Inqilab Logo

মঙ্গলবার ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ঠাঁই নেই হাসপাতালে

মহামারীতে রূপ নিচ্ছে ডেঙ্গু

হাসান সোহেল | প্রকাশের সময় : ২৫ জুলাই, ২০১৯, ১২:০০ এএম | আপডেট : ১২:৪৮ এএম, ২৫ জুলাই, ২০১৯

ডেঙ্গু জ্বরের প্রকোপ ক্রমে ভয়াবহ আকার ধারণ করছে। ঘরে ঘরে ডেঙ্গু রোগী। সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে রোগীর ঠাঁই নেই। জীবন বাঁচাতে অনেকেই গ্রামের বাড়ীতে চলে যাচ্ছে। যিনি এখনো আক্রান্ত হননি তাকেও ভাবাচ্ছে কখন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হচ্ছেন। অথচ ডেঙ্গুর মৌসুম সেপ্টেম্বর ও অক্টোবর এখনো বাকি। তাই আগামী দু’মাসে এর ভয়াবহতা আরও বাড়বে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন বিশেষজ্ঞরা। একই সঙ্গে রোগের বিস্তার, প্রকোপ এবং জটিল ও প্রাণঘাতী অবস্থার পাশাপাশি এ বছরের ডেঙ্গ জ্বরকে অন্য বছরে চেয়ে ব্যতিক্রমী বলে মন্তব্য করেছেন বিশেষজ্ঞরা। ডেঙ্গু আক্রান্তে মস্তিষ্কে বিরূপ প্রভাব সৃষ্টি করছে যা মারাত্মক বলে প্রতীয়মান হচ্ছে। তবে ডেঙ্গু আক্রান্তের সরকারি হিসাব ঠিক নয় বলে মন্তব্য করেছেন চিকিৎসকরা। এদিকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে ও মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র জানিয়েছে মন্ত্রণালয় থেকে এই সপ্তাহেই ডেঙ্গুকে মহামারী হিসেবে উল্লে­খ করা হতে পারে। ডেঙ্গুর প্রকোপ, ভয়াবহতা এবং চিকিৎসাব্যবস্থা নিয়ে আজ বৃহস্পতিবার ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে দুুপুরে সংবাদ সম্মেলন করবেন স্বাস্থ্য মন্ত্রী জাহিদ মালেক। এছাড়া ডেঙ্গুর ভয়াবহতা থেকে মানুষকে বাঁচাতে ইতিমধ্যে চিকিৎসকদের জন্য পকেটবুক আকারে গাইডলাইন প্রকাশ সম্পন্ন হয়েছে। সেটিও এ সংবাদ সম্মেলনে প্রদানের ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে বলে সূত্র জানিয়েছে। অপরদিকে মশা নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ ঢাকা উত্তর ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের ২ প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তাকে আজ বৃহস্পতিবার তলব করেছেন হাইকোর্ট। গতকালও স্বাস্থ্যমন্ত্রী সাংবাদিকদের জানিয়েছেন মশার ওষুধ কাজ করছে না বলেই ডেঙ্গুর প্রকোপ বেড়েছে।

সূত্র মতে, দেশে প্রতিদিনই ডেঙ্গু পরিস্থিতির অবনতি ঘটছে। আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে লাফিয়ে লাফিয়ে। হাসপাতালগুলোতে ডেঙ্গু রোগীতে পরিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। রাজধানীর কোন কোন পরিবারের সব সদস্যই এ রোগে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন। ইতিমধ্যে ডেঙ্গু রাজধানীর সীমান পেরিয়ে পৌঁছে গেছে- চট্টগ্রাম, খুলনা, বরিশাল বিভাগে। রোগী সামলাতে হিমসিম খাচ্ছেন চিকিৎসকরা। ইতিমধ্যে দেশের ডেঙ্গুর পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে একে উদ্বেগজনক বলে মন্তব্য করেছেন বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা (ডবিøউএইচও)। ডেঙ্গুর এই অনিয়ন্ত্রিত পরিস্থিতিকে প্রায় মহামারি হিসেবে উল্লে­খ করেছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে, বর্তমানে যে অবস্থা বিরাজ করছে সেটিকে মহামারি হিসেবে উল্লেখ না করলেও এর কাছাকাছি বলতে হবে।

বাংলাদেশ মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) সভাপতি ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন বলেছেন, রাজধানীতে এডিস মশা বাহিত ডেঙ্গু জ্বরের প্রকোপ মহামারী আকার ধারণ করেছে। এক্ষেত্রে জনগণের অসচেতনতা এবং সিটি করপোরেশনের মশা মারার ওষুধ কার্যকর নয় বলে উল্লেখ করেন তিনি। একই সঙ্গে সিটি করপোরেশনের ব্যর্থতায় মশা নিধনের ক্ষেত্রে আমরা সফল হতে পারছি না। এক্ষেত্রে বিএমএ’র সঙ্গে আলোচনা করে এই কাজ সম্পাদন করতে পারত, তাহলে সঠিক প্রক্রিয়ায় কাজ করে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে রাখা যেত। এদিকে আক্রান্তদের সেবায় চিকিৎসকরা যথার্থ ভূমিকা পালন করছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
এমন পারিস্থিতে সিটি কর্পোরেশনগুলো যখন মশা নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ তখনই সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। বিদেশ থেকে জিনোটাইপ মশা আমদানির মাধ্যমে এডিস নিয়ন্ত্রণের প্রাথমিক কাজ শুরু করেছে প্রতিষ্ঠানটি। কারণ এখন যদি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা না হয় তাহলে আগামী সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মাসে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ রূপ ধারণ করতে পারে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। সরকারি হিসেব মতে, ইতোমধ্যে গত ২৪ দিনেই এ রোগে আক্রান্ত হয়ে রাজধানীর বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন ৬ হাজার ৪২১ জন। সরকারি হিসেবে এ পর্যন্ত মৃত্যু ঘটেছে ৮ জনের। গত ২৪ ঘণ্টায় এ রোগে আক্রান্ত হয়েছে ৫৬০ জন। ঢাকায় ব্যাপক হারে ছড়িয়ে পড়া ডেঙ্গু রোগে অনেকের মৃত্যু হলেও সরকারি হিসাবে তাদের সবার তথ্য আসছে না। আসছে না আক্রান্ত হওয়ার সঠিক পরিসংখ্যানও। তবে বেসরকারি হিসেবে এ রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা লাখ ছাড়িয়ে গেছে বলে বলে মন্তব্য সংশ্লিষ্টদের। যদিও স্বাস্থ্য অফিদফতরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার এক গবেষণায় সাড়ে তিন লাখ ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত রোগী বাংলাদেশে রয়েছে বলে উঠে এসেছে।

সবমিলিয়ে দেশে ডেঙ্গু পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করলেও এটাকে মহামারি বলতে নারাজ সংশ্লিষ্টরা। তাদের মতে, বর্তমান পরিস্থিতি অবশ্যই আউটব্রেক (প্রাদুর্ভাব)। তবে ইংরেজি এপিডেমিক শব্দের অর্থ মহামারী। সেই হিসেবে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা এই অবস্থাকে ডেঙ্গু এপিডেমিক হিসেবে উল্লেখ করছেন।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বের মোট জনসংখ্যার শতকরা ৫০ শতাংশ সাধারণ ও মারাত্মক ধরনের ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছেন। প্রতি বছর মারাত্মক ধরনের ডেঙ্গু জ্বরে কমপক্ষে ৫ লাখ মানুষ আক্রান্ত হন। প্রতি মিনিটেই বিশ্বের কোথাও না কোথাও, কেউ না কেউ ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন। তাদের অধিকাংশই শিশু। আক্রান্তদের মধ্যে বছরে ২২ হাজার ডেঙ্গু রোগীর মৃত্যু হয়।

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, দেশের ডেঙ্গু পরিস্থিতি প্রায় মহামারি পর্যায়ে পৌঁছে গেছে। তারা জানান, বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা প্রচলিত যে মহামারির সংজ্ঞা সেখানে বলা হয়েছে, ‘কোন রোগ কোন ভৌগলিক এলাকায় ইতিপূর্বে ছিল না, হঠাৎ করে সেই এলাকায় যদি আবির্ভাব ঘটে, তাহলে ওই রোগের জীবাণু ওই এলাকার মানুষের শরীরে অধিক হারে সংক্রমণ ঘটিয়ে মৃত্যুতে পতিত করতে পারে। এতে ভয়াবহ জনদুর্ভোগ সৃষ্টি হতে পারে, যদি কোনো প্রতিষেধক না থাকে তাহলে রোগের ভয়াবহতা বাড়তে পারে, চিকিৎসা ব্যবস্থার অপ্রতুলতা হওয়ায় মৃত্যুও বাড়তে পারে। কোনো রোগের ক্ষেত্রে এসব বিবেচনায় নিয়ে মহামারি হিসেবে উল্লেখ করা হয়। এক্ষেত্রে ডেঙ্গু বাংলাদেশ নতুন না হলেও এর কোনো প্রতিষেধক নেই এবং এ রোগে ব্যাপক জনদুর্ভোগ ও মৃত্যু অস্বাভাবিক নয়। তাই এই অবস্থাকে মহামারি হিসেবে উল্লেখ করা যায়।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) মেডিসিন বিভাগের সাবেক ডীন প্রফেসর ডা. এ বি এম আব্দুল্লাহ বলেন, ডেঙ্গু মহামারির পথে। তিনি বলেন, এবারের ডেঙ্গুর ধরণ ভিন্ন। আর সিটি কর্পোরেশন যেভাবে মশা নিধনের কাজ চালিয়ে যাচ্ছে সেভাবে কোনদিনই মশা নিধন সম্ভব নয়। এক এলাকায় ওষুধ দিলে অন্য এলাকায় মশা চলে যাচ্ছে। এক্ষেত্রে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাথে সমন্বিত পদক্ষেপ দরকার। এছাড়া তিনি জনগণকে সবার আগে সচেতন হওয়ার কথা বলেন। এছাড়া জ্বর হলেই ডেঙ্গু পরীক্ষা করিয়ে নেয়ার পরামর্শ দেন প্রফেসর ডা. আব্দুল্লাহ।

এদিকে আশঙ্কা করা হচ্ছে চলমান ডেঙ্গু পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ আকার ধারণ করবে আগামী সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মাসে। যদিও ডেঙ্গু জ্বরের ভয়াবহতা আগামী নভেম্বর মাস পর্যন্ত চলমান থাকবে বলে মন্তব্য করেছেন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক প্রফেসর ডা. আবুল কালাম আজাদ। তিনি বলেন, আমাদের দেশে স্বাভাবিক নিয়মে সেপ্টেম্বর-অক্টোবরে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব সবচেয়ে বেশি দেখা যায়। এবার একটু আগেই ডেঙ্গু প্রকোপ দেখা গেছে। আর তাই এই সময়ে রোগী এতো বেশি হয়েছে। নিয়মানুযায়ী ওই সময়ে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হওয়া অস্বাভাবিক নয় বলে উল্লেখ করেন ডা. আবুল কালাম আজাদ।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন্স সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের সহকারী পরিচালক ডা. আয়েশা আক্তার জানান, গত ১ জুনায়ারি থেকে এ পর্যন্ত ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৮ হাজার ৫৬৫ জন। এরমধ্যে ছাড়পত্র পেয়েছেন ৬ হাজার ৪৯৯ জন এবং বর্তমানে ভর্তি রয়েছেন ২ হাজার ৫৮ জন। তবে গত ২৪ দিনেই এ রোগে আক্রান্ত হয়ে রাজধানীর বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন ৬ হাজার ৪২১ জন। জুন মাসে এই সংখ্যা ছিল ১৮২৯ জন। এ বছরে মৃত ৮ রোগীর মধ্যে এপ্রিল ও জুন মাসে ২ জন করে এবং চলতি মাসে ৪ জনের মৃত্যু হয়।

ডেঙ্গু আক্রান্তের এই সংখ্যা শুধুমাত্র রাজধানীর ১২টি সরকারি হাসপাতাল এবং ২৫টি বেসরকারি হাসপাতাল থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে তৈরি। ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগীর প্রকৃত সংখ্যা এরচেয়ে কয়েক গুণ বেশ বলে মনে করেন সংশ্লি­ষ্টরা। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রকৃতপক্ষে ডেঙ্গুতে আক্রান্তের সংখ্যা লাখ ছাড়িয়ে গেছে। আর মৃতের সংখ্যাও সরকারি হিসেবের তুলনায় অনেক বেশি। তাদের মতে, এবারের ডেঙ্গু পরিস্থিতি যেভাবে ছড়িয়ে পড়ছে তাদের অতীতের সব রেকর্ড ইতিমধ্যে ছাড়িয়ে গেছে।

বিএসএমএমইউ’র সাবেক ভিসি প্রফেসর ডা. মো. নজরুল ইসলাম বলেন, ডেঙ্গু আক্রান্তের সরকারি যে হিসেব সেটি ঠিক নয়।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হিসাব অনুযায়ী গত বছর সর্বোচ্চ ১০ হাজার ১৮৪ জন সারাদেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন। তার মধ্যে ২৬ জন মারা যান। এর আগে ২০০২ সালে ৬ হাজার ২৩২ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্তের সর্বোচ্চ রেকর্ড ছিলো। তবে চলতি জুলাই মাসের প্রথম ২৪ দিনের চিত্র দেখে দেশে ডেঙ্গুর ভয়াবহতার চিত্র পাওয়া যায় মন্তব্য বিশেষজ্ঞদের।
এছাড়া চট্টগ্রাম, খুলনা এবং বরিশাল বিভাগের বিভিন্ন স্থানে ইতোমধ্যে ডেঙ্গু রোগের প্রাদুর্ভাব বেড়েছে। কন্ট্রোল রুমের কাছে ঢাকার বাইরে এ পর্যন্ত ডেঙ্গুতে আক্রান্ত ১৭৯ জনের তথ্য রয়েছে। চিকিৎসাধীন আছেন ৪৪ জন। তবে বেসরকারি হিসেবে এ সংখ্যা ৫শ’ ছাড়িয়ে যাবে।

বিএসএমএমইউ’র রিউমাটোলজি বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান প্রফেসর ডা. সৈয়দ আতিকুল হক বলেন, ডেঙ্গু লিভার, কিডনি, মস্তিষ্ক এমনকি হার্টকেও ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। লক্ষণগুলোর মধ্যে রয়েছে- বমি, পেটে ব্যথা, আচরণগত পরিবর্তন, অস্থিরতা, নিদ্রাহীনতা, রক্তক্ষরণ বা নাক মুখ দিয়ে রক্ত পড়া, পানিশূন্যতা, অতিরিক্ত ঘাম, প্রস্রাব না হওয়া ইত্যাদি। গর্ভবতী, শিশু, বয়স্ক, হাই প্রেসার, হৃদরোগ, রক্তে সমস্যাজনিত রোগীদের দিকে বিশেষ নজর দেয়ার কথা বলেন তিনি।

এদিকে, পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন এক সেমিনারে শিগগিরই ডেঙ্গু প্রতিরোধে একটি জাতীয় কর্মপরিকল্পনা গ্রহণের জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে। সেক্ষেত্রে থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া ও ফিলিপাইনের মতো ডেঙ্গুপ্রবণ দেশগুলো থেকে সহযোগিতা গ্রহণের পরামর্শ দেন তারা। একই সঙ্গে সিটি করপোরেশন সঠিক সময়ে এডিস মশার প্রজননস্থল ধ্বংস করতে পারলে ডেঙ্গুর বিস্তাররোধ করে সম্পূর্ণভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে পারত। পরিস্থিতি এতটা ভয়াবহ হতো না।

এডিস নিয়ন্ত্রণে জিনোটাইপ মশা আমদানি
ডেঙ্গুর জীবাণুবাহী এডিস মশা নিয়ন্ত্রণে জিনোটাইপ মশা আমদানির কথা ভাবছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। ইংল্যান্ডের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণালব্ধ এই জিনোটাইপ মশা ব্যবহার করে ইতোপূর্বে থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, ফিজিসহ বেশ কয়েকটি দেশ এডিস নিয়ন্ত্রণে সক্ষম হয়েছে।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক প্রফেসর ডা. আবুল কালম আজাদ বলেন, ইতোমধ্যে বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার প্রতিনিধিদের সঙ্গে এ বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। আমরা তাদের বলেছি ‘জিনোটাইপ মশা আমদানি, আমাদের দেশে এর কার্যকারিতা এবং সম্ভব্যতা যাচাইয়ে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করতে। তারা সবধরনের সহযোগিতার করার আশ্বাস দিয়েছে। তিনি বলেন, জিনোটাইপ মশা মূলত: পুরুষ হয়ে থাকে। এসব মশা ছেড়ে দেয়া হলে সেগুলো এডিস স্ত্রী মশার সঙ্গে মিলিত হয়। কিন্তু ওই স্ত্রী মশা ডিম পাড়লেও সেটা থেকে লার্ভা হয় না। এই প্রক্রিয়ায় ধীরে ধীরে এডিস মশা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে এর কার্যকারিতা ৮০ থেকে ৮৫ ভাগ বলেও জানান তিনি।

এদিকে সিটি করপোরেশনের মশার ওষুধ কার্যকর হয়নি বলেই ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা এত বেশি বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। গতকাল কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল পরিদর্শনকালে সাংবাদিকদের একথা বলেন তিনি। ডেঙ্গু প্রতিরোধে আরও কার্যকর ওষুধ ব্যবহার করা উচিত জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, এখন ডেঙ্গুর ধরন পাল্টে গেছে। তাই ডেঙ্গু মুক্ত থাকতে আরও কার্যকরী ওষুধের প্রয়োজন। মশার ওষুধ কাজ না করায় ডেঙ্গুর এমন প্রাদুর্ভাব কি না এমন প্রশ্নের জবাবে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, হ্যাঁ মশার ওষুধ কাজ করেনি দেখেই এবার ডেঙ্গুর প্রকোপ বেশি বলে মনে করি। এক্ষেত্রে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় মশার ওষুধ পরীক্ষা করবে কি না সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এটা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কাজ নয়। কৃষি মন্ত্রণালয় মশার ওষুধ পরীক্ষার কাজ করে। তবে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে বলা হলে তা ভেবে দেখা হবে। এ সময় মন্ত্রীর সঙ্গে ছিলেন স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহা-পরিচালক প্রফেসর আবুল কালাম আজাদ। তিনি বলেন, স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্য অনুসারে দেখা যায় ১০ হাজার ডেঙ্গু রোগী বিভিন্ন হাসাপতালে ভর্তি আছেন। সারাদেশে যেখানেই ডেঙ্গু রোগী ভর্তি থাকুক না কেন তাদের সর্বোচ্চ চিকিৎসাসেবা দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।

স্বাস্থ্য অফিদফতরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার আরেক গবেষণায় সাড়ে তিন লাখ ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত রোগী বাংলাদেশে আছে সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে অধিদফতরের মহাপরিচালক বলেন, জ্বর হলেই অনেকে বিভিন্ন হাসপাতালে যাচ্ছেন। তারা ভাবছেন তারা ডেঙ্গু রোগী। তবে তা নয়, অনেকেই প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে বাসায় ফিরে যাচ্ছেন।



 

Show all comments
  • Shyjuddin Khan ২৫ জুলাই, ২০১৯, ১:১৮ এএম says : 0
    Allah save us....
    Total Reply(0) Reply
  • Symon Bhuiyan ২৫ জুলাই, ২০১৯, ১:২০ এএম says : 0
    Dear meyor saheb Amdr puran dhakar rasta ghat er obosta khub e kharp. Allah roste thik korben???? Onk koste aci vai amra
    Total Reply(0) Reply
  • Jony Roxy Dhali ২৫ জুলাই, ২০১৯, ১:২০ এএম says : 0
    বাঙালির জন্য সরকার কিছু করবে ? সিটি কর্পোরেশন কোন ইফেক্টিভ স্টেপ নিবে ? আমার মনে হয় না। আমাদের কয়েল আছে, 10 টাকা দিয়ে কিনা চালাব। মশাও মরবে, নিজেরাও মরবো।
    Total Reply(0) Reply
  • Ashiqur Rahman Labib ২৫ জুলাই, ২০১৯, ১:২১ এএম says : 0
    যেখানে সেখানে থুথু, কফ, ময়লা, আবর্জনা হালানোর জন্য ১০০℅ সাধারণ মানুষ দায়ি
    Total Reply(0) Reply
  • S M Nurul Islam ২৫ জুলাই, ২০১৯, ১:২১ এএম says : 0
    but bangladesher mp montri ra mone hoy jane na ei khaborti
    Total Reply(0) Reply
  • Tanjin Ahsan ২৫ জুলাই, ২০১৯, ১:২২ এএম says : 0
    আপনি ডেঙ্গু জ্বরে না মরলে, বন্যায় মরবেন। বন্যায় বেঁচে গেলেও, সড়ক দুর্ঘটনায় মরবেন। দুর্ঘটনায় না মরলেও ভেজাল খাদ্য খেয়ে মরবেন। সবকিছুতে বেঁচে গেলেও একদিন আপনাকে বিনা কারণে গনপিটুনি খেয়ে মরতে হবে। মৃত্যুর সব পন্থা খোলা আছে। আপনাকে অভিনন্দন আপনি এখনো বেঁচে আছেন!
    Total Reply(0) Reply
  • Moushumi Kabir ২৫ জুলাই, ২০১৯, ১:২২ এএম says : 0
    Be alert all family members friends .Hope for the best. Inshallah we can recover it.
    Total Reply(0) Reply
  • Tarek Sagor ২৫ জুলাই, ২০১৯, ১:২২ এএম says : 0
    আল্লাহ সহায় হউন সবার প্রতি।
    Total Reply(0) Reply
  • Babul Babul ২৫ জুলাই, ২০১৯, ১:২৩ এএম says : 0
    দ্রুত দমনের প্রদক্ষেপ নিতে হবে।প্রয়োজনে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা উচিত।
    Total Reply(0) Reply
  • Sultan Ul Alam ২৫ জুলাই, ২০১৯, ১:২৩ এএম says : 0
    ডেঙ্গু নিয়ে অবহেলা নয়। প্রতিটা হাসপাতালে নতুন ওয়ার্ড খুলে WHO ম্যনুয়াল অনুযায়ী MO দের প্রশিক্ষনের প্রয়োজন হতে পারে। দিনের বেলায়ও মশার কামড় থেকে সাবধান।
    Total Reply(0) Reply
  • Ranjit Banik ২৫ জুলাই, ২০১৯, ১:২৩ এএম says : 0
    আতঙ্কজনক পর্যায়ে পোঁছার আগে, সিটি কর্পোরেশন এর ব্যবস্থা নেয়া উচিৎ। সেই সাথে সচেতনতার জন্য, প্রচারনায় জোর দিতে হবে।
    Total Reply(0) Reply
  • Ratul Pa ২৫ জুলাই, ২০১৯, ১:২৩ এএম says : 0
    মশার ঔষধ ছিটালে তো চোখে পড়বে, মুখে বলে কাজে নাই '১ বছরে দেখিনি ঔষধ ছিটাতে
    Total Reply(0) Reply
  • Jashim Uddin ২৫ জুলাই, ২০১৯, ১:২৪ এএম says : 0
    দ্রুত মশা নিধনের ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য মেয়র সাহেবের প্রতি অনুরোধ রইল
    Total Reply(0) Reply
  • Mridha Habib ২৫ জুলাই, ২০১৯, ১:২৪ এএম says : 0
    সব এলাকায় প্রতিদিন মশার ঔষধ দেওয়া জরুরী।
    Total Reply(0) Reply
  • Rezvi Tinne ২৫ জুলাই, ২০১৯, ১:২৪ এএম says : 0
    সর্তকতা অবলম্বন করতে বলা হচ্ছে,কিভাবে কি??যেখানে সারা ঢাকার শহরই নোংরা
    Total Reply(0) Reply
  • Md Sharif ২৫ জুলাই, ২০১৯, ১:২৪ এএম says : 0
    বাংলাদেশে ময়লা আর্বজনা,যেখানে সেখানে ফেলা পরিহার করুন,ময়লাগুলো রিসাইকল করে নষ্ট করে ফেলার ব্যবস্থা সরকারের কর্তব্য।
    Total Reply(0) Reply
  • Md Husain Husain ২৫ জুলাই, ২০১৯, ১:২৫ এএম says : 0
    কোন ঔষধে কাজ হবে না,তোমাদের কি এখন বুঝতে বাকি আছে যে এটা আল্লাহর গজব,
    Total Reply(0) Reply
  • Atiqure Rahman Rimel ২৫ জুলাই, ২০১৯, ১:২৫ এএম says : 0
    হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও চিকিৎসক কর্মকর্তাদেরকে ধন্যবাদ। সিটি কর্পোরেশনের অবহেলার কারণে এই অবস্থা।
    Total Reply(0) Reply
  • Jakir Hossan ২৫ জুলাই, ২০১৯, ১:২৫ এএম says : 0
    চারিদিকে যা সমস্যা, আল্লাহ তুমি সকলকে হেফাজত কর।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ডেঙ্গু

২৭ জানুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ