পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
প্রতিদিনই বাড়ছে ডেঙ্গুর ভয়াবহতা। হাসপাতালগুলোতে ঠাঁই হচ্ছে না রোগীদের। গত ২৪ ঘণ্টায় আরও ১ হাজার ৩৩৫ জন বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। জুলাই মাসে এ পর্যন্ত ১৩ হাজার ১৮২ জন রোগী ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন। যা এক মাসের হিসেবে বাংলাদেশে সর্বোচ্চ রেকর্ড। গতকালও সারাদেশে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিবের স্ত্রীসহ ৬ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। যদিও স্বাস্থ্য অধিপ্তরের হিসেবে এ বছর ডেঙ্গুতে মৃত্যুর সংখ্যা এখনো ৮ জন। তবে বেসরকারি হিসাব বলছে এ জ্বরে আক্রান্তের সংখ্যা কয়েক লাখ। আর মৃতের সংখ্যা ৪০ জন। প্রতিদিনই দেশের কোথাও না কোথায় ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর খবর পাওয়া যাচ্ছে। সারাদেশে ডেঙ্গু পরিস্থিতির তেমন কোন উন্নতিই নেই।
এবার বর্ষার শুরুতেই ঢাকায় মশাবাহিত ডেঙ্গু জ্বরের প্রাদুর্ভাব ঘটে, এখন বিভিন্ন জেলা থেকে আক্রান্তের খবর আসছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, ৬১ টি জেলায় ডেঙ্গুরোগী শনাক্ত হয়েছে। বিভিন্ন জেলায় আক্রান্তদের অনেকে ঢাকা থেকে রোগ নিয়ে গেছেন। তবে রাজধানীর বাইরেও এডিস মশার বিচরণ রয়েছে বলে স্থানীয় পর্যায়ে আক্রান্তের আশঙ্কাও উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।
অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, বছরের শুরু থেকে গতকাল পর্যন্ত হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ১৫ হাজার ৩৬৯ জন ডেঙ্গু রোগী। বর্তমানে হাসপাতালে ভর্তি আছেন ৪ হাজার ৪০৮ জন। এ সময়ের মধ্যে হাসপাতাল থেকে ১০ হাজার ৯৫৩ জন ছাড়পত্র পেয়েছেন বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। গত ২৪ ঘণ্টায় শুধু ঢাকার সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালগুলোতেই ভর্তি হয়েছে ৯৭৩ জন ডেঙ্গু রোগী। সবচেয়ে বেশি ২২১ জন ভর্তি হয়েছে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। এছাড়া রাজধানীর বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকগুলোতে আরও ২৬৫ জন ডেঙ্গু রোগী গত ২৪ ঘণ্টায় ভর্তি হয়েছে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। সামনের দিনগুলোতে ডেঙ্গু পরিস্থিতির আরও অবনতি হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন বিশেষজ্ঞরা।
এদিকে সরকার ডেঙ্গু টেস্টের ফি বেঁধে দিয়েছে গত রোববার। কিন্তু ডেঙ্গু রোগ শনাক্তে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর নির্ধারিত এই মূল্য মানছে না রাজধানীর অধিকাংশ বেসরকারি হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার। সরেজমিনে গতকাল বিভিন্ন হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার ঘুরে এ তথ্যের সত্যতাও মেলে। যদিও কিছু কিছু হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে ডেঙ্গু রোগীদের কাছ থেকে নির্ধারিত মূল্যেই পরীক্ষা ফি নিচ্ছে। তবে ডেঙ্গু টেস্টের পাশাপাশি অতিরিক্ত অন্যান্য পরীক্ষা বাবদ রোগীদের কাছ থেকে হাতিয়ে নিচ্ছে অতিরিক্ত অর্থ। ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, বিভিন্ন টেস্ট বাবদ তাদেরকে ২২শ’ থেকে ২৫শ’ টাকা ব্যয় করতে হচ্ছে।
এছাড়া ডেঙ্গু পরিস্থিতি ভয়াবহ রুপ নেয়ায় ও বন্যার কারণে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যুক্ত সব কর্মকর্তা-কর্মচারীর ছুটি বাতিল করা হয়েছে।
ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে গতকাল রাজধানীর গ্রীণ লাইফ হাসপাতালে মারা গেছেন রাহিমা বেগম নামে এক নারী। সূত্র মতে, রহিমা বেগম ডেঙ্গু জ্বর নিয়ে গত ২৮ জুলাই ভর্তি হন রাজধানীর গ্রীন লাইফ হাসপাতালে। দু’দিন পর তিনি মারা যান। এই দু’দিনে রহিমার চিকিৎসা বিল উঠেছে ১ লাখ ৩০ হাজার ৭০৯ টাকা। এরমধ্যে শুধু ওষুধের পেছনেই ৬৮ হাজার ৯৭ টাকা খরচ হয়েছে বলে দেখানো হয়েছে। এছাড়া এই সময়ের মধ্যে দু’জন চিকিৎসক ৩ বার রোগীকে দেখেছেন (প্রফেসর ফখরুন্নেসা ২ বার ও প্রফেসর মোহাম্মদ আলী হোসাইন ১ বার)। এজন্য বিল করা হয়েছে সাড়ে ৭ হাজার টাকা। এছাড়াও রয়েছে আইসিইউ, এইচডিইউ ইত্যাদি ও কয়েকটি টেস্টের বিল। রোগী মারা যাওয়ার পর তার স্বজনদের হাতে এই দীর্ঘ বিলের তালিকা তুলে দেয়া হয়।
রাহিমা ছাড়াও ঢাকা মেডিকেলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিবের স্ত্রী ফারজানা ইসলাম ও লিটন হাওলাদার। এছাড়া বরিশাল শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আসলাম ও সোহেল নামে দুই জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। গত সোমবার রাতে তারা গুরুতর অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন।
সূত্র মতে, ডেঙ্গু রোগীদের পরীক্ষা ফি সরকার নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে বেশি নেয়ার অভিযোগে গতকাল ভুক্তভোগীদের অভিযোগের ভিত্তিতে শুনানি শেষে ধানমন্ডির ল্যাবএইড হাসপাতালকে ৫০ হাজার টাকা এবং ইবনে সিনা হাসপাতালকেও ৪০ হাজার টাকা জরিমানা করেছে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। অধিদপ্তরের ঢাকা বিভাগীয় কার্যালয়ের উপপরিচালক মনজুর মোহাম্মদ শাহরিয়ার বলেন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ডেঙ্গুর চিকিৎসার জন্য বিভিন্ন টেস্টের ফি নির্ধারণ করে দিয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় গতকাল মঙ্গলবারও অধিদপ্তরের দুটি টিম বিভিন্ন হাসপাতালে অভিযান চালায়। এর মধ্যে রাজধানীর ধানমন্ডির ল্যাবএইড ও গ্রীন লাইফ হাসপাতালে সরকার নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে বেশি ফি নেয়ার অভিযোগ পাওয়া যায়। দুই হাসপাতালকেই আজ (বুধবার) অধিদফতরে শুনানিতে অংশ গ্রহণের জন্য ডাকা হয়েছে। তাদের কাছ থেকে বেশি নেয়ার কারণের ব্যাখ্যা চাওয়া হবে। এরপর সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। আর অপর টিমটি ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালসহ বিভিন্ন সরকারি হাসপাতলে গিয়ে ডেঙ্গু টেস্টের বিষয়টি মনিটর করছে। মনজুর মোহাম্মদ শাহরিয়ার বলেন, ডেঙ্গু টেস্টে সরকার নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে বেশি নেয়ার বিষিয়ে বিভিন্ন হাসপাতালের বিরুদ্ধে দুপুর ২ টা পর্যন্ত ১৭টি অভিযোগ জমা পড়েছে। হাসপাতালগুলোকে কারণ জানতে নোটিশ পাঠানো হয়েছে। সন্তোষজনক উত্তর না পেলে ওই হাসপাতালগুলোর বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়া হবে। এর আগে টেস্ট না করেই রিপোর্ট প্রদান করায় তিন হাসপাতালকে ৪২ লাখ টাকা জরিমানা করে র্যাব, স্বাস্থ্য অধিদফতর এবং ওষুধ প্রশাসন অধিদফতরের সহযোগিতায় পরিচালিত ভ্রাম্যমাণ আদালত। গত সোমবার র্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত টেস্ট না করেই রিপোর্ট দেওয়া, মেয়াদোত্তীর্ণ রিএজেন্ট ব্যবহার, বেশি দামে ওষুধ বিক্রিসহ নানা অভিযোগে তিনটি হাসপাতালকে এই টাকা জরিমানা করে। এর মধ্যে-উত্তরার ক্রিসেন্ট হাসপাতালকে ১৭ লাখ, লুবনা হাসপাতালকে ২০ লাখ এবং উত্তরার আরএমসি হাসপাতালকে ৫ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে।
সরেজমিনে গতকাল পল্টনের ইফতি ডায়াগনস্টিক সেন্টার, ফকিরাপুলের মর্ডান ডায়াগনস্টিক সেন্টার, গ্রীণ রোডের কমফোর্ট হাসপাতাল, ঢাকা মেডিকেলের সামনের পিওর ডায়াগনস্টিক সেন্টার, গ্রীণ রোডের বিআরবি হাসপাতাল লিমিটেড, শমরিতা জেনারেল হাসপাতাল ও স্কয়ার হাসপাতাল, পুরান ঢাকার মেডিনোভা, আসগর আলী হাসপাতাল এবং মর্ডান ডায়াগনস্টিক সেন্টার ঘুরে দেখা যায়, প্রত্যেকটি হাসপাতাল ডেঙ্গু টেষ্ট বাবদ অতিরিক্ত ৫০/১০০ টাকা আদায় করছে। বাড়তি অর্থ আদায়ের বিষয়ে অধিকাংশ ডায়াগনস্টিক সেন্টার বলছে ব্লাড রাখার টিউব এবং সিরিঞ্জের দাম রাখা হচ্ছে।
বিআরবি হাসপাতাল লিমিটেড ও পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টারে ডেঙ্গু জ্বরের প্রতি টেস্টে নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে ৫০ টাকা বেশি রাখা হচ্ছে। হাসপাতাল সংশ্লিষ্টরা বলছেন, টিউব ও অন্যান্য চার্জ সংযুক্ত করে অতিরিক্ত এই টাকা রোগীদের থেকে নেয়া হচ্ছে। যদিও হাসপাতালের ব্যবস্থাপক মো. রাশিদুল ইসলাম বলেন, অতিরিক্ত টাকা নেয়ার কোনো সুযোগ নেই। যদি কেউ নিয়ে থাকেন, তবে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
অথচ নতুন নির্ধারিত মূল্য অনুসারে এনএস-ওয়ান পরীক্ষায় সর্বোচ্চ ৫০০ টাকা, আইজিজি ও আইজিএম পরীক্ষায় ৪০০ টাকা ও সিবিসি পরীক্ষায় সর্বোচ্চ ৪০০ টাকা নেয়া যাবে।
অতিরিক্ত টাকা নেয়ার প্রসঙ্গে ধানমন্ডি ল্যাবএইড স্পেশালাইজড হাসপাতালের কর্মকর্তা বলেন, আমাদের সফটয়ারে সমস্যা হয়েছে। সফটওয়ারে নতুন তালিকা যুক্ত না করায় আগের টেস্ট ফিই গ্রাহকদের কাছ থেকে নেয়া হচ্ছে। সরকারী হাসপাতালে রোগীর ঠাঁই না হওয়ায় সুযোগে নামী-দামী বেসরকারি হাসপাতাল বা ডায়াগনস্টিক সেন্টারই নয়; কিছু অখ্যাত হাসপাতাল রোগীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ফি নিচ্ছে।
এ রকমই মিরপুর-১২ নম্বর এলাকায় রোকেয়া হাসপাতাল; একটি ভবনের দুইতলা পর্যন্ত চারটি ফ্ল্যাট নিয়ে এর কার্যক্রম চলে। এখানেও রয়েছে ডেঙ্গু রোগীর ব্যাপক চাপ।
এখানে ডেঙ্গু টেস্টের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত ফি নেওয়ার অভিযোগ করে আসমা আক্তার নামে এক নারী বলেন, আমার ছেলের ডেঙ্গুর লক্ষণ দেখা দিয়েছে মনে করে দ্রæত এই হাসপাতালে নিয়ে আসি। কিন্তু টেস্টের রিপোর্ট দেখে জানতে পারলাম ওর ডেঙ্গু নেই। কিন্তু প্রতি টেস্টে ফি নিয়েছে সর্বনিম্ন এক হাজার ২০০ টাকা। এমন অভিযোগ পাওয়া গেছে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার অনেক ছোট হাসপাতাল থেকেও।
তবে রাজধানীর বাড্ডা এলাকায় ইবনে সিনা ও পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টারে গিয়ে এ ধরনের চিত্র লক্ষ্য করা যায়নি। এখানে সরকার নির্ধারিত সঠিক ফি গ্রহণ করতে দেখা গেছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার পরিচালক অধ্যাপক ডা. সানিয়া তাহমিনা বলেন, ডেঙ্গু পরীক্ষায় বেঁধে দেওয়া ফি ঠিকমতো আদায় হচ্ছে কি-না, সে বিষয়ে নজরদারি করতে অধিদপ্তরের ১০টি দল সোমবার থেকে মাঠে নেমেছে। পাশাপাশি প্রতিটি হাসপাতালে ‘ডেঙ্গু কর্নার’ এবং বিষয়টি তদারকি করার জন্য ফোকাল পয়েন্ট নিয়োগ দেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
স¤প্রতি ডেঙ্গু জ্বরের প্রকোপ ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পাওয়ায় সরকারি হাসপাতালগুলোতে বিনামূল্যে ডেঙ্গু নির্ণয় করতে নির্দেশনা দিয়েছিল স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। একইসঙ্গে বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে রোগটি নির্ণয়ে ফি নির্ধারণ করে দিয়েছিল দপ্তরটি। কিন্তু এ নির্দেশনা মানছে না রাজধানীর বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকগুলো। নিচ্ছে অতিরিক্ত ফি।
ডেঙ্গু পরিস্থিতির আরও অবনতির আশঙ্কা বিশেষজ্ঞদের :
প্রতিদিনই বাড়ছে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা। সেই সঙ্গে বাড়ছে আতঙ্ক। আগামী আগস্ট মাসে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা আরও বাড়ার আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) এক গবেষণার ফলাফলে এমন তথ্যই উঠে এসেছে। গবেষণায় জানানো হয়েছে, দেশের গত আট বছরের তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, আগস্টে ডেঙ্গুতে আক্রান্তের সংখ্যা বেশি থাকে। দ্বিতীয়বার ডেঙ্গুতে আক্রান্তদের এক থেকে পাঁচ শতাংশ মৃত্যুর সম্ভাবনা থাকে। এছাড়া চিকন বা স্লিম মানুষদের চেয়ে মোটা বা স্থূলকায় মানুষদের ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হবার ঝুঁকি বেশি। কেননা মোটা মানুষের শরীরে অতিরিক্ত চর্বির উপস্থিতির কারণে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা শক্তিশালীভাবে কাজ করতে পারে না। গতকাল ‘চলমান ডেঙ্গু প্রাদুর্ভাব ও সাম্প্রতিক গবেষণার ফলাফল প্রকাশ’ উপলক্ষে বিএসএমএমইউ’তে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান বিশ^বিদ্যালয়ের ভিসি প্রফেসর ডা. কনক কান্তি বড়ুয়া। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন প্রো-ভিসি ডা. সাহানা আখতার রহমান, ডা. মুহাম্মদ রফিকুল আলম, কোষাধ্যক্ষ ডা. মোহাম্মদ আতিকুর রহমান, রেজিস্ট্রার ডা. এ বি এম আব্দুল হান্নান, প্রক্টর ডা. সৈয়দ মোজাফফর আহমেদ, পরিচালক (হাসপাতাল) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এ কে মাহাবুবুল হক, ভাইরোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান প্রফেসর ডা. সাইফ উল্লাহ মুন্সী, হেমাটোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান প্রফেসর ডা. মো. আব্দুল আজিজ প্রমুখ। সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, বিএসএমএমইউতে গত জানুয়ারি থেকে ২৫ জুলাই পর্যন্ত করা জরিপে ৬ হাজারেরও বেশি মানুষের ডেঙ্গু পরীক্ষা করা হয়েছে। তাতে ২৬ শতাংশ মানুষের এনএসওয়ান পজিটিভ এসেছে। ৬ শতাংশের আইজিএম পজিটিভ এসেছে। আইজিএম এবং আইজিই দুটোই পজিটিভ এসেছে ৫ শতাংশ মানুষের। এছাড়াও যাদের বয়স ১৬-৩০ বছরের মধ্যে তারাই বেশি ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হচ্ছেন। নারীদের চেয়ে পুরুষরাই এ জ¦রে আক্রান্ত হচ্ছে বেশি। একইসঙ্গে চারটি সেরোটাইপেই মানুষ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হচ্ছে।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীর ছুঁটি বাতিল :
ডেঙ্গুর প্রকোপ মোকাবেলায় স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ঈদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে। গতকাল মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের ভারপ্রাপ্ত সচিব (সমন্বয় ও সংস্কার) শেখ মুজিবুর রহমান বলেন, ডেঙ্গু পরিস্থিতিতে আসন্ন ঈদের ছুটিতে ঢাকার বাইরে যেতে কঠোরভাবে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে। এ ছাড়া স্বাস্থ্য বিভাগের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ঈদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে। যেসব চিকিৎসক ট্রেনিংয়ে আছেন তাদেরকে ট্রেনিং বাদ দিয়ে চিকিৎসাকেন্দ্রে চিকিৎসা দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। গতকাল গণমাধ্যমে পাঠানে এক বিবৃতিতে বাংলাদেশ মেডিকেল এসোসিয়েশনের সভাপতি ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন ও মহাসচিব ডা. মো. ইহতেশামুল হক চৌধুরী দেশের ডেঙ্গু আক্রান্ত চিকিৎসকদের ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, দেশের বিভিন্ন এলাকায় ডেঙ্গুর প্রকোপ অন্যান্য বছরের তুলনায় ব্যাপকহারে বেড়েছে। আপনারা ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীকে চিকিৎসাসেবা দেয়ার পাশাপাশি এ রোগ প্রতিরোধে তাদের করণীয় সম্পর্কে পরামর্শ দেবেন যাতে এ রোগের বিস্তার রোধ করা যায়।
ডেঙ্গু শনাক্তকরণের কীট আমদানিতে জরুরি সভা :
ডেঙ্গু শনাক্তকরণের কীট আমদানির বিষয়ে ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মো. মাহবুবুর রহমানের সঙ্গে ডায়াগনস্টিক রিয়েজেন্ট আন্ড ইক্যুয়েপমেন্ট ট্রের্ডাস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের নেতারা গতকাল জরুরি সভা করেছেন। ওষুধ প্রশাসন অধিদফতরের সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত এই সভায় এসোসিয়েশনের নেতারা বর্তমানে দেশে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যাওয়ায় এবং ডেঙ্গু শনাক্তকরণের কীট আমদানির ওপর আরোপিত ট্যাক্স ও ভ্যাট মওকুফের অনুরোধ করেন। সেই সঙ্গে দুর্যোগকালীন সরাসরি কীট আমদানির সুবিধা দেয়ার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের অনুরোধ জানান।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে ডেঙ্গু সংক্রান্ত ‘মিনিস্টার মনিটরিং সেল’ গঠন :
চলমান ডেঙ্গু রোগ সংক্রান্ত জনভোগান্তি নিরসনে ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকান্ড তদারকী করতে স্বাস্থ্য মন্ত্রী জাহিদ মালেক তাঁর নিজ দপ্তরে ডেঙ্গু রোগ সংক্রান্ত ‘মিনিস্টার মনিটরিং সেল’ নামক একটি আলাদা মনিটরিং সেল গঠন করেছেন। নির্দেশনা অনুযায়ী, ‘মিনিস্টার মনিটরিং সেল’ ডেঙ্গু রোগ পরীক্ষার ফি সংক্রান্ত সরকারি নির্দেশনার কোন প্রকার লঙ্ঘন হলে তার অভিযোগ গ্রহণ করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। এ বিষয়ে জন-ভোগান্তি লাঘবে ‘মিনিস্টার মনিটরিং সেল’ এ সার্বক্ষণিক যোগাযোগ ব্যবস্থা চালু করা হয়েছে।
চট্টগ্রাম : গতকাল (মঙ্গলবার) আরও ৪৪ জন ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়েছে। সিভিল সার্জন ডা. আজিজুর রহমান সিদ্দিকী জানান, বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে ১৫ রোগী শনাক্ত হয়েছে। সবমিলিয়ে চট্টগ্রামে ১৪৬ জন ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়েছে।
রাজশাহী : রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গত ২৪ ঘন্টায় ৯ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছেন। সব মিলিয়ে এখন রোগীর সংখ্যা ৩৩জন।
বরিশাল : বরিশাল শের এ বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ডেঙ্গু নিয়ে ভর্তি হওয়া দুজনের মৃত্যু ঘটেছে গত সোমবার গভীর রাতে। এদের মধ্যে বরিশালের বাকেরগঞ্জের শ্যামপুরের নাসির খান(২৪) সোমবার রাত সাড়ে ৯টায় ও পিরোজপুরের কাউখালীর গোসনতলার সোহেল(১৮) রাত দেড়টার দিকে মারাত্মক ডেঙ্গু জ্বর নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়। এরিপোর্ট লেখা পর্যন্ত হাসপাতালটিতে ২৪ ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী শের-ই- বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে বলে পরিচঅলক জানিয়েছেন। এ পর্যন্ত হাসপাতালটিতে প্রায় ৭০জন ডেঙ্গু রোগীর চিকিৎসা দেয়া হয়েছে।
সিলেট : সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালেই ভর্তি হয়েছেন ২০ জন ডেঙ্গু রোগী।
বগুড়া : বগুড়ায় মোট ৭৭ জন ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত রোগীর সন্ধান পাওয়া গেছে। এর মধ্যে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ (শজিমেক) হাসপাতালে ভর্তি আছেন ৪০ জন। এদিকে, মশক নিধন কাজ শুরু করেছে বগুড়ার ট্রাক মালিক সমিতির নেতৃবৃন্দ।
রাজবাড়ী : রাজবাড়ী সদর হাসপাতালে ১৪ জন ডেঙ্গু রোগীর সন্ধান পাওয়া গেছে।
শেরপুর : শেরপুর জেলা হাসপাতালে গতকাল মঙ্গলবার বেলা ১১টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় আরও ২ ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছেন। এনিয়ে শেরপুরে এ পর্যন্ত ১৭ জন ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়েছে।
হবিগঞ্জ : ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে এ পর্যন্ত ৬ জন হবিগঞ্জ আধুনিক সদর হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। এছাড়া আরও চারজনকে ঢাকায় পাঠানো হয়েছে।
সিরাজগঞ্জ : সিরাজগঞ্জে আরও ছয় ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত করেছে জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ। এ নিয়ে গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে জেলায় মোট ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে ১৯ জনে দাঁড়িয়েছে।
নবাবগঞ্জ : ঢাকার নবাবগঞ্জে গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত নবাবগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি রোগীর সংখ্যা ১৫ জন।
টাঙ্গাইল : টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালে গত চারদিনে ২৫ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছে। তাদের মধ্যে ২১ জন পুরুষ ও ৪ জন মহিলা রোগী রয়েছে।
ফেনী : ফেনী সদর হাসপাতাল ও ডায়াবেটিক হাসপাতালে গত ২৪ ঘণ্টায় আরও ১৪ ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছেন।
ভোলা : ভোলায় ডেঙ্গু জ্বরে ১০ জন রোগী আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন বলে জানা গেছে।
চাঁদপুর : চাঁদপুর শহরের ৬ টি প্রতিষ্ঠানে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হয়। অভিযানে ৫ টি প্রতিষ্ঠানকে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইনে মোট ৪০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ : চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর হাসপাতালে ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত তিনজন মঙ্গলবার ভর্তি হয়েছে। এনিয়ে এপর্যন্ত চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর হাসপাতালে ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত রোগী ভর্তির সংখ্যা দাঁড়ালো ১২ জনে।
কুড়িগ্রাম : কুড়িগ্রাম সদর জেনারেল হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগীর চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের চাপ বৃদ্ধি পাওয়ায় ডেঙ্গু কর্ণার চালু করেছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। এ ধরনের রোগীর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮ জনে।
কুষ্টিয়া : কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে গত ১৮ ঘণ্টায় ১৮ জন ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হয়েছে। অর্থাৎ ঘণ্টায় একজন করে রোগী ভর্তি হচ্ছে। সব মিলিয়ে সরকারি হিসাবমতে, গত ২৪ দিনে ৫৬ জন ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত করা হয়েছে। তবে কয়েকটি ডায়াগনস্টিক সেন্টারে বেসরকারি তথ্য বলছে, এ জেলার ৭০ জন ডেঙ্গু রোগী এখানে শনাক্ত করা হয়েছে।
মাধবপুর (হবিগঞ্জ) : তিন দিনে ২৫ জনের রক্ত পরীক্ষা করে একজন ডাক্তার সহ ৩ জনের ডেঙ্গু পজেটিভ ধরা পড়ে।
নাটোর : নাটোর সদর হাসপাতালে সোমবার সন্ধ্যা থেকে মঙ্গলবার দুপুর ২টা পর্যন্ত ১৪ জন ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয়। তারমধ্যে ৪ জন সদর হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।
সৈয়দপুর (নীলফামারী) : নীলফামারীর সৈয়দপুর হাসপাতালে এক ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীকে ভর্তি করা হয়েছে। তার নাম মো. আসাদ আলী (২৮)।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।