Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

রমজানে টিভিগুলোর উদাসীনতা না হীনমন্যতা?

প্রকাশের সময় : ৮ জুন, ২০১৬, ১২:০০ এএম | আপডেট : ১১:৪৫ পিএম, ৭ জুন, ২০১৬

স্টালিন সরকার : রমজান এলেই পাল্টে যায় এদেশের মানুষের জীবনধারা। খাদ্যাভ্যাস, আচার-আচরণ, সাংস্কৃতি চর্চা, ধর্মীয় অনুশাসন পালন এবং চিন্তা-চেতনায় ঘটে ব্যাপক পরিবর্তন। মানুষ আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভে রোজা রাখেন, পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করেন, তারাবিহ নামাজ পড়েন, কোরআন তেলাওয়াত করেন, ইফতারি ও সাহারী খান। জীবন-যাপনে সঙ্গতি রেখেই সরকার প্রত্যাহিত অফিসের সময়সূচি পরিবর্তন করেন।
দর্শকদের চিন্তা-চেতনা, প্রত্যাশা-চাহিদা অনুযায়ী টিভি মিডিয়াগুলো অনুষ্ঠান সূচি প্রণয়ন এবং পরিবর্তন করবে সেটাই স্বাভাবিক। কিন্তু আমাদের দেশের অধিকাংশ টিভিতে দেখা যায় রমজানে দর্শকের চাহিদার দিকে না তাকিয়ে ইচ্ছেমতো অনুষ্ঠানাদি প্রচার করা হয়। বিটিভিসহ দুই/তিনটি চ্যানেল ছাড়া অন্য যে সব টিভি চ্যানেল রমজান উপলক্ষে ইসলামী অনুষ্ঠান করছে তা নেহাতই দায়সারা ভাব। ওই সব অনুষ্ঠানে না আছে ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্য না আছে রোজার সম্পর্কে শিক্ষণীয় কিছু। বিজ্ঞাপন হালাল করার জন্যই যেন প্রচার করা হয় ওই অনুষ্ঠানাদি। অথচ ভারতের মিডিয়াগুলোতে দেখি অন্য চিত্র। দুই/চার দিনের পূজা উপলক্ষে মাসব্যাপী তাদের মিডিয়াগুলোতে যে মহারণ হয় তা প্রণিধানযোগ্য। প্রশ্ন হলো রমজান নিয়ে আমাদের টিভি মিডিয়াগুলোর কেন এই উদাসীনতা?
মিডিয়া হলো গণমানুষের মাধ্যম। খবর এবং আমজনতার সুখ-দুঃখ, হাসি-কান্না, আনন্দ-বেদনা, চাওয়া-পাওয়া, প্রত্যাশা-প্রাপ্তি, সংস্কৃতিচর্চা তুলে ধরাই গণমাধ্যমের কাজ। পাঠকদের কথা চিন্তা করে পৃষ্ট মিডিয়া (পত্রপত্রিকা) যেমন নিজ নিজ অবস্থান থেকে খবর পরিবেশনের চেষ্টা করেন; ঠিক তেমনি ব্যাক্তি মালিকানাধীন স্যাটেলাইট টিভিগুলোও অনুষ্ঠানাদি সাজিয়ে থাকে। মুক্তবাজার অর্থনীতিতে কর্পোরেট হাউজ থেকে পরিচালিত টিভিগুলো আদর্শ নীতি নৈতিকতার চেয়েও ব্যবসায়িক স্বার্থে দর্শকদের কথা চিন্তা করেই অনুষ্ঠানাদি সাজায়। কারণ সেখানে চলছে দর্শক ধরে রাখার প্রতিযোগিতা। ব্যতিক্রম দেখা যাচ্ছে রমজান মাসে। ঈদকে কেন্দ্র করে টিভিগুলোতে অনুষ্ঠানাদি সাজানোর ব্যাপক প্রস্তুতি চলছে। ঈদের নাটক, সিনেমা, বিনোদনমূলক অনুষ্ঠানাদি নিয়ে আগাম বিজ্ঞাপন প্রচার হচ্ছে। অথচ সিয়াম সাধনার পবিত্র রমজান উপলক্ষে তাদের বড় কোনো প্রস্তুতি নেই। কয়েক বছর আগেও রমজান উপলক্ষে দেশের টিভিগুলোর ২৪ ঘন্টা কয়েকটি ইসলামী অনুষ্ঠান দেখা যেত। হামদ্ নাত, কেরাত প্রতিযোগিতা, কোরআন খতম, রমজানের ফজিলত, আলেম-পীর-মশায়েক-ইসলামী চিন্তাবিদদের চিন্তাশীল বয়ান প্রচার করা হতো। শুধু তাই নয় ইফতার ও সেহরিকে কেন্দ্র করে ঘন্টাব্যাপী ইসলামী অনুষ্ঠানাদি প্রচার করা হতো। সারা বছর সাজগোছ করে খবর পড়লেও রমজানে খবর পাঠিকারা মাথায় কাপড় দিতেন। অন্যান্য অনুষ্ঠানাদিতে মহিলারা শালিন পোশাক পড়তেন। ৯২ ভাগ মুসলমানের দেশের দর্শকরা সেটাই প্রত্যাশা করে। কিন্তু এবার দেখা গেল ভিন্ন চিত্র। গতকালও দেখা গেল বিকেলে একটি চ্যানেলে আলোচক হিসেবে উপস্থিত হয়েছেন হাতাকাটা ব্লাউজ পরিহিতা এক নারী। এটা কি রমজানের পবিত্রতা! সেহরির সময়ে দেখা গেল তিন/চারটি টিভিতে ইসলামী অনুষ্ঠান প্রচার করা হলেও অধিকাংশ টিভিতে খবর, নাটক, গানের অনুষ্ঠান, নাচের অনুষ্ঠান প্রচার করা হচ্ছে। আর যারা ইসলামী অনুষ্ঠান করেছেন সেটাও দায়সারা ভাব। অনুষ্ঠানে যেমন ‘প্রাণ’ নেই; তেমনি মানহীন। ইলেক্টোনিক্স গণমাধ্যমগুলোর নীতি নির্ধারণীতে যারা রয়েছেন তাদের ইসলাম ধর্ম নিয়ে উদাসীনতার কারণেই কি এ অবস্থা? নাকি কলকাতার সাংস্কৃতির প্রতি আসক্তির কারণে ইসলাম বিদ্বেষী চিন্তাভাবনা থেকেই এ হাল? বাংলাদেশের বড় বড় ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এবং শিল্প প্রতিষ্ঠানের মালিকরা ইসলামের প্রতি অনুগতের কারণে হোক অথবা ব্যবসায়িক স্বার্থেই হোক রমজান উপলক্ষে ইসলামী অনুষ্ঠানাদিতে বিজ্ঞাপন বেশি দিতে উৎসাহী। আর রমজান এলেই সাধারণ মানুষ রোজা রাখেন এবং ইসলামী অনুশাসন মেনে চলতে চেষ্টা করেন। কাজেই টিভির অনুষ্ঠানাদির ক্ষেত্রেও তাদের রুচির পরিবর্তন ঘটে।
হিন্দি চ্যানেলগুলোর প্রসঙ্গ না তুলেই ভারতের বাংলা যে সব টিভি চ্যানেল রয়েছে সেগুলো হিন্দু ধর্মীয় অনুষ্ঠানাদির ব্যপারে সিরিয়াস। তারা তিন/চার দিনের পূজা উপলক্ষে মাসব্যাপী অনুষ্ঠানাদি করে থাকেন। নাটক, সিনেমা, আনন্দ অনুষ্ঠান, আলোচনা যাই হোক সবকিছু হয়ে থাকে পূজাকেন্দ্রীক। আরএসএসের মতো কট্টর হিন্দুত্ববাদী সংগঠনের ভাবশীর্ষ বিজেপির ক্ষমতায় থাকার পরও সনাতন ধর্মীয় অনুষ্ঠান নিজস্ব ভাবগাম্ভির্যের মধ্যে করলেও তাদের প্রগতিশীলতা যায় না। বরং তারা এসব করে নিজেদের ধর্মীয় পরিচয়ের মধ্যেই বেঁচে থাকতে চান। অথচ আমাদের (বাংলাদেশ) স্যাটেলাইট সিটি মিডিয়াগুলোর অধিকাংশই নিজ নিজ ধর্মীয় অনুষ্ঠানাদির প্রতি তেমন গুরুত্ব দেন না। ব্যবসায়িক কারণে কেউ ইসলামী ধারার অনুষ্ঠানাদি করলেও তাতে ইসলামের ভাবগাম্ভীর্য থাকে না। তাদের অনুষ্ঠানাদিতে ‘ধরি মাছ না ছুঁই পানি’ প্রবাদের মতোই অবস্থা। গতকাল সেহরির সময় দেখা গেল বিটিভি ও চ্যানেল আই ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যের মধ্যদিয়ে ইসলামী অনুষ্ঠান প্রচার করলেও দেশটিভি, বৈশাখী টিভি, এশিয়া টিভি, দীপ্ত টিভি, সময় টিভি, যমুনা টিভি, একাত্তর টিভি, ইন্ডেপেন্ডেন্ট টিভি, এটিএন, মাই টিভি, বাংলা ভিশন টিভি নাটক, খবর, আনন্দ অনুষ্ঠান, গান ও নাচের অনুষ্ঠান নিয়ে ব্যস্ত। তবে এনটিভি, চ্যানেল ২৪, একুশ টিভি, এস এ টিভি, বিজয় টিভি ও মাছরাঙ্গা টিভিতে রমজান উপলক্ষ্যে দায়সারা গোছের ইসলামী অনুষ্ঠান প্রচার করা হচ্ছে। এসব অনুষ্ঠানে না আছে ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্য, না আছে ‘প্রাণ’। রমজান এসেছে অথচ টিভিগুলোতে ধর্মীয় অনুষ্ঠানগুলোর অবস্থা একেবারে ‘সঙ্গীন’। যেন প্রচার করতে হয় তাই অগত্যে আয়োজন। দায়সারাভাবে অনুষ্ঠান প্রচার করা হয়; তাতে কোনো প্রাণ নেই। ইসলামী অনুষ্ঠানে মমতার ছোঁয়া যেন হারিয়ে গেছে। বিজ্ঞাপন হালালের জন্যই হয়তো অনুষ্ঠানাদি প্রচার করতে বাধ্য হচ্ছে। ইফতার ও সিহারীর সময় ইসলামী অনুষ্ঠানের বদলে গান-নাচ প্রচার করা কি প্রগতিশীলতা না পবিত্র রমজান নিয়ে হীনমন্যতা? সিয়াম সাধণার মাস রমজানে রোজার ফজিলত তুলে ধরার বদলে নাচ-গান-খেলা প্রচার টিভির দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের রমজান নিয়ে উদাসীনতা ছাড়া কিছুই নয়।

 

 



 

Show all comments
  • Anowar ৮ জুন, ২০১৬, ১২:১৯ পিএম says : 0
    এই দেশের বেশির ভাগ মিডিয়া গুলি কোন আদর্শ নাই যখন যে দিকে বৃষ্টি সে দিকে ছাতা
    Total Reply(0) Reply
  • Moon ৮ জুন, ২০১৬, ১২:১৯ পিএম says : 0
    ei jonnoi bangladeshi channel bangladesher manus dekhena.tader lojja howa uchit
    Total Reply(0) Reply
  • Rafi Hamid ৮ জুন, ২০১৬, ১২:২১ পিএম says : 1
    এগুলো তাদের বলে কোন লাভ নেই তাদের প্রধান উদেশ্য বেশি বেশি বিজ্ঞাপন দিয়ে কিভাবে টাকা আয় করা যায়!!
    Total Reply(0) Reply
  • Dr. Sheikh Farid Ahammod ৮ জুন, ২০১৬, ১২:২২ পিএম says : 0
    আমাদের মিডিয়া বাংলাদেশী মূল্যবোধকে ধারন করেনা বলেই মিডিয়ার প্রতি জনগনের আগ্রহ নাই।
    Total Reply(0) Reply
  • Samrat Salim ৮ জুন, ২০১৬, ১২:২৩ পিএম says : 0
    Onek bhalo laglo pore
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: রমজানে টিভিগুলোর উদাসীনতা না হীনমন্যতা?
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ