পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
ইসলামিক জোটে বাংলাদেশের অংশগ্রহণ সউদী আরব খুবই গুরুত্ব দেয় : সউদী বাদশাহ
কূটনৈতিক সংবাদদাতা
বাদশাহ সালমান বিন আব্দুল আজিজ আল সউদের আমন্ত্রণে সউদী আরবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পাঁচ দিনের সরকারি সফরকে দেশটির পক্ষ থেকে খুবই গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হচ্ছে বলে জানা গেছে। আগের যেকোনো সফরের চেয়ে প্রধানমন্ত্রীর এ সফরটি যে গুরুত্বপূর্ণ তা স্বীকার করছেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরাও। গত শুক্রবার জেদ্দার কিং আবদুল আজিজ বিমানবন্দরে পৌঁছালে প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানান সউদী ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন নায়েফ বিন আব্দুল আজিজ ও দেশটির সামরিক বাহিনীর প্রধান লে. জেনারেল মোহাম্মদ আওয়াদ আসিম। বিমানবন্দরে প্রধানমন্ত্রীকে লাল গালিচা সংবর্ধনা ও গার্ড অব অনার প্রদান করা হয়।
অন্যদিকে, স্বয়ং বাদশাহ সালমান বিন আব্দুল আজিজ রাজধানী রিয়াদে নয়, জেদ্দায় আল সালাম প্রাসাদে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে মিলিত হন। এখানে সউদী আরবের প্রতিরক্ষা বিষয়ক উপমন্ত্রী সালমান বিন সুলতান আল সউদ এবং সউদী বাদশাহের রয়্যাল কাউন্সিলের উপদেষ্টা ইয়াসের আল মিয়ার প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ হয়েছে। দেশটির গোয়েন্দা প্রধান খালিদ বিন আলি হুমাইদানও প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। সাক্ষাতকালে বাদশা বারবার বলছিলেন, পলিটিক্যাল, স্ট্যাট্রিক, বৈশ্বিক শান্তি প্রতিষ্ঠায় একসঙ্গে কাজ করবো। সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে সউদী নেতৃত্বাধীন ইসলামিক জোটের বিষয়টি উঠে আসে বৈঠকে। জোটে বাংলাদেশের অংশগ্রহণ প্রসঙ্গে বাদশা বলেন, এতে বাংলাদেশের অংশগ্রহণ সউদী আরব খুবই গুরুত্ব দেয়। এর ফলে দুই দেশের মধ্যে একটা সুন্দর সম্পর্কও তৈরি হবে।
কিছু গতানুগতিক চুক্তি ও শ্রমবাজার, হজ ব্যবস্থাপনা, ব্যবসা-বাণিজ্যের মতো বিষয়গুলো আলোচনায় স্থান পাবার সঙ্গে সঙ্গে সন্ত্রাসবিরোধী সউদী জোটে বাংলাদেশের অংশ নেয়ার পর করণীয় নির্ধারণ নিয়ে আলোচনা হতে পারে বলে জানা গেছে।
তবে সউদী আরব সফরের আগে পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাহমুদ আলী বলেন, সন্ত্রাসবিরোধী সউদী জোটে ভবিষ্যতে দরকার পড়লে বাংলাদেশ সামরিক সহযোগিতা করবে। এর আগে ১৯৯৩ সালে সাদ্দাম হোসেনের বাহিনী কুয়েত আক্রমণ করলে বাংলাদেশ সউদী আরবে পবিত্র দুই মসজিদ রক্ষার জন্য বাংলাদেশ সেনা পাঠিয়েছিল। কাজেই এ ধরনের রেওয়াজ আছে। অতীতে বাংলাদেশ সেনা পাঠিয়েছে, ভবিষ্যতেও বাংলাদেশ সেনা পাঠাতে পারে। যখন সময় আসবে তখন আমরা দেখবো।
সাবেক আইনমন্ত্রী শফিক আহমেদ বলেন, আমাদের দেশের স্বার্থরক্ষার জন্য প্রয়োজনে সউদী সরকারের সঙ্গে এ ধরনের সামরিক জোট করলে আমি কোনো অসুবিধা দেখছি না। জনগণের স্বার্থ, রাষ্ট্রের স্বার্থরক্ষা করে এ ধরনের জোট হতেই পারে। আমি কোনো সমস্যা দেখছি না। সরকার সকল কিছু বিবেচনায় এনে এ ধরনের যৌথ উদ্যোগ গ্রহণ করেছে বলে আমি ধারণা করছি। এ ধরনের জোটে যুক্ত হতে সাংবিধানিক কোনো বাধ্যবাধকতা নেই বলে জানিয়েছেন সাবেক এ আইনমন্ত্রী।
তিনি বলেন, যদি বাংলাদেশ এক্ষেত্রে কোনো প্রকার চুক্তি করে, সংবিধানে উল্লেখ রয়েছে সংসদে এ বিষয়টি পাস করিয়ে নিয়ে আসার জন্য। কিন্তু দ্বিপক্ষীয় চুক্তি না করলে এ ধরনের সমঝোতা করতে কোনো প্রকার বাধা নেই।
বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা এনাম আহমেদ চৌধুরী বলেন, যদি সউদী আরব আক্রান্ত হয়, সেখানে বাংলাদেশি প্রায় ২০ লাখ মানুষের নিরাপত্তা হুমকির মধ্যে পড়ে। পবিত্র দুই মসজিদ যদি রক্ষা করার প্রয়োজন পড়ে তখন অবস্থা বুঝে পদক্ষেপ নেয়া যেতে পারে। মসজিদে হারাম আক্রান্ত হলে সমস্ত বিশ্ব মুসলিমের পবিত্র দায়িত্ব হলো তা রক্ষা করা। এ বিষয়ে কোনো মতভেদ থাকবে না। যদি রাষ্ট্র সেনা না পাঠায় তাহলে সাধারণ মানুষ পাসপোর্ট ছাড়া এমনিতেই মক্কায় চলে যাবে। যদি সেখানকার বাংলাদেশিরা আক্রান্ত হয় তবে তাদের উদ্ধার করার জন্যও সেখানে যেতে হবে।
তিনি বলেন, যখন সেখানে আক্রমণ হবে তখন যে সরকারই ক্ষমতায় থাক, তারা বাধ্য হবে পদক্ষেপ নিতে। বাংলাদেশের পররাত্রমন্ত্রী নিজেও ভালোমতো জানেন পরিস্থিতি অনুযায়ী কী পদক্ষেপ নিতে হবে।
এনাম আহমেদ চৌধুরী বলেন, আমি আশা করি প্রধানমন্ত্রীর এ সফরে জনশক্তি রফতানির বিষয়ে যে জটিলতা লক্ষ করা গেছে কিছু বছর ধরে, তার উত্তরণ হবে। এ সফরকে সউদী আরব যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়েছে তা দেশটির বিভিন্ন পদক্ষেপে বোঝা যাচ্ছে।
তিনি বলেন, আমি ৬ বছর সউদী আরবে ছিলাম। সেখানে সাধারণত ঐ রাজ্যের গভর্নর দিয়ে এ ধরনের অতিথিদের স্বাগত জানানো হয়। সউদী ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন নায়েফ বিমানবন্দর ছাড়াও অন্য যেকোনো স্থানে প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানাচ্ছেন। অন্যদিকে, স্বয়ং বাদশাহ সালমান বিন আব্দুল আজিজ রাজধানী রিয়াদে নয়, জেদ্দায় আল সালাম প্রাসাদে প্রধানমন্ত্রী সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে মিলিত হচ্ছেন। এ গুরুত্বের সদ্ব্যবহার করা হবে আশা করি।
সাবেক রাষ্ট্রদূত ওয়ালিউর রহমান বলেন, প্রধানমন্ত্রীর সউদী সফর বর্তমান সময়ে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসার পর তিনি দ্বিপক্ষীয় সফরে সউদী আরব যান। এরপরে ২০১৩ সালে ওমরাহ পালনের উদ্দেশ্যে ব্যক্তিগত সফরে মক্কায় যান।
তিনি বলেন, কিন্তু যুদ্ধাপরাধের বিচার কার্যকর এবং সন্ত্রাসবিরোধী সউদী জোটের সঙ্গে নাম লেখানোর পর প্রধানমন্ত্রীর এ সফর নতুন মাত্রা যোগ করেছে। তাই এ সফরকে খুবই গুরুত্ব দিচ্ছে সউদী আরব। যুদ্ধাপরাধের বিচার নিয়ে একটি শব্দও ব্যয় করেনি সউদী আরব, যা পাকিস্তান ও তুরস্ক করেছে। যদিও তথাকথিত দেশজ ইসলামপন্থীরা লবি কম করেনি। সউদী সামরিক জোটে বাংলাদেশের যোগদান সউদী আরব যে গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছে তা প্রধানমন্ত্রীর সফরের প্রতিটি পদক্ষেপে দৃশ্যমান।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।