পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
‘আমার মেয়ে মতিঝিল আইডিয়াল স্কুলের তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ে। ডেঙ্গু আতঙ্কে মেয়েকে স্কুলে পাঠিয়ে সব সময় ভয়ে ভয়ে থাকি। সামনে সমাপনী পরীক্ষা, তাই তাকে বাধ্য হয়ে স্কুলে পাঠাতে হয়।’ ডেঙ্গু আতঙ্ক নিয়ে গতকাল রোববার ইনকিলাবকে এভাবেই কথাগুলো বলছিলেন রাজধানীর খিলগাঁওয়ের বাসিন্দা নাসিমা আক্তার। তিনি বলেন, ডেঙ্গুর আতঙ্ক এখন সর্বত্র। বাসাতেও নিরাপদ বোধ করছি না। পরিবার নিয়ে গ্রামে চলে যেতে ইচ্ছে করছে। কিন্তু স্বামীর অফিস আর মেয়ের সামনে সমাপনী পরীক্ষা, তাই যেতে পারছি না। মহসিন মিয়া নামের একজন সাংবাদিক জানান, ডেঙ্গু আতঙ্কে আছি। তাই মেয়ে ও স্ত্রীকে গ্রামের বাড়িতে পাঠিয়ে দিয়েছি। আমি জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ঢাকায় আছি। কখন আক্রান্ত হই, আল্লাহ ভালো জানেন। তবে স্ত্রী, সন্তানকে গ্রামে পাঠালেও আতঙ্ক কাটেনি এখনো। কারণ সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ছে ডেঙ্গু। আরিফুল ইসলাম নামের এক শিক্ষক জানান, ডেঙ্গুর কারণে স্কুলে শিক্ষার্থীরা একটু কম আসছে। ডেঙ্গু নিয়ে অভিভাবকদের মধ্যে আতঙ্কের কারণে তারাও তাদের সন্তানদের স্কুলে পাঠাতে চাচ্ছে না। নাফিসা নামের এক শিক্ষার্থী জানায়, সে রাজধানীর দনিয়া বর্ণমালা স্কুলের পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ালেখা করে। ডেঙ্গুর কারণে স্কুলে অনেকে আসছে না। তারও স্কুলে যেতে ভয় লাগে। তবে সামনে পরীক্ষা। তাই স্কুলে নিয়মিত যেতে হচ্ছে বলে জানায় নাফিসা।
মহামারীর আকার ধারণ করেছে ডেঙ্গু। রাজধানীসহ দেশের সব বিভাগের বেশির ভাগ জেলায় ডেঙ্গু আক্রান্তের খবর পাওয়া গেছে। সরকারি হিসাবেই ২৩ জেলায় আক্রান্তের তথ্য রয়েছে। বেসরকারি হিসেবে এ সংখ্যার আরও বেশি। বছর শেষ হতে এখন পাঁচ মাস বাকি থাকলেও চলতি মাসেই বাংলাদেশের ইতিহাসে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্তের সংখ্যা অতীতের সব রেকর্ড ভঙ্গ করেছে। সবার কাছেই প্রধান আলোচনার বিষয় ও আতঙ্কের নাম ডেঙ্গু। এ রোগের ভয়াবহতা ক্রমেই বাড়ছে। প্রতিদিনই হাসপাতালে বাড়ছে ডেঙ্গু রোগীদের সংখ্যা। ডেঙ্গুর ভয়াবহতা থেকে বাদ যাচ্ছে না শিশুরাও। ডেঙ্গু জ্বরের প্রাদুর্ভাব রাজধানীতে বেশি হলেও ক্রমান্বয়ে সারাদেশেই ছড়িয়ে পড়ছে। ডেঙ্গু রোগীর কারণে চাপ বেড়েছে রাজধানীর প্রতিটি হাসপাতালে। ডেঙ্গু রোগীর বেডের জন্য এক হাসপাতাল থেকে আরেক হাসপাতালে দৌড়ঝাঁপ করছেন অনেক অভিভাবক। ডেঙ্গু রোগের ভরা মৌসুম সেপ্টেম্বর-অক্টোবর শুরু হতে এখনো অনেক বাকি। অথচ ইতোমধ্যেই ডেঙ্গু আক্রান্তের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে।
এদিকে জ্বর হলেই ডেঙ্গু পরীক্ষা করানোর পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসকরা। যেকোনো কারণে জ্বরে আক্রান্ত হলেই মানুষ ছুটে যাচ্ছে নিকটস্থ হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোতে। জ্বর হলেই মনে সৃষ্টি হচ্ছে ডেঙ্গুর আতঙ্ক। ডেঙ্গু পরীক্ষা করানোর জন্য হাসপাতালগুলোতে উপচেপড়া ভিড়। গতকালও ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে ঝালকাঠির রাজাপুরে নিগার সুলতানা নামে দুই সন্তানের এক মায়ের মৃত্যু হয়েছে। পরিস্থিতির ভয়াবহতা বিবেচনায় নিয়ে মশা মারতে কার্যকর ওষুধ ছিটাতে নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আসন্ন ঈদুল আজহায় ঢাকা থেকে প্রায় অর্ধকোটি মানুষ ঢাকা ছাড়বে। তখন এই পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ আকার ধারণ করবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। তাই জ্বরে আক্রান্তদের ঈদে রাজধানী না ছাড়তে পরামর্শ দিয়েছেন তারা।
এদিকে ডেঙ্গু নিয়ে ছেলে ধরার মতো গুজব ছড়ানো হচ্ছে, বিভ্রান্তি ছড়ানো হচ্ছে, এমনসব বক্তব্য দেয়ার পর অবশেষে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র সাঈদ খোকন ডেঙ্গুর ভয়াবহতা স্বীকার করেছেন। তিনি বলেছেন, ডেঙ্গু পরিস্থিতি উদ্বেগজনক। প্রতিদিনই ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। তবে আমরা জান প্রাণ দিয়ে চেষ্টা করছি যাতে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। এ ছাড়া ডেঙ্গু আক্রান্তদের চিকিৎসার সুবিধার্থে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর নির্দেশে দেশের সকল বেসরকারি চিকিৎসা কেন্দ্রে ডেঙ্গু রোগ সংশ্লিষ্ট টেস্টগুলোর নতুন মূল্য নির্ধারণ করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। ডেঙ্গু টেস্টের ফি ৫০০ টাকার বেশি না নেয়ার নির্দেশনা দিয়েছে সরকার। একই সঙ্গে সরকারি হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগ সংশ্লিষ্ট সব টেস্ট ফ্রি ঘোষণা করা হয়েছে। এই মূল্য তালিকা অনুযায়ী সব বেসরকারি হাসপাতাল, ডায়াগনস্টিক সেন্টারে ডেঙ্গু রোগীদের জন্য একটি ‘ওয়ান স্টপ সেন্টার’ চালু করতে হবে। এর পাশাপাশি সব হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগীদের জন্য শয্যা সংখ্যা বৃদ্ধি করা হবে। ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যার অনুপাতে চিকিৎসক, নার্সসহ প্রয়োজনীয় জনবল বৃদ্ধি করার জন্যও সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
সরকারের হালানাগাদ তথ্যেও মশাবাহিত এই রোগে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ার চিত্র পাওয়া গেছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন্স সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের সহকারী পরিচালক ডা. আয়েশা আক্তার বলেন, বাংলাদেশের ইতিহাসে চলতি বছরে সর্বোচ্চ ১১ হাজার ৬৫৪ ডেঙ্গু রোগী সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি হয়ে নতুন রেকর্ড স্থাপন করেছেন। যদিও বছরের এখনো ৫ মাস বাকি। গত ২৪ ঘণ্টায় সারাদেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হওয়া ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা ৮২৪ জন। এই সংখ্যা গত এক মাসের (২৭ জুন-২৮ জুলাই) মধ্যে সর্বোচ্চ। এর আগে সবচেয়ে বেশি ৬৮৩ জন রোগী ভর্তি হয়েছিল গত শনিবার (২৭ জুলাই)। শুধু জুলাই মাসেই ৯ হাজার ৫১০ জন রোগী ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন। তবে এ বছর মৃতের সংখ্যা তুলনামূলকভাবে কম, মাত্র আটজন। যদিও অন্যান্য হিসাব মতে, এই সংখ্যা ৩৫।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, প্রায় দেড় যুগ আগে ২০০২ সালে দেশে সর্বোচ্চ ৬ হাজার ২৩২ জন আক্রান্ত হন। তবে ২০০০ সালে ৯৩ জনের মৃত্যুর রেকর্ডই ছিল সর্বাধিক। দীর্ঘ ১৬ বছর পর অর্থাৎ ২০১৮ সালে সর্বোচ্চ ১০ হাজার ১৪৮ জন আক্রান্ত হয়ে নতুন রেকর্ড করেছিল। মৃতের সংখ্যা ছিল ২৬।
অধিদপ্তরের সর্বশেষ তথ্য বলছে, বছরের শুরুর দিন থেকে গতকাল পর্যন্ত হাসপাতালে ভর্তি হওয়া ১১ হাজার ৬৫৪ জন ডেঙ্গু রোগীর মধ্যে থেকে ৮ হাজার ৭২৫ জন চিকিৎসা নিয়ে বাসায় ফিরেছেন। গত ২৪ ঘণ্টায় সবচেয়ে বেশি ১৯৬ জন ভর্তি হয়েছে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে, যা আগের দিন শনিবার ছিল ২৩৩ জন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ঢাকা মেডিক্যালে ১৯৬ জনের বাইরে মিটফোর্ডে ৭২, শিশু হাসপাতালে ২৬, সোহরাওয়ার্দীতে ৩২, হলি ফ্যামিলিতে ৩৭, বারডেমে ১৭, বিএসএমএমইউতে ৯, পুলিশ হাসপাতালে ২১, মুগদা মেডিকেলে ৬৭, বিজিবি হাসপাতালে ৬ জন ডেঙ্গু রোগী গত ২৪ ঘণ্টায় ভর্তি হয়েছে। এ ছাড়া ঢাকার বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকগুলোতে আরও ১৯৮ জন ভর্তি হয়েছে বলে জানিয়েছে অধিদপ্তর।
হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশনস সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের তথ্য অনুয়ায়ী ঢাকার বাইরেও বিভিন্ন স্থানে ডেঙ্গু রোগী ছড়িয়ে পড়েছে। এর মধ্যে ঢাকা শহর ব্যতীত ঢাকা বিভাগে ৩৬, চিটাগাং বিভাগে ৩৬, খুলনা বিভাগে ১২, এবং রাজশাহী বিভাগে ৫৭ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি আছেন। এ ছাড়া গাজীপুরে ২১ জন, মুন্সীগঞ্জে ৪ জন, কিশোরগঞ্জে ৪০জন এবং নারায়ণগঞ্জে ২ জন। চট্টগ্রামে ১৪ জন, ফেনীতে ৪ জন, চাঁদপুরে ৪ জন, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ৬ জন, লক্ষীপুরে ৮ জন, নেয়াখালীতে ৪ জন এবং কক্সবাজারে ৩ জন। কুষ্টিয়া ১৯ জন, খুলনায় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসাধীন রয়েছেন ৮ জন, যশোরে ১৬ জন, জিনাইদহে ১ জন, বগুড়ায় ৩৯ জন, পাবনা ২৯ জন, নওগাঁ ২ জন, রাজশাহী ৩৮ জন, বরিশাল ১২ জন এবং সিলেটে ৮ জন।
ডেঙ্গুতে আক্রান্ত মৃতের সংখ্যা নিয়ে বিশেষজ্ঞদের ধারণা, আক্রান্ত সবার তথ্য সরকারের নজরদারিতে না আসায় আক্রান্তের প্রকৃত সংখ্যা আরও অনেক বেশি। আর মৃতের সংখ্যাও সরকারি হিসেবের তুলনায় অনেক বেশি। তাদের মতে, এবারের ডেঙ্গু পরিস্থিতি যেভাবে ছড়িয়ে পড়ছে তাদের অতীতের সব রেকর্ড ইতোমধ্যে ছাড়িয়ে গেছে। আর ডেঙ্গুর ভরা মৌসুম সেপ্টেম্বর ও অক্টোবর যেহেতু সামনে তাই আক্রান্তের সংখ্যা কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে এই নিয়ে চিন্তিত বিশেষজ্ঞরা।
বিশেষজ্ঞরা জানান, রাজধানীতে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে কেউ যদি গ্রামের বাড়িতে যায়, তাহলে তার মাধ্যমে এ রোগ দ্রুত ওই এলাকার অন্যদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়তে পারে। তখন পরিস্থিত হয়তো নিয়ন্ত্রণ করা আর সম্ভব হবে না। এ প্রসঙ্গে মুগদা মেডিক্যাল কলেজের মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের প্রফেসর ডা. এ কে এম শামসুজ্জামান বলেন, এডিস মশার দু’টি জাত রয়েছে। একটি এডিস ইজিপ্টি। এটি শহুরে মশা। এর মাধ্যমেই ঢাকা শহরে ডেঙ্গু রোগ ছড়িয়ে পড়েছে। আরেকটি এডিস এলবোপিকটাস। এটি মূলত গ্রাম এলাকার মশা। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা পরীক্ষা করে দেখেছে যে, এই মশাও ধীরে ধীরে ডেঙ্গুর বাহকে পরিণত হয়েছে। তাই ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত রোগীরা গ্রামে গেলে এডিস এলবোপিকটাস মশার মাধ্যমে এ রোগ ছড়িয়ে পড়াই স্বাভাবিক।
এদিকে আসন্ন পবিত্র ঈদুল আজহায় ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্তদের গ্রামের বাড়িতে না যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক প্রফেসর ডা. আবুল কালাম আজাদ। তিনি বলেন, ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীকে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখতে হয়। অনেক গ্রাম্য এলাকায় প্রশিক্ষিত চিকিৎসক থাকে না। সেক্ষেত্রে সুচিকিৎসার অভাবে আক্রান্ত রোগী প্রাণহানির মতো দুর্ঘটনা ঘটতে পারে এমন আশঙ্কা উড়িয়ে দেয়া যায় না। প্রফেসর ডা. আজাদ বলেন, বর্তমানে চলমান ডেঙ্গু পরিস্থিতিতে গ্রামের বাড়িতে ঈদ করতে যাওয়ার ক্ষেত্রে সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। এ অবস্থায় বাড়িতে না যাওয়াই ভালো। এর কারণ হিসাবে তিনি বলেন, ডেঙ্গুবাহী এডিস মশার কামড় খেয়ে জ্বর নিয়ে কেউ গ্রামে গেলে এবং ওই আক্রান্ত ব্যক্তিকে গ্রামের মশা কামড়ালে সেই মশার মধ্যে ডেঙ্গু সংক্রমিত হয়ে অন্যরাও এরোগে আক্রান্ত হতে পারে। সে কারণে জ্বর নিয়ে গ্রামে ঈদ করতে যাওয়া ডেঙ্গু ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়া। তিনি বলেন, আমরা বিভাগীয় পরিচালক ও সিভিল সার্জনের মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন এলাকার হাসপাতালে চিকিৎসারত ডেঙ্গু রোগীদের বিষয়ে জানতে পেরেছি, বেশির ভাগ ডেঙ্গু রোগী ঢাকা থেকে জ্বর নিয়ে বাড়িতে গিয়ে ডেঙ্গু ধরা পড়ছে। এ কারণেই আমরা আসন্ন ঈদে রাজধানীবাসী যাদের শরীরে জ্বর থাকবে তাদের গ্রামে ঈদ করতে না যাওয়ার পরামর্শ দিচ্ছি।
এ দিকে স্বাস্থ্য মন্ত্রী জাহিদ মালেকের নির্দেশে দেশের সকল বেসরকারি চিকিৎসা কেন্দ্রে ডেঙ্গু রোগ সংশ্লিষ্ট টেস্টগুলোর নতুন মূল্য নির্ধারণ করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। ডেঙ্গু টেস্টের ফি ৫০০ টাকার বেশি না নেয়ার নির্দেশনা দিয়েছে সরকার। একই সঙ্গে সরকারি হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগ সংশ্লিষ্ট সব টেস্ট ফ্রি ঘোষণা করা হয়েছে। ডেঙ্গুর এনএসওয়ান এন্টিজেন পরীক্ষা সর্বোচ্চ ৫০০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। যার পূর্ব মূল্য ছিল ১ হাজার ২০০ থেকে ২ হাজার টাকা। একই সঙ্গে আইজিএম প্লাস আইজিই অথবা আইজিএম/আইজি- ৫০০ টাকা (সর্বোচ্চ), যার পূর্ব মূল্য ছিল ৮০০ থেকে ১ হাজার ৬০০ টাকা। এ ছাড়া সিবিসি (আরবিসি প্লাস ডব্লিউবিসি প্লাস প্লাটিলেট প্লাস হেমাটোক্রিট)- ৪০০ টাকা (সর্বোচ্চ), যার পূর্বমূল্য ছিল ১ হাজার টাকা।
সূত্র মতে, সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ডেঙ্গু রোগ নির্ণয়ের জন্য গত রোববার ২৮ জুলাই থেকে এই সিদ্ধান্ত কার্যকর হবে। গতকাল রাজধানীর স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক প্রফেসর ডা. আবুল কালাম আজাদের সভাপতিত্বে সভায় ডেঙ্গু জ্বরের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে বিষদ আলোচনা করা হয়। ডেঙ্গুর চিকিৎসায় ভবিষ্যতে আরো সমন্বিত চিকিৎসা প্রয়োজন রয়েছে বলেও উল্লেখ করা হয়।
ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রাজধানীর বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রোগীদের সুচিকিৎসা নিশ্চিতে গতকাল থেকে মাঠে নামছে স্বাস্থ্য অধিদফতরের ১০ মনিটরিং টিম। অধিদফতরের কর্মকর্তারাসহ বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালের চিকিৎসকদের সমন্বয়ে গঠিত এ মনিটরিং টিম প্রতিদিন সরেজমিন বিভিন্ন হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার পরিদর্শন করবেন বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক প্রফেসর ডা. আবুল কালাম আজাদ। তিনি বলেন, স্বাস্থ্য অধিদফতর থেকে ডেঙ্গু রোগের চিকিৎসায় যে নির্দেশনা (গাইডলাইন) প্রদান করা হয়েছে সেগুলো সঠিকভাবে অনুসরণ করা হচ্ছে কি না তা দেখবে মনিটরিং টিম। প্রতিটি টিমে কমপক্ষে তিনজন করে কর্মকর্তা থাকবেন।
চট্টগ্রাম : চট্টগ্রামে গতকাল রোববার নতুন করে আরও ৭ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এ নিয়ে সরকারি হিসাবে গত কয়েকদিনে বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা ৬১ জনে দাঁড়িয়েছে। চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. আজিজুর রহমান সিদ্দিকী দাবি করেন, চট্টগ্রামে এখনো আতঙ্কিত হওয়ার মতো পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়নি। তবে পরিস্থিতি সামাল দেয়া না গেলে অবস্থা খারাপের দিকে যেতে পারে। তিনি জানান, গতকাল নতুন করে সাতজন রোগী ভর্তি হয়েছেন। তিনি নগরবাসীকে আতঙ্কিত না হয়ে জ্বর হলে চিকিৎকের কাছে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন।
কক্সবাজার : কক্সবাজারে কোথাও ডেঙ্গু রোগ ছড়ানোর খবর পাওয়া যায়নি। তাই ডেঙ্গুতে আতঙ্কিত হওয়ার কোনো কারণ নেই বলে জানিয়েছেন, কক্সবাজারের সিভিল সার্জন ডাক্তার মো. আব্দুল মতিন। তবে বাহির থেকে আসা ১৩ জন ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত করা হয়েছে এবং ইতোমধ্যে তাদের একজনের মৃত্যু হয়েছে বলেও তিনি জানান।
দিনাজপুর : দিনাজপুরে ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়েছে। ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে ৮ রোগী ভর্তি হয়েছিলেন এম. আব্দুর রহিম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। সুস্থ হয়ে বাড়িতে ফিরে গেছেন আরও ২ রোগী। এখন ভর্তি রয়েছেন ৬ রোগী। এরা সকলেই ঢাকা থেকে আক্রান্ত হয়ে এসেছেন।
চুয়াডাঙ্গা : চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে জ্বর নিয়ে চিকিৎসাধীন তিনজনকে ডেঙ্গু রোগী হিসেবে শনাক্ত করা হয়েছে। ওই তিন রোগী জ্বর নিয়ে গত শনিবার হাসপাতালে ভর্তি হন।
ঝিনাইদহ : ঝিনাইদহে ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয়েছেন ১২ জন। এদের মধ্যে ছয়জন সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন। বাকিরা চিকিৎসাধীন।
রংপুর : রমেক হাসপাতালে ভর্তি ডেঙ্গু রোগী রংপুর মেডিক্যাল কলেজ (রমেক) হাসপাতালে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত ২১ রোগী ভর্তি হয়েছেন। এর মধ্যে গত ২৪ ঘণ্টায় ৭ জন ভর্তি হয়েছেন। তবে রমেক হাসপাতালে ডেঙ্গু জ্বর শনাক্ত করার পরীক্ষার ব্যবস্থা নেই বলে অভিযোগ করেছেন রোগীর স্বজনরা।
পটুয়াখালী : পটুয়াখালীতে প্রতিদিন বাড়ছে ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। গত ১২ দিনে পটুয়াখালী ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ১০ জন ডেঙ্গু রোগী।
চাঁদপুর : চাঁদপুর জেনারেল হাসপাতালে গতকাল দুপুর পর্যন্ত ২৩ জন ডেঙ্গু রোগীকে ভর্তি করা হয়েছে। এদের মধ্যে ১৭ জন ঢাকা থেকে এই রোগ বহন করে গ্রামে ফিরেছেন। অন্য ৬ জন চাঁদপুরেই আক্রান্ত হয়েছেন। এমন তথ্য জানিয়েছেন হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. আনোয়ারুল আজিম। তিনি আরো জানান, গত ২ দিনে চাঁদপুর জেনারেল হাসপাতালে মোট ৪৬ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হন।
টাঙ্গাইল : টাঙ্গাইলে ৭ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। তারা সবাই পুরুষ। এদের মধ্যে ৬ জনই ঢাকা থেকে ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয়। অপরজন টাঙ্গাইলে আক্রান্ত হয়েছে। গতকাল রোববার হাসপাতাল সূত্র এই তথ্য নিশ্চিত করেছে।
নীলফামারী : পরিতোষ চন্দ্র (২৮) ও আব্দুর রহিম (২৪) নামে দুই ব্যক্তি ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয়ে নীলফামারী আধুনিক সদর হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে।
রাজাপুর (ঝালকাঠি) : ঝালকাঠির রাজাপুর ডেঙ্গু জ্বরের কবলে সাতুরিয়া ইউনিয়নের দক্ষিণ তারাবুনিয়া গ্রামের নিগার সুলতানার (৩৫) ডেঙ্গু জ্বরে মৃত্যু হয়েছে। নিহতের পিতা ঐ গ্রামের শাহজাহান মৃধা। সে ২ সন্তানের জননী। রাজাপুর সদরে জেলে পারা তার বাসা। গতকাল রোববার সকাল সাড়ে নয়টায় বরিশাল শেরে বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায়।
সাতক্ষীরা : নর্দান ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীসহ নয়জন ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হয়েছেন হাসপাতালে। এর মধ্যে সুস্থ হয়ে একজন বাড়িতে গেলেও হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন আটজন রোগী।
পাবনা : পাবনায় জেনারেল হাসপাতালে আরও ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছেন । গতকাল সকালে ৭ জন এবং বিকালে ৯ জন । গতকাল এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন, হাসাপতালে সহকারী পরিচাল ডা. রঞ্জন কুমার দত্ত। এই নিয়ে ২৬ জন চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
লালমনিরহাট : গত শনিবার রাতে আনন্দ রায় নামের এক ডেঙ্গু রোগী লালমনিরহাট সদর হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। এ খবর ছড়িয়ে পড়ার পর থেকে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন সাধারণ মানুষ।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ : চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর হাসপাতালে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত ৫ রোগী ভর্তি হয়েছে। এ নিয়ে গত এক সপ্তাহে সদর হাসপাতালে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত ৭ রোগী ভর্তি হন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।