Inqilab Logo

শুক্রবার ০৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ কার্তিক ১৪৩১, ০৫ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ঈদের ১০ দিন আগ থেকে রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি বন্ধ

প্রকাশের সময় : ৬ জুন, ২০১৬, ১২:০০ এএম

বিশেষ সংবাদদাতা : চলাচলে যাতে ভোগান্তি না হয় সেজন্য রোজার ঈদের অন্তত ১০ দিন আগে থেকে দেশের শহরগুলোতে রাস্তাঘাট নির্মাণে খোঁড়াখুঁড়ির কাজ বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছে সরকার। দেশের সব সিটি করপোরেশনের মেয়রদের নিয়ে গতকাল রোববার সচিবালয়ে এক সভায় স্থানীয় সরকারমন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেন এই নির্দেশ দেন। রোজায় ভেজালমুক্ত খাবার নিশ্চিত করতে বাজার তদারকি ছাড়াও ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা এবং পানি ও বিদ্যুৎ সরবরাহ ঠিক রাখতেও সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেন তিনি।
সাংবাদিকদের উপস্থিতিতে সভায় বিভিন্ন সিটি করপোরেশনের মেয়র, ভারপ্রাপ্ত মেয়র ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তারা রোজা সামনে রেখে তাদের প্রস্তুতির কথা জানান। ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনায় ম্যাজিস্ট্রেট স্বল্পতার কথা উঠে আসে বেশ কয়েকটি সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তাদের কথায়।
সবার বক্তব্য শুনে স্থানীয় সরকারমন্ত্রী বলেন, নির্মাণকাজে ব্যবহৃত ইট, রড, সুড়কি ও অন্যান্য নির্মাণ সামগ্রী রাস্তায় না রাখার বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে। নির্মাণকাজ ও বৃষ্টিতে সৃষ্ট রাস্তার গর্ত ও নর্দমা বন্ধ করতে হবে। নগর এলাকার রাস্তাঘাটের নির্মাণকাজ ঈদের অন্তত ১০ দিন আগে থেকে বন্ধ রাখতে হবে যাতে জনসাধারণের চলাচল নির্বিঘœ হয়। নগরীর রাস্তায় জলাবদ্ধতা নিরসনে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়া, রোজায় নাগরিকদের সুপেয় ও ব্যবহারের পানি প্রাপ্তি নিশ্চিত এবং সিটি করপোরেশন নির্ধারিত দ্রব্যমূল্য স্থিতিশীল রাখতে বাজার তদারকিসহ ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা অব্যাহত রাখার নির্দেশ দেন স্থানীয় সরকারমন্ত্রী মোশাররফ।
ঢাকার মগবাজার-মৌচাক ফ্লাইওভার নির্মাণকাজের জন্য রাস্তায় যেসব প্রতিবন্ধকতা রয়েছে সেগুলো দ্রুত অপসারণ, নগরির ডাস্টবিন ও রাস্তাঘাট পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা এবং ফুটপাতে জনগণের চলাচল নির্বিঘœ রাখতে অবৈধ দখলদার উচ্ছেদেও সিটি করপোরেশন কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দেওয়া হয়।
ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা (ইজিবাইক) নিয়ে বিরক্তি প্রকাশ করেছেন সিটি করপোরেশনের মেয়ররা। তাদের অভিযোগ ইজিবাইকের কারণে সৃষ্টি হচ্ছে যানজট, যা রীতিমতো অস্বস্তিকর হয়ে দাঁড়িয়েছে। মেয়ররা অভিযোগের তীর ছুঁড়েছেন পুলিশের দিকে। কোনো ধরনের অনুমোদন না থাকলেও যানগুলো দিব্যি চলছে পুলিশকে মাসোহারা দিয়ে। ঢাকার বাইরে নগরগুলোতে যানজটের জন্য দায়ী ইজিবাইক বন্ধ করে দিতে গেলে সহযোগিতা তো দূরে থাক উল্টো পুলিশি হামলার অভিযোগও তুলেছেন তারা।
খুলনা সিটি করপোরেশনের ভারপ্রাপ্ত মেয়র আনিসুর রহমান বিশ্বাস বলেন, মাননীয় মন্ত্রী মহোদয়, ইজিবাইক নিয়ে খুব বিপদে আছি। এদের কারণে খুলনা শহরে ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানজটের সৃষ্টি হয়। এদের নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হয়ে পড়েছে।
নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভী বলেন, অন্য জায়গায় ইজিবাইক নিয়ে কতটুকু সমস্যা হচ্ছে জানি না, কিন্তু আমার শহরে ইজিবাইকের কারণে মারাত্মক যানজট পোহাতে হচ্ছে। এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে গেলে শ্রমিক নেতাদের তোপের মুখে পড়তে হয়। নেতারা আন্দোলন ডাকে। এরাই ইজি বাইকের নিয়ন্ত্রক। এ ব্যাপারে কঠিন সিদ্ধান্তে আসা দরকার। বরিশাল সিটি করপোরেশনের মেয়র আহসান হাবীব কামাল অভিযোগ করে বলেন, শুধু শ্রমিক নেতারাই নন, এর সঙ্গে পুলিশের সম্পর্ক আছে। তারা নিয়মিত মাসোহারা পায়। আমরা যখনই তাদের ধরতে যাই উল্টো পুলিশ আমাদের লোকদের ওপর আক্রমণ করে।
সভায় ইফতারির দোকান ও হোটেল-রেস্তোরাঁয় পচা-বাসি, বিষাক্ত রাসায়নিক ও রংযুক্ত এবং ভেজাল খাদ্য বিক্রি রোধে তদারকি ও ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার নির্দেশনা দেন স্থানীয় সরকার সচিব আবদুল মালেক। রোজায় খাদ্যপণ্যে ফরমালিন ঠেকাতে ফলমূলের দোকান, সবজি ও মাছের বাজারেও তদারকি এবং ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার কথা বলেন তিনি। রমজান মাসের পবিত্রতা রক্ষায় প্রকাশ্যে পানাহার বন্ধে উদ্বুদ্ধকরণ ও সচেতনতামূলক কার্যক্রম নেওয়ার তাগিদ দেন স্থানীয় সরকার সচিব।
এ প্রসঙ্গে স্থানীয়রা বলেন, রমজানের পবিত্রতা রক্ষা সামাজিক, নৈতিক ও ধর্মীয় কাজ। এখানে কোনো রকম শিথিলতার সুযোগ নেই। রোজার পানির সরবরাহ ঠিক রাখার পাশাপাশি ইফতার ও সেহরিতে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলব।
স্থানীয় সরকার মন্ত্রীর সভাপতিত্বে আয়োজিত সভায় উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব আবদুল মালেক, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র সাঈদ খোকন, নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভী, বরিশাল সিটি করপোরেশনের মেয়র আহসান হাবিব কামাল, গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ভারপ্রাপ্ত মেয়র আসাদুর রহমান খান কিরণ, রংপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র শরফুদ্দিন আহমেদ ঝন্টু, খুলনা সিটি করপোরেশনের ভারপ্রাপ্ত মেয়র আনিসুর রহমান বিশ্বাস, রাজশাহী সিটি করপোরেশনের ভারপ্রাপ্ত মেয়র নিজাম-উল আজীম, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী শ্যামা প্রসাদ অধিকারী, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী ওয়ালিউল্লাহ প্রমুখ।
বাড়ি গিয়ে পানি দিবা, মাফও চাইবা : ওয়াসাকে মন্ত্রী
রমজানে পাইপ লাইনের মাধ্যমে সরবরাহ করতে না পারলে ওয়াসাকে পানি বাড়ি বাড়ি পৌঁছে দেয়ার নির্দেশ দিয়ে বাসিন্দাদের কাছে ক্ষমাও চাইতে বলেছেন স্থানীয় সরকার মন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেন। রমজানের পবিত্রতা রক্ষা এবং রোজায় নাগরিক সেবা নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্টদের নিয়ে সেচিবালয়ে এক সভায় তিনি এই নির্দেশ দেন।
ঢাকা ওয়াসার উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক (প্রশাসন) মাহমুদ হোসেন বলেন, আমরা প্রতিদিন ২৪৫ কোটি লিটার পানি সরবরাহ করে আসছি। তার কথা শেষ না হতেই মন্ত্রী মোশাররফ বলেন, ঢাকায় পৌনে দুই কোটি লোকের ৯০ থেকে ৯৫ ভাগ রোজা রাখেন। প্রতিদিন কোনো না কোনো এলাকায় ওয়াসার পানির স্বল্পতা দেখা দেয়। পানি বাড়ি বাড়ি পৌঁছে দিবা, দরজা খুললে মাফ চাবা। এটা করা যাবে তো, নাকি? মন্ত্রী হিসেবে আমি নির্দেশ দিয়েছি। মন্ত্রীর বক্তব্যের সময় ওয়াসার এই কর্মকর্তা ‘স্যার’, ‘স্যার’ বলে সম্মতি জানান।
খন্দকার মোশাররফ বলেন, রমজানে পানি না দিলে আল্লাহও কিন্তু তার বিচার করবে। রোজার সময় গ্রাহকদের সমস্যা জানতে ওয়াসাকে ২৪ ঘণ্টার জন্য একটি নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র খোলার নির্দেশ দিয়ে মন্ত্রী বলেন, কোথাও পানির সমস্যা হলে যেন আপনারা সঙ্গে সঙ্গে জানাতে পারেন। কন্ট্রোলরুম করলে আপনারাও ২৪ ঘণ্টা খবর পাবেন। নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র খোলার বিষয়টি টেলিভিশনে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে সবাইকে জানানোরও নির্দেশ দেন মন্ত্রী। পাইপ লাইনের বাইরে অন্যভাবে পানি বিক্রি বন্ধ করতে ওয়াসাকে নির্দেশ দিয়ে তিনি বলেন, ‘তোমরা পানির কৃত্রিম সংকট তৈরি করে পানি বেচ’। মন্ত্রীর এই মন্তব্যে কয়েকজন মেয়র সমর্থন জানান। এরপর মোশাররফ বলেন, রমজানের দিনে যদি পানি না থাকে তাহলে গর্হিত অন্যায়। এটা ওয়াসার গুরুত্ব দায়িত্ব। পানির সাপ্লাই নিশ্চিত করতে হবে। পানি নিয়ে ব্যবসা করা ঠিক হবে না।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ঈদের ১০ দিন আগ থেকে রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি বন্ধ
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ