Inqilab Logo

শনিবার ০২ নভেম্বর ২০২৪, ১৭ কার্তিক ১৪৩১, ২৯ রবিউস সানী ১৪৪৬ হিজরি

জেটি-ইয়ার্ড নির্মাণের উদ্যোগ কর্ণফুলীর তীরে ২৫ একর জমি উদ্ধার

রফিকুল ইসলাম সেলিম : | প্রকাশের সময় : ২৪ জুলাই, ২০১৯, ১২:০৫ এএম

চট্টগ্রামের পতেঙ্গায় একটি মাল্টিপারপাস জেটি ও একটি লাইটারেজ জেটির সাথে বাল্ক কার্গো ইয়ার্ড নির্মাণ করছে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। বন্দরে এ দুটি বড় প্রকল্প বাস্তবায়নের পথে বড় বাধা ছিল লালদিয়ার চরের অবৈধ দখল। দখলদারদের স্থাপনা গুঁড়িয়ে দিয়ে ভূমি উদ্ধারের ফলে ওই বাধা কেটে গেছে।
গতকাল মঙ্গলবার বিকেল পর্যন্ত টানা দুই দিনের অভিযানে লালদিয়ার চরের আড়াই হাজার কোটি টাকা মূল্যের ২৫ একর জমি উদ্ধার করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে আরও ৭৫ একর জমি উদ্ধার করা হবে। চট্টগ্রাম বন্দরের কর্মকর্তারা জানান, আমদানি-রফতানি দ্রæত বাড়ছে, এ চাপ সামাল দিতে বন্দরের সক্ষমতা বাড়ানোর ব্যাপক পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। তার অংশ হিসেবে লালদিয়ার চরে লাইটারেজ জেটি নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়।
এ জেটিকে ঘিরে সেখানে ৫০ একর জমিতে নির্মাণ করা হবে বাল্ক কার্গো ইয়ার্ড। এর পাশাপাশি পতেঙ্গায় শুরু হবে লালদিয়া মাল্টিপারপাস টার্মিনাল নির্মাণ কাজ। এ দুটি প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে বন্দরের সক্ষমতা ও গতি বাড়বে।
চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙরে বছরে পাঁচ কোটি টনেরও বেশি খোলা পণ্য হ্যান্ডলিং হয়। বিশ্বের নানা দেশ থেকে আমদানিকৃত এসব পণ্য লাইটারেজ জাহাজে খালাস করা হয়। এর একটি বড় অংশ নৌপথে দেশের বিভিন্ন এলাকায় পরিবহন করা হয়। একটি অংশ খালাস হয় কর্ণফুলী নদীর ১৬টি ঘাটে। এসব ঘাট থেকে শত শত ট্রাকে করে নগরীসহ চট্টগ্রামের বিভিন্ন এলাকায় সরবরাহ করা হয়। ফলে পণ্যবাহী ট্রাকের কারণে চট্টগ্রাম বন্দরকে ঘিরে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়।
বন্দরের কর্মকর্তারা বলছেন, লালদিয়ার চরে টার্মিনাল নির্মাণ করা হলে যানজট অনেক কমে যাবে। চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ-সিডিএ পতেঙ্গা সৈকত থেকে ফৌজদারহাট পর্যন্ত ১৬ কিলোমিটার আউটার রিং রোড নির্মাণ করছে। পতেঙ্গায় হচ্ছে দেশের প্রথম টানেল। অন্যদিকে ফৌজদারহাট থেকে বায়েজিদ পর্যন্ত আরও একটি রিং রোড নির্মাণের কাজ চলছে। ফলে লালদিয়া টার্মিনাল থেকে খুব সহজেই কর্ণফুলী টানেল ও রিং রোড হয়ে পণ্যবাহী ভারী যানবাহন চলাচল করতে পারবে।
লালদিয়া চরের ১২ এবং ১৩ নম্বর খালের মধ্যবর্তী ৫২ একর জমিতে লাইটারেজ জেটি এবং পশ্চাদসুবিধা গড়ে তোলা হবে। এতে অন্তত ৬-৭টি জেটি নির্মাণ করা হবে। এসব জেটিতে লাইটারেজ জাহাজ বার্থিং নিয়ে বহির্নোঙরে অবস্থানকারী মাদার ভেসেল থেকে খালাস করে আনা পণ্য সরবরাহ দেবে। এখানে একটি ইয়ার্ড গড়ে তোলা হবে। যেখান থেকে ট্রাকে বোঝাই করে খোলা পণ্য সামগ্রী চট্টগ্রামের বিভিন্ন এলাকায় পাঠানো হবে। বন্দরের কর্মকর্তারা জানান, লালদিয়ার চরের ওই এলাকায় কর্ণফুলী নদীর বাঁক থাকায় সেখানে গভীরতা কম। এ কারণে সেখানে বড় জাহাজের বদলে ছোট জাহাজ ভেড়ানো হবে। লাইটারেজ জেটিকে ঘিরে পুরো এলাকায় ইয়ার্ড গড়ে তোলা হবে।
এদিকে বন্দরের ১৪ ও ১৫ নম্বর খালের মাঝামাঝি অংশে মাল্টিপারপাস টার্মিনাল নির্মাণের কাজও খুব শিগগির শুরু হবে। বন্দরের কর্মকর্তারা জানান, বন্দরে কন্টেইনার পরিবহন প্রবৃদ্ধির চেয়ে কার্গো পরিবহন প্রবৃদ্ধি বেশি। খাদ্যশস্য, ক্লিংকার ও স্ক্র্যাপ আমদানি প্রতিবছর বাড়ছে। বাড়ছে পাথর, স্টিল সিট ও স্টিল পাইপের মতো নতুন নতুন কার্গো আমদানি। দেশে চলমান মেগা প্রকল্প বিশেষ করে রূপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র, রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল ও পদ্মা সেতুর মতো বড় প্রকল্পের কার্গোও আমদানি হচ্ছে। দেশে চলমান উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য আমদানিকৃত পণ্য দ্রæততর খালাস ও রফতানি পণ্য যথাসময়ে জাহাজিকরণের চাহিদাকে সামনে রেখে পতেঙ্গার লালদিয়ায় মাল্টিপারপাস টার্মিনাল নির্মাণের উদ্যোগ নেয় বন্দর কর্তৃপক্ষ।
মোট এক হাজার মিটার দীর্ঘ স্থান জুড়ে পাঁচটি জেটি এবং এক হাজার দৈর্ঘ্য ও তিনশ মিটার প্রস্থের ব্যাকআপ ইয়ার্ড নির্মাণ করা হবে এ টার্মিনালে। এখানে কর্ণফুলীর গভীরতা বেশি থাকায় ১০ মিটার গভীরতার জাহাজ জেটিতে ভিড়তে পারবে। আউটার রিং রোড, কর্ণফুলী টানেল এবং বন্দর সংলগ্ন টোল রোড হয়ে এ টার্মিনাল থেকে আমদানিকৃত মালামাল দ্রæত দেশের বিভিন্ন এলাকায় পাঠানো যাবে। ২০২২ সালের মধ্যে এ টার্মিনালে জাহাজ ভেড়ানোর লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছে বন্দর কর্তৃপক্ষ। পিপিপির আওতায় দেশি-বিদেশি কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের কনসোর্টিয়াম প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে।
চট্টগ্রাম বন্দরের উপ-ব্যবস্থাপক (ভূমি) মোহাম্মদ জিল্লুর রহমান বলেন, বন্দরের দুইটি বড় প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য লালদিয়ার চরের অবৈধ দখল উচ্ছেদ শুরু হয়েছে। গতকাল দ্বিতীয় দিনে টানা উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করা হয়। দুইদিনের অভিযানে আড়াই হাজার কোটি টাকার ২৫ একর জমি উদ্ধার করা হয়েছে বলে জানান তিনি। তিনি বলেন, প্রথম দফার অভিযান আপাতত শেষ হয়েছে। বাকি জমি উদ্ধারে ফের অভিযান শুরু হবে। গত দুই দিনে প্রায় আড়াই শতাধিক অবৈধ স্থাপনা গুঁড়িয়ে দেয়া হয়।
উল্লেখ্য, আদালতের নির্দেশে কর্ণফুলীর পাড়ে কয়েক হাজার কোটি টাকা মূল্যের ১৫৮ একর জমি উদ্ধারে গেল ফেব্রæয়ারি মাসে প্রথম দফায় জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে উচ্ছেদ অভিযান হয়। এর প্রায় পাঁচ মাস পর দ্বিতীয় দফায় উচ্ছেদ অভিযান শুরু করলো বন্দর কর্তৃপক্ষ। বন্দরের কর্মকর্তারা জানান, প্রকল্পের প্রয়োজনে যখন যতটুকু দরকার ততটুকু জমি দখলে নেয়া হবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ