্রান্ত হয়েছে।এতে প্রচুর ঔষধ বিক্রি হয়েছে। এ সুযোগে ঔষধের দামও কয়েক শ গুন বৃদ্ধি করে ঔষধ বিক্রি করা হচ্ছে। আশা করা যায় অতি দ্রুত দৈনিক আক্রান্ত রোগীর সংখ্যাও গুনিতক হারে বাড়তে থাকবে। তবে সরকার এ ব্যাপারে বিএনপি জামাতের ষড়যন্ত্রের বিষয়ে সতর্ক আছেন। সড়ক মন্ত্রী এব্যাপারে সাবধান আছেন যেন ডেঙ্গুর ফাক ফোকরে ঢুকে অন্য কিছু যদি কেউ করে ফেলে?
    Total Reply(0) Reply
  • Ahsanul Moyeen ৫ আগস্ট, ২০১৯, ১:৪০ এএম says : 0
    এডিস মশার বংশ বৃদ্ধিতে সিটি কর্পোরেশন দ্বয় চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।এতে সফলও হয়েছেন। ১৫দিন আগে যেখানে দৈনিক ৪০০/৫০০ রুগী হসপিটালে ভর্তি হতো সেখানে গতকাল ১৮০০ এর বেশী রোগী ভর্তি হচ্ছে এটা একটা যুগান্তকারী অগ্রগতি। এ পর্যন্ত ২৩,০০০ লোক আক্রান্ত হয়েছে।এতে প্রচুর ঔষধ বিক্রি হয়েছে। এ সুযোগে ঔষধের দামও কয়েক শ গুন বৃদ্ধি করে ঔষধ বিক্রি করা হচ্ছে। আশা করা যায় অতি দ্রুত দৈনিক আক্রান্ত রোগীর সংখ্যাও গুনিতক হারে বাড়তে থাকবে। তবে সরকার এ ব্যাপারে বিএনপি জামাতের ষড়যন্ত্রের বিষয়ে সতর্ক আছেন। সড়ক মন্ত্রী এব্যাপারে সাবধান আছেন যেন ডেঙ্গুর ফাক ফোকরে ঢুকে অন্য কিছু যদি কেউ করে ফেলে?
    Total Reply(0) Reply
  • Razib Nm ৫ আগস্ট, ২০১৯, ১:৪১ এএম says : 0
    অসাধু বলে তাদের সম্মান করবেন না। তারা চামার...। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত স্যান্ডেল দিয়া পিটাইলেও তাদের পাপ মোচন হবে না। এটা বাংলাদেশের প্রতিনিয়ত চিত্র। কোনো কিছুর ক্রাইসিস বা ডিমান্ড বেড়ে গেলেই দাম বাড়ায় দিবেই। সে তা ঔষধ হোক আর রিক্সা ভাড়াই হোক।
    Total Reply(0) Reply
  • Krishna Mazumder ৫ আগস্ট, ২০১৯, ১:৪২ এএম says : 0
    আরে নিজের বাড়ি আর আশপাশ টা পরিস্কার রাখুন। একটি সামাজিক আআন্দলোন গড়ে তুলুন, কারণ সমস্যা টা সবার। সবি সরকার করে দেবে এই ভেবে সরকারের কিছু সুলোচনা করে ঘুমিয়ে পরাটা বাদ দিন।
    Total Reply(0) Reply
  • Towhidul Islam ৫ আগস্ট, ২০১৯, ১:৪৩ এএম says : 0
    ডেঙ্গু শব্দের সুযোগে ব্যবসায়ী হাসপাতাল ডাঃ ও ল্যাব সহ আরো অনেকেই সৎ ব্যবহার করতেছে।
    Total Reply(0) Reply
  • Jubaiya Yasmin ৫ আগস্ট, ২০১৯, ১:৪৪ এএম says : 0
    এটাই হলো আসল বাঙালীর পরিচয়। চোরের খনি কথাটা বৃথা যাবে কেন? সবাই সবার বিপদে এগিয়ে আসে আর এরা সুযোগে ফায়দা লোটে।
    Total Reply(0) Reply
  • শেখ সজীব হাসান ৫ আগস্ট, ২০১৯, ১:৪৪ এএম says : 0
    ডেঙ্গু তো মহামারি আকার ধারন করছে। ডেঙ্গুতে মানুষ মরবে কি চিকিৎসা ও ওষুধের দাম শুনলেই তো ফিট হয়ে যাচ্ছে ।
    Total Reply(0) Reply
  • Reaz Ahmed Bhuiyan ৫ আগস্ট, ২০১৯, ১:৪৫ এএম says : 0
    ব্যবসায়ী রা রোজার মাসে দাম বাড়ায় ভালবাসা দিবসে ফুলের দাম বিজয় দিবসে মোমবাতি এখন মশার দাম এদের বিচার একজনই করবে।
    Total Reply(0) Reply
  • Reaz Ahmed Bhuiyan ৫ আগস্ট, ২০১৯, ১:৪৫ এএম says : 0
    ব্যবসায়ী রা রোজার মাসে দাম বাড়ায় ভালবাসা দিবসে ফুলের দাম বিজয় দিবসে মোমবাতি এখন মশার দাম এদের বিচার একজনই করবে।
    Total Reply(0) Reply
  • Harunur Rashid ৫ আগস্ট, ২০১৯, ১০:২১ এএম says : 0
    thanks a lot for this news
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ডেঙ্গু

২৭ জানুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ