Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ঈদ টার্গেটে সক্রিয় জাল টাকা-রুপির ৫০ চক্র

সাখাওয়াত হোসেন | প্রকাশের সময় : ৩ আগস্ট, ২০১৯, ১২:০১ এএম

ঈদুল আজহার ঈদকে সামনে রেখে বিপুল পরিমাণ জাল ভারতীয় রুপি-টাকা তৈরি করে গরুর হাট ও সীমান্ত এলাকায় ছড়িয়ে দেয়ার পরিকল্পনা নিয়ে মাঠে ৫০টি চক্র। ঈদের আগে ভারত থেকে গরু পাচার হয়ে আসা এবং পশুর হাটের সুযোগে জাল রুপি-টাকা তৈরির চক্রগুলো সক্রিয় হয়ে উঠেছে। সম্প্রতি সময়ে রাজধানী ও এর বাইরে থেকে জাল রুপি ও টাকা তৈরির সাথে জড়িত শতাধিক প্রতারককে গ্রেফতার এবং এদের জিজ্ঞাসাবাদে চাঞ্চল্যকর তথ্য পেয়েছে আইন-শৃংখলা বাহিনীর কর্মকর্তারা।

গোয়েন্দা কর্মকর্তারা বলছেন, জাল নোট তৈরিতে জড়িত রয়েছে দেশি-বিদেশি অনেক চক্র। নতুন পুরাতন মিলিয়ে জালনোট চক্রের সঙ্গে সারাদেশে ৫০টি চক্র জড়িত রয়েছে। শুধুমাত্র ঢাকাতেই ২০ থেকে ২৫টি চক্র রয়েছে। এদের অনেকেই বিভিন্ন সময় আইন-শৃংখলা বাহিনীর হাতে গ্রেফতার হলেও জামিনে বেরিয়ে আবার সক্রিয় হয়ে উঠেছে।

ডিএমপির একাধিক কর্মকর্তা জানান, প্রতি বছরই ঈদকে ঘিরে মৌসুমি অপরাধীরা সক্রিয় হয়ে ওঠে। তবে আইন-শৃংখলা বাহিনীর কঠোর নজরদারির কারণে অন্য বছরের তুলনায় খুবই কম অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে। অপরাধ করার আগেই অপরাধীরা আইন-শৃংখলা বাহিনীর হাতে ধরা পড়ছে। ঈদকে ঘিরে প্রতি বছর জাল টাকার ব্যবসায়ীরা বড় ধরনের টার্গেট নিয়ে মাঠে নামে। তবে এবার বেশ কয়েকটি গ্রূপকে আগেই গ্রেফতার করা হয়েছে। এখন অনেকটাই কোণঠাসা জালনোট ব্যবসায়ীরা। তাদের ধরতে পোশাকধারী পুলিশের পাশাপাশি সাদা পোশাকে মাঠে রয়েছেন ডিবি পুলিশের সদস্যরা।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে গোয়েন্দা সংস্থার একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, পশুর হাটে যদি আইন-শৃংখলা বাহিনীর সদস্যরা তৎপর না থাকে তবে এই সুযোগে জাল টাকা চক্র আসল টাকার ভেতরে জাল নোট ঢুকিয়ে ছড়িয়ে দেবে। এতে করে পশু বিক্রেতাসহ অন্যান্য ব্যবসায়ীরা লোকসানের সন্মুখিন হবে। বিগত বছরগুলোতে জালনোট চক্রের অপতৎপরতা পশুরহাটের বিক্রেতাদের জন্য সুখকর ছিল না। যদিও জাল টাকা শনাক্ত ও চক্রকে ধরার জন্য নানা উদ্যেগ নেয়া হয়েছিল। তবুও এসব চক্র নানা কৌশলে তাদের বানিজ্য করেছে। এতে প্রতারিত হয়েছেণ সাধারন মানুষ ও ব্যবসায়ী। তাই আগে থেকেই গোয়েন্দাদের অভিযান পরিচালনা করা উচিত।

তিনি আরো বলেন, প্রতি বছর কোরবানি ঈদে ভারত থেকে চোরাই পথে গরু নিয়ে আসেন কিছু ব্যবসায়ী। এছাড়াও আনা হয় বিভিন্ন ধরনের পোশাক ও কসমেটিক। এসব পণ্য আনার ক্ষেত্রে অনেক সময় জাল নোটের ব্যবহার করা হয়। এমনকি দেশের ভেতরে পশুরহাটে গরু ক্রয়-বিক্রয় ও শপিং মল গুলোতে জাল নোটের সরবরাহ বেড়ে যায়।

আইন-শৃংখলা বাহিনী সূত্রে জানা গেছে, জাল নোট তৈরির সঙ্গে জড়িত চক্রের অন্যতম হলেন- রফিক, সালাউদ্দিন, রাসেল, সহিদুল, জুয়েল, জাকির, রানা, রাজন, শিকদার, খোকন, মনির, সোহরাব, জসিম, লাবনী, ওসমান, কবির, জহিরুল, আলম, হোসেন, নজরুল, আলআমিন, ফাতেমা, সাইফুল, মনির, পারভেজ, রহিম, মনিরুল, হাসান, কামাল, রুজিনা, রাশেদা ও জিহানসহ আরও অনেকে। এসব সদস্যরা দীর্ঘদিন ধরে জাল রুপি-টাকার নোট তৈরি করার অভিযোগে গ্রেফতারও হয়েছিল। কিন্তু চক্রের মূলহোতারা রয়েছে অধরা। হোতারাই টাকা খরচ করে জামিনে মুক্ত করে এনে আবার তাদের কাজে লাগিয়ে দেয়।

সূত্র জানায়, গত ৩১ জুলাই যাত্রাবাড়ির মাতুয়াইল এলাকার একটি আবাসিক ভবন থেকে গোয়েন্দা উত্তর বিভাগের একটি টিম বিশেষ অভিযান চালিয়ে ভারতীয় জাল রুপি, জাল রুপি তৈরির সরঞ্জামাদি ও মূলহোতাসহ ৩ জনকে গ্রেফতার করেছে। গ্রেফতারকৃতরা হলো-লিয়াকত হোসেন ওরফে জাকির, শান্তা আক্তার ও মমতাজ বেগম। এ সময় তাদের কাছ থেকে ভারতীয় ২ হাজার টাকা মূল্যমানের ২৬ লাখ জাল রুপির নোট এবং জাল রুপি তৈরির কাজে ব্যবহৃত ১টি ল্যাপটপ, ১ টি কালার প্রিন্টার, ১টি লেমিনেশন মেশিন, জাল রুপি তৈরির বিপুল পরিমাণ কাগজ, প্রিন্টারে ব্যবহৃত বিভিন্ন ধরনের কালির কার্টিজ, সিকিউরিটি সিল সম্বলিত স্ক্রিন বোর্ড, গাম ও ভারতীয় জাল রুপি বানানোর জন্য ব্যবহৃত সিল মারা ফয়েল পেপার উদ্ধার করা হয়। এছাড়াও মতিঝিলি থানাধীন ফকিরাপুল এলাকা হতে ৫০ লাখ জাল টাকাসহ দুজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এরা হলো- লাল মিয়া ও শহিদুল ইসলাম। অপর একটি অভিযানে গোয়েন্দা পশ্চিম বিভাগের একটি টিম সবুজবাগ এলাকায় অভিযান চালিয়ে আবিদা সুলতানা ও আল আমিনকে ৪০ লাখ ২০ হাজার টাকার জালনোটসহ গ্রেফতার করেছে।

সূত্র মতে, দেখতে অবিকল নোটের মতই এসব জাল নোট। খালি চোখে এবং ভালভাবে না দেখলে জাল নোট চেনার কোন উপায় নেই। জাল নোট চক্রের সদস্যরা বড় নোট তৈরিতেই আগ্রহ দেখায়। ১ হাজার টাকা মূল্যর ১ লাখ টাকা তৈরি করতে তাদের খরচ হয় সাত থেকে ১০ হাজার টাকা। এই এক লাখ টাকা আবার বড় শহরের পাইকারি ক্রেতার কাছে বিক্রি করে দেয়া হয় ১৪ থেকে ১৫ হাজার টাকায়। তারা আবার সেই টাকা খুচরা বিক্রেতাদের কাছে বিক্রি করেন ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা। তাদের হাত বদলে এই টাকা প্রান্তিক লেভেলের ব্যবসায়ীদের কাছে যায় ৪০ থেকে ৪৫ হাজার টাকায়। তারা সেই এক লাখ টাকা বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করে পুরো এক লাখই আদায় করে।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ঈদুল আজহা

৯ জুলাই, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ