Inqilab Logo

রোববার ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ০২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৪ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

হাসপাতালে লম্বা সারি

২৪ ঘণ্টায় নতুন আক্রান্ত ১৬৮৭ জন

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৩ আগস্ট, ২০১৯, ১২:০০ এএম

ঢাকা শিশু হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সামনে লম্বা সারি। শিশুদের প্রায় সবাই জ্বরে আক্রান্ত। কোনো শিশু জ্বরে কাতরাচ্ছে। কেউ কাঁদছে। অসুস্থ শিশুদের নিয়ে জরুরি বিভাগের সামনে কয়েক ঘণ্টা অপেক্ষার পরও চিকিৎসকদের দেখা না পেয়ে অভিভাবকরা অস্থির হয়ে পড়ছেন। ধৈর্য্যহারা হয়ে কেউ কেউ করছেন হট্টগোল। ঢাকা শিশু হাসপাতালে জরুরি বিভাগের সামনে গতকাল শুক্রবার সকাল ১০টায় এ চিত্র দেখা যায়। রোগীর চাপে দায়িত্বরত আনসার সদস্যদের লাইন সামলাতে বেগ পেতে হচ্ছে। কখনও কখনও অভিভাবকদের সঙ্গে খারাপ আচরণও করছেন আনসার সদস্যরা। শুধু ঢাকা শিশু হাসপাতালেই নয়; এ দৃশ্য ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালসহ রাজধানীর প্রায় সব সরকারি হাসপাতালেই। অথচ গত ২৪ ঘন্টায় সারা দেশে ৭ জন ডেঙ্গু রোগীর প্রাণহানি ঘটেছে বলে খবর পাওয়া গেছে।

ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের দৃশ্য আরো ভয়ঙ্কর। রোগীর চাপে সেখানে তিল ধরণের ঠাঁই নেই। গতকালও ২৪ ঘণ্টায় সারা দেশে ডেঙ্গুু আক্রান্তের সংখ্যা ছিল এক হাজার ৬শ’ ৮৭ জন। এদের মধ্যে শুধু রাজধানীতেই আক্রান্ত হয়েছেন ৯শ’ ৯২ জন। আর সারাদেশে নতুন আক্রান্তের সংখ্যা ৬শ’ ৯১ জন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সূত্রে পাওয়া সর্বশেষ তথ্যে দেখা যায়, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ২১ হাজার ২৫৩ জন। তাদের মধ্যে হাসপাতালে ভর্তি আছেন ৬ হাজার ৫৮২ জন। অন্যান্যরা চিকিৎসা নিয়ে ফিরে গেছেন।

গত ২৪ ঘন্টায় ঢাকা, ফরিদপুর, নোয়াখালীতে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন ৭ জন। এর মধ্যে রাজধানী ঢাকায় ৪ জন মারা যায়। ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে মালিহা মাহফুজ অন্না নামে এক অন্তঃসত্ত্বা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) নিবিড় পর্যবেক্ষণ পকন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। ১০ দিন আগে জ্বর নিয়ে তিনি রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। পরীক্ষায় ডেঙ্গু ধরা পড়লে তাকে নিয়ে আসা হয় বিএসএমএমইউতে। ঢাকার মিডফোর্ড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থান গতকাল সন্ধ্যায় মারা গেছেন ৪২ বছর বয়সী আনোয়ার হোসেন, এবং রাতে মারা যান ৫০ বছর বয়সী মিনারা বেগম। মোহাম্মদপুর মডেল স্কুল এন্ড কলেজের ৬ষ্ট শ্রেণির ছাত্র রাইয়ান সরকার রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। নেয়াখালীর মাইজদীর প্রাইম হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৩০ বছর বয়সী মোশাররফ হোসেন নজু মারা যান। তিনি রেলওয়েতে চাকরি করেন। বেগমগঞ্জের আবদুল মোতালেব ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয়ে নোয়াখালীর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি হন। সেখানে অবস্থান অবনতি হলে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়ার সময় তিনি পথেই মৃত্যুবরণ করেন। আগের রাতে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মাদারীপুরের রাজৈর উপজেলার ২২ বছর বয়সী শারমিন মারা যান। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য মতে গতকাল ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হন ১২৩ জন। এর বাইরে মিটফোর্ড হাসপাতালে ৩৫, ঢাকা শিশু হাসপাতালে ৩৩, শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে ১১৮, হলি ফ্যামিলি রেড ক্রিসেন্ট হাসপাতালে ৩৫, বারডেম হাসপাতালে ১৭, বিএসএমএমইউতে ২৯, পুলিশ হাসপাতাল রাজারবাগে ১৯, মুগদা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ৬৪, বিজিবি হাসপাতাল পিলখানায় ৫, সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে ৫৬, কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে ৯২ জন ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত রোগী ভর্তি হয়েছেন। এর বাইরে রাজধানীর বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকে ভর্তি রোগীর সংখ্যা ৩৭০ জন রোগী। রাজধানী ঢাকা শহরে সর্বমোট ৯৯৬ জন হন ভর্তি হন।

এদিকে রাজধানীর বাইরেও বিভিন্ন বিভাগীয় শহরে ভর্তি রোগীর সংখ্যাও ক্রমান্বয়ে বাড়ছে। রাজধানী ঢাকা সিটির বাইরে ঢাকা বিভাগে ১৯০, চট্টগ্রাম বিভাগে ১১৯, খুলনা বিভাগে ৯১, রংপুর বিভাগে ৩৮, রাজশাহী বিভাগে ৮৭, বরিশাল বিভাগে ৭৭, সিলেট বিভাগে ১১ ও ময়মনসিংহ বিভাগে ৭৮ ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন। সূত্র জানায়, বাংলাদেশ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, ইবনে সিনা হাসপাতাল (ধানমন্ডি), স্কয়ার হাসপাতাল (ধানমন্ডি), শমরিতা হাসপাতাল (পান্থপথ), ল্যাবএইড হাসপাতাল (ধানমন্ডি), সেন্ট্রাল হাসপাতাল (ধানমন্ডি), হাই কেয়ার হাসপাতাল, হেল্থ অ্যান্ড হোপ হাসপাতাল, গ্রীন লাইফ মেডিক্যাল হাসপাতাল, ইসলামী ব্যাংক সেন্ট্রাল হাসপাতাল (কাকরাইল), ইউনাইটেড হাসপাতাল (গুলশান), খিদমাহ হাসপাতাল (খিলগাঁও), সিরাজুল ইসলাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, অ্যাপোলো হাসপাতাল (বসুন্ধরা), আদ-দ্বীন মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, ইউনিভার্সেল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, বিআরবি হাসপাতাল, বাংলাদেশ স্পেশালাইজড হাসপাতাল, উত্তরা আধুনিক মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, সালাউদ্দিন হাসপাতাল (টিকাটুলি), পপুলার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, আনোয়ার খান মর্ডান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালসহ শতাধিক হাসপাতালে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত রোগীরা ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন। তবে গতকাল অনেক হাসপাতালে নতুন করে রোগী ভর্তি করা হয়নি এবং কিট না থাকায় ডেঙ্গুর এনএস-১ পরীক্ষাটি করা হয়নি। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে চট্টগ্রামেও কিট এর অভাবে অনেক বেসরকারি হাসপাতালে গতকাল ডেঙ্গু সনাক্তকরণ পরীক্ষা বন্ধ ছিল।

ঢাকা শিশু হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা অভিভাবকরা বলছেন, শুক্রবার হওয়ায় সব হাসপাতালেই চিকিৎসকের সংখ্যা কম। অনেক হাসপাতালে চিকিৎসক না পেয়ে তারা শিশু হাসপাতালে এসেছেন। কিন্তু শিশু হাসপাতালে জরুরি বিভাগ ছাড়া চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে না। যেখানে শিশু হাসপাতালে আরও জরুরি বিভাগ খোলা দরকার ছিল সেখানে মাত্র একটি খোলা রয়েছে। সেখানে মাত্র দুই থেকে তিনজন চিকিৎসক সেবা দিচ্ছেন। তাই ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থেকেও চিকিৎসক দেখা পাওয়া যাচ্ছে না। তবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে, রোগীর সংখ্যা বেশি হওয়ায় চিকিৎসকদের আসতে বলা হয়েছে।

ডেঙ্গু নিয়ে এখন সর্বত্রই আতঙ্ক। কার্যত মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়া ডেঙ্গু রোগীদের চিকিৎসা দিতে হাসপাতালগুলো হিমশিম খাচ্ছে। ২৪ ঘণ্টা ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত রোগীরা হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন। যারা শুধু জ্বরে ডেঙ্গ পরীক্ষা করতে যাচ্ছেন তারাও পড়েছেন বিপাকে। জ্বর আসলেও ডেঙ্গু হয়েছে কি না তা জানতে মরিয়া হয়ে উঠছেন রোগীর স্বজনরা। কিন্তু রাজধানীর মগবাজার, মালিবাগ এলাকার অনেকগুলো বেসরকারি হাসপাতাল কিটস সংকটে গতকাল শুক্রবার ডেঙ্গুর এনএস-১ পরীক্ষাটি বন্ধ রাখেন। এই অবস্থায় ২৪ ঘণ্টায় আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৬শ’ ৮৩ জনে।

সরেজমিনে রাজধানীর মগবাজার ওয়ারল্যাস গেইটে কমিউনিটি হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, অভ্যর্থনা ডেস্কের সামনে বড় করে একটি কাগজে লেখা ‘এখানে ডেঙ্গু পরীক্ষা হয় না’। জানতে চাইলে হাসপাতালের কর্তব্যরত কর্মকর্তা প্রশান্ত মজুমদার বলেন, গত বৃহস্পতিবারেই আমাদের সরবরাহে থাকা ডেঙ্গু রোগী শনাক্তকরণের জন্য কিটসের সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। তাই আমরা ডেঙ্গু পরীক্ষা আর করছি না। এমনকি নতুন কোনো রোগীও ভর্তি নিচ্ছি না। একই কথা বলেন, মগবাজারের রাশমনো হাসপাতালের সহকারী ব্যবস্থাপক অন্তু জামান। তিনি বলেন, গত বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই এখানে নতুন করে ডেঙ্গু পরীক্ষার কিটস আসছে না। তাই ডেঙ্গু পরীক্ষা করছি না।

রাশমনো হাসপাতালের হাসপাতালের করিডোরের দেয়ালে বড় করে একটি কাগজে লিখে রাখা হয়েছে ‘এখানে ডেঙ্গু এনএস-১ পরীক্ষা হচ্ছে না’। হলিফ্যামিলি, আদ্-দ্বীন, ইসলামি ব্যাংক হাসপাতাল সব জায়গায় একই অবস্থা। তাই নতুন করে জ্বরে আক্রান্ত রোগীদের কী করণীয় বুঝতে পারছেন না। হলিফ্যামিলিতে একদিনের জ্বর নিয়ে ডেঙ্গু পরীক্ষা করতে আসা সঞ্জয় জানান, এখন পর্যন্ত ৪টা হাসপাতাল ঘুরেছি। কারও কাছেই ডেঙ্গু পরীক্ষা করার কিটস নেই বলছে। এ অবস্থায় কোথায় যাবো কী করবো বুঝতে পারছি না।

তবে কিটস থাকলেও নতুন করে কোনো রোগীকে ভর্তি করার মতো সিট খালি নেই রাজধানীর মহাখালীর ইউনিভার্সেল হাসপাতালের। হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডা.আশীষ চক্রবর্তী বলেন, আমাদের আউটডোর, ওয়ার্ড, কেবিন সব জায়গায় রোগীদের উপচে পড়া ভিড়। কোথাও কোনো জায়গা খালি নেই। তবে আমরা ২৪ ঘণ্টা ডেঙ্গু পরীক্ষা এখন পর্যন্ত চালু রেখেছি। জানি না কিটসের সরবরাহ কতক্ষণ থাকবে। তবে আমরা রোগীদের সেবায় নিয়োজিত থাকবো।

ঢাকা শিশু হাসপাতালে বাড্ডা থেকে এক বছর ১০ মাস বয়সী শিশুকে নিয়ে এসেছেন হেলাল মোরশেদ। তিনি বলেন, ভোর ৫টায় মগবাজারের আদ-দ্বীন হাসপাতালে গিয়ে দেখি চিকিৎসক নেই। পরে সকাল ৮টায় ঢাকা শিশু হাসপাতালে আসি। ৮টা থেকে এখন পর্যন্ত লাইনে দাঁড়িয়ে রয়েছি, কিন্তু ডাক্তার দেখাতে পারিনি। ইমার্জেন্সিতে যদি এ অবস্থা হয়, তাহলে যাবো কোথায়? সাড়ে চার বছরের সাব্বিরকে নিয়ে সাভার থেকে এসেছেন মিনু। তিনি বলেন, সকাল থেকে লাইনে এক জায়গাতেই দাঁড়িয়ে আছি। ইমার্জেন্সিতে এতক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকা যায়?

জানতে চাইলে অ্যানেস্থেসিয়া বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. এ কে এম জাহাঙ্গীর কবীর বলেন, আমাদের সক্ষমতা সাড়ে ছয়শ’ রোগীর চিকিৎসা দেয়া। সাড়ে ছয়শ’ রোগীর চিকিৎসা-ই দিচ্ছি। গতকাল বৃহস্পতিবার রোগীর সংখ্যা কম ছিল। কিন্তু শুক্রবার হঠাৎ করেই রোগী বেড়ে গেছে। আমাদের সর্বোচ্চ শক্তি দিয়ে এটা মোকাবিলা করছি।

ধানমন্ডির গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতালে সরেজমিন দেখা যায় ১০০ শয্যার হাসপাতালে শিশু ওয়ার্ডে ১০ জন, পুরুষ ওয়ার্ডে ৮ জন ও নারী ওয়ার্ডে ৫ জনসহ ২৩ জন ডেঙ্গু রোগীর চিকিৎসা চলছে।। হাসপাতালের কর্মকর্তা ফরহাদ হোসেন জানান কিট না থাকায় ডেঙ্গু সনাক্তের এনএস-ওয়ান পরীক্ষা করা হচ্ছে না। অনেক রোগীকে ল্যাবএইড হাসপাতালে টেস্ট-এর জন্য পাঠানো হয়েছে বলে তিনি জানান। ৬ মাস বয়সী শিশু আয়েশাকে নিয়ে গত ৫ দিন ধরে এই হাসপাতালে আছেন গৃহিণী রুশমিলা বেগম। তিনি বলেন, মেয়ের শরীর ক্রমান্বয়ে ভাল হলেও এই হাসপাতালের পরিবেশ ভাল নয়।

গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতালের প্যাথলজিস্টরা জানান, সিবিসি ও আইজিজি ও আইজিএম পরীক্ষা করা সম্ভব হলেও এনএস-ওয়ান পরীক্ষার জন্য আশপাশের হাসপাতালগুলোতে পাঠানো হচ্ছে। এনএস-ওয়ান পরীক্ষার মাধ্যমেই ডেঙ্গু রোগ নির্ণয় করা হয়। গণস্বাস্থ্য হাসপাতালের পরিচালক ডা. শওকত আলী আরমান ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, আমরা অনেক খুঁজেও ডেঙ্গুর কিট পাচ্ছি না, অর্ডার দেয়া আছে আগামী দু-একদিনের মধ্যে পেলেই পরীক্ষা করা হবে।

যশোর : যশোরে নতুন করে আরও ১৯ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী সনাক্ত করা হয়েছে। এতে ডেঙ্গু রোগী বেড়ে দাঁড়ালো ১৩৪ জন।
খুলনা : খুলনায় গতকাল নতুন করে আরও ১৩ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। গতকাল পর্যন্ত খুলনার সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে ১২১ জন ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়েছে। বিভাগের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ডেঙ্গু রোগী খুলনাতেই।

নোয়াখালী : নোয়াখালীতে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে দুইজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। এর মধ্যে মোশাররফ হোসেন রাজু (৩০) নামে এক রেলওয়ে কর্মকর্তা গতকাল শুক্রবার সকালে নোয়াখালীর মাইজদীর বেসরকারি প্রাইম হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ডেঙ্গু আক্রান্ত মোশাররফ হোসেন রাজু কুমিল্লা রেলওয়েতে চাকরি করতেন। কয়েকদিন ধরে তিনি জ্বর জ্বর বোধ করলে শুক্রবার সকালে নোয়াখালী প্রাইম হাসপাতালে ভর্তি হন। এর কিছুক্ষণ পর চিকিৎসধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।

অপরদিকে বেগমগঞ্জ উপজেলার মীর আলীপুর গ্রামের হারুনের ছেলে আবদুল মোতালেব (২০) ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। নিহতের পরিবারের লোকজন জানান, মোতালেব ঢাকার চকবাজারে একটি ব্যাগের কারখানায় কাজ করতো। তিনদিন আগে জ্বরে আক্রান্ত হলে তার বাবা তাকে গ্রামের বাড়িতে পাঠিয়ে দেন। পরে তাকে বেগমগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেয়া হলে চিকিৎসকরা নোয়াখালী ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে প্রেরণ করেন। সেখানে তার অবস্থার অবনতি হলে গত বৃহস্পতিবার রাতে উন্নত চিকিৎসার জন্য চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়ার পথে তার মৃত্যু হয়।

নোয়াখালীর সিভিল সার্জন ডা. মমিনুর রহমান জানান, সকালে মাইজদীর বেসরকারি প্রাইম হাসপাতালে মোশারফ হোসের রাজু নামে রেলওয়েতে চাকরি করা একজন মারা গেলেও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাকে বিকেলে ঘটনাটি জানিয়েছে। আরেক জনের মৃত্যুর খবর তার কাছে নেই। তবে তিনি এ বিষয়ে খোঁজ নিচ্ছেন।

বরিশাল : বরিশাল মেডিকেল শের এ বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এ পর্যন্ত প্রায় ৭৫জন রোগী ডেঙ্গু নিয়ে ভর্তি হয়েছেন। যাদের মধ্যে দুজনের মৃত্যু ঘটেছে। এর বাইরে গৌরনদীতেও এক মহিলার মৃত্যু হয়েছে। এরা সবাই ঢাকা থেকে আগত। বরিশাল শেবাচিম হাসপাতালের পরিচালক ডা. বাকির হোসেন ‘ডেঙ্গু রোগীদের চাপ দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে’ বলে জানিয়ে বলেন, ‘আগে ঢাকা থেকে ডেঙ্গু রোগীরা আসতো। এখন বরিশালে বসেও কয়েকজন রোগী ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হচ্ছে। তাই লঞ্চ ও বাসে মশক নিধন ওষুধ প্রয়োগ করে আসা ভাল। না হলে বরিশালের মত সারা দেশে ডেঙ্গু রোগী ছড়িয়ে পড়বে।

ফরিদপুর : ফরিদপুরে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেড়ে এখন দাঁড়িয়েছে ৯৩ জন রোগী চিকিৎসাধীন রয়েছেন। গতকাল সকাল পর্যন্ত ফরিদপুরের সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতাল মিলে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হয়েছে মোট ১২৭জন। ফরিদপুরের সিভিল সার্জন এনামুল হক জানান, আক্রান্ত ১২৭জন রোগীর মধ্যে ১৪ জন ফরিদপুরে অবস্থান কালেই ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন।

এদিকে, ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে ফরিদপুরে মেডিকেলে কলেজ হাসপাতালে মারা গেছেন শারমীন (২২) নামের এক তরুণী। গত বৃহস্পতিবার বিকেলে মারা যান তিনি। শারমীন মাদারীপুর জেলার রাজৈর উপজেলার টেকেরহাট এলাকার মো. রুবেলের মেয়ে।

ঝিনাইদহ : ঝিনাইদহে এখন সামান্য জ্বর হলেই হাসপাতালে ছুটে আসছে বিভিন্ন বয়সী মানুষ। গত ১৭ দিনে কয়েক’শ ডেঙ্গুর পরীক্ষা করা হলেও ধরা পড়েছে ৪৩ জন। এর মধ্যে গতকাল পর্যন্ত হাসপাতালে পুলিশের এক এএসআই, দুইজন শিশুসহ ভর্তি আছেন ২৩ জন। ঢাকায় রেফার্ড করা হয়েছে ৪ জন। ১৬ জন রোগী সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন।

মাদারীপুর : মাদারীপুরে গত ২৪ ঘন্টায় আরো ১৮ ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়ে গতকাল শুক্রবার বেলা ১২টা পর্যন্ত জেলায় ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা দাঁড়ালো ৪৮জনে। এদের মধ্যে মাদারীপুর সদর হাসপাতাল, শিবচর, কালকিনি ও রাজৈর উপজেলা হাসপাতালে ভর্তি আছে ১৫জন।
মাগুরা : ডেঙ্গুরোগে আক্রান্ত হয়ে ১৬ জন মাগুরা ও মহম্মাদপুর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভতি হয়েছে। এদের মধ্যে ২ জনকে ছাড়পত্র দিয়ে বাড়ি পাঠানো হয়েছে।

নাটোর : গতকাল শুক্রবার সকাল পর্যন্ত সাত দিনে নাটোর জেলায় ১৮ জন ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়েছে। হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগের চিকিৎসার জন্য আলাদা কোনো কর্নার করা হয়নি। সাধারণ ওয়ার্ডে মশারির মধ্যে রাখা হয়েছে।
সাতক্ষীরা : সাতক্ষীরা সদর হাসপাতাল, মেডিকেল কলেজ, কলারোয়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও বেসরকারি একটি হাসপাতালে গতকাল সকাল পর্যন্ত ১৪ জন রোগী ভর্তি রয়েছেন।

নড়াইল : নড়াইল জেলায় এ পর্যন্ত ১৪ জন ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়েছে। গত তিন দিনে এসব রোগী শনাক্ত করা হয়। এর মধ্যে নড়াইল সদর হাসপাতালে ১১ জন, কালিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ২ ও লোহাগড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ১ জন রোগী ভর্তি হন।

চাঁদপুর : চাঁদপুরে গতকাল পর্যন্ত ১৩১ জন জন ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়েছে। তাদের মধ্যে ৩৯ জন ডেঙ্গু রোগী এখনও চিকিৎসাধীন আছেন। বাকিরা চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন

রংপুর : রংপুরে বর্তমানে ৬৫ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। রংপুর মেডিকেল কলেজ (রমেক) হাসপাতালে মেডিসিন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. সাইদুজ্জামান জানান, সবশেষ ২৪ ঘণ্টায় এই হাসপাতালে আরও আট জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছেন। বর্তমানে হাসপাতালটিতে মোট ৬৫ জন ডেঙ্গু রোগী চিকিৎসাধীন।
নেত্রকোনা : গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে নেত্রকোনার বিভিন্ন হাসপাতালে মোট চারজন রোগী ভর্তি হয়েছে। জেলায় গতকাল শুক্রবার দুপুর পর্যন্ত মোট ১২ জন ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়েছে। তবে তারা প্রত্যেকেই ঢাকা থেকে আক্রান্ত হয়ে এসেছে বলে জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ জানিয়েছে।

সিরাজগঞ্জ : সিরাজগঞ্জে হাসপাতালগুলোতে গতকাল পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে ১৩ জন ডেঙ্গু রোগীকে শনাক্ত করা হয়েছে। সব মিলিয়ে জেলায় এ পর্যন্ত ৭৫ জন ডেঙ্গু রোগীকে শনাক্ত করে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
জয়পুরহাট: গতকাল শুক্রবার আরও তিনজন ডেঙ্গু রোগী জয়পুরহাট জেলা আধুনিক হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।
মুন্সিগঞ্জ : গতকাল পর্যন্ত মুন্সিগঞ্জ জেলায় ৩৫ জন ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়েছেন। জেলা সিভিল সার্জন বলছেন, রোগীরা সবাই ঢাকা থেকে আক্রান্ত হয়েছেন।

রাজাপুর (ঝালকাঠি) : ঝালকাঠির রাজাপুরে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ও প্রাইভেট ক্লিনিকে ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত ৯ জন ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন। বাকিরা বিভিন্নভাবে চিকিৎসা নিচ্ছেন। আক্রান্তদের মধ্যে চারজন নারী ও পাঁচজন পুরুষ রয়েছেন।

কমলগঞ্জ (মৌলভীবাজার) : ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয়ে কমলগঞ্জ উপজেলার তিন রোগী মৌলভীবাজার সদর হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। তারা তিনজনই ঢাকা ফেরত বলে জানা গেছে।

শ্রীমঙ্গল (মৌলভীবাজার) : মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল উপজেলায় তিনজন ডেঙ্গু রোগীকে শনাক্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে দুজনকে মৌলভীবাজার সদর হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছে। একজন কিছুটা সুস্থ।

মঠবাড়িয়া (পিরোজপুর) : উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা যায় শুক্রবার সাীমা রানী (১৮) নামে একজন ডেঙ্গু রোগী সনাক্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। হাসপাতালে এ পর্যন্ত ডেঙ্গু রোগী সনাক্তের সংখ্যা ৬ জন।



 

Show all comments
  • আরেফিন আলিফ ৩ আগস্ট, ২০১৯, ১:৩৬ এএম says : 0
    সরকার বসে বসে কি ঘাস কাটে নাকি? নাকি এর কোনো মেডিসিনই নাই? এইভাবে চলতে থাকলে তো, এটা মহামারি আকার ধারণ করবে।
    Total Reply(0) Reply
  • Jewel Ahmed ৩ আগস্ট, ২০১৯, ১:৩৬ এএম says : 0
    স্বাধীনতার ৪৮ বছর পরেও দুধ পরিক্ষা করাতে হয় ভারতে গিয়ে, ডেঙ্গু বিশেষজ্ঞ আনতে হয় ভারত থেকে। এরপরেও বাংলাদেশ উন্নয়নের রোল মডেল??
    Total Reply(0) Reply
  • Bandhan Das ৩ আগস্ট, ২০১৯, ১:৩৭ এএম says : 0
    রাজশাহী বিভাগীয় সদর এ এখন ও পযন্ত কোন মশা মারা মেশিন দেওয়া হয় নাই ...অথচ সিটি কপোরেশন এ বিষয় এ কোন গুরুত্বরপ করছে না...
    Total Reply(0) Reply
  • Aysha Islam ৩ আগস্ট, ২০১৯, ১:৩৭ এএম says : 0
    Amr gola betha koydin holo vlo hocca na. Amr ki dangu hoica. Dhaka gacilm. Ki korbo akhon?
    Total Reply(0) Reply
  • Sheikh Shadi ৩ আগস্ট, ২০১৯, ১:৩৮ এএম says : 0
    এই না এমপি মন্ত্রী বললো ডেঙ্গু নিয়ে গুজব ছড়াবেন না তাহলে এইসব কি।
    Total Reply(0) Reply
  • Mirazul Islam BD ৩ আগস্ট, ২০১৯, ১:৩৮ এএম says : 0
    মেয়র সাহেবের বক্তব্য জানতে চাই।
    Total Reply(0) Reply
  • Mamun Abdullah ৩ আগস্ট, ২০১৯, ১:৩৮ এএম says : 0
    আল্লাহ্‌ হেফাজত করুক
    Total Reply(0) Reply
  • Korim Mondol ৩ আগস্ট, ২০১৯, ১:৩৯ এএম says : 0
    এখন কি আর কামান দিয়া মশা মরে? মরটিন, ব্লাক ফাইটার, নিম, গ্লোব এসব কামান দিয়া আগের মতো মশা মরেনা। মশা মারতে মিশাইল লাগবে !!!
    Total Reply(0) Reply
  • Jolilur Rahman Jolil ৩ আগস্ট, ২০১৯, ১:৪০ এএম says : 0
    বাড়ীতে কোথাও জমে থাকা স্বচ্ছ পানিতেই জন্মে এডিস মশা।এরপর ডেংগু তারপর অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যু।নিজে সাবধান হন অন্যদের সাবধান করুন।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ডেঙ্গু

২৭ জানুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ