Inqilab Logo

মঙ্গলবার ১৯ নভেম্বর ২০২৪, ০৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৬ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

লাশ বহন করতে না চাইলে ধমকান মেজর আরিফ

প্রকাশের সময় : ৭ জুন, ২০১৬, ১২:০০ এএম

নারায়ণগঞ্জ থেকে স্টাফ রিপোর্টার : সাতজনকে অপহরণের পর রাতে জানানো হয় ইঞ্জিন চালিত বোট নিয়ে কাঁচপুর যেতে। নির্দেশ মোতাবেক কাঁচপুর যাই। সেখানে ৭ জনের লাশ উঠানোর সময়ে তিনজনই আঁতকে উঠি। তখন অফিসারদের বলি, লাশ কেন? স্যার আমাদের তো টহল দেয়ার কথা।
লাশ তো বহনের কথা না। তখন আরিফ হোসেন (র‌্যাব-১১-এর সাবেক উপ-অধিনায়ক ও ইতোমধ্যে অবসরে পাঠানো সেনাবাহিনীর মেজর বলেন, এই ব্যাটা চুপ থাক। আমি যা নির্দেশ দেই তাই কর। পরে ইঞ্জিন চালিত বোটে করে ৭ জনের লাশ শীতলক্ষ্যা ও ধলেশ্বরীর মোহনাতে নিয়ে ফেলে আসা হয়। নারায়ণগঞ্জের আলোচিত সাত খুনের ঘটনায় সোমবার নারায়ণগঞ্জ আদালতে র‌্যাবে কর্মরত ৫ জনের স্বাক্ষ্যের মধ্যে লিডিং সি ম্যান আবদুস সামাদ, নায়েক আজম আলী ও আবদুর রাজ্জাক আদালতে স্বাক্ষ্য প্রদানকালে এ তথ্য দেন। সাত খুনের ঘটনার সময় তারা নারায়ণগঞ্জ শহরের পুরাতন কোর্ট এলাকাতে অবস্থিত র‌্যাব-১১ এর ক্যাম্পে ছিলেন যেটার দায়িত্বে ছিলেন এম এম রানা (র‌্যাব-১১ এর চাকরিচুত্য ও অবসরে পাঠানো নৌবাহিনীর কমান্ডার)।
সাক্ষ্য দেয়া অপর দুইজনের মধ্যে মেজর সুরুজ জানান, তিনি নরসিংদি ক্যাম্পে থাকা সময়ে নারায়ণগঞ্জ ক্যাম্পের কয়েকজন সদস্য গিয়ে খাবারের জন্য দুই হাজার টাকা চেয়ে নেন। পরে তিনি সাত খুনের বিষয়গুলো জানতে পারেন।
র‌্যাব-১১ এর ডিএডি আবদুস সালাম শিকদার জানান, ২০১৪ সালের ২৭ এপ্রিল সকালে তাকে মেজর আরিফ নির্দেশ দেন ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোডের খান সাহেব ওসমান আলী জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামের সামনে চেকপোস্ট বসাতে। দুপুরে ফোন দিয়ে জানান, সাদা ও কালো রঙয়ের দুটি প্রাইভেটকার আটকাতে। দুপুরে ওই দুটি প্রাইভেটকার আটকানোর আগেই মেজর আরিফ হোসেন ও কমান্ডার এম এম রানাকে বহন করা দুটি গাড়ি ওই কালো ও সাদা প্রাইভেটকারের সামনে গিয়ে গতিরোধ করে। তখন দুটি গাড়ি হতে সাতজনকে নামিয়ে একটি নীল রঙয়ের হাই এইস গাড়িতে উঠানো হয়।
গতকাল সোমবার সকাল সাড়ে ৯টা হতে দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত নারায়ণগঞ্জ জেলা ও দায়রা জজ সৈয়দ এনায়েত হোসেনের আদালতে গ্রেপ্তারকৃত নূর হোসেনসহ ২৩ আসামির উপস্থিতিতে ওই ৫ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়। এ নিয়ে ৬৬ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ হয়েছে। শুনানি শেষে আগামী ১৩ জুন পরবতী সাক্ষ্য গ্রহণের দিন ধার্য করেছে আদালত।
সাত খুনের ঘটনায় ৫ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ শেষে এডভোকেট সাখাওয়াত গণমাধ্যমকর্মীদের জানান, এ মামলায় এর আগে যারা ১৬৪ ধারায় জবানবন্দী দিয়েছেন তাদের দেয়া তথ্যে সাথে আদালতে আজকের দেয়া র‌্যাবের ৫ সদস্যের দেয়া তথ্যের মিল রয়েছে। তিনি আশা করেন সাত খুনের নিহতের পরিবারের সদস্যরা সঠিক ও ন্যায্য বিচার পাবেন।
তথ্যানুসারে, সাত খুনের ঘটনায় দুটি মামলা হয়। একটি মামলার বাদী বিজয় কুমার পাল হলেন নিহত অ্যাডভোকেট চন্দন সরকারের মেয়ে জামাতা ও অপর বাদী সেলিনা ইসলাম বিউটি হলেন নিহত নজরুল ইসলামের স্ত্রী। দুটি মামলাতেই অভিন্ন সাক্ষী হলো ১২৭ জন করে। একারণে উভয় মামলার সাক্ষীদের একই সঙ্গে দুই মামলায় জেরা করা হয়।
প্রসঙ্গত, ২০১৪ সালের ২৭ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের প্যানেল মেয়র নজরুল ইসলাম, তার বন্ধু মনিরুজ্জামান স্বপন, তাজুল ইসলাম, লিটন ও গাড়িচালক জাহাঙ্গীর আলম এবং আইনজীবী চন্দন কুমার সরকার ও তাঁর গাড়িচালক ইব্রাহীম অপহৃত হন। পরে ৩০ এপ্রিল শীতলক্ষ্যা নদী থেকে ছয়জনের ও ১ মে একজনের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।
তদন্ত শেষে প্রায় এক বছর পর গত ৮ এপ্রিল নূর হোসেন, র‌্যাবের সাবেক তিন কর্মকর্তাসহ ৩৫ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। গত ৮ ফেব্রুয়ারি সাত খুনের দুটি মামলায় নূর হোসেন ও র‌্যাবের সাবেক তিন কর্মকর্তাসহ ৩৫ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়। এ মামলায় নূর হোসেন ও র‌্যাবের সাবেক তিন কর্মকর্তাসহ মোট ২৩ জন কারাগারে আটক রয়েছেন। আর চার্জশিটভুক্ত আসামিদের মধ্যে এখনো ১২ জন পলাতক রয়েছে।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: লাশ বহন করতে না চাইলে ধমকান মেজর আরিফ
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ