পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
সেই মোটরসাইকেল উদ্ধার
রফিকুল ইসলাম সেলিম : পুলিশ সুপার (এসপি) বাবুল আক্তারের স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতু হত্যার রহস্য উদ্ঘাটন করা যায়নি। কারা কি উদ্দেশে প্রকাশ্যে রাস্তায় তাকে কুপিয়ে ও গুলি করে হত্যা করেছে তা এখনও পুলিশের অজানা। অন্ধকারে ঘুরপাক খাচ্ছে চাঞ্চল্যকর ও লোমহর্ষক এ হত্যা মামলার তদন্ত। সিসিটিভির ফুটেজে কিলিং মিশনে অংশ নেয়া তিনজনের ছবি পাওয়া গেলেও তারা শনাক্ত হয়নি। হত্যাকা-ে খুনীচক্রের ব্যবহৃত মোটরসাইকেলটি উদ্ধার করার দাবি করেছে পুলিশ। এ বিষয়ে চারজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করার কথাও স্বীকার করেছেন চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) কমিশনার মোঃ ইকবাল বাহার।
রোববার সকালে নগরীর ব্যস্ততম ও আর নিজাম রোডে খুন হন এসপি বাবুল আক্তারের স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতু। ছেলেকে স্কুল বাসে তুলে দিতে বাসা থেকে হেঁটে সেখানে আসেন তিনি। মোটরসাইকেলে করে আসা তিন হামলাকারী মিতুকে মোটরসাইকেলের ধাক্কায় রাস্তায় ফেলে প্রথমে কুপিয়ে এবং পরে মাথায় গুলি করে মৃত্যু নিশ্চিত করে চলে যায়। সিএমপির ডিবির এডিসি পদে থাকা অবস্থায় পুলিশ সুপার হিসেবে পদোন্নতি পান বাবুল আক্তার। এরপর তাকে পুলিশ সদর দপ্তরে বদলি করা হয়। রোববার নতুন কর্মস্থলে যোগ দিতে ঢাকায় যান তিনি।
এদিকে দেশজুড়ে তোলপাড় সৃষ্টিকারী এ হত্যাকা-ের ২৪ ঘণ্টা পর গতকাল (সোমবার) পাঁচলাইশ থানায় মামলা হয়েছে। মামলার বাদী হয়েছেন নিহতের স্বামী পুলিশ সুপার বাবুল আক্তার। মামলার এজাহারে অজ্ঞাতনামা তিনজনকে আসামী করা হয়। সিসিটিভি ফুটেজে পাওয়া ঘটনার বর্ণনা দেয়া হয় মামলার এজাহারে। গতকালই মামলাটি নগর গোয়েন্দা পুলিশে (ডিবি) হস্তান্তর করা হয়েছে।
নির্মম এ হত্যাকা-ের পরপর তদন্তে নামে পুলিশের একাধিক টিম। ঘটনাস্থল থেকে নানারকম আলামত সংগ্রহ করা হয়। আশপাশের বিভিন্ন ভবনের সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে খুনীচক্রের তিন সদস্যকে ধরতে অভিযানে নামে পুলিশ। রাতভর অভিযানে পাঁচলাইশ থানার বাদুড়তলা বড় গ্যারেজ এলাকায় পাওয়া যায় একটি মোটর সাইকেল, যেটি হত্যাকা-ে ব্যবহার করা হয়েছিল বলে পুলিশের ভাষ্য। বাদুরতলার গ্যারেজ থেকে ওই মোটরসাইকেলটি উদ্ধারের পর পুলিশ কর্মকর্তাদের বক্তব্যেও পরিবর্তন এসেছে। খুনের পর সিএমপির কমিশনারসহ নগর পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা তাৎক্ষণিক এ হত্যাকা-ে জঙ্গি সংগঠনের সংশ্লিষ্টতা থাকতে পারে বলে মন্তব্য করেন। বাবুল আক্তারের বাসায় গিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালও সন্দেহের তীর ছুঁড়েন জঙ্গিদের দিকে।
হত্যাকা-ে ব্যবহৃত মোটরসাইকেল উদ্ধারের পর ওই বক্তব্য থেকে কিছুটা সরে এসে সন্দেহের তীর জামায়াত-শিবিরের দিকে ছুঁড়লেন পুলিশ কমিশনার ইকবাল বাহার। এখন খুনের সঙ্গে জঙ্গি সংগঠন জামায়াতুল মোজাহিদিন বাংলাদেশের (জেএমবি) পাশাপাশি ছাত্রশিবিরের ক্যাডাররাও জড়িত বলে সন্দেহ করছে পুলিশ। সিএমপি কমিশনার মো. ইকবাল বাহার সাংবাদিকদের বলেন, প্রাথমিকভাবে আমাদের কাছে যে তথ্য আছে দুর্বৃত্তরা খুনের পর গোলপাহাড় মোড় দিয়ে কাতালগঞ্জ হয়ে শুলকহর দিয়ে ঢুকে বাদুরতলা দিয়ে বেরিয়ে গেছে।
এই পুরো এলাকাটা জামায়াত-শিবির অধ্যুষিত। এজন্য এ ঘটনার সঙ্গে শিবিরের সম্পৃক্ততার বিষয়ে সন্দেহ করছি। না হলে দুর্বৃত্তরা ওই এলাকা দিয়ে পালিয়ে যাবার সাহস পেল কেন? তিনি বলেন, আমরা দেখে আসছি শিবিরের যারা প্রাক্তন নেতাকর্মী তারাই কিন্তু জেএমবি গড়ে তুলেছে। যারা জেএমবি করে তাদের একটি বড় অংশই বর্তমান কিংবা প্রাক্তন শিবির। এ কারণেই হত্যাকা-ে জেএমবির সঙ্গে শিবিরও জড়িত ছিল কিনা সেটা আমরা খতিয়ে দেখছি। পুলিশ কমিশনার বলেন, বাবুল আক্তার দায়িত্ব পালনকালে সন্ত্রাসী পেশাদার অপরাধী, অস্ত্র-মাদক ব্যবসায়ীসহ অনেকের বিরুদ্ধে কঠোর অভিযান পরিচালনা করেছিলেন। এদের কেউ তার প্রতি প্রতিহিংসাপরায়ণ হয়ে তার স্ত্রীকে হত্যা করেছে কিনা তা মাথায় রেখে তদন্ত এগিয়ে চলছে। হত্যাকা-ের রহস্য উদ্ঘাটনে কোন ক্লুকেই কম গুরুত্ব দিচ্ছে না পুলিশ।
বাবুল আক্তারের সহকর্মী কয়েকজন পুলিশ কর্মকর্তা জানান, খুনের প্রকৃত রহস্য উদ্ঘাটন করতে হলে একাধিক বিষয় মাথায় রেখে তদন্ত করতে হবে। বাবুল আক্তার দীর্ঘদিন চট্টগ্রামে বিভিন্ন পর্যায়ে দায়িত্ব পালনকালে বিভিন্ন সংঘবদ্ধ সন্ত্রাসী গোষ্ঠী, পেশাদার অপরাধী, মাদক ও অস্ত্র ব্যবসায়ী, ভূমিদস্যু ও জঙ্গি সংগঠনের বিরুদ্ধে সাঁড়াশি অভিযান চালিয়েছেন। তিনি সিএমপির কোতোয়ালী জোনের সহকারী কমিশনার, হাটহাজারী সার্কেলের এএসপি, কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এবং সর্বশেষ সিএমপির ডিবির এডিসি হিসেবে অসংখ্য সফল অভিযান পরিচালনা করেন।
এর মধ্যে মাত্র তিনটি অভিযান ছিল জঙ্গিদের বিরুদ্ধে। আর বাকি সব অভিযান ছিল পেশাদার অপরাধী, অস্ত্র-মাদক ব্যবসায়ী ও ভূমিদস্যুদের বিরুদ্ধে। অসংখ্য চাঞ্চল্যকর মামলার রহস্য উদঘাটন এবং খুনীচক্রের সদস্যদের পাকড়াও করেছিলেন তিনি। সুতরাং মিতু হত্যা মামলায় এসব বিষয়কে সামনে এনে তদন্ত করতে হবে। আর তা না হলে হত্যাকা-ের প্রকৃত রহস্য আড়ালেই থেকে যেতে পারে। বাবুল আক্তারের মতো একজন পেশাদার, সৎ, অসীম সাহসী ও রাষ্ট্রীয় পদকপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তার স্ত্রীকে নির্মমভাবে খুনের এ ঘটনাকে গুরুত্বের সাথে নিয়ে নিরপেক্ষ তদন্ত হওয়া উচিত বলেও মনে করেন কয়েকজন পুলিশ কর্মকর্তা।
বাবুল আক্তার তার পরিবারের উপর হামলার আশঙ্কা করছিলেন দীর্ঘদিন থেকে। এ আশঙ্কা থেকে তিনি সাবধানে চলাফেরা করতেন। তার পরিবারের সদস্যদেরও সাবধানে চলাফেরা করার পরামর্শ দিতেন। ঢাকায় নতুন কর্মস্থলে যোগ দিতে যাওয়ার আগে পাঁচলাইশ থানার ওসি মহিউদ্দিন মাহমুদকে তার পরিবারের খেয়াল রাখতে বলেন তিনি। স্ত্রী খুনের পর ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম এসেই ওসির কাছে জানতে চান কেন তার পরিবারকে দেখে রাখা হয়নি। মামলার তদন্তে এসব বিষয়েও বিবেচনায় আনা দরকার বলে মনে করেন বাবুল আক্তারের সহকর্মীরা।
এদিকে তদন্তে চারজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন সিএমপির কমিশনার ইকবাল বাহার। গতকাল দুপুরে নিজের কার্যালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা কাউকে গ্রেপ্তার করিনি। তথ্য উদ্ঘাটনের জন্য চারজনকে আনা হয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদের পর প্রয়োজন হলে তাদের আটক দেখানো হবে। ওই চারজনের পরিচয় কী, তাদের কোথা থেকে কখন ধরা হয়েছে, সে তথ্য প্রকাশ করেননি পুলিশ কমিশনার। তিনি বলেন, তদন্তের স্বার্থে কিছু বলা যাবে না। পরে প্রয়োজন হলে আটক দেখিয়ে নাম পরিচয় প্রকাশ করা হবে।
পুলিশ কমিশনার বলেন, মূলত গোয়েন্দা পুলিশ অন্য সব বিভাগের সহযোগিতা নিয়ে এ হত্যাকা-ের তদন্ত করছে। এ হত্যাকা-ে সন্দেহভাজন হিসেবে জেএমবির সংশ্লিষ্টতাকে প্রাধান্য দিয়ে সব দিক খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এর আগে রোববার রাতে পাঁচলাইশ থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) ত্রিরতন বড়ুয়াকে বাদী করে মামলার একটি এজাহার তৈরি করা হলেও ঊর্ধ্বতন পর্যায়ের নির্দেশে শেষ পর্যন্ত মামলাটি হয়নি বলে জানিয়েছেন নগর পুলিশের সহকারী কমিশনার (পাঁচলাইশ জোন) আসিফ মহিউদ্দিন। তিনি জানিয়েছেন, শেষ মুহূর্তে পুলিশ সুপার বাবুল আক্তারকে মামলার বাদী করার সিদ্ধান্ত হওয়ায় মামলার নম্বর আর দেয়া হয়নি। সিএমপি কমিশনার বলেন, বাবুল আক্তার বাদী হয়ে মামলা করেছে। মামলার তদন্তভার নগর গোয়েন্দা পুলিশকে (ডিবি) দিয়েছি। অন্যান্য সব সংস্থার সদস্যরা ডিবিকে সহযোগিতা করবে।
এদিকে সিসি ক্যামেরায় ধরা পড়া দৃশ্য পর্যালোচনা করে একটি প্রতিবেদন তৈরি করেছে নগর গোয়েন্দা পুলিশ। প্রতিবেদনটি ঢাকা থেকে আসা পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের হাতে দেয়া হয়েছে বলে সূত্র জানিয়েছে। সূত্রমতে, সিসি ক্যামেরার ফুটেজ পর্যালোচনায় পুলিশ পেয়েছে মাত্র ৪৫ সেকেন্ডের মধ্যে ঘাতকরা মিতু আক্তারকে হত্যা করে ঘটনাস্থল ত্যাগ করেছে। রোববার ৬টা ৩২ মিনিটে ছেলে মাহিরকে নিয়ে মিতু আক্তার বাসা থেকে বের হন। মাত্র ৪৪ সেকে-ে তিনি ঘটনাস্থলের কাছে পৌঁছে যান। ৩৩ মিনিট ৩০ সেকেন্ডের মধ্যে ঘাতকরা মৃত্যু নিশ্চিত করে পালিয়ে গেছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।