পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
ক্ষুদ্র প্রাণী এডিস মশার লাগাম টানা যাচ্ছে না। এই মশাবাহিত রোগ ডেঙ্গু কাঁপিয়ে দিয়েছে গোটা দেশ। আতঙ্ক উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা এই রোগ নিয়ে সর্বত্র। আতঙ্কের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা। আক্রান্তের অধিকাংশই হাসপাতালে ভর্তি হলেও কেউ কেউ ডাক্তারের পরামর্শে বাসায় চিকিৎসা নিচ্ছেন। সরকরি হিসাব অনুযায়ী চলতি বছর জানুয়ারি থেকে গতকাল শনিবার ৩ আগস্ট পর্যন্ত ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন ২২ হাজার ৯১৯ জন রোগী। এর মধ্যে আগস্টের ৩ দিনেই আক্রান্ত হয়েছেন ৫ হাজার ৮৫ জন। গত কয়েক দিনে ডেঙ্গু রোগের পরীক্ষা করেছেন মানুষের সংখ্যা প্রায় লক্ষাধিক।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশনস সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের হিসাব মতে গত ২৪ ঘণ্টায় (২ আগস্ট সকাল ৮টা থেকে ৩ আগস্ট সকাল ৮টা) ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন ১ হাজার ৬৪৯ জন। এর মধ্যে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্তের সংখ্যা ১ হাজার ৬৪৫ জন, ডেঙ্গু হেমোরেজিকে একজন এবং ডেঙ্গু শক সিন্ড্রোমে আক্রান্ত ৩ জন। এটা কাগজের হিসাব। কিন্তু ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালসহ সরকারি হাসপাতালগুলোর চিত্র ভয়াবহ। ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত এবং ডেঙ্গু নিয়ে আতঙ্ক দুই-ই বেশি। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের একজন চিকিৎসক বলেন, এবার ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা অনেক বেশি, এই কথা কিন্তু ঠিক। আমার কাছে মনে হচ্ছে যত না মানুষ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হচ্ছে তার থেকে আতঙ্কের মাত্রা অনেক বেশি। আতঙ্কিত না হয়ে মানুষকে সচেতন হতে হবে। দুঃখজনক হলো আতঙ্কিত মানুষ দায়িত্বশীলদের কথা বিশ্বাস করছেন না।
ডেঙ্গু এখন রাজধানী ঢাকার বাইরে সারা দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। ‘ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত’ এখন মিডিয়ার ব্রেকিং নিউজ। ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্তের ভয়ে স্কুল-কলেজে ছাত্র-ছাত্রীর উপস্থিতি কমে গেছে। গৃহবধূ থেকে শুরু করে সচিবালয়ের বড় কর্তা পর্যন্ত ডেঙ্গু রোগের আক্রান্তের ভয়ে তটস্থ। গা একটু গরম হলেই ছুঁটে যাচ্ছেন হাসপাতালে ডেঙ্গু হয়েছে কিনা পরীক্ষা করতে। ডেঙ্গু আতঙ্কে গতকাল শনিবার সকালে একসঙ্গে ৫ বন্ধু ছুটে আসেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) ডেঙ্গু সেলে। বহির্বিভাগ থেকে টিকিট কেটে চিকিৎসক দেখিয়ে ডেঙ্গু পরীক্ষা করান। এদের একজন জহির আহমেদ। হাসপাতালে আসার কারণ সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ডেঙ্গু এখন খুবই মারাত্মক। কখন কাকে ধরে কিছু বলা যায় না। হঠাৎ করেই শরীর গরম, জ্বর জ্বর বোধ করছি। তাই হাসপাতালে এসেছি। ডাক্তার দেখিয়ে ডেঙ্গু পরীক্ষা করিয়ে নিচ্ছি। এতে কিছুটা হলেও আতঙ্ক কমবে। পরীক্ষা না করালে সারাক্ষণ ডেঙ্গু আতঙ্কে থাকব। তাতে দেখা যাবে শরীরে অন্য অসুখ বাসা বেঁধেছে। পাশে ডেঙ্গু পরীক্ষা করতে আসা এক নারী বলেন, দীর্ঘ সময় ধরে দাঁড়িয়ে রয়েছি; কিন্তু লাইন এগোচ্ছে না। ৫ বছর বয়সী মেয়েকে কোলে নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা ওই নারী আরো বলেন, ডেঙ্গু চিকিৎসা নিয়ে হাসপাতাল থেকে বাসায় ফিরেছেন; কয়েকদিন পর আবার আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন আইসিইউতে। মিডিয়ায় এ খবর দেখেই ভীতি আরো বেড়ে গেছে।
বিএসএমএমইউতে টিকিট কাউন্টারে দায়িত্ব পালন করা একজন বলেন, ডেঙ্গু পরীক্ষা করতে আসা এবং রোগী নিয়ে আসা মানুষের মধ্যে যে কি আতঙ্ক তা এখানে কিছুক্ষণ থাকলেই বুঝতে পারবেন। সুস্থ মানুষও ডেঙ্গুর ভয়ে দৌড়ে হাসপাতালে আসছেন। প্রতিদিন যত মানুষ ডেঙ্গু পরীক্ষা করাতে আসছেন তাদের অধিকাংশই বাস্তবে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত নন।
ডেঙ্গু ভীতি স্বাভাবিক জানিয়ে ডেঙ্গু সেলে দায়িত্বপালন করা এক চিকিৎসক বলেন, এবার ডেঙ্গুর ধরন একদম আলাদা। জ্বর না থাকলেও ডেঙ্গু হতে পারে। তবে ডেঙ্গু নিয়ে মানুষের মধ্যে আতঙ্ক একটু বেশিই। অনেকে ডেঙ্গু আতঙ্কে হাসপাতালে ছুটে আসছেন। দেখে আমরা ধারণা করছি ডেঙ্গু হয়নি, তারপরও আমরা ডেঙ্গু পরীক্ষা দিচ্ছি। যিনি হাসপাতালে পরীক্ষা করছেন তিনি আতঙ্কমুক্ত হচ্ছেন, কিন্তু অন্যেরা আতঙ্কে থাকছেন। মানুষকে আতঙ্কমুক্ত করার উদ্যোগ কার্যকর হচ্ছে না।
সম্প্রতিক ‘মহামারী’ আকারে দেখা দেয়া ডেঙ্গু মানুষকে কাঁপিয়ে দিয়েছে। সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগীদের আর্তনাদ ও রোগীর চাপ দেখে জ্বর হলেই মানুষ সারাক্ষণ ডেঙ্গু আতঙ্কে ভুগছেন। রাজধানীতে বসবাস করা অধিকাংশই এখন আতঙ্কের এমন গ্রাসের মুখে। বাসাবাড়ি, অফিস, স্কুল, ফুটপাথ, চায়ের দোকান- সবখানেই ডেঙ্গুর ভয়ে অজানা আতঙ্ক। ডেঙ্গু আতঙ্কে প্রতিদিন হাজার হাজার সুস্থ মানুষ ছুটছেন হাসপাতালে। সেই আতঙ্ক বাড়িয়ে দিয়েছে মেয়র মন্ত্রীদের বাগড়াম্বর কথাবার্তা এবং ডেঙ্গু পরীক্ষার কিট সঙ্কট।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশনস সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের হিসেব মতে শনিবার (৩ আগস্ট) পর্যন্ত ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন ২২ হাজার ৯১৯ জন। এর মধ্যে আগস্টের প্রথম ৩ দিনেই আক্রান্ত হয়েছেন ৫ হাজার ৮৫ জন। জুলাইয়ে ৩১ দিনে এই সংখ্যা ছিল ১৫ হাজার ৬৪৮। জুনে ১ হাজার ৮৬৩, মে মাসে ১৯৩, এপ্রিলে ৫৮, মার্চে ১৭, ফেব্রæয়ারিতে ১৯ এবং জানুয়ারিতে এ সংখ্যা ছিল ৩৭।
কন্ট্রোল রুম জানায়, দেশের সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে বর্তমানে ভর্তি হওয়া রোগীর সংখ্যা ৬ হাজার ৮৫৮ জন। এর মধ্যে ঢাকা শহরে ৩৫টি সরকারি, বেসরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত হাসপাতালে ভর্তি আছেন ৪ হাজার ৪৭৭ জন ডেঙ্গু রোগী। আর ঢাকার বাইরে আছেন ২ হাজার ৩৮১ জন। বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে বাসায় ফিরে গেছেন ১৬ হাজার ৪৩ জন।
সরকারি হিসাবে এ পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ১৮ জন। এর মধ্যে এপ্রিলে ২ জন, জুনে ৩ জন এবং জুলাইয়ে মারা যান ১৩ জন। এর মধ্যে ঢাকা শিশু হাসপাতালে ২ জন। বাকি ১৬ জনের মৃত্যু হয়েছে বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতালে। কিন্তু বেসরকারি হিসেবে এই মৃত্যুর সংখ্যা ৬০ এরও বেশি। গত ২ আগন্ট ৭ জন এবং গতকাল ২ জন আক্রান্ত মারা গেছেন। কিন্তু সরকারি হিসেবে তাদের সংখ্যা উল্লেখ করা হয়নি। এমন অনেক ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করা রোগীর হিসেব দেয়া হয়নি। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় ২ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। মাদারীপুরের কালকিনি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান নাদিরা বেগম (৪০) এবং বরিশাল শেসে বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে মৃত্যুবারণ করেন ডেড় বছর বয়সী ডেঙ্গু রোগী তাওহীদ।
গতকাল স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কন্ট্রোল রুম জানায়, ঢাকার ভেতরে ১৩টি সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও আধা-সরকারি হাসপাতালে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা চলছে। সবচেয়ে বেশি রোগী ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে ভর্তি হয়েছেন ৫৪ জন এবং বর্তমানে চিকিৎসা নিচ্ছেন ৬৯৩ জন। এ ছাড়াও মিটফোর্ডে ভর্তি হয়েছেন ১৪৩ জন এবং ভর্তি আছেন ৯৮ জন; ঢাকা শিশু হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ১৯ জন এবং ভর্তি আছেন ১৪২ জন; শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৬২ জন এবং ভর্তি আছেন ৩৬৪ জন; হলি ফ্যামিলি রেড ক্রিসেন্ট হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৪১ জন এবং ভর্তি আছেন ২২৬ জন; বারডেম হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ২২ জন এবং ভর্তি আছেন ৭২ জন; বিএসএমএমইউতে ভর্তি হয়েছেন ২৪ জন এবং ভর্তি আছেন ১৪৩ জন, মুগদা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ১০০ জন এবং ভর্তি আছেন ৩১৯ জন; রাজারবাগ পুলিশ হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৫৬ জন এবং ভর্তি আছেন ২০১ জন; বিজিবি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ২ জন এবং ভর্তি আছেন ৩৩ জন; সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৩৪ জন এবং ভর্তি আছেন ১৩৪ জন, আর কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে গত ২৪ ঘণ্টায় ভর্তি হয়েছেন ৪৮ জন এবং ভর্তি আছেন ৩৫৮ জন।
ঢাকা শহর ছাড়া ঢাকা বিভাগে রাজধানীর বাইরে ডেঙ্গু শনাক্ত হওয়া রোগীর সংখ্যা ২১৫ জন। চট্টগ্রাম বিভাগে এ সংখ্যা ১২৯, খুলনা বিভাগে ৬৩, রংপুর বিভাগে ৬৩, রাজশাহী বিভাগে ৬৯, বরিশাল বিভাগে ৬৭, সিলেট বিভাগে ৩১ এবং ময়মনসিংহ বিভাগে ৫২ জন।
ডেঙ্গু নিয়ে আতঙ্ক প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. কামাল উদ্দিন বলেন, আতঙ্কিত হওয়াটাই স্বাভাবিক। মানুষ একটা কারণে আতঙ্কিত হয় না। এর পেছনে নানা কারণ থাকে। আমাদের স্বাস্থ্যসেবা অতটা ভালো নয়। অন্যদেশে একজন রোগী হাসপাতালে গেলে রিল্যাক্সে থাকে, সব দায়-দায়িত্ব নার্স, চিকিৎসকরা নেন। কিন্তু আমাদের দেশে পদে পদে সমস্যা। হাসপাতালে গেলে চিকিৎসা ঠিকমতো হবে কি না, পরীক্ষা ঠিকমতো হবে কি না, ওষুধে ভেজাল আছে কি না, চিকিৎসার খরচ জোগাড় করতে পারবে কি না সবই ভাবতে থাকে। নাম প্রকাশ না করার সর্তে একজন চিকিৎসক বলেন, ডেঙ্গু রোগের চিকিৎসা নিয়ে যা হচ্ছে তাকে আতঙ্কের কারণ আছে। স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও ঢাকা সিটির দুই মেয়র যা বলছেন এবং যা করছেন তাতে মানুষ মনে করছেন ওরা ব্যর্থ হয়ে জনগণের সঙ্গে রসিকতা করছেন। আর ডেঙ্গু রোগ পরীক্ষার কিট বিদেশ থেকে আনতে কয়েক ঘণ্টার ব্যাপার সেটা সংকটে হাজার হাজার মানুষ ডেঙ্গু পরীক্ষা করতে গিয়ে ফিরে যাচ্ছে।
চট্টগ্রাম : চট্টগ্রামে গতকাল (শনিবার) আরও ৩৩ জন ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়েছে। এরমধ্যে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ২৮ জন, নগরীর বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে ৫ জনসহ ৩৩ জন নতুন ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত করা হয়। চমেক হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. আখতারুল ইসলাম জানান, হাসপাতালে বর্তমানে ৯৯ জন ডেঙ্গু রোগী চিকিৎসাধীন রয়েছেন। সিভিল সার্জন অফিসের কন্ট্রোল রুমে দায়িত্বরত কর্মকর্তা ডা. নুরুল হায়দার জানিয়েছেন, এ পর্যন্ত ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা ১২৪ জন। এ নিয়ে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা ২২৩ জন। তবে বাস্তবে নগরীর বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকে চিকিৎসাধীন ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা অনেক বেশি বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে।
বরিশাল : বরিশাল শের এ বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এ পর্যন্ত দুজন এবং বরগুনা ও গৌরনদীর একটি ক্লিনিকে রক্ত পরীক্ষা করে বের হবার পথে অপর এক রোগীর মৃত্যু ঘটেছে। এরা সবাই ঢাকা থেকে ফিরে আক্রান্ত হয়েছিলেন বলে জানা গেছে।
তবে এর চেয়েও ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি হচ্ছে ঢাকা থকে বরিশালসহ দক্ষিণাঞ্চলে আগত বিভিন্ন নৌযান ও বাস-এ করে এডিস মশার দক্ষিণাঞ্চলে আগমন। ইতোমধ্যে বরিশাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে ‘অবিলম্বে ঢাকা ছেড়ে আসা সব যানবাহনে যথাযথভাবে মশক নিধন নিশ্চিত করে যাত্রা শুরু করার’ তাগিদ দিয়েছেন। বরিশালে মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত প্রায় ১৮০ ডেঙ্গু রোগীর চিকিৎসা চলছিল।
অপরদিকে বরিশাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রোগীদের জন্য বেড নেই। ডেঙ্গু সনাক্তকরনে ‘এনএস-১ ডিভাইস’ সঙ্কটে প্রায় বন্ধ পরিক্ষা নিরিক্ষা ।
এদিকে সরকারি বরিশাল কলেজের ৪র্থ বর্ষের ছাত্র জহিরুল ও কৃষক লোকমান হোসেন ঢাকায় না গেলেও বরিশালে বসেই ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে এখন হাসপাতালে। এছাড়া বরিশালের মুলাদী উপজেলা সদর ও আসেপাশের কয়েকটি গ্রামে অতিমাত্রায় ডেঙ্গু রোগীর সন্ধান পাওয়া যাচ্ছে।
খুলনা : খুলনা বিভাগখুলনা বিভাগের ১০ জেলায় ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ৫৮০ জনে উন্নীত হয়েছে। খুলনা স্বাস্থ্য অধিদফতর (রোগ নিয়ন্ত্রণ) গতকাল শনিবার দুপুরে এই তথ্য জানিয়েছে। সূত্র মতে, গতকাল বিকাল ৩টা পর্যন্ত খুলনা জেলায় ১৪২ জন ও যশোর জেলায় ১৪৮ জন, বাগেরহাটে ১৮ জন, সাতক্ষীরায় ৩৪ জন, ঝিনাইদহে ৫০ জন, মাগুরায় ২৮ জন, নড়াইলে ১৯ জন, কুষ্টিয়ায় ১১২ জন, চুয়াডাঙ্গায় ২১ জন ও মেহেরপুরে আট জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হন।
মাদারীপুর : একই সাথে মা ও মেয়ে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হয় মাদারীপুরের কালকিনি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। কিন্তু মেয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকলেও মা নাদিরা বেগম (৪০) গত শুক্রবার রাতে মাদারীপুর সদর হাসপাতালে নেওয়ার পথে মারা যায়। এই নিয়ে মাদারীপুর জেলায় ডেঙ্গুতে জ্বরে আক্রান্ত হয়ে মারা গেলেন ৪ জন। এছাড়া এই রোগে আক্রান্ত হয়ে মাদারীপুরের বিভিন্ন হাসপাতালে ৪৮ রোগী সনাক্ত হয়েছে। এদের মধ্যে ২০ জন রোগী আক্রান্ত হয়েছে মাদারীপুর থেকে। বাকিরা ঢাকা থেকে আক্রান্ত হয়ে মাদারীপুরে এসেছে। এখনো সরকারী হাসপাতালগুলোতে ভর্তি আছেন ১৬ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগী। এছাড়া মাদারীপুর জেলায় এপর্যন্ত ৪৮ জনকে জেঙ্গু রোগী হিসাবে সনাক্ত করেছে জেলার চিকিৎসকরা।
বরগুনা : ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে তাওহীদ নামে দেড় বছরের এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে। গত শুক্রবার সন্ধ্যায় বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তার মৃত্যু হয়। তাওহীদ বরগুনা সদর উপজেলার গৌরচিন্না ইউনিয়নের লাকুরতলা গ্রামের ইসাহাক আলীর ছেলে।
রংপুর : ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে গত ১৫ দিনে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ১শ’ ১২ জন রোগী ভর্তি হয়েছেন। এর মধ্যে ২০ জন রোগী চিকিৎসা নিয়ে চলে গেছেন। বর্তমানে হাসপাতালে ৯২ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
রূপগঞ্জ : রূপগঞ্জে উপজেলায় জেলা (গ) সার্কেলের এএসপি, নারী ও শিশুসহ প্রায় শতাধিক রোগী ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছে। উপজেলার আল-রাফি হাসপাতালে ১৫ জন, ইউএস বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৩৫ জন, রূপগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ১ জন, ডিকেএমসি হাসপাতাল লিমিটেডে ১৩ জন, মেমোরি হাসপাতাল লিমিটেডে ৪ জন, ভুলতা জেনারেল হাসপাতালে ৫ জন, মায়ের ছায়া জেনারেল হাসপাতালে ২ জনসহ প্রায় শতাধিক ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী সনাক্ত করা হয়েছে
টাঙ্গাইল : টাঙ্গাইলে গত ২৪ ঘন্টায় টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালে নতুন আরো ২৪ জন রোগী ভর্তি হয়েছে। এ নিয়ে মোট ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৬৮ জনে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া : গতকাল শনিবার পর্যন্ত ৫০ জন রোগীর শরীরে ডেঙ্গু শনাক্ত করা হয়েছে। গুরুতর অসুস্থ হওয়ায় চারজনকে ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। আক্রান্তদের বেশির ভাগ ঢাকা থেকে আসা।
পটুয়াখালী : পটুয়াখালীতে এখন ২৩ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী ভর্তি আছে। গত ২৪ ঘন্টায় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে পটুয়াখালী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৮ জন। গত ২১ জুলাই থেকে এ পর্যন্ত পটুয়াখালী হাসাপাতলে মোট ৪১ জন রোগী ভর্তি হয়।
রাজবাড়ী : গত ২৪ ঘণ্টায় রাজবাড়ী সদরসহ পাঁচ উপজেলায় শনিবার সকাল পর্যন্ত ৫০ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী শনাক্ত করা হয়েছে। এদের মধ্যে ১৮ জনকে বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
চাঁদপুর : চাঁদপুর জেনারেল হাসপাতালে গতকাল শনিবার সকাল ১১টা পর্যন্ত ৪১ জন ডেঙ্গু রোগী চিকিৎসা নিচ্ছেন।
নাটোর : নাটোর সদর হাসপাতালে বর্তমানে চিকিৎসাধীন আছেন ১০ জন রোগী। গতকাল দুপুর ১টা পর্যন্ত ৪ জনকে ভর্তি করা হয়েছে। নাটোর সদর হাসপাতালে এ পর্যন্ত চিকিৎসা নিয়েছেন ১৬ জন রোগী।
গাজীপুর : গাজীপুরে এ পর্যন্ত শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন ১৭২ জন। এছাড়া নতুন করে দেখা দিয়েছে ডায়রিয়া প্রকোপ।
পার্বতীপুর (দিনাজপুর) : পার্বতীপুরে নারী শিশু সহ ৭ ব্যক্তি ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয়েছে। এদিকে, পার্বতীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপেক্সে ডেঙ্গু রোগীদের সহায়তার জন্য কন্টোল রুম খোলা হয়েছে (০১৩১০১১৫১৪০)।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।