Inqilab Logo

শনিবার ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৬ আশ্বিন ১৪৩১, ১৭ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

ডেঙ্গু ও নমরুদের মশা

উবায়দুর রহমান খান নদভী | প্রকাশের সময় : ৩০ জুলাই, ২০১৯, ১২:০০ এএম

দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় ম্যালেরিয়া ও ডেঙ্গু আতঙ্ক দিনদিনই বাড়ছে। বাংলাদেশে কয়েক বছর ধরে এডিস মশার কারণে ডেঙ্গু ও আফ্রিকার চিকনগুনিয়া যে সমস্যা হিসেবে দেখা দিয়েছে তা মোকাবেলা করার সক্ষমতা বাংলাদেশের নেই। আল্লাহর রহমত ছাড়া তার পরীক্ষা থেকে কেউ রেহাই পায় না। তার পাঠানো কৌশলী সঙ্কট মোকাবেলা কেবল তার সাহায্য পেলেই সম্ভব।

আল্লাহ বলেন, তোমার প্রভুর সেনাদল সম্পর্কে তিনিই কেবল ভালো জানেন। আর কেউ জানে না। আল কোরআন। অন্য জায়গায় আল্লাহ বলেন, আর যখন আল্লাহ কারো ব্যাপারে মন্দের সিদ্ধান্ত নেন, তখন তিনি ছাড়া আর কেউ রদ করতে পারে না। আর তিনি ছাড়া আর কেউ সিদ্ধান্ত নেয়ার মালিকও থাকে না। আল কোরআন।
দেশে এবারকার ডেঙ্গু অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে ব্যাপক ও ভয়াবহ রূপ পরিগ্রহ করেছে। রাজধানীতে ইতোমধ্যে দশ হাজারের বেশি রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। হাসপাতালে আসেনি এমন রোগীর সংখ্যাও কম হবে না। রাজধানী ছাড়িয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানেও ডেঙ্গু দেখা দিয়েছে।

ঈমানী শক্তি ও আল্লাহর প্রতি নিবেদন মানুষকে বাড়তি সাহস ও আশ্রয় দেয়। মানুষ যখন খোদাবিমুখ ও ঈমানহারা হয়ে যায়, তখন প্রকৃতির খোদায়ী বাহিনী তার জন্য গজব আকারে আসে। বিপদ, বালা-মুসিবত তখন তার জন্য আজাব বলে গণ্য হয়। আর মানুষ যখন বিপদ দেখে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়, আল্লাহর কাছে পানাহ চায়, গোনাহ থেকে তাওবা করে, এক কথায় সে বিপদের কারণে আল্লাহর আরো নৈকট্য লাভে সচেষ্ট হয়, তখন এ বিপদই তার জন্য রহমত হতে পারে। বস্তুবাদী চিন্তায় বিপদকে নিজ শক্তি দ্বারা মোকাবেলার দাবি করা মস্তবড় নাফরমানি।

প্রকৃতির প্রতিটি ভ‚মিকা ও তৎপরতা আল্লাহর জ্ঞাতসারে, তার ইচ্ছায়, তার প্রত্যক্ষ ইশারায় পরিচালিত হয়। আল্লাহ বলেন, সৃষ্টিজগতের প্রতিটি বিষয় আল্লাহর নিকট কিতাবে নিবন্ধিত আছে। আসমান ও জমিনে সচল প্রতিটি বস্তু, যে ওঠা-নামা করে, মাটিতে প্রবিষ্ট হয় বা প্রস্থান করে, আকাশে কিংবা সমুদ্রে বিচরণ করে সবই আল্লাহর জানা। আল কোরআনের মর্মার্থ।
আল্লাহ অতীতে তার নাফরমান এক বান্দা শক্তিশালী শাসক নমরুদকে সামান্য মশা দ্বারা ধ্বংস করেছিলেন। এ ধ্বংস কেবল একটি ব্যক্তির ছিল না, এখানে একটি সাম্রাজ্য, বিশাল সৈন্যবাহিনী, বিরাট অর্থনীতি ইত্যাদি সবই একটি মাত্র মশার দ্বারা ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল। প্রাচীন ইরাকের নমরুদ যেভাবে অপ্রতিরোধ্য ও উৎপীড়ক শাসক হিসেবে উত্থিত হয়েছিল।

জাতি নমরুদের হাত থেকে মুক্তির উপায় খুঁজে পাচ্ছিল না। আল্লাহর পক্ষ থেকে ঈমান ও ইনসাফের দাওয়াত নিয়ে নবী ইব্রাহীম আ. বহু চেষ্টা করেও নমরুদকে নিবৃত করতে পারেননি। যখন আল্লাহ ইচ্ছা করলেন, তখন মানুষের চেষ্টা, চিন্তা বা হস্তক্ষেপের প্রয়োজন হয়নি। অনেক বেশি আজাব-গজব কিংবা প্রাকৃতিক বিপর্যয়েরও প্রয়োজন হয়নি। একটি মশা দিয়েই মহাপরাক্রান্ত শাসক নমরুদকে ঘায়েল করা হয়।

নমরুদ নিজের ক্ষমতার মদে মত্ত হয়ে নিজেকে খোদার আসনে বসাতে চেয়েছিল। আল্লাহ নিজেকে তার ক্ষমতার শান অনুযায়ী যেভাবে প্রকাশ করেছেন তা কিতাবে বলা হয়েছে। সম্রাটদের মাথার খুলিকে কিছুদিনের ব্যবধানে ধুলোয় মিশিয়ে দিতে পারেন তিনি। তিনি দাম্ভিক শাসকদের মুকুটকে মাটিতে মিশিয়ে দেন যেমন মিশিয়ে দেন তাদের পাঁজরের হাড়-হাড্ডি।

হাশরের দিন তিনি সব মানুষের রূহ কবজের পর মৃত্যুপুরীতে ঘোষণা দেবেন, আইনাল মুলুক? কোথায় আজ পৃথিবীর রাজা-বাদশা ও শাসকেরা? পরাশক্তিগুলোর কী হয়ে গেল? লিমানিল মুলকুল ইয়াওম? আজকে রাজত্ব কার? জবাব দেয়ার মতো কেউ থাকবে না। তিনি নিজেই ঘোষণা করবেন, আজকের সার্বভৌম ক্ষমতা একমাত্র মহাপরাক্রমশালী আল্লাহর। লিল্লাহিল ওয়াহিদিল কাহ্হার।
মানুষ আল্লাহর বান্দাদের সেবা ও শৃঙ্খলার জন্য যে শাসন ক্ষমতা পায়, তা যদি আল্লাহর পক্ষ থেকে ন্যায়নীতি ও কল্যাণচিন্তা নিয়ে প্রয়োগ করে তাহলে সে শাসক হিসেবে সফল। আর যে শাসকই অনিয়ম, অবহেলা ও জুলুম করে, খোদাদ্রোহিতা ও নাফরমানি করে দুই দিন আগে অথবা পরে সে ধ্বংস ও শাস্তির সম্মুখীন হবেই। এটাই আল্লাহর বিধান। তার রচিত প্রকৃতির নিয়ম।

বিপদের সময়ও মানুষের নৈতিকতার পরীক্ষা হয়। বিপদগ্রস্ত মানুষের সাহায্যে এগিয়ে আসা অনেকের পক্ষে সম্ভব না হলেও তারা সমবেদনা ও দোয়ার মাধ্যমে মুসিবত কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করতে পারেন। আর এক শ্রেণির মানুষ বিপদের সময়ও অর্থ আত্মসাৎ এবং চুরির চিন্তা করে।

দেশের ডেঙ্গু আক্রান্ত মানুষের সেবায় ও উপকারে নিজ নিজ অবস্থান থেকে এগিয়ে আসতে হবে। মশা ধ্বংস ও নিয়ন্ত্রণে সচেষ্ট থেকে নতুনদের আক্রান্ত হওয়া থেকে রক্ষা করতে হবে। সর্বোপরি আল্লাহর আশ্রয় নিতে হবে। যিনি চাইলে এক পলকেই বিপদ কেটে যেতে পারে। তার সাহায্য ও ক্ষমা প্রার্থনা করতে হবে। যিনি ইচ্ছা করলে সৃষ্টিজগতের সব অকল্যাণ থেকে মানবজাতিকে রক্ষা করতে পারেন। স্বাভাবিক অবস্থায় সব সময়ই তিনি যা করে চলেছেন।

একটি অঞ্চলে প্রচুর এডিস মশা। সবাইকে তারা কামড়ায় কি না জানা নেই। তাদের প্রতি কামড়েই কি ডেঙ্গু হয়? এক পরিবারে দু-একজনের হয়, নাকি সবারই হয়? যাদের হয়, তাদের কারো কারো মৃত্যু হয়? কেউ কেউ বেঁচে যায়?
এডিস মশা কি ইচ্ছাকৃতভাবে যাকে ইচ্ছা হয় তাকে কামড়ায়? নাকি যাদের তারা কামড় দিতে আদিষ্ট তাদের? মশা যাকে পাবার তাকে কি যেকোনোভাবেই পেয়ে যায়? যারা নিরাপদ থাকেন, তারা কি মশার মধ্যেই নিরাপদ থাকতে পারেন? এসবই প্রশ্ন।

রাজধানীতে এবার ডেঙ্গুর ভয়াবহতা অনেক বেশি। জাবির শিক্ষার্থী, ঢাবির শিক্ষার্থী, চারজন চিকিৎসকসহ অনেকেরই ডেঙ্গুর কারণে মৃত্যু হয়েছে। রাজারবাগ কেন্দ্রীয় পুলিশ লাইনে সহস্রাধিক পুলিশ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত। দুই সিটি কর্পোরেশনে পঞ্চাশ কোটি টাকার নকল ওষুধ ছিটানো হয়ে গেছে, যা মশাকে কিছুই করতে পারে না। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, কাজ হয় এমন ওষুধ ছিটাতে। জনগণের আরো পঞ্চাশ কোটি টাকা যাবে আর কি।
আগের পঞ্চাশের জবাব কে দেবে? নেতা, মন্ত্রী ও মেয়রদের কথাবার্তা অনেকটাই এডিস মশার কামড়ের মতো। এখানে নরম অন্তর, মানুষের প্রতি দরদ, নিজেদের গাফিলতি, কারো দুর্নীতি, ত্রুটি স্বীকার ইত্যাদি নেই বললেই চলে। এক ধরনের দম্ভ ও হঠকারিতা দায়িত্বশীলদের কথাবার্তা, আচরণে ফুটে ওঠে। যা আল্লাহর রহমত পাওয়ার ক্ষেত্রে অন্তরায় হতে পারে, যা মনুষ্যত্বের সৌন্দর্যকে ক্ষুন্ন করে।

সাধারণ মশাকে আল্লাহর গজবের মশায় রূপান্তরিত করে। দায়িত্বশীলদের বোঝা ভারী করে। ছোট ছোট সতর্কতা থেকে শিক্ষা নেয়া ও সংশোধনের সুযোগগুলো ফুরিয়ে যায়। তাওবা করার সময় ধীরে ধীরে শেষ হয়। ভাগ্যবানরা শিক্ষা গ্রহণ করে। আর মন্দ পরিণতির কথা বিবেচনা না করে হতভাগারা যেমন আছে তেমনই থাকে। আর আল্লাহর চূড়ান্ত বিচারের দিকে এগোতে থাকে।



 

Show all comments
  • Rashidul Hasan ৩০ জুলাই, ২০১৯, ১:৩৪ এএম says : 0
    নিশ্চয় আল্লাহ পাপিস্টদের গজব দেন. আল্লাহ আমাদের সকল কে ক্ষমা করুন আমিন.
    Total Reply(0) Reply
  • Dalia Chowdhury ৩০ জুলাই, ২০১৯, ১:৩৫ এএম says : 1
    আল্লাহ বাংলাদেশের মানুষকে হেফাজত করুক। আজ বাংলাদেশ অনেক বড় বিপদের মধ্যে আছে। ইনশাআল্লাহ আল্লাহই সাহায্য করবে
    Total Reply(0) Reply
  • Md Aynul Haque ৩০ জুলাই, ২০১৯, ১:৩৫ এএম says : 0
    আল্লাহ পাক আপনি এই ভয়ংকর ডেঙ্গু হতে সবাই হেফাজত করুন
    Total Reply(0) Reply
  • মো রাইসুল ইসলাম আনন্দ ৩০ জুলাই, ২০১৯, ১:৩৫ এএম says : 0
    আল্লাহর আমাদের সবাই কে হেফাজত করুন
    Total Reply(0) Reply
  • Jolilur Rahman Jolil ৩০ জুলাই, ২০১৯, ১:৩৫ এএম says : 0
    বাড়ীতে কোথাও জমে থাকা স্বচ্ছ পানিতেই জন্মে এডিস মশা।এরপর ডেংগু তারপর অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যু।নিজে সাবধান হন অন্যদের সাবধান করুন।
    Total Reply(0) Reply
  • Faisal Rahman Khan ৩০ জুলাই, ২০১৯, ১:৩৬ এএম says : 0
    সহমত। মহামারি কিন্তু এক রকমের আজাব ও হতে পারে
    Total Reply(0) Reply
  • মাওলানা আজিজুর রহমান শাহপুরী ৩০ জুলাই, ২০১৯, ৫:৫০ এএম says : 1
    নব্য নমরুধের বিরুদ্ধে আল্লাহ এডিস মশা প্রেরন করেছেন মনে হচ্ছে। হে আল্লাহ এই এডিস মশা থেকে মুমিনদেরকে হেফাজত কর। আমিন
    Total Reply(0) Reply
  • Abu sayeed ৩০ জুলাই, ২০১৯, ৬:৪৬ এএম says : 0
    এ সবই আমার রবের পরিক্ষা৷ তিনি দেখেন, বান্দা আক্রান্ত হয়ে প্রথমে কার দিকে মনোনিবেশ করে? নিজের গুনাহের কথা স্বরণ করে কি আল্লাহর কাছেই ক্ষমাপ্রার্থণা করে নাকি বস্তুবাদীদের ন্যয় মালিককে ভুলে উদ্ভ্রান্ত হয়ে কেবল বস্তুর পিছনেই হাপিয়ে হাপিয়ে ছুটে বেড়ায়? ইতি– সম্ভাবনাময় ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত এক ভাই...
    Total Reply(0) Reply
  • Delowar Hossain ৩০ জুলাই, ২০১৯, ১০:১১ এএম says : 0
    বিষয়টি নিয়ে লেখার জন্য উবায়দুর রহমান খান নদভী সাহেবকে অসংখ্য মোবারকবাদ জানাচ্ছি
    Total Reply(0) Reply
  • Halim ৩০ জুলাই, ২০১৯, ১১:৪২ এএম says : 0
    Yah Allah Plz Save us
    Total Reply(0) Reply
  • Naim Uddin ৩০ জুলাই, ২০১৯, ১২:২৫ পিএম says : 0
    সারা দেশে ডেঙ্গু মহামারি আকার ধারন করেছে। তাই সকলকে সতর্ক থাকতে হবে।
    Total Reply(0) Reply
  • নুমান ৩০ জুলাই, ২০১৯, ২:৪২ পিএম says : 0
    আল্লাহর তরফ থেকে গজব
    Total Reply(0) Reply
  • Md Shazzadur Rahmam ৩০ জুলাই, ২০১৯, ৩:৫৯ পিএম says : 0
    আল্লাহ সকল প্রকার গজব থেকে আমাদেরকে হিফাজত করুন।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ডেঙ্গু

২৭ জানুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ