বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির কবলে শবে বরাত-৩
সুনানে ইবনে মাজায় বর্ণিত হয়েছে : হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
হজ করার শক্তি-সামর্থ্য ও অর্থবিত্ত থাকার পরও যে ব্যক্তি হজ করে না তার সম্পর্কে হাদিস শরীফে কঠোর হুমকি প্রদান করা হয়েছে। ওমর ইবনুল খাত্তাব রা. বলেন, যে ব্যক্তি হজ করার সামর্থ্য রাখে, তবুও হজ করে না, সে ইহুদি হয়ে মৃত্যুবরণ করল কি খ্রিষ্টান হয়ে, তার কোনো পরোয়া আল্লাহর নেই। -তাফসীরে ইবনে কাসীর ১/৫৭৮।
তিনি আরো বলেন, আমার ইচ্ছে হয় কিছু লোককে বিভিন্ন শহরাঞ্চল ও লোকালয়ে পাঠিয়ে দিই, তারা সেখানে দেখবে, কারা সামর্থ্য থাকা সত্তে¡ও হজ করছে না। তারা তাদের ওপর কর আরোপ করবে। তারা মুসলমান নয়, তারা মুসলমান নয়। -প্রাগুক্ত।
যারা হজ-উমরা না করে সন্ন্যাসী হওয়ার চেষ্টা করে ইসলাম তা কখনো অনুমোদন করে না। ইবনে আব্বাস রা. হতে বর্ণিত, নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, ইসলামে বৈরাগ্য নেই। অন্য বর্ণনায় রয়েছে, হজের ক্ষেত্রে কোনো বৈরাগ্য নেই। - মুসনাদে আহমদ, হাদিস : ৩১১৩, ৩১১৪; সুনানে আবু দাউদ, হাদিস : ১৭২৯; মুসতাদরাকে হাকেম, হাদিস : ১৬৮৬; তবারানী, হাদিস : ১১৫৯৫; শরহু মুশকিলুল আছার, হাদিস : ১২৮২।
ইকরামা রা.-কে জিজ্ঞেস করা হলো, সারুরা কী? তিনি বলেন, যে ব্যক্তি হজ-উমরাহ কিছুই করে না অথবা যে ব্যক্তি কুরবানি করে না। - শরহু মুশকিলুল আছার ২/২১৫-১৬। সুফিয়ান ইবনে উয়াইনা রা. বলেন, জাহেলি যুগে যখন কোনো ব্যক্তি হজ করত না তখন তারা বলত, সে সারুরা (বৈরাগী)। তখন আল্লাহর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ইসলামে বৈরাগ্য নেই। - প্রাগুক্ত।
যারা হজের সফরের সৌভাগ্য লাভ করেন তারা যেন আল্লাহর মেহমান। তাই প্রত্যেকের উচিত সর্বদা আল্লাহর আনুগত্য ও তার ইশক-মুহাববতের অনুভূতি নিয়ে সেখানে অবস্থান করা। বায়তুল্লাহ ও আল্লাহর অন্যান্য শেয়ার ও নিদর্শনের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করা। সকল প্রকার গুনাহ থেকে বেঁচে থাকা। দ্ব›দ্ব-কলহ, ঝগড়া-বিবাদ এবং অন্যায়-অশ্লীলতা থেকে সর্বাত্মকভাবে দূরে থাকা। কোরআন-হাদিসে এ সম্পর্কে বিশেষ হুকুম নাযিল হয়েছে।
আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন, ‘হজের নির্দিষ্ট কয়েকটি মাস আছে। যে ব্যক্তি সেসব মাসে (ইহরাম বেঁধে) নিজের ওপর হজ অবধারিত করে নেয়, সে হজের সময় কোনো অশ্লীল কথা বলবে না, কোনো গুনাহ করবে না এবং ঝগড়া করবে না। তোমরা যা কিছু সৎকর্ম করবে আল্লাহ তা জানেন।’ সূরা বাকারা (২) : ১৯৭।
উক্ত আয়াতে তিনটি বিষয় থেকে বিশেষভাবে নিষেধ করা হয়েছে। এক. ইহরাম অবস্থায় অশ্লীল কথা বলা। এমনকি স্ত্রীর সাথে যৌন উত্তেজনামূলক কথা বলাও নিষিদ্ধ। দুই. কোনো ধরনের গুনাহে লিপ্ত হওয়া। ইহরাম অবস্থার বিশেষ গুনাহ যেমন শরীরের কোনো স্থানের চুল, পশম বা নখ কাটা, আতর বা সুগন্ধি লাগানো, পশু শিকার করা, শরীরে উকুন মারা থেকে যেরূপ বিরত থাকবে তেমনি সাধারণ অবস্থার গুনাহ যেমন অন্যকে কষ্ট দেয়া, কু-দৃষ্টি ও গিবত শেকায়েত থেকেও বিরত থাকবে। তিন. ঝগড়া-বিবাদে লিপ্ত হওয়া।
এ ধরনের পাপ-পঙ্কিলতা ও ঝগড়া-বিবাদমুক্ত হজকেই হাদিস শরীফে হজে মাবরুর বা মকবুল হজ বলা হয়েছে এবং এর বিশেষ বিশেষ ফজিলত ও মর্যাদা উল্লেখিত হয়েছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।