Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার, ০৪ জুলাই ২০২৪, ২০ আষাঢ় ১৪৩১, ২৭ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

কুপিয়ে ও গুলি করে হত্যা

প্রকাশের সময় : ৭ জুন, ২০১৬, ১২:০০ এএম | আপডেট : ১১:৫০ পিএম, ৬ জুন, ২০১৬

যশোরে ২, ঝিনাইদহে ১, চুয়াডাঙ্গায় আহত ১
ইনকিলাব ডেস্ক : একের পর এক নৃশংস খুনের ঘটনা ঘটেই চলেছে। চট্টগ্রামে এসপির স্ত্রীকে হত্যা, ঢাকার উত্তরায় কর্নেলের মাকে হত্যা, নাটোরে খ্রিস্টান ব্যবসায়ীকে হত্যার ঘটনায় রক্তের দাগ শুকাতে না শুকাতেই তিন জেলায় ৪ নৃশংস খুনের ঘটনা ঘটলো। গতকাল যশোরে ফিলিং স্টেশনের ম্যানেজার ও কলেজ ছাত্রকে পৈশাবিক কায়দায় কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। পৃথক ঘটনায় ঝিনাইদহে ১ জনকে হত্যা ও চুয়াডাঙ্গায় ১ এনজিও কর্মকর্তাকে কুপিয়ে গুরুতর জঘম করা হয়েছে।
যশোর ব্যুরো জানান, ঘর সংস্কারের কারণে বাড়ির পাশের ফিলিং স্টেশনে রাতে ঘুমিয়েছিলেন যশোর এমএম বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের ছাত্র লিজন আহমেদ লিপু। তার সাথে ছিলেন ফিলিং স্টেশনের ম্যানেজার ওবাইদুর রহমান। তাদের কুপিয়ে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা কক্ষের দরজায় তালা লাগিয়ে দেয়। সোমবার সকালে আশপাশের লোকজন টের পায় তাদের হত্যা করা হয়েছে। পুলিশ এসে লাশ উদ্ধার করা হয়। হত্যাকা-ের শিকার ওই দুইজনের সাথে ফিলিং স্টেশনের নজেল ম্যান (কর্মচারী) সিরাজুল ইসলামও ঘুমিয়ে ছিলেন বলে পুলিশ প্রাথমিক তদন্তে জানতে পেরেছে। ঘটনার পর থেকে নজেলম্যানকে পাওয়া যাচ্ছে না। পুলিশের ধারণা তাকে আটক করতে পারলেই হত্যার মোটিভ উদ্ঘটান হবে। চাঞ্চল্যকর এই জোড়া হত্যার ঘটনায় যশোরে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। পুলিশ সুপার মোঃ আনিসুর রহমান দৈনিক ইনকিলাবকে জানান, হত্যার মোটিভ উদ্ধারে তদন্ত শুরু হয়েছে।
পুলিশ জানায়, যশোরের বাঘারপাড়া উপজেলার চড়াভিটা বাজারে আব্দুল বারী ফিলিং স্টেশনের মধ্যে প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজার ও কলেজ ছাত্রকে কুপিয়ে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা রোববার রাতে। নিহতরা হলেন, ফিলিং স্টেশনের ম্যানেজার বাঘারপাড়া উপজেলার দশপাখিয়া গ্রামের রহমান মোল্লার ছেলে (৩০) ও রঘুনাথপুর গ্রামের সদর উদ্দিন খানের ছেলে এমএম বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ ছাত্র লিজন আহমেদ অপু (২৪)। সোমবার সকালে পুলিশ লাশ দুটি উদ্ধার করে যশোর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠিয়েছে। নিহতদের শরীরের বিভিন্ন স্থানে ধারালো অস্ত্রের আঘাতের চিহ্ন রয়েছে।
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, ম্যানেজার ওবায়দুর ও কর্মচারী নিয়মিত পাম্পেই থাকতেন। আর অপুর বাড়িতে সংস্কার কাজ চলায় তিনি রাতে ওই পাম্পে ঘুমিয়ে ছিলেন। এ সময় তার কাছে আগের দিনের সরিষা বিক্রির ৫০ হাজার টাকা ছিল। রাতে ওবায়দুর ও অপু খুন হওয়ার পর সকাল থেকে নজেলম্যান সিরাজুল নিখোঁজ রয়েছেন।
এদিকে, ফিলিং স্টেশনে জোড়া মার্ডার নিয়ে নানা আলোচনা হলেও হত্যাকা-ের কারণ সম্পর্কে এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি। অপুর স্বজনরা জানিয়েছেন, অপুর কাছে ৫০ হাজার টাকা থাকলেও এ কারণে তাকেসহ দু’জনকে হত্যা করা হবে এটি তারা মানতে পারছেন না। এর পেছনে অন্য কোনো রহস্য রয়েছে। তাদের দাবি, বাবা মায়ের একমাত্র ছেলে অপু বিদেশে যাওয়ার জন্য চেষ্টা করছিল। এ জন্য এক ব্যক্তিকে প্রায় ১২ লাখ টাকা দেয়া হয়েছিল। এই বিদেশে যাওয়ার টাকাই অপুর কাল হলো কিনা এমন আশঙ্কা তাদের।
ফিলিং স্টেশনের মালিক বিএনপি নেতা টিএস আউয়ুব। তার কাছ থেকে বছর তিনেক হলো ভায়নার মাসুদুর রহমান লিজ নেন। তিনি জানান, রাতে ফিলিং স্টেশন বন্ধ তাকে। এর আগেই প্রতিদিনের হিসেব নিকেশ সম্পন্ন করে টাকা নিয়ে যাওয়া হয়। রোববারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। এ কারণে পাম্পে তেমন টাকা ছিল না। আর জানা মতে ম্যানেজার ওবায়দুরের কোনো শত্রুও নেই। তাই কেন তাদের হত্যা করা হলো, এটি এখন একটি বড় প্রশ্ন।
যশোরে গণপিটুনিতে ডাকাত নিহত
যশোর-মাগুরা মহাসড়কের পাঁচবাড়িয়া এলাকায় গণপিটুনিতে এক যুবক নিহত হয়েছেন। সোমবার ভোর ৪টার দিকে এ ঘটনা ঘটেছে। নিহত যুবক সবুজ (২৫) যশোর সদর উপজেলার দোগাছিয়া গ্রামের বাবু’র ছেলে। পুলিশ তার লাশ উদ্ধার করে যশোর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে প্রেরণ করেছে। পুলিশ দাবি করেছে, ডাকাত সন্দেহে তাকে গণপিটুনিতে হত্যা করা হয়েছে। তবে নিহত সবুজের পরিবারের দাবি, তাকে ধরে নিয়ে পিটিয়ে হত্যা করেছে।
যশোর কোতোয়ালি মডেল থানার ওসি ইলিয়াস হোসেন জানান, প্রাথমিকভাবে তারা জেনেছেন, সোমবার ভোরে একদল ডাকাত যশোর-মাগুরা মহাসড়কের পাঁচবাড়িয়া এলাকায় সড়কে গাছ ফেলে ডাকাতির প্রস্তুতি নেয়। তবে গাছ ছোট হওয়ায় ব্যরিকেড ভেঙ্গে গাড়ি বেরিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে ধাক্কায় এক ডাকাত আহত হয়। পরে গাড়ির লোকজন নেমে তাকে গণপিটুনি দেয়। এতে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়। গণপিটুনিতে ডাকাত মারা যাওয়ার খবর পেয়ে পুলিশ লাশ উদ্ধার করে যশোর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে প্রেরণ করেছে।
হরিণাকুন্ডুর এক ক্লিনিক মালিককে হত্যা
ঝিনাইদহ জেলা সংবাদদাতা
ঝিনাইদহের হরিণাকুন্ডু উপজেলা শহরে আনোয়ারা ক্লিনিকের মালিক নজরুল ইসলাম (৪১) কে প্রকাশ্যে গুলি ও কুপিয়ে হত্যা করেছে সস্ত্রাসীরা। সোমবার বিকাল সাড়ে তিনটার দিকে সাইভাঙ্গা মাঠে প্রকাশ্যে তাকে হত্যা করা হয়। নজরুল ইসলাম চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা উপজেলার তিওরবিলা গ্রামের সাবেক চেয়ারম্যান লুৎফর রহমানের ছেলে। ২০ বছর আগে তার বাবকেও সন্ত্রাসীরা নিজ বাড়ির মধ্যে গুলি ও গলাকেটে হত্যা করে। আলমডাঙ্গা থানার ওসি আতিয়ার রহমান ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। পুলিশ ও গ্রামবাসি সূত্রে জানা গেছে, দুপুরে ক্লিনিক মালিক নজরুল ইসলাম তিওরবিলা গ্রামে খাবার খেতে আসেন। দুপুরের খাবার শেষ করে তিনি মটরসাইকেলে হরিণাকুন্ডু শহরে আসছিলেন। তিনি তিওরবিলা গ্রামের সাইভাঙ্গা মাঠের মধ্যে পৌঁছালে আগে থেকে ওৎপেতে থাকা সন্ত্রাসীরা তাকে প্রথমে গুলি ও পরে গলাকেটে হত্যা করে। খবর পেয়ে আলমডাঙ্গা থানার পুলিশ লাশ উদ্ধারের জন্য ঘটনাস্থলে রওনা দিয়েছে। পুলিশের একটি সূত্র জানায়, স্থানীয় খাসকররা ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে নিহত নজরুল নৌকার সমর্থক মুস্তাফিজুর রহমান রুনুর পক্ষে কাজ করেন। নির্বাচনে মুস্তাফিজুর রহমান জয়লাভ করেন। এ কারণে তার প্রতিপক্ষ চেয়ারম্যান প্রার্থী লাল মিয়া নাখোশ ছিলেন। জানা গেছে, ২০ বছর আগে নজরুল ইসলামের বাবা লুৎফর রহমানকেও একই কায়দায় হত্যা করে সন্ত্রাসীরা। চেয়ারম্যান লুৎফর হত্যা মামলায় ১৭ বছর সাজা খেটে তিওরবিলা গ্রামের ঝড়– মন্ডলের ছেলে স্থানীয় ওল্টু বাহিনীর প্রধান ওল্টু জেল থেকে বের হয়ে স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী লাল মিয়ার পক্ষে ভোট করেন। পুলিশের ধারণা পূর্বের শত্রুতা ও ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন নিয়ে বিরোধের জের ধরে ক্লিনিক মালিক নজরুলকে হত্যা করা হতে পারে। এদিকে ১৫ বছর আগে দায়ের করা একটি অপহরণ মামলায় আত্মসমর্পণ করে জেলে যান নিহত নজরুল। দুই মাস আগে তিনি জামিনে মুক্তি পেয়ে নৌকার পক্ষে ভোট করেন। পুলিশের ধারণা তারা বাবার হত্যাকারীরাই তাকে হত্যা করেছে। আলমডাঙ্গা থানার ওসি আতিয়ার রহমান জানান, ঘটনাস্থল আমার থানা থেকে অনেক দূর। খবর পেয়ে লাশ উদ্ধারের জন্য ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছে।
চুয়াডাঙ্গায় এনজিওর ব্যবস্থাপককে কুপিয়ে জখম
চুয়াডাঙ্গা জেলা সংবাদদাতা জানান, চুয়াডাঙ্গায় স্বপন কুমার সরকার (৩৫) নামে বিজ নামক এক এনজিও আঞ্চলিক ব্যবস্থাপককে কুপিয়ে জখম করেছে দুর্বৃত্তরা। এ সময় দুর্বৃত্তরা তার মোটরসাইকেল, নগদ টাকা ও মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নেয়।
আহত এনজিও কর্মকর্তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছে।
রোববার সকাল ১০টার দিকে সদর উপজেলার মাখালডাঙ্গায় এ ঘটনা ঘটে।
আহত এনজিও কর্মকর্তা স্বপন কুমার গাইবান্ধা জেলার দেহদুবা গ্রামের ধীরেন্দ্র নাথ সরকারের ছেলে। তিনি স্থানীয় উন্নয়ন সংস্থা বিজ-এর ম্যানেজার হিসেবে দায়িত্বরত আছেন।
চুয়াডাঙ্গা সদর থানার অফিসার ইনচার্জ তোজাম্মেল হক জানান, স্বপন কুমার এনজিও সংস্থার এক সদস্যের নিকট থেকে মাসিক কিস্তির টাকা আনার জন্য চুয়াডাঙ্গা জেলার সদর উপজেলার মাখালডাঙ্গা গ্রামের দিকে যাচ্ছিলেন। এসময় ৪-৫ জনের একদল দুর্বৃত্ত তার গতিরোধ করে এবং তাকে কুপিয়ে আহত করে তার কাছে থাকা একটি মোটরসাইকেল, নগদ টাকা ও মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নিয়ে পালিয়ে যায়।
চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা: মাসুদ রানা জানান, তার গলায় ধারালো অস্ত্রের আঘাত রয়েছে। আঘাত গুরুতর হওয়ায় তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেয়া হয়েছে।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ