বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির কবলে শবে বরাত-৩
সুনানে ইবনে মাজায় বর্ণিত হয়েছে : হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
কোরআন মাজীদ যেমন করে আল্লাহ তায়ালা সম্পর্কে সঠিক আকীদা বিশ্বাস পোষণ এবং তার আনুগত্য ও এবাদত-উপাসনার শিক্ষা ও দাওয়াত অতি গুরুত্ব সহকারে দান করেছে, তেমনি সে বান্দার হক আদায় করার এবং স্তরভেদে তাদের সেবা করার এবং তাদের সাথে সদাচরণেরও কঠোর তাকীদ দিয়েছে। বরং তাতে অনেক ক্ষেত্রে এতদুভয় দাবিকে একই ধারায় এমনভাবে উল্লেখ করা হয়েছে যাতে মনে হয়, বান্দাদের হক এবং তাদের প্রতি সদ্ব্যবহারের দাবিও যেন আল্লাহর একত্ববাদ ও এবাদত-উপাসনার দাবির মতই কোরআন মাজীদের প্রাথমিক দাবিসমূহের অন্তর্ভুক্ত।
যেমন, সূরা নিসায় এরশাদ হয়েছে, ‘আল্লাহর এবাদত কর, তার সাথে কোনো কিছুকে শরীক করো না। আর পিতা-মাতার সাথে সদাচরণ কর এবং অন্যান্য আত্মীয়-স্বজনদের সাথেও (সদাচরণ কর)। (তেমনিভাবে সাদচরণ কর) এতীম-মিসকিনদের সাথে, নিজের প্রতিবেশীদের সাথেও যারা আত্মীয় আপনজন এবং এমন প্রতিবেশীদের সাথে যারা অনাত্মীয় (যাদের সাথে নাড়ির কোনো সম্পর্ক নেই, শুধুই প্রতিবেশী)। আর তাদের সাথে (সদাচরণ কর) যাদের সাথে কোথাও একত্রে কাটাবে এবং প্রবাসী মুসাফিরদের সাথেও। আর যারা তোমাদের অধীন তাদের সাথেও।’ (সূরা নিসা : আয়াত ৩৬)।
এ আয়াতে আল্লাহ তায়ালার এবাদত-উপাসনার সাথে সাথে সর্বপ্রথম পিতা-মাতা, অত:পর সাধারণ আত্মীয়-স্বজন এবং সবরকম প্রতিবেশী, সঙ্গি-সাথী, এতীম-মিসকিন, পাড়া-পড়শী ও আওতাধীন লোকদের প্রতি সদাচরণ ও ভালো ব্যবহার করার হুকুম দেয়া হয়েছে। তেমনি সূরা বনী ইসরাঈলে এরশাদ হয়েছে, ‘আর তোমাদের পালনকর্তা চূড়ান্ত নির্দেশ দিয়ে দিয়েছেন যে, তাকে ছাড়া আর কারোই এবাদত করবে না এবং পিতা-মাতার সাথে সদাচরণ করবে।
তাদের মধ্যে কোনো একজন কিংবা উভয়েই যদি তোমাদের সামনে বাধ্যক্যে উপনীত হন, তাহলে তাদেরকে ‘উহ’ পর্যন্ত বলবে না। তাদের প্রতিরাগ করে কোনো কথা বলবে না; তাদের সাথে সৌজন্য ও সম্মানজনকভাবে কথা বলবে। বিনয় ও নম্রতার সাথে তাদের আনুগত্য করবে। তাদের জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করবে, হে পরওয়ারদেগার, তুমি আমার পিতা-মাতার প্রতি রহমত কর, যেভাবে তারা আমাকে শৈশবকালে মমতার সাথে লালন-পালন করেছেন।’ (সূরা বনী ইসরাঈল : আয়াত ২৩-২৪)।
একই প্রসঙ্গে এক আয়াতের পর এরশাদ হয়েছে- ‘আর নিজের নিকটবর্তীদের হক আদায় করে দাও এবং গরিব-মিসকীন, প্রতিবেশী ও প্রবাসী মুসাফিরদেরও তাদের হক দিয়ে দাও। আর আল্লাহর দেয়া সম্পদ অপচয় করে উড়িয়ো না।’ (সূরা বনি ইসরাঈল : আয়াত ২৬)।
সূরা রূমের এক জায়গায় বলা হয়েছে, ‘সুতরাং নিকটাত্মীয়দের তাদের হক দিয়ে দাও এবং (তেমনিভাবে) দিয়ে দাও গরিব-মিসকীন, অভাবগ্রস্ত ও প্রতিবেশীদের হক। এই রীতিই উত্তম সেসব বান্দার জন্য যারা আল্লাহকে পেতে চায়। (অর্থাৎ, যারা আল্লাহর সন্তুষ্টি কামনা করে।) বস্তুত এসব বান্দাই কল্যাণ প্রাপ্ত।’ (সূরা রূম : আয়াত ৩৮)।
উপরোল্লিখিত আয়াতগুলোতে সহানুভ‚তি ও সাহায্য লাভের অধিকারী দুর্বল কর্মচারী), মুসাফির ও প্রতিবেশীর কথা বলা হয়েছে। তাদের সাথে সদাচরণ করতে বলা হয়েছে। অন্যান্য কোনো কোনো আয়াতে বান্দাদের প্রতিও এমনি ধরনের সাহায্য-সেবায় উৎসাহিত করা হয়েছে।
সূরা দাহরে জান্নাতবাসীদের গুণ-বৈশিষ্ট্য ও তাদের কাজকর্মের বর্ণনা প্রসঙ্গে, যার বিনিময়ে তারা জান্নাতপ্রাপ্ত হবে, বলা হয়েছে, ‘আর আল্লাহর সেসব বান্দা যারা আল্লাহর মহব্বতে অন্ন দান করে থাকে গরিব-মিসকীন, এতীম অনাথদের এবং বন্দিদের।’ (সূরা দাহর : আয়াত ৮)।
এসব দুর্বল শ্রেণীর প্রতি সদাচরণের ব্যাপারে কোরআন মাজীদের একটি নির্দেশ হল, যে শিশু পিতার পৃষ্ঠপোষকতা থেকে বঞ্চিত হয়ে এতীমে পরিণত হয়ে গেছে, তার সাথে মমতাপূর্ণ আচরণ কর। কোনো লোক অসামর্থ্যতা ও অসহায়ত্বের দরুণ বাধ্য হয়ে তোমার কাছে সাহায্য চাইলে তার প্রতি করুণা ও বিনম্র আচরণ কর; কখনও তাকে ধমক দেবে না।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।