Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

পাকিস্তানের জন্য বিজয় সমতুল্য ইমরান খানের যুক্তরাষ্ট্র সফর

কূটনৈতিক সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ২৯ জুলাই, ২০১৯, ১২:০১ এএম

পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের যুক্তরাষ্ট্র সফরকে ইতিমধ্যেই দুর্দান্ত এক সাফল্য হিসেবে অভিহিত করা হয়েছে। ইমরানের এই সফর কয়েক মাস আগে, যা কোনো সম্ভাবনার মধ্যেও ছিল না, পাকিস্তানের কূটনীতির সাফল্য হিসেবেই শেষ হয়েছে। ইসলামাবাদের পক্ষে এ সফর থেকে পাঁচটি সাফল্য লাভ হয়েছে। দ্য ডিপ্লোম্যাট বিষয়টি নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।

এতে বলা হয়েছে- প্রথমত, উভয় দেশের আফগানিস্তান নীতি নিয়ে ইসলামাবাদ ও ওয়াশিংটনের মধ্যে অভিন্ন স্বার্থ উদ্ভূত হয়েছে। প্রাথমিকভাবে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাথে ইমরানের সাক্ষাতে আলোচনার কেন্দ্র ছিল আফগানিস্তান। কয়েক মাস ধরে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের উচ্চ পর্যায়ে পাকিস্তানের ভূমিকার প্রশংসা করতে দেখা গেছে। এতে বুঝা যায়, ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ সহযোগী এবং আগফানিস্তানে কর্মরতরা পাকিস্তানের সা¤প্রতিক প্রচেষ্টায় সন্তুষ্ট। ইমরানের সফর শেষে পাকিস্তান তালেবান এবং যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে চলমান আলোচনায় নিজেকে কেন্দ্রীয় খেলোয়াড় হিসেবে হাজির করবে বলে ধারণা করা যায়। দ্বিতীয়ত, সন্ত্রাসবাদের প্রশ্নে পাকিস্তানের কোনও গুরুত্বর সমালোচনা করা হয়নি। এটি লক্ষণীয় যে, সন্ত্রাসবাদ ইস্যুটি সামরিক এবং বেসামরিক নেতৃত্বের মধ্যে আনুষ্ঠানিক বৈঠকগুলোতে প্রধান আলোচ্য হয়ে উঠেনি। ইমরান খানও বিভিন্ন ফোরামে আলোচনার সময় এটি স্পষ্ট করে দিয়েছেন যে, সন্ত্রাসবাদ বিষয়ে তার দেশের নীতিতে আমূল পরিবর্তন হয়েছে। তিনি জোর দিয়ে বলেছেন, পাকিস্তানের সামরিক-বেসামরিক মহল এ বিষয়ে একমত যে, দেশের ভেতরে জঙ্গিদের আশ্রয় না দেয়াটা পাকিস্তানেরই স্বার্থ। এখন পর্যন্ত ওয়াশিংটন সন্ত্রাসবাদ সম্পর্কে পাকিস্তানের অবস্থানকে সমর্থন করে বলে মনে হচ্ছে।

তৃতীয়ত, ট্রাম্পের কাছ থেকে ইসলামাবাদ যে অপ্রত্যাশিত অর্জন করতে পেরেছে তা হল- কাশ্মীর সঙ্কট নিয়ে ট্রাম্পের আলোচনা এবং ভারত ও পাকিস্তানের মাঝে আলোচনার মধ্যস্থতায় তার ইচ্ছা পোষণ করা। নয়া দিল্লির জন্য যা খারাপ, তা হল- ট্রাম্প ভারতের প্রধানমন্ত্রী মোদির সাথে তার আলাপের কথা বলেন, যেখানে মোদি তাকে কাশ্মীর সমস্যা সমাধানের জন্য যুক্তরাষ্ট্রকে মধ্যস্থতার অনুরোধ করেন। ট্রাম্পের এই বক্তব্যের কয়েক ঘন্টার মধ্যেই অবশ্য ভারত তা অস্বীকার করে জানায়, নয়া দিল্লি কাশ্মীর বিষয়ে তৃতীয় পক্ষের হস্তক্ষেপ গ্রহণ করবে না। মোদির ‘তৃতীয় পক্ষের মধ্যস্থতার ধারণা’র কথা উল্লেখ করার সম্ভাবনা কম হলেও, ইসলামাবাদ এ বিষয়ে ট্রাম্প এবং ইমরানের আলাপের মধ্যে একটি বড় কূটনৈতিক সাফল্য লাভ করতে সক্ষম হয়েছে।

চতুর্থত, এই সফর দ্বিপাক্ষিক নিরাপত্তা সহযোগিতা এবং সামরিক সম্পর্ককে অন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছে। গত বছর ট্রাম্প পাকিস্তানের জন্য সামরিক প্রশিক্ষণ কার্যক্রম স্থগিত করেছিলেন। আগামী সপ্তাহগুলোতে এগুলো পুনরায় শুরুর সম্ভাবনা রয়েছে। বৈঠকের এক ফাঁকে ট্রাম্প বলেন, আফগানিস্তান বিষয়ে উভয় দেশ কী অর্জন করবে তার ওপর নির্ভর করে পাকিস্তান নিরাপত্তা সহায়তা ফিরে পেতে পারে।
উল্লেখ্য, কিছু দিন আগে একজন অতি উচ্চ পর্যায়ের মার্কিন সামরিক কর্মকর্তাও বলেছিলেন যে, যুক্তরাষ্ট্র পাকিস্তানের সাথে শক্তিশালী সামরিক সম্পর্ক বজায় রাখলে মার্কিন স্বার্থ আরও বেশি সুরক্ষিত হবে। সম্ভবত ট্রাম্প পুনরায় পাকিস্তানে সামরিক প্রশিক্ষণ কর্মসূচি এবং অন্যান্য স্থগিত হওয়া কর্মকান্ড শুরু করতে পারেন, যা গত বছর আফগানিস্তান ইস্যুতে উভয় দেশের মতপার্থক্যের কারণে স্থগিত করা হয়েছিল।

সবশেষে, পাকিস্তানের জন্য আরও একটি বড় সাফল্য হল- ব্যক্তিগত পর্যায়ে ইমরান খান ট্রাম্পের সাথে খুব ভালভাবে মানিয়ে নিয়েছিলেন। এটি ইসলামাবাদ এবং ওয়াশিংটনের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ক্ষেত্রেও খুব গুরুত্বপূর্ণ। তদুপরি, ট্রাম্পের সাথে ইমরানের সা¤প্রতিক বৈঠক সম্ভবত উভয় পক্ষের জটিল আমলাতন্ত্রকে পাশ কাটিয়ে হোয়াইট হাউজ এবং ইমরান খানের অফিসের মধ্যে যোগাযোগের একটি সরাসরি লাইন স্থাপন করতে চলেছে। আশা করা যায় যে, আফগান শান্তি প্রক্রিয়ার অগ্রগতি হলে ট্রাম্পের কার্যালয় ইমরানের সাথে যোগাযোগ অব্যাহত রাখবে। দ্বিপাক্ষিক ক্ষেত্রের অন্যান্য ইস্যুগুলো সমাধানে ইসলামাবাদ এ জাতীয় সুযোগ কাজে লাগাতে চাইবে।

সর্বোপরি, ইমরানের এই সফর ওয়াশিংটনে পাকিস্তানের কূটনীতিকে গুরুত্বের সুযোগ দিয়েছে, যার পুরো সদ্ব্যবহারই ইসলামাবাদ করতে চাইবে। যদিও পাকিস্তান এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দীর্ঘমেয়াদী সম্পর্কের গতিপ্রকৃতি সম্পর্কে আগাম মন্তব্য করার সময় এখনো আসেনি, কিন্তু পাকিস্তান যে আপাতত একটি বড় জয় অর্জন করেছে, তা নিশ্চিতভাবেই বলা যায়।



 

Show all comments
  • Qazi Huque ২৯ জুলাই, ২০১৯, ১:১৬ এএম says : 0
    Good piece of write-up. Thanks for sharing. Imran won a moral battle against India recently. He seems to be progressing along this path.
    Total Reply(0) Reply
  • Atiq Rahaman ২৯ জুলাই, ২০১৯, ১:১৬ এএম says : 0
    আমেরিকা যার বন্ধু হয়ে যায় তার আর শত্রুর প্রয়োজন হয় না।
    Total Reply(0) Reply
  • Biswanath Murmu ২৯ জুলাই, ২০১৯, ১:১৭ এএম says : 0
    পাকিস্তান 120 মিলিয়ন ডলার ভিক্ষা পেয়েছে। ভিক্ষুক ভিক্ষা পেলে তাকে সাফল্য মধ্যেই গন্য করে
    Total Reply(0) Reply
  • Jannat Jahir ২৯ জুলাই, ২০১৯, ১:১৭ এএম says : 0
    ইনশাআল্লাহ ইনশাআল্লাহ ইনশাআল্লাহ
    Total Reply(0) Reply
  • Md Ustad ২৯ জুলাই, ২০১৯, ১:১৭ এএম says : 0
    Super leader
    Total Reply(0) Reply
  • Md Ustad ২৯ জুলাই, ২০১৯, ১:১৭ এএম says : 0
    Super leader
    Total Reply(0) Reply
  • বাহলুল ২৯ জুলাই, ২০১৯, ১:১৯ এএম says : 0
    ইমরান খান আসলেই একজন ট্যালেন্ট প্রধানমন্ত্রী। মোদির গৌ রাজনীতি তার কাছে টিকবে না।
    Total Reply(0) Reply
  • তাইজুল ২৯ জুলাই, ২০১৯, ১:২০ এএম says : 0
    ধন্যবাদ ইমরান খান। এগিয়ে যাও, মুসলিম বিদ্বেষী ভারতকে ‍রুখে দাও।
    Total Reply(0) Reply
  • Lutfar Rahman ২৯ জুলাই, ২০১৯, ২:৫১ এএম says : 0
    India gundami kare bangladesher sate Pakistan and Nepal ler sate noi karon bangladesher manus munapek
    Total Reply(0) Reply
  • Abdul Alim ২৯ জুলাই, ২০১৯, ৬:২৫ এএম says : 0
    thanks
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: পাকিস্তান


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ