পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
ডেঙ্গুর ভরা মৌসুম সেপ্টেম্বর ও অক্টোবর। সেপ্টেম্বর মাস শুরু হতে এখনো কয়েকদিন বাকি। মাস শুরু হতে বাকি থাকলেও ডেঙ্গু জ্বরের প্রকোপ ক্রমে ভয়াবহ আকার ধারণ করছে। রাজধানীর প্রতিটি ঘরে ঘরে ডেঙ্গু রোগী। যিনি এখনো আক্রান্ত হননি তাকেও ভাবাচ্ছে কখন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হচ্ছেন। হাসপাতালে ঠাঁই নেই ডেঙ্গু রোগীর। রোগীর চাপ সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে চিকিৎসকরা। গতকাল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) ৪০ শয্যা বিশিষ্ট ডেঙ্গু চিকিৎসাসেবা সেল চালু করা হয়েছে। বারডেম ডায়বেটিসের জন্য বিশেষায়িত হাসপাতাল হলেও ডেঙ্গু রোগীর চাপ বাড়ায় মিরপুরের টেকনিক্যাল এলাকায় বারডেম হাসপাতালের দ্বিতীয় শাখায় ডেঙ্গু রোগীদের চিকিৎসায় আলাদা সেল খোলা হয়েছে। ইতোমধ্যে ২৫ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি আছেন। ওয়ার্ডে আর কোনো সিট ফাঁকা নেই। যদিও শুধু রাজধানীতেই নয়; সারা দেশে ডেঙ্গুর প্রকোপ ছড়িয়ে পড়েছে। গত কয়েকদিনে এ রোগে আক্রান্ত হয়ে রাজশাহী, বরিশাল, বগুড়া, খুলনা, সিলেট, পাবনা ও ফেনীতে শতাধিক রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এর মধ্যে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে একজন মারাও গেছেন। ডেঙ্গুর ব্যাপকতা রাজধানী ছাড়িয়ে দেশের ৬টি বিভাগের ২০টি জেলায় ছড়িয়ে পড়েছে। এভাবে চলতে থাকলে এই মৌসুমে সারাদেশে ছড়িয়ে পড়তে পারে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। গতকাল ডেঙ্গু আক্রান্ত দু’জনের মৃত্যু ঘটেছে। একজন রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালে। অন্যজন জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। বিশেষজ্ঞদের মতে, ঢাকা থেকে লঞ্চ ও ট্রেনের বগিতে করে ডেঙ্গু মশা সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ছে।
আক্রান্তদের মধ্যে শিশু রোগীর সংখ্যাই বেশি। রাজধানীর বিভিন্ন হাসপাতালে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সরকারি হাসপাতালের তুলনায় বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে শিশুর রোগী বেশি। ডেঙ্গু সংক্রমণের একটি বড় স্থান স্কুল। বেশিরভাগ শিশুই স্কুলে থেকে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হচ্ছেন। এদিকে অনেকেরই জ্বর হলে ঢাকা ছেড়ে গ্রামের বাড়ি চলে যাচ্ছে। ফলে সে ডেঙ্গুর বাহক হিসেবে নিজ জেলায়, নিজ এলাকায় পৌঁছে যাচ্ছে এবং তার মাধ্যমে সেখানেও এরোগ ছড়িয়ে পড়ছে। এভাবেই সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ছে ডেঙ্গু রোগ। তাই ডেঙ্গুর এই ভয়াবহতা আগামী দু’মাসে আরও বাড়বে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন বিশেষজ্ঞরা।
দাউদকান্দির ইসমাঈল খন্দকার গত সপ্তাহে তীব্র জ্বর ও মাথাব্যথা নিয়ে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন। রক্ত টেস্ট করে তার ডেঙ্গু জ্বর শনাক্ত হয়। তার বাড়িতে আরও দু’জন এবং প্রতিবেশীদের অনেকে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন বলে জানান তিনি। রাজধানী ছাড়িয়ে দেশের বিভিন্ন জায়গায় বাড়ছে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা।
মশাবাহিত এ রোগে এরইমধ্যে অন্তত ৩০ জনের মৃত্যু হয়েছে, যদিও সরকারের খাতায় ৮ জনের মৃত্যুর খবর এসেছে। আক্রান্ত রোগীদের সবার তথ্য সরকারের নজরদারির মধ্যে আসে না বলে ডেঙ্গু আক্রান্তের প্রকৃত সংখ্যা আরও অনেক বেশি বলে বিশেষজ্ঞদের অনেকের ধারণা।
এদিকে কুড়িগ্রাম সদর হাসপাতালে চিকিৎসা না পেয়ে এক ডেঙ্গু রোগী ঢাকায় গিয়েছেন বলে তার সহকর্মী জানিয়েছেন। কুড়িগ্রাম সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার শাহিনুর রহমান সরদার বলেন, বৃহস্পতিবার সকাল ১০টায় তাদের হাসপাতালে ভর্তি হন কামরুজ্জামান (৩৫) নামে এক রোগী। তার অবস্থার উন্নতি না হওয়ায় তাকে শুক্রবার রংপুরে মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে যেতে বলা হয়। তাদের হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়ার মত ব্যবস্থা নেই বলে তিনি জানান। কামরুজ্জামানের সহকর্মী হক স্পেশাল কাউন্টারের কুড়িগ্রাম ব্যবস্থাপক হেলাল মিয়া বলেন, উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে রংপুর না নিয়ে ঢাকার সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে নেয়া হয়েছে। কুড়িগ্রাম সদর হাসপাতালের একাধিক সেবিকা ও কর্মচারী জানান, ডেঙ্গু রোগের লক্ষণ নিয়ে গত কয়েক দিনে তাদের হাসপাতালে ১৫-১৬ জন রোগী চিকিৎসা নিতে আসেন। প্রয়োজনীয় চিকিৎসা ব্যবস্থা না থাকায় তাদের রংপুর বা ঢাকায় চিকিৎসা নিতে পরামর্শ দেয়া হয়েছে।
সরকারের হালানাগাদ তথ্যেও মশাবাহিত এই রোগে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ার চিত্র পাওয়া গেছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন্স সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের সহকারী পরিচালক ডা. আয়েশা আক্তার জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় সারাদেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হওয়া ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা ৬৮৩ জন। এই সংখ্যা গত এক মাসের (২৬ জুন-২৭ জুলাই) মধ্যে সর্বোচ্চ। এর আগে সবচেয়ে বেশি ৬৬৩ জন রোগী ভর্তি হয়েছিল গত বুধবার (২৪ জুলাই)। শুধু জুলাই মাসেই ৮ হাজার ৩৮৪ জন রোগী ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন।
অধিদপ্তরের সর্বশেষ তথ্য বলছে, বছরের শুরুর দিন থেকে গতকাল পর্যন্ত হাসপাতালে ভর্তি হওয়া ১০ হাজার ৫২৮ জন ডেঙ্গু রোগীর মধ্যে থেকে ৭ হাজার ৮৪৯ জন চিকিৎসা নিয়ে বাসায় ফিরেছেন। গত ২৪ ঘণ্টায় সবচেয়ে বেশি ২৩৩ জন ভর্তি হয়েছে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ঢাকা মেডিক্যালে ২৩৩ জনের বাইরে মিটফোর্ডে ৭, শিশু হাসপাতালে ৯, সোহরাওয়ার্দীতে ৩৬, হলি ফ্যামিলিতে ২২, বারডেমে ১২, পুলিশ হাসপাতালে ২৪, মুগদা মেডিক্যালে ৪৯, বিজিবি হাসপাতালে ১৩, কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে ৩২ জন ডেঙ্গু রোগী গত ২৪ ঘণ্টায় ভর্তি হয়েছে। এছাড়া ঢাকার বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকগুলোতে আরও ২০৬ জন ভর্তি হয়েছে বলে জানিয়েছে অধিদপ্তর।
হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন্স সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের তথ্য অনুয়ায়ী ঢাকার বাইরেও বিভিন্ন স্থানে ডেঙ্গু রোগী ছড়িয়ে পড়েছে। এরমধ্যে গাজীপুরে ৬১ জন, মুন্সিগঞ্জে ৩ জন, কিশোরগঞ্জে ১ জন, নারায়ণগঞ্জে ১৩ জন। চট্টগ্রামে ৪৯ জন, ফেনীতে ৪৯ জন, কুমিলায় ১ জন, চাঁদপুরে ২৯ জন, ব্রা²বাড়িয়ায় ৪ জন, লক্ষীপুরে ৪ জন এবং নোয়াখালীতে ৫ জন। খুলনায় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসাধীন রয়েছেন ২৪ জন, কুষ্টিয়ায় ১৯ জন, যশোরে ২০ জন, ঝিনাইদহে ৩ জন, বগুড়ায় ৪০ জন, বরিশালে ৩৫ জন এবং সিলেটে ১৩ জন। কন্ট্রোল রুমের সহকারী পরিচালক ডা. আয়েশা আক্তার এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
ডেঙ্গুতে আক্রান্ত মৃতের সংখ্যা নিয়ে বিশেষজ্ঞদের অনেকের ধারণা, আক্রান্ত সবার তথ্য সরকারের নজরদারিতে না আসায় আক্রান্তের প্রকৃত সংখ্যা আরও অনেক বেশি। আর মৃতের সংখ্যাও সরকারি হিসেবের তুলনায় অনেক বেশি। তাদের মতে, এবারের ডেঙ্গু পরিস্থিতি যেভাবে ছড়িয়ে পড়ছে তাদের অতীতের সব রেকর্ড ইতোমধ্যে ছাড়িয়ে গেছে। আর ডেঙ্গুর ভরা মৌসুম সেপ্টেম্বর ও অক্টোবর যেহেতু সামনে তাই আক্রান্তের সংখ্যা কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে এই নিয়ে চিন্তিত বিশেষজ্ঞরা। যদিও বিএসএমএমইউ’র সাবেক ভিসি প্রফেসর ডা. মো. নজরুল ইসলাম বলেন, ডেঙ্গু আক্রান্তের সরকারি যে হিসাব সেটি ঠিক নয়।
এ বছর চলতি মাসে ঢাকায় ডেঙ্গুর প্রকোপ ব্যাপক আকার নিয়েছে। ডেঙ্গুর বিস্তার বাড়তে থাকায় রাজধানীর হাসপাতালগুলো ঘুরে দেখা যায়, রোগীদের স্থান সঙ্কুলান হচ্ছে না। ঢাকার সরকারি হাসপাতালগুলোতে নির্ধারিত শয্যার বাইরেও মেঝেতে রেখে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে রোগীদের। তবে বেসরকারি হাসপাতালগুলো ধারণক্ষমতার বাইরে রোগী ভর্তি করছে না। ফলে নতুন করে ডেঙ্গু আক্রান্তদের নিয়ে এক হাসপাতাল থেকে আরেক হাসপাতালে দৌড়াতে হচ্ছে স্বজনদের। ডেঙ্গু রোগীর চাপ বেড়ে যাওয়ায় হাসপাতালে অন্য রোগে আক্রান্তদের চিকিৎসা দিতেও সমস্যা হচ্ছে বলে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন।
রাজধানীর অন্যান্য হাসপাতালের মতোই ২৫০ শয্যার ঢাকা ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালেও ডেঙ্গু আক্রান্তদের ভিড়। তবে শয্যার বাইরে রোগী ভর্তির নিয়ম না থাকায় অনেককেই ফেরত পাঠাতে হচ্ছে বলে জানালেন জরুরি বিভাগের চিকিৎসক মাহবুব আলম। তিনি জানান, শুক্রবার ৬০ জন রোগী এসেছেন, যার মধ্যে ৪০ জনই ডেঙ্গু আক্রান্ত। শয্যা না থাকায় তাদের ভর্তি করা যায়নি।
শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক প্রফেসর ডা. উত্তম কুমার বড়–য়া বলেন, প্রতিদিনই রোগী বাড়ছে। রোগীর চাপ সামলাতে ডাক্তারদের হিমশিম খেতে হচ্ছে। সবচেয়ে সমস্যা হচ্ছে ১ নং ওয়ার্ডে। সেখানে ৬০ শয্যায় ১৪০ জন রোগীকে সেবা দিতে হচ্ছে। এরমধ্যে ৫০ জনেরও বেশি শিশু রোগী রয়েছে।
শিশু হাসপাতালের সহযোগী অধ্যাপক ও স্বাচিপ সভাপতি ডা. আয়নাল হোসেন বলেন, বর্তমানে শিশু হাসপাতালে ৮৩ জন রোগী ভর্তি রয়েছে। এ পর্যন্ত ২৯০ জন শিশু চিকিৎসা নিয়েছে। যার মধ্যে ২ জনের মৃত্যু হয়েছে। তিনি বলেন, শিশুদের ডেঙ্গু আক্রান্ত হওয়ার সবচেয়ে উপযোগী স্থান স্কুল। সেখানে তারা দীর্ঘ সময় এ স্থানে বসে থাকে। যা মশাদের কামড়ানোর জন্য উপযোগী। তিনি বলেন, শিশু হাসপাতালে ডেঙ্গু চিকিৎসার জন্য ওয়ানস্টপ সেন্টার চালু করা হয়েছে।
সারাদেশে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত রোগীর সাথে সাথে বেড়েছে রক্তের চাহিদা। ব্লাড ব্যাংকগুলো বলছে, ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বাড়ায় আগের চেয়ে রক্তের চাহিদা বেড়েছে প্রায় পাঁচগুণ। চিকিৎসকরা বলছেন, ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীদের অতিরিক্ত রক্ত ও প্লাটিলেটের প্রয়োজন হয়। এক ব্যাগ প্লাটিলেটের জন্য চার ব্যাগ রক্তের প্রয়োজন। তাই রোগীর সংখ্যা বাড়ায় বেড়েছে রক্তের চাহিদা।
এদিকে ডেঙ্গু পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে অতিসত্তর এটাকে জাতীয় দুর্যোগ ঘোষণা করতে সরকারি প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন জনস্বাস্থ্য সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়ক ডা. ফয়জুল হাকিম। তিনি বলেন, এটা এখন সময়ের দাবি। এই দুর্যোগ জনগণকে সাথে নিয়েই মোকাবেলা করতে হবে। এখনো লুকোচুরির কোনো সুযোগ নেই।
পরিস্থিতির ভয়াবহতা বিবেচনায় নিয়ে স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক প্রফেসর ডা. আবুল কালাম আজাদ ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ডেঙ্গু সেবা সম্প্রসারণ করার নির্দেশ দিয়েছেন। পাশাপাশি ডেঙ্গু রোগীদের চিকিৎসা নির্বিঘœ করতে অস্থায়ীভাবে শেখ হাসিনা বার্ণ অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউট এবং শেখ রাসেল গ্যাস্ট্রো লিভার ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে ডেঙ্গু প্রস্তুত করার সিদ্ধান্ত প্রদান করেণ। এরই অংশ হিসেবে তিনি নিজে হাসপাতালসমূহ পরিদর্শন করেন।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক প্রো-ভিসি এবং বিএমএ’র সাবেক সভাপতি প্রফেসর ডা. রশীদ ই মাহবুব বলেন, ডেঙ্গু আবরও প্রকোট আকার ধারণ করেতে পারে। কারণ মৌসুম এখনো ৩ মাস বাকি। এই সময়ে এটি সারাদেশে ছড়িয়ে পড়তে পারে। তিনি বলেন, শুধু চিকিৎসার ব্যবস্থা করলেই লাভ হবে না। আগে মশা নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা নিতে হবে। সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে মশার বিরুদ্ধে ক্রাশ প্রোগ্রাম চালাতে হবে।
পাবলিক হেলথ ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ প্রফেসর ডা. মুজাহেরুল হক বলেন, ডেঙ্গুর প্রকোপ নিয়ন্ত্রণে সরকারের আন্তরিকতা থাকলেও যারা এটি বাস্তবায়ন করবে তাদের আন্তরিকতার ঘাটতি রয়েছে। মশা মারার নামে নিম্নমানের ওষুধ ব্যবহারে ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়ছে। প্রতিটি ওয়ার্ডে ওষুধ ছিটানোর কাজটি যেন সঠিক সময়ে হয় সে বিষয়ে কাউন্সিলদের নির্দেশ দিয়ে তা মনিটরিং করবেন মেয়র। ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হওয়ার পর নয়; এর আগেই মশা নিধনের কাজটি শুরু করতে হবে। মশা নিধন ছাড়া ডেঙ্গু প্রতিরোধ সম্ভব নয়।
চট্টগ্রাম ব্যুরো : চট্টগ্রামে প্রতিদিনই ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হচ্ছে। জনমনে বাড়ছে আতঙ্ক। গতকাল শনিবার নতুন করে আরও ৬ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছে। এরমধ্যে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ৫ জন, সিএসসিআরে একজন রোগীর সন্ধান পাওয়া গেছে। এ পর্যন্ত চট্টগ্রামে সরকারিভাবে ডেঙ্গু আক্রান্ত ৫৪ জনের তথ্য জানা গেছে। তবে এ সংখ্যা আরও অনেক বেশি।
এডিস মশা দমন এবং ডেঙ্গু রোগীদের শনাক্ত করে সুচিকিৎসা দেয়া জরুরি মনে করেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকগণ। তবে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, জেনারেল হাসপাতাল ও সিটি কর্পোরেশনসহ অন্যান্য স্বাস্থ্য বিভাগের মধ্যে সমন্বয়ের অভাব রয়েছে। ডেঙ্গু রোগ নির্ণয় এবং চিকিৎসার জন্য রোগী ও অ্যাটেনডেন্টগণ কোথায় যাবেন? এ নিয়ে সবার মাঝে রয়েছে প্রশ্ন ও দুশ্চিন্তা।
সিভিল সার্জন ডা. আজিজুর রহমান সিদ্দিকী চট্টগ্রামে ডেঙ্গু পরিস্থিতি এখনও নিয়ন্ত্রণে রয়েছে বলে জানান। তবে ঢাকায় ডেঙ্গুর প্রকোপ বেড়ে যাওয়ায় আমরা উদ্বিগ্ন। ইতোমধ্যে ফৌজদারহাট সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতালে ১০০ শয্যা প্রস্তুত রাখা হয়েছে। প্রয়োজনে সেখানে ডেঙ্গু রোগীদের চিকিৎসা দেয়া হবে।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বিনামূল্যে ডেঙ্গু পরীক্ষার পাশাপাশি চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন কার্যালয়েও বিনামূল্যে ডেঙ্গু পরীক্ষা করা হবে বলে জানিয়েছেন সিভিল সার্জন ডা. আজিজুর রহমান সিদ্দিকী। আজ রোববার ঢাকা থেকে রক্ত পরীক্ষার কিট, রিএজেন্টসহ চিকিৎসা সামগ্রী আসছে। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, এনএস১, সিবিসি ও প্লাটিলেট পরীক্ষায় ডেঙ্গু শনাক্ত করা যায়। এরমধ্যে এনএস১ নামে পরীক্ষায় সহজে ডেঙ্গু শনাক্ত হয়। এটি মূলত রক্তের পরীক্ষার। রাসায়নিক ব্যবহার করে রক্তে ডেঙ্গুর ভাইরাস শনাক্ত করা হয়। এ পরীক্ষার মাধ্যমে চার ঘণ্টার মধ্যে ডেঙ্গু শনাক্ত করা যায়।
বগুড়া ব্যুরো : বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিক্যাল কলেজ (শজিমেক) হাসপাতালে ডেঙ্গু জ¦রে আক্রান্ত ২৮ জন রোগী ভর্তি হয়েছেন। এরা সবাই ঢাকায় অবস্থানকালে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হন শজিমেক হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডাক্তার মুসা আল মনসুর জানান, গত তিন-চার দিনে জ্বরে আক্রান্ত হয়ে বেশ কিছু রোগী ভর্তি হন। এদের মধ্যে গত শুক্রবার দুপুর ১২টা পর্যন্ত আরো ২৮ ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী শনাক্ত করা হয়েছে।
পাবনা থেকে স্টাফ রিপোর্টার : পাবনায় ডেঙ্গু রোগে একজনের মারা গেছেন। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন ১১ জন। শুক্রবার দিবাগত রাতে পাবনা সদর উপজেলাধীন নাজিরপুর এলাকার মন্টু (৫১) নামে একজন মারা যান। জেলা শহর, শহরতলীসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে ডেঙ্গু রোগ নিয়ে গত ৩ দিনে পাবনা জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন ১১ জন।
পাবনার সিভিল সার্জন ডা: মেহেদী ইকবাল জানিয়েছেন, এ পর্যন্ত পাবনায় এডিস মশার অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। আক্রান্ত হয়ে যারা পাবনা জেনারেল হাসপাতাল ও বিভিন্ন চিকিৎসকের কাছে যাচ্ছেন তারা এই রোগ ঢাকা থেকে বহন করে নিয়ে এসেছেন।
ঝিনাইদহ: ঝিনাইদহে এখন পর্যন্ত ১১ জন ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়েছেন। এর মধ্যে ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালে তিনজন ডেঙ্গু রোগী চিকিৎসা নিচ্ছেন। বাকিরা অন্যান্য হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
স্বাস্থ্য বিভাগ বলছে, ঝিনাইদহে ১১ জন ডেঙ্গু রোগীর মধ্যে তিনজন জেলা থেকে ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয়েছেন। বাকি আটজন ঢাকা থেকে আক্রান্ত হয়ে ঝিনাইদহে গ্রামের বাড়িতে এসেছেন।
শেরপুর : শেরপুর জেলা হাসপাতালে ভর্তি ৩ জন ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়েছে। তারা সবাই ঢাকা থেকে জ্বরে আক্রান্ত হয়ে নিজ বাড়ি শেরপুর আসার পর জেলা হাসপাতালে ভর্তি হলে স্থানীয় পরীক্ষায় এ রোগের পজিটিভ ধরা পড়েছে। এমন তথ্য জানিয়েছেন হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসকরা।
এ বিষয়ে জেলা হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক ডা. খাইরুর কবির সুমন জানান, কেবলমাত্র ডেঙ্গু শনাক্ত হয়েছে, আমরা এ বিষয়ে সতর্ক রয়েছি। দ্রæত ডেঙ্গু রোগীদের জন্য আলাদা বেডের ব্যবস্থা করা হবে।
রংপুর : ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে গত আট দিনে ২১ জন রোগী রংপুর মেডিক্যাল কলেজ (রমেক) হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। তারা সবাই ঢাকায় থাকতেন। সেখানেই ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে রংপুরে ভর্তি হয়েছেন।
হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক ডা. সুলতান আহমেদ জানান, ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্তদের প্রয়োজনীয় চিকিৎসাসেবা দেয়া হচ্ছে। বর্তমানে তারা আশঙ্কামুক্ত।
লক্ষীপুর জেলা সংবাদদাতা : লক্ষীপুর সদর হাসপাতালে ডেঙ্গ জ্বরে আক্রান্ত হয়ে ৬ জন ভর্তি হওয়ার ঘটনায় জেলার সর্বত্র ছড়িয়ে পড়েছে ডেঙ্গু আতঙ্ক।
গতকাল শনিবার বিকেল পযন্ত এসব রোগী শনাক্ত করা হয় বলে জানিয়েছেন সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার ডা. আনোয়ার হোসেন। এদের মধ্যে গুরুতর অবস্থায় হোসেন আহমেদ নামে একজনকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে। তার অবস্থায় আশঙ্কাজনক বলে জানিয়েছেন, হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক।
সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার ডা. আনোয়ার হোসেন জানান, গত কয়েকদিন ধরে জ¦রে আক্রান্ত বেশ কিছু রোগী ভর্তি করা হয়েছে। তাদের মধ্যে শনিবার বিকেলে পর্যন্ত ৬ জনের শরীরে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী হিসেবে চিহিৃত করা হয়েছে। এর মধ্যে হোসেন আহমদকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। তার অবস্থায় গুরুতর।
নোয়াখালী : নোয়াখালীর বিভিন্ন উপজেলা ও পাশের জেলা থেকে গত কয়েক দিনে ডেঙ্গুর জীবাণু নিয়ে ৯ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। তাদের সবাই ঢাকা থেকে ফিরে জ্বর নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন বলে জানা গেছে। আজ শনিবার সকাল পর্যন্ত নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে ৯ জন রোগী ভর্তি হয়েছেন বলে নিশ্চিত করেছেন হাসপাতালের আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার (আরএমও) ডা. সৈয়দ মহিউদ্দিন আবদুল আজিম।
কুষ্টিয়া : কুষ্টিয়ায় এক দিনে ১০ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর হাসপাতালে ভর্তির খবর পাওয়া গেছে। কেবল কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালেই গত শুক্রবার ২৪ ঘণ্টায় ১০ জন ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত করা হয়েছে।
কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতাল স‚ত্রে জানা গেছে, সপ্তাহখানেক আগেও প্রতিদিন এক থেকে দু’জন ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হচ্ছিল। তবে গত তিন দিন থেকে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বেড়ে গেছে। তিন দিন ধরে প্রতিদিন গড়ে ৫-৬ জন ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হচ্ছে।
বরগুনা : বরগুনায় ১৪ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী শনাক্ত করা হয়েছে। বরগুনা জেনারেল হাসপাতালের চিকিৎসকরা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে তাদের ডেঙ্গু আক্রান্ত হিসেবে শনাক্ত করেন।
আক্রান্তদের মধ্যে দশজন বর্তমানে বরগুনা জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে। পুরুষ ওয়ার্ডে ছয়জন মহিলা ওয়ার্ডে চারজন। দুইজনকে রেফার করেছে বরিশাল মেডিক্যাল কলেজ হাসাপাতালে, আর দুইজন নিজ দায়িত্বে উন্নত চিকিৎসা নিবে বলে ছাড়পত্র নিয়ে গেছে।
বরগুনা জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মো. সোহরাব উদ্দিন বলেন, বরগুনা জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা ১৪ জনকে আমরা ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হিসেবে শনাক্ত করেছি। এদের মধ্যে অধিকাংশই স¤প্রতি ঢাকা থেকে বরগুনা ফিরেছেন।
ফেনী: ফেনী সদর হাসপাতালে গত ১৫ দিনে ৩৮ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছেন; যাদের বেশির ভাগই এসেছেন ফেনীর বাইরে থেকে।
হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার আবু তাহের পাটোয়ারী বলেন, গত ১৫ দিনে এ হাসপাতালে ডেঙ্গুর জীবাণু নিয়ে ৩৮ জন রোগী ভর্তি হয়েছেন। গত ২৪ ঘণ্টায় ভর্তি হয়েছেন পাঁচজন। তাদের বেশির ভাগই ঢাকায় আক্রান্ত হয়ে এ হাসপাতালে এসে ভর্তি হয়েছেন। হাসপাতালে সাধারণ ওয়ার্ড, কেবিন ও শিশু ওয়ার্ডে রয়েছেন তারা। অতিরিক্ত রোগীর ভিড়েও সতর্কতার সঙ্গে ডেঙ্গু আক্রান্তদের চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। শুক্রবার দুপুর পর্যন্ত ১৮ জন রোগী সুস্থ হয়ে ফিরে গেছেন।
জেলা সিভিল সার্জন নিয়াতুজ্জামান বলেন, ফেনীতে এখন পর্যন্ত কোনো এডিস মশার জীবাণু আক্রান্ত রোগীর সন্ধান পাওয়া যায়নি। আক্রান্তরা সবাই এসেছেন ফেনীর বাইরে থেকে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।