এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশের নারীরাও
আজ ৮ মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবস। লিঙ্গ সমতার উদ্দেশ্যে বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এই দিনটি
রুমা দাস কেয়া
ছোট্ট মফঃস্বল শহরের মেয়ে রেহেনুমা, বাংলাদেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুয়োগ পেয়ে ঢাকায় আসা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলে থাকে সে। প্রাইভেট টিউশনি করতে প্রতিদিন বাসে করে যেতে হয় উত্তরা পর্যন্ত। প্রতিদিনের মত সেদিনও রেহেনুমা যথারীতি শাহবাগের মোড় থেকে বাসে উঠেছে উত্তরার উদ্দেশ্যে, কিছুদূর যেতেই ভাড়া চাইতে আসলে সে ছাত্র ভাড়া হিসাবে অর্ধেক ভাড়া দিল। এতে করেই শুরু হয় বিপত্তি। বাসের হেলপার মেয়েটিকে নানাভাবে উত্ত্যক্ত করতে থাকে নোংরা- ইঙ্গিতপূর্ণ কথা বলে। কিন্তু গাড়িটি দ্রুতগতিতে থাকায় মেয়েটি নেমে যেতে পারছিল না। এয়ারপোর্ট পর্যন্ত এসে যাত্রী তুলতে বাসটি দাঁড়ালে মেয়েটি নেমে যায় বাস থেকে। টিউশনির বাসাটিতে এসে মেয়েটি ঘটনা বলে কাঁদতে থাকে হাউমাউ করে। অজস্র ঘটে যাওয়া ঘটনার মধ্যে এটি একটি। কিন্তু এই ঘটনা অনেক ঘটনার দৃশ্যপট ব্যাখ্যা করে দেয়। উপরোক্ত ঘটনাটি আমার পরিচিত মেয়েটির সাথে ঘটেছে। প্রতিদিনই মেয়েরা এমন ঘটনার মুখোমুখি হচ্ছে রাস্তায়, বাসে, রিক্সায় এমনকি পরিচিত মহলে। আসল সমস্যাটা কোথায় সেটা আমাদের চিহ্নিত করতে হবে, প্রতিটি মেয়েকে প্রতিটি স্থানে কেউ পাহাড়া দিয়ে রাখবে এটা অমূলক। সেক্ষেত্রে নিজেদেন নিরাপত্তার ব্যবস্থা কি মেয়েরা নিজেরা করবে? না, সেটিও সমস্যার সমাধান নয়, কারণ প্রতিনিয়ত একটি মেয়ের চলার পথে ঝগড়া, মারামারি করবে, না, সেটি সভ্যসমাজের নিয়মরীতির মধ্যে পড়ে না। তাহলে সমাধান কোথায়। আসলে সমাধান কারও একক প্রচেষ্টার মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। প্রতিটি সচেতন নাগরিকের স্বচেষ্ট প্রচেষ্টা প্রয়োজন এই ক্ষেত্রে। ইসলামের প্রারম্ভিক ইতিহাসে নারী ব্যবসায়ী ছিলেন, নারী ঘোড়ায় চড়ে যুদ্ধ করেছেন। এই উপমহাদেশে প্রাচীন শাস্ত্রবিদ, জ্যোতির্বিদ হিসাবে নারীর নাম পাওয়া গেছে। আজ থেকে শত বছর আগে মহিয়সী নারী হিসেবে বেগম রোকেয়ার আত্মপ্রকাশ ঘটেছে, যিনি সেই সময় বাড়ি বাড়ি ঘুরে ছাত্রী যোগার করেছেন। তিনি এক বিশাল নারী শিক্ষা আন্দালন তৈরি করেছিলেন। বাংলা, আরবি, ফার্সি, ইংরেজি সব কয়টি ভাষায় তিনি সমান পারদর্শী ছিলেন। সেই দেশে আজ বহু বছর পার করে এসে নারী এমন কোন স্থান নেই যেখানে তার পদচিহ্ন রাখেনি। তাহলে বদলে গেছে কি? যুগ যুগ আগে নারী অনগ্রসর অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে সক্ষম হয়েছিলেন কারণ তার পাশে সমমানসিকতার পুরুষ ছিলেন। তা হলে আজ কি পুরুষদের মানসিকতা নি¤œগামী হয়ে গেছে? নাকি পুরুষ শংকিত নারীর অগ্রসরতা দেখে। এই মানসিক দৈন্যতা পুরুষদেরও কি পিছিয়ে দিচ্ছে না। যে দেশটি প্রতিনিয়ত উন্নয়নের কাতারে শামিল হতে যুদ্ধ করছে। সেই দেশটির অর্ধেক জনসংখ্যাকে অবদমিত করে কোনভাবেই সম্ভব না উন্নয়ন ত্বরানিত করা। আমাদের নৈমিত্তিক সমস্যার শেষ নেই। সেখানে যেসব নারী শিক্ষার দিক থেকে কিংবা অর্থনৈতিক যুদ্ধে একজন শ্রমিক হিসাবে যুদ্ধের কাতারে এসে সাহস করে দাঁড়িয়েছে। তার দিকে বিদ্রƒপের দৃষ্টি না দিয়ে তাকে আরও একধাপ এগিয়ে যেতে সবাইকে সাহায্য করতে হবে। এই ডিজিটাল যুগে সাইবারে অপরাধেরও সমচেয়ে বেশি শিকার হয় নারীরা। সেক্ষেত্রে বয়স কোন ঘটনাই নয়, কিন্তু এসব কৃতকর্মের ফল সুদূরভবিষ্যতে জাতিগতভাবে আমাদেরই ভোগ করতে হবে।
একটা সূক্ষ্ম সমাজ ব্যবস্থাতে নিয়মনীতি, ধর্মীয় অনুশাসন, শৃঙ্খলাবোধ, পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ অনেক বেশি প্রয়োজন স্থিতিশীল পরিম-ল তৈরির জন্য। যে সমাজব্যবস্থায় নারী বা পুরুষ হিসাবে নয়, মানুষ হিসাবে প্রতিটি মানুষের সাংবিধানিক মৌলিক অধিকার নিশ্চিত হবে। নারী তার সাবলীল গতিতে চলাফেরা করবে, তার স্বাধীনসত্তা অবদমিত হবে না কোন বিকৃত মানসিকতার কাছে। নারীকে রাস্তাঘাটে, বাসে কোথাও ইভটিজিংয়ের শিকার হতে হবে না। সবার শ্রদ্ধার দৃষ্টি থাকবে। নারী আসলে মোড়কজাত পণ্য নয় যে, তাকে ব্যবহার্য পদার্থ মনে হতে পারে। নারী সৃষ্টির অর্ধেক অংশ, যাদের সাবলীল সত্তা, নারী-পুরুষের সমান অংশগ্রহণ একটি সুস্থ্য সামাজিক, অর্থনৈতিক এবং স্থিতিশীল সমাজ তৈরি করবে, যেখানে বিকাশ ঘটবে সুস্থ জীবনধারার।
-কবুধ৮৪থফঁ@ুধযড়ড়.পড়স
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।