পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
দেশে দেশে মুসলিম নির্যাতনের ভয়াল বিনাশ মোকাবিলায় ঐক্যবদ্ধ ও সুপরিকল্পিত আন্দোলন সংগ্রাম বিশ্বব্যাপী জোরদার করার আহবান জানিয়ে লন্ডনে শেষ হলো জমিয়তে উলামার শত বছরপূর্তি উপলক্ষে আয়োজিত আন্তর্জাতিক মহাসম্মেলন। গত ১৫ জুলাই বিকাল ৫টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত পূর্ব লন্ডনের রয়েল রিজেন্সী হলে জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম ইউকে আয়োজন করে শতবার্ষিকী এ আন্তর্জাতিক সম্মেলন। এতে সভাপতিত্ব করেন ইউকে জমিয়তের সভাপতি মাওলানা শুয়াইব আহমদ। সঞ্চালনার দায়িত্ব পালন করেন ইউকে জমিয়তের জেনারেল সেক্রেটারী মাওলানা সৈয়দ তামীম আহমদ ও সম্মেলন বাস্তবায়ন কমিটির সদস্য সচিব মাওলানা সৈয়দ নাঈম আহমদ।
সম্মেলনে ঘোষণাপত্র ও লিখিত দাবিনামা উপস্থাপন করেন জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম ইউকের সিনিয়র সহ-সভাপতি মুফতি আব্দুল মুনতাকিম। সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্য টেলিফোনযোগে রাখেন বিশ্ব মুসলিমের অন্যতম নেতা, জমিয়তে উলামায়ে হিন্দের সভাপতি মাওলানা সায়্যিদ আরশাদ মাদানী। বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় সিনিয়র সহ-সভাপতি শায়খুল হাদীস আল্লামা তাফাজ্জুল হক হবিগঞ্জী ও সাউথ আফ্রিকা জমিয়তের জেনারেল সেক্রেটারী মুফতি ইবরাহীম বাম। সম্মেলনে জমিয়তে উলামায়ে হিন্দের জেনারেল সেক্রেটারী মাওলানা সায়্যিদ মাহমুদ মাদানী, বাংলাদেশ জমিয়তের কেন্দ্রীয় মহাসচিব আল্লামা নূর হুসাইন কাসিমী, কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি মাওলানা আব্দুর রব ইউসূফী, মাওলানা জুনায়েদ আল হাবীব টেলিফোনে বক্তব্য রাখেন। এছাড়াও সম্মেলনে অতিথির বক্তব্য রাখেন আলÑখায়ের ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ইমাম কাসিম, ইউকে জমিয়তের প্রধান উপদেষ্টা শায়খ মাওলানা আসগর হুসেন, উপদেষ্টা মাওলানা তহুর উদ্দিন, ইউরোপ জমিয়তের উপদেষ্টা মাওলানা মুস্তফা আহমদ ও ডক্টর মুফতি আব্দুর রহমান মাঙ্গেরা, মাওলানা শায়খ তরিকুল্লাহ, জমিয়তে উলামা ব্রিটেনের মুফতি খালিদ, ইস্টহাম বিলাল মসজিদের ইমাম ও খতীম মাওলানা নিয়াজী, শায়খুল হাদীস মুফতি আব্দুর রহমান মনোহরপুরী, শায়খ সুলেমান গণি, বিশিষ্ট ইসলামিক স্কলার ড. শায়খ রামজী, শায়খ মাওলানা ইউনূস দুধওয়ালা, খেলাফত মজলিস কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সম্পাদক মাওলানা আব্দুল কাদির সালেহ, নিউহ্যাম কাউন্সিলের ডেপুটি স্পিকার ব্যারিষ্টার নাজির আহমদ, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস এর কেন্দ্রীয় আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক মাওলানা ফয়েজ আহমদ, টাওয়ার হ্যামলেটস এর সাবেক ডেপুটি মেয়র অহিদ আহমদ, খেলাফত মজলিস যুক্তরাজ্য শাখার সভাপতি মাওলানা ছাদিকুর রহমান, শত বার্ষিকী সম্মেলন বাস্তবায়ন কমিটির চেয়ারম্যান হাফিজ হোসাইন আহমদ বিশ্বনাথী, লন্ডন বাংলা প্রেস ক্লাবের সেক্রেটারী মোহাম্মদ জুবায়ের, ছাত্র জমিয়ত বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় সভাপতি মাওলানা সাইফুর রহমান, বিশিষ্ট আলেম মাওলানা নাজমুদ্দিন কাসেমী, ফরেস্ট গেইট মসজিদের খতিব মাওলানা হেলাল উদ্দিন, মাইলেন্ড মসজিদের খতিব মাওলানা নাজির উদ্দিন, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস যুক্তরাজ্য শাখার সেক্রেটারী মুফতি সালেহ আহমদ, ইউকে জমিয়তের জয়েন্ট সেক্রেটারী মাওলানা আশফাকুর রহমান, মাওলানা শামছুল আলম কিয়ামপুরী, লন্ডন মহানগর খেলাফত মজলিসের সভাপতি মাওলানা এনামুল হক, ইউকে জমিয়তের যুববিষয়ক সম্পাদক মুফতি সৈয়দ রিয়াজ আহমদ, প্রচার সম্পাদক মাওলানা নাজমুল হাসান, প্রশিক্ষণ সম্পাদক হাফিজ মাওলানা সৈয়দ হুসাইন আহমদ, সহ প্রচার সম্পাদক হাফিজ রশীদ আহমদ প্রমুখ। শুরুতে পবিত্র কুরআন থেকে তেলাওয়াত করেন তাফসিরুল কোরআন সম্পাদক হাফিজ মাওলানা মুশতাক আহমদ, নাশিদ পরিবেশন করেন হাফিজ মাওলানা ছাইদুর রহমান। শতবার্ষিকী সম্মেলন উপলক্ষ্যে ইউকে জমিয়তের পক্ষ থেকে সমৃদ্ধ একটি স্মারকের মোড়ক উন্মোচন করা হয়।
সম্মেলন থেকে দাবি জানানো হয় যে, বিশ্ব শক্তিগুলো মুসলমান দেশ সমূহকে পারস্পরিক যুদ্ধের মধ্যে ঠেলে দিয়ে ভয়ঙ্কর অস্ত্র বাণিজ্যের খেলায় মেতে উঠেছে। এ ভয়াবহ অবস্থার মোকাবেলা করতে হবে। সিরিয়া, ফিলিস্তিন, ইরাক ও কাশ্মীর সহ আজ দেশে দেশে মুসলমানদের রক্ত ঝরছে, বোমা মেরে মুসলমানদের ঘর বাড়ি চূর্ণ বিচূর্ণ করে দেয়া হয়েছে। লাখ লাখ মুসলমান শরণার্থীর করুণ আর্তনাদে আজ আকাশ-বাতাস ভারি হয়ে আছে। দুনিয়ার বিভিন্ন দেশে মুসলমানদের বেঁচে থাকার অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য জোরদার আন্দোলন নতুন উদ্দীপনায় আরম্ভ করতে হবে।
সম্মেলনের পক্ষ থেকে বার্মার রোহিঙ্গা মুসলমানদের উপর ইতিহাসের নিকৃষ্ঠতম বর্বরতা’র তীব্র নিন্দা জ্ঞাপন করে বলা হয়, এ মগের মুল্লুকের বিনাশকা-ে আধুনিক বর্বরতাও শিউরে উঠেছে। মজলুম রোহিঙ্গা মুসলমানদের স্বাধীনতা, স্বার্বভৌমত্ব এবং মানবাধিকার সহ বেঁচে থাকার অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য কার্যকর ভূমিকা পালন সময়ের সবচে’ বড় দাবি।
সম্মেলন থেকে ভারতের মুসলমানদের উপর অবিরত বর্বরোচিত সন্ত্রাসী হামলা অবিলম্বে বন্ধ করার দাবি জানানো হয় এবং বিশ্ব মুসলিমকে স্বোচ্ছার ভূমিকা পালন করার প্রতি গুরুত্ব আরোপ করা হয় সম্মেলনে ইয়েমেনের মুসলমানদের উপর যুদ্ধের অভিশাপ চাপিয়ে দেয়া এবং অর্থনৈতিক অবরোধের মাধ্যমে দুর্ভিক্ষগ্রস্থ এ ভূখন্ডের নাগরিকদের মৃত্যুমুখে ঠেলে দেয়ারও তীব্র নিন্দা জানানো হয়।
সম্মেলনে বাংলাদেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব এবং ধর্মীয় পরিচয় বিনষ্টের সকল অপচেষ্টার নিন্দা জানানো হয়। পাঠসূচিতে ‘বিবর্তনবাদ’-এর ন্যায় নাস্তিক্যবাদী বিশ্বাস স্থান দেয়ার তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে বলা হয়, কোরআন সুন্নাহ এবং আলেম-উলামার অনুকরণে আমাদের পলিসি নির্ধারণের বিষয়টি সরকারকে গুরুত্ব সহকারে দেখতে হবে। অন্যথায় তাওহীদি জনতার রোষাণলে পতিত হলে পরিণতি যে ভালো হয় না, তার প্রমাণ অতীত ইতিহাস।
সম্মেলনে কাদিয়ানীদের আস্ফালনের তীব্র নিন্দা জানিয়ে বলা হয়, এদেরকে রাষ্ট্রীয়ভাবে অমুসলিম সংখ্যালঘু ঘোষণা করা নেহায়েত জরুরি।
সম্মেলনে বাংলাদেশের সংবিধানে বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম এর সঠিক অনুবাদ যোগ এবং মহান আল্লাহ পাকের সার্বভৌমত্বের স্বীকৃতি স্পষ্টভাবে উল্লেখেরও দাবি জানানো হয়।
সম্মেলনে ইসলাম ও মুসলমানদের বিরুদ্ধে কুৎসা রটনা ও অপপ্রচারের নিন্দা জানিয়ে বলা হয়, সন্ত্রাসবাদ, জঙ্গিবাদ ও চরম পন্থার সাথে ইসলামের কোন সম্পর্ক নেই। যারা নিজেদের অপরিণামদর্শী কাজের দ্বারা ইসলামকে বদনাম করতে চায়, তাদের সাথে ইসলাম, মুসলমান, আলেম উলামা, মসজিদ-মাদ্রাসা এবং কোরআন হাদীসের কোন সম্পর্ক নেই। পরিশেষে মুসলিম উম্মাহর কল্যাণ কামনা করে মোনাজাতের মাধ্যমে শতবার্ষিকী মহাসম্মেলন সমাপ্তি হয়।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।