Inqilab Logo

শনিবার ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ০১অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

মীর কাসেম আলীর মৃত্যু পরোয়ানা জারি

প্রকাশের সময় : ৭ জুন, ২০১৬, ১২:০০ এএম

রায়ের বিরুদ্ধে রিভিউ করব -খন্দকার মাহবুব হোসেন
প্রসিকিউশনের পারফরম্যান্সেও সন্তুষ্ট নয় আপিল বিভাগ -মাহবুবে আলম
স্টাফ রিপোর্টার : জামায়াতের কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সদস্য মীর কাসেম আলীর ফাঁসির রায় বহাল রেখে আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হওয়ার পর মৃত্যু পরোয়ানা জারি করেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। সর্বোচ্চ আদালতের রায় ঘোষণার প্রায় তিন মাস পর গতকাল (সোমবার) দুপুরে বিচারকরা সেই রায়ে স্বাক্ষর করেন। এরপর বিকালে ২৪৪ পৃষ্ঠার ওই রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি এ মামলার বিচারিক আদালত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে পাঠানো হয় বলে আপিল বিভাগের অতিরিক্ত রেজিস্ট্রার অরুনাভ চক্রবর্তী জানান।
ট্রাইব্যুনালের রেজিস্ট্রার মো: শহীদুল আলম ঝিনুক জানান, বিচারপতি মোহাম্মদ আনোয়ার উল হকের নেতৃত্বাধীন ট্রাইব্যুনালের তিন বিচারক সন্ধ্যা পৌনে ৭টায় আসামির মৃত্যু পরোয়ানায় স্বাক্ষর করেন। এরপর লাল সালুতে মুড়ে এই মৃত্যু পরোয়ানা ট্রাইব্যুনাল থেকে পাঠানো হবে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে। সেখান থেকে পরোয়ানা যাবে গাজীপুরের কাশিমপুর কারাগারে; মীর কাসেম সেখানেই আছেন। নিয়ম অনুযায়ী রায়ের প্রত্যায়িত অনুলিপি জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়েও পাঠানো হয়েছে। মৃত্যু পরোয়ানা হাতে পেলে আসামিকে তা পড়ে শোনাবে কারা কর্তৃপক্ষ। ওই পরোয়ানার ভিত্তিতেই শুরু হবে সাজা কার্যকরের প্রস্তুতি।
জামায়াতের কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সদস্য মীর কাসেম আলীর ফাঁসির রায় বহাল রেখে আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয়েছে। গতকাল (সোমবার) দুপুর ১২টার দিকে আপিল বিভাগের সংশ্লিষ্ট শাখা থেকে ২৪০ পৃষ্ঠার এ পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয় বলে জানিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের অতিরিক্ত রেজিস্ট্রার সাব্বির ফয়েজ। পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের পর রায় পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) ঘোষণা দিয়েছেন মীর কাসেমের আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন। এদিকে রায়ের পর্যাবেক্ষণে মামলা পরিচালনার ক্ষেত্রে প্রসিকিউটরদের অদক্ষতা-অযোগ্যতা আমলে এনে তাদের প্রতি অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন সর্বোচ্চ আদালত। প্রসিকিউশনের পারফরম্যান্সেও সন্তুষ্ট নয় আদালত জানিয়ে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেছেন, সম্পূর্ণ রায় আমার হাতে এলে বুঝব এটাতে তারা বিস্তারিত কি বলেছেন।
গতকাল দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে ২৪৪ পৃষ্ঠার এ পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ করেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বে পাঁচ বিচারপতির আপিল বেঞ্চ রায়টি দেন। অন্য বিচারপতিরা হলেনÑ বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন, বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী, বিচারপতি মির্জা হোসেইন হায়দার ও বিচারপতি মোহাম্মদ বজলুর রহমান।
এদিকে নিয়ম অনুযায়ী এই রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি ট্রাইব্যুনালে পৌঁছেছে। সেখান থেকে লাল কাপড়ে মোড়ানো মৃত্যু পরোয়ানাসহ তা কারাগারে পাঠানো হবে। সেই মৃত্যু পরোয়ানা মীর কাসেম আলীকে পড়ে শোনাবে কারা কর্তৃপক্ষ। এরপর আইন অনুযায়ী এখন ১৫ দিনের মধ্যে রায় পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) আবেদন করতে পারবেন মীর কাসেম। রিভিউতে তার আবেদন খারিজ হলে আর কোনো আইনি প্রতিকার তার থাকবে না। সে ক্ষেত্রে দোষ স্বীকার করে নিয়ে রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষার আবেদন তিনি করতে পারবেন। সেই আবেদন গৃহীত না হলে সরকারের নির্বাহী আদেশে কারা কর্তৃপক্ষ দ- কার্যকর করবে।
প্রসঙ্গত, গত ৮ মার্চ প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের আপিল বেঞ্চ ট্রাইব্যুনালে মীর কাসেম আলীকে দেয়া মৃত্যুদ- বহাল রাখেন। তবে ট্রাইব্যুনাল দু’টি অভিযোগে মৃত্যুদন্ড দিলেও আপিল বিভাগ একটি অভিযোগে এই দ- বহাল রাখেন।
গতকাল দুপুরে মীর কাসেম আলীর মৃত্যুদ- বহাল রেখে দেয়া আপিলের রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশিত হওয়ার পর মীর কাসেমের আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেছেন, ‘রায় প্রকাশ হয়েছে। আমরা রায়ের বিরুদ্ধে রিভিউ আবেদন দাখিল করব। আশা করছি সেখানে আমরা ন্যায়বিচার পাব।’
‘লবিস্টদের দেয়া রসিদ বিবেচনায় নিয়ে সর্বোচ্চ আদালত বলেছেন, মীর কাসেম আলী খুবই প্রভাবশালী ব্যক্তি এবং বিচারকে নষ্ট করার জন্য প্রচেষ্টা চালিয়েছেন’ বলে জানিয়েছেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। তিনি বলেন, ‘যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বন্ধে মীর কাসেম আলীর লবিস্ট নিয়োগের বিষয়ে শুনানির সময় একটি কাগজ দাখিল করেছিলাম। আদালত বলেছেন, বিচার বন্ধে ২৫ মিলিয়ন ডলার খরচ করেছেন কী করেননি সেটা প্রমাণসাপেক্ষে। তবে লবিস্টদের দেয়া রসিদ বিবেচনায় নিয়ে বলেছেন, মীর কাসেম আলী খুবই প্রভাবশালী ব্যক্তি এবং বিচারকে নষ্ট করার জন্য প্রচেষ্টা চালিয়েছেন’। মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে ফাঁসি বহাল রেখে মীর কাসেম আলীর আপিল মামলার পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের পর গতকাল নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের কাছে এসব মন্তব্য করেন তিনি।
তিনি জানান, আইন অনুসারে সোমবারই পূর্ণাঙ্গ রায় যাবে বিচারিক আদালত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে। সেখান থেকে মৃত্যু পরোয়ানা জারি হয়ে রায়সহ যাবে কারাগারে। সেখানে মীর কাসেম আলীকে রায় অবগত করা হবে। রায় অবগত হওয়ার পর তিনি রায় পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) আবেদন জানানোর জন্য ১৫ দিন সময় পাবেন। এ আবেদন জানালে এর নিষ্পত্তিতে শেষ হবে মামলাটির বিচারিক প্রক্রিয়া। ‘আসামিপক্ষ রিভিউ আবেদন জানালে আমরা শুনানিতে আমাদের বক্তব্য উপস্থাপন করব। তারা রিভিউ করেন কি না, সেটির জন্য অপেক্ষায় আছি’Ñ বলেন মাহবুবে আলম।
২০১৪ সালের ২ নভেম্বর মুক্তিযুদ্ধে চট্টগ্রাম অঞ্চলের মানবতাবিরোধী অপরাধের হোতা মীর কাসেম আলীকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদ-াদেশ দেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২। এ রায়ের বিরুদ্ধে ওই বছরের ৩০ নভেম্বর খালাস চেয়ে মীর কাসেম আলী আপিল করেন।
ট্রাইব্যুনালে আটজনকে নির্যাতনের পর হত্যা ও লাশ গুম এবং ২৪ জনকে অপহরণের পর চট্টগ্রামের বিভিন্ন নির্যাতনকেন্দ্রে আটকে রেখে নির্যাতনসহ মানবতাবিরোধী ১৪টি অভিযোগে অভিযুক্ত হন মীর কাসেম আলী। এ ১৪টি অভিযোগের মধ্যে ১০টি প্রমাণিত হয়। বাকি ৪টি অভিযোগ প্রসিকিউশন সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ করতে পারেননি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: মীর কাসেম আলীর মৃত্যু পরোয়ানা জারি
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ