বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির কবলে শবে বরাত-৩
সুনানে ইবনে মাজায় বর্ণিত হয়েছে : হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
বর্তমান বিশ্বের সর্বত্রই জাদুর কারিশমাকে অধিকতর জনপ্রিয় করার জন্য প্রচারমাধ্যমগুলো উঠে পড়ে লেগেছে। এটা একটা ভয়ঙ্কর আত্মবিনাশী পাঁয়তারা। তা থেকে নিজেদেরকে এবং কোমলমতি ছেলে-মেয়েদের এমনকি পরিবার-পরিজনদের রক্ষা করা একান্ত দরকার। এই দরকারি কাজটার প্রতি অবহেলা প্রদর্শনের কোনোই অবকাশ নেই।
জাদুকে আরবি ভাষায় ‘সিহির’ বলে। বস্তুত সিহির ওই বস্তু যার কার্যকারণ তো আছে, কিন্তু তা প্রকাশ নয় বরং গোপন। ইসলামী শরীয়তের পরিভাষায় এমন অপূর্ব অভিনব কর্মকে সিহির বলে, যার জন্য জিন ও শয়তানদের খুশি করে তাদের নিকট থেকে সহযোগিতা গ্রহণ করা হয়।
আল্লামা আলুমী রহ. এ বিষয়টিকে আরও খোলাসা করে বলেছেন, সাহারা ইয়াসহার বাবে ফাতাহা ইয়াফতাহু এর ওজনে সম্পাদিত। এর মাছদার বা শব্দমূল হলো ‘সিহরুন’। অর্থ সূ² ও গুপ্ত বিষয় প্রকাশ পাওয়া। যে কাজের কার্যকারণ অত্যন্ত সূ² ও গুপ্ত তা-ই সিহির বা জাদু। পরিভাষায় জাদু বলতে এমন আশ্চর্য কাজ বুঝায়, যা খারিকলিল আদাত অর্থাৎ সাধারণ নিয়মের ব্যতিক্রম কাজের সাথে বাহ্যিক সাদৃশ্য রাখে। প্রকৃতপক্ষে এর সাথে মুজিজাহ বা কারামতের কোনোই সম্পর্ক নেই। কারণ জাদু শিক্ষাযোগ্য বস্তু ও বিষয়, যা অন্যের নিকট থেকে শিখতে হয় এবং যা অর্জন করতে শয়তানের নৈকট্যমূলক কাজের মাধ্যমে তার সাহায্য ও সহযোগিতা কামনা করতে হয় (নাউজুবিল্লাহ)। (তাফসিরে রহুল মায়ানী : খন্ড ১, পৃ. ৩৩৮)।
জাদুতে জিনকে রাজিখুশি করার বিভিন্ন রূপ হয়ে থাকে। যেমন- ক. কুফর ও শিরকের শব্দে মন্ত্রপাঠ করা এবং শয়তানের স্তবস্তুতি, গুণকীর্তন করা। খ. নক্ষত্রের পূজা-উপাসনা করা। এর ফলে শয়তান ভীষণ খুশি হয়। গ. এমন সব কাজকর্ম করা, যা আল্লাহপাকের নিকট অতি অপ্রিয় ও ঘৃণ্য। এতে শয়তান ভারি খুশি ও আনন্দিত হয়। যেমন কাউকে বিনা বিচারে অন্যায়ভাবে হত্যা করে তার রক্ত দিয়ে তাবিজ লেখা অথবা জীবন্ত মানুষ, হাস-মুরগির অঙ্গ ছেদ করে তার রক্ত দিয়ে তাবিজ লেখা, পরপর অপবিত্র বা জানাবাতের অবস্থায় থাকা, জাদুকর মহিলার ঋতুর সময় জাদু করা এবং পবিত্রতা ও পরিচ্ছন্নতা থেকে দূরে থাকা ইত্যাদি। সাধারণ মানুষ দেখে, জাদুকরের কীর্তিতেই যেন এ কাজ সমাধা হচ্ছে। আসলে তা গোলকধাঁধা বা নজরবন্দী মাত্র।
আল্লামা আলুসী রহ. উপরোক্ত বিবরণের বিশ্লেষণ করে বলেছেন, জাদু শিখতে শয়তানের নৈকট্যমূলক কাজের মাধ্যমে তার সহযোগিতা কামনা করা হয়। যেমন মন্দ কথা বলা, এর উদাহরণ হলো এমন বাক্য বা কালাম দ্বারা ঝাড়ফুঁক করা; যাতে শিরকের শব্দ আছে অথবা শয়তানের প্রশংসা আছে, অথবা মন্দকাজ করে শয়তানের নৈকট্য লাভ করা; যেমন- তারকা পূজা করা, শরীয়তবিরোধী সাহচর্য অবলম্বন করা ইত্যাদি। শুধু তা-ই নয়, ইতিকাদ ও বিশ্বাসের দিক থেকে মন্দকাজ করা, যেমন- যে কাজ দ্বারা শয়তানের নৈকট্য লাভ করা যায়, তা উত্তম মনে করা এবং এ জাতীয় ব্যক্তির সাথে বা কাজের সাথে আন্তরিক সম্পর্ক ও ভালোবাসা রাখা। (তাফসীরে রুহুল মায়ানী : খন্ড ১, পৃ. ৩৩৮)।
জাদুকরদের বদ আমলের জন্য জিন ও শয়তানেরা যেমন তাদের সাহায্য করে এবং তাদের কাজ সমাধা করে দেয়, অনুরূপভাবে আল্লাহপাকের ফেরেশতাগণ সৎ ও পুণ্যবান মানুষের আল্লাহভীতি, পবিত্রতা, সৎকর্ম সম্পাদন এবং অসৎকর্ম থেকে আত্মরক্ষার জন্য আনন্দিত ও খুশি হন। আল্লাহপাকের দরবারে তারা তাদের সে খুশি ব্যক্ত করেন। তখন আল্লাহপাকের নির্দেশে তারা পুণ্যবান বান্দাদের সাহায্য করেন এবং তাদের কাজ সমাধা করে দেন।
আল্লামা আলুসী রহ. এর ব্যাখ্যায় উল্লেখ করেছেন যে, দু’টি বস্তুর মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্কের পূর্বশর্ত হলো, উভয়ের মধ্যে মিল ও পারস্পরিক সহযোগিতা। সুতরাং ফেরেশতাগণ যেমন কাজে ও কথায় আল্লাহর দাসত্ব ও আনুগত্যে আত্মনিবেদিত, তেমনি ফেরেশতা স্বভাবসম্পন্ন সৎ ও উত্তম ব্যক্তিগণ ছাড়া তারা অন্য কাউকে সাহায্য করে না। অপরদিকে জিন ও শয়তানের কাজ, কথা ও ধ্যানধারণায় তাদের মতো খবিস ও দুশ্চরিত্র লোক ছাড়া অন্য কাউকে সহযোগিতা করে না। (তাফসীরে রুহুল মায়ানী : খন্ড ১, পৃ. ৩৩৮)।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।