পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
আবহাওয়া পরিবর্তনজনিত কারণে বাংলাদেশসহ সারাবিশ্বে এডিস মশাবাহিত ডেঙ্গু জ্বরের প্রকোপ বেড়ছে। তবে এ বছর ডেঙ্গুতে আক্রান্তরা অন্যান্য বছরের তুলনায় অনেকটা ব্যতিক্রম। বেশিরভাগ আক্রান্তদের মস্তিষ্ককে আক্রান্ত করছে। এর ভয়াবহতাও বেশি। এ বছরের ডেঙ্গুর ধরণকে তাই চিকিৎসকরা উদ্বেজনক ও ব্যতিক্রমী হিসেবে উল্লেখ করেছেন। একই সঙ্গে জ্বর হলে গাফিলতি না করার পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসকরা। এদিকে মন্ত্রী, এমপি, সচিব থেকে শুরু করে কেউই বাঁচতে পারেননি এ বছর ডেঙ্গুর হাত থেকে। তবে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত ভুক্তভোগী খোদ দেশের অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালও ডেঙ্গুর ওষুধ ও ব্যবস্থাপনা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তিনি ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে কাঙ্খিত নিজের প্রথম বাজেটই সংসদে সঠিকভাবে উপস্থাপন করতে পারেননি। পরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাজেট উপস্থাপন করে তাকে সহায়তা করেন। অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল ইনকিলাবকে বলেছেন, ডেঙ্গু মশার উৎপত্তি স্থল থাইল্যান্ড। সেখান থেকে মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর হয়ে বাংলাদেশে এসেছে। তিনি বলেন, উৎপত্তিস্থলে ডেঙ্গুর প্রকোপ থাকলেও নিয়ন্ত্রিত। অথচ আমাদের দেশে প্রতিদিনই মৃত্যুর খবর শুনতে হয়। যেখানে এই ডেঙ্গুর উৎপত্তি সেখানে নিয়ন্ত্রিত হলেও আমরা নিয়ন্ত্রণ করতে পারছিনা।
আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, ডেঙ্গু মশার ওষুধ নিয়ে আমাদের দেশে কোন গবেষণা নেই। বিভিন্ন রকমফের রয়েছে। এটা নিয়ে গবেষণা হওয়ার দরকার বলে উল্লেখ করেন অর্থমন্ত্রী।
বাংলাদেশে গত ১৬ দিনে ৩০৮১ জন আক্রান্ত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। অর্থাৎ দিনে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছে প্রায় ১৯৩ জন বা প্রতি ঘন্টায় ৮ জনেরও বেশি। গত ২৪ ঘন্টায় ২১৭ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এ মাসে ভর্তি রোগীর মধ্যে ১ জনের মৃত্যু হয়েছে। এই পরিসংখ্যান মাত্র অর্ধশত হাসপাতালে ভর্তিকৃত রোগীদের তথ্যের ভিত্তিতে। এর বাইরে রাজধানীসহ সারাদেশে ঠিক কতজন এ রোগে আক্রান্ত হচ্ছে তার হিসেব নেই।
বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বের মোট জনসংখ্যার শতকরা ৫০ শতাংশ সাধারণ ও মারাত্মক ধরনের ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছেন। বর্তমানে প্রতি বছর মারাত্মক ধরনের ডেঙ্গু জ্বরে কমপক্ষে ৫ লাখ মানুষ আক্রান্ত হন। প্রতি মিনিটেই বিশ্বের কোথাও না কোথাও কেউ না কেউ ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন। তাদের অধিকাংশই শিশু। আক্রান্তদের মধ্যে বছরে ২২ হাজার ডেঙ্গু রোগীর মৃত্যু হয়। বিশেষজ্ঞদের মতে, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বিশেষ করে গ্রীষ্মমন্ডলীয় দেশগুলোতে এ রোগে আক্রান্ত রোগী ও মৃত্যুহার প্রতি বছর বেড়েই চলেছে। জলবায়ুর পরিবর্তনের কারণে একদিকে বৈশ্বিক উষ্ণায়নের কারণে তাপমাত্রা বৃদ্ধি, খরা, বরফ গলা ও সুনামীসহ ঝড় হচ্ছে। ফলে বহু মানুষ খোলামেলা স্থানে বসবাস করতে বাধ্য হয় এবং মশার কামড়ে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হন। বিশ্বব্যাপী ডেঙ্গুর প্রকোপ বৃদ্ধির অন্যতম কারণ জলবায়ুর পরিবর্তন।
বাংলাদেশে গত দুই দশকে ডেঙ্গুবাহিত এডিস মশার কামড়ে ২৯৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। শুধু সরকারি হিসাবেই এডিস মশার কামড়ে আক্রান্ত হয়ে এ সময়কালে বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে শয্যাশায়ী হয়েছেন প্রায় ৫৫ হাজার।
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রকৃতপক্ষে ডেঙ্গুতে আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় লাখ ছাড়িয়ে গেছে। অনেক সময় ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হলেও অনেকেই হাসপাতালে আসেন না, অনেকেই চিকিৎসকের প্রাইভেট চেম্বারে যান বা ফার্মেসি থেকে পরামর্শ ও ওষুধ কিনে খান।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশনস সেন্টা ও কন্ট্রোল রুমের সহকারী পরিচালক ডা. আয়েশা আকতার জানান, ২০০০ থেকে ২০১৯ সালের ১৬ জুলাই পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতাল, ডেঙ্গুতে মোট ৫৫ হাজার ১২৮ জন ভর্তি হন।
বছরওয়ারী প্রাপ্ত পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ২০০০ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যা যথাক্রমে ৫ হাজার ৫৫১, ২ হাজার ৪৩০, ৬ হাজার ২৩২, ৪৮৬ জন, ৩ হাজার ৪৩৪, ১ হাজার ৪৮, ২ হাজার ২০০, ৪৬৬ জন, ১ হাজার ১৫৩, ৪৭৪ জন, ৪০৯, ১ হাজার ৩৫৯, ৬৭১ জন, ১ হাজার ৭৪৯, ৩৭৫ জন, ৩ হাজার ১৬২, ৬ হাজার ৬০, ২ হাজার ৭৬৯, ১০ হাজার ১৪৮ ও ৩ হাজার ৭২০ জন। এ সময়কালে (২০০০ থেকে ২০১৯ সাল) ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে ২৯৯ জনের মৃত্যু হয়। বছরওয়ারী পরিসংখ্যান অনুসারে যথাক্রমে ৯৩ জন, ৪৪, ৫৮, ১০, ১৩, ৪, ১১, ৬, একজন, দু’জন, ৬, ১৪, ৮, ২৬ ও তিনজন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যমতে, প্রয়োজনীয় সংখ্যক চিকিৎসক ও নার্সসহ প্রশিক্ষিত জনবল দিয়ে দ্রুত ডেঙ্গু শনাক্ত ও সময়মতো উপযুক্ত চিকিৎসা শুরু করা সম্ভব না হলে আক্রান্তদের মধ্যে শতকরা ২০ জনের মৃত্যু ঝুঁকি থাকে। তবে দ্রুত শনাক্ত ও প্রশিক্ষিত জনবল দিয়ে চিকিৎসা করাতে পারলে মৃত্যু ঝুঁকি শতকরা ১ ভাগেরও নিচে নামিয়ে আনা সম্ভব।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিচালক (রোগ নিয়ন্ত্রণ) প্রফেসর ডা. সানিয়া তাহমিনা বলেন, তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেলে মশার প্রজনন দ্রুত হয়। মহিলা (ফিমেইল) মশার কার্য়কারিতা বাড়ে। বিশেষ করে বৃষ্টির পানি ব্যবহারের জন্য বিভিন্ন পাত্রে জমিয়ে রাখার কারণে ডেঙ্গুবাহী এডিশ মশার প্রজনন বাড়ে।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক প্রফেসর ডা. আবুল কালাম আজাদ বলেন, বিশ্বের অন্যান্য দেশের কারণে জয়বায়ু পরিবর্তন হচ্ছে। কখনও খরা, আবার কখনও বা অতিবৃষ্টির ফলে ডেঙ্গু মশার প্রকোপ বৃদ্ধি পাচ্ছে। এদিকে দেশে প্রচিলিত ও বহুল ব্যবহৃত কীটনাশক প্রতিরোধী হয়ে উঠেছে সব ধরনের মশা। ফলে রাজধানীসহ সারাদেশে নিয়মিত মশার ওষুধ ছিটানো হলেও মশা মরছে না। সম্প্রতি এমন তথ্য উঠে এসছে আইসিডিডিআরবি’র এক গবেষণায়। সেখানে দেখা গেছে, প্রচলিত ওষুধে মশাগুলো শতভাগ প্রতিরোধী হয়ে উঠেছে। ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের সঙ্গে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এক যৌথ বৈঠকে এ গবেষণা তথ্য উপস্থাপন করা হয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল- সিডিসি’র অর্থায়নে রাজধানী ঢাকা শহরে এ গবেষণা পরিচালিত হয়। সেপ্টেম্বর ২০১৭ এবং ফেব্রুয়ারি ২০১৮ পর্যন্ত পরিচালিত এ গবেষণায় দেখা গেছে, ডেঙ্গু ও চিকনগুনিয়া জিবানুবাহী এডিস এবং কিউলিক্স মশা ইতিমধ্যে ওষুধ প্রতিরোধী হয়ে উঠেছে।
বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশান বলা হয়েছে, কীটনাশক ব্যবহারের পর একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে মশার মৃত্যুর হার যদি ৯০ শতাংশের নিচে হয় তাহলে এটা নিশ্চিত যে মশা কীটনাশক প্রতিরোধী হয়ে উঠেছে। অথচ আইসিডিডিআরবি’র গবেষণায় দেখা গেছে এডিস এবং কিউলিক্স মশার মৃত্যুহার শুণ্যের কোঠায়। এমনকি কীটনাশকের মাত্রা দ্বিগুণ হারে প্রয়োগ করলেও মশার মৃত্যু ঘটেনি বলে জানান প্রতিষ্ঠানটির গবেষক ড. মোহাম্মদ শাফিউল আলম।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (রোগ নিয়ন্ত্রন) প্রফেসর ডা. সানিয়া তাহমিনা বলেন, আইসিডিডিআরবি একটি গবেষণায় চালিয়েছে। সেখানে এডিস ও কিউলিক্স মশার কীটনাশক প্রতিরোধী হয়ে ওঠার চিত্র পাওয়া গেছে। যেহেতু ওষুধ কেনা এবং প্রয়োগকরা সিটি কর্পোরেশনের কাজ তাই এ বিষয়টিতে তাদের গুরুত্ব দিতে হবে। প্রফেসর সানিয়া বলেন, কীটনাশক চাইলেই পরিবর্তন করা যায় না। নতুন কীটনাশক নিবন্ধন করতে হলে অনেক সময়ের প্রয়োজন হয়। এক্ষেত্রে সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে কোন ধরনের কারিগরি সহয়তা চাওয়া হলে আমরা সহযোগীতা করবো।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক সম্প্রতি ডেঙ্গুর প্রকোপ সম্পর্কে বলেন, অভিজাত এলাকায়ই ডেঙ্গু বাহিত এডিস মশার প্রকোপ বেশি। তারা কেউ শখ করে বাগান তৈরি করেন; কেউবা বাড়িতে কৃত্রিম ঝরনা বসান। এছাড়া ঘরের এয়ারকন্ডিশনের জমে থাকা পানি পরিষ্কার করেন না। এ সব কারণে অভিজাত বাসাবাড়িতে ডেঙ্গুতে আক্রান্তের হার বেশি। ডেঙ্গুর প্রকোপ থেকে মুক্ত হতে চাইলে সরকারের চেয়ে ব্যক্তিগত ও পারিবারিক জনসচেতনাই বেশ প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেন তিনি।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের প্রফেসর টিটু মিয়া বলেন, এবার ডেঙ্গু রোগীরা অনেকটা ব্যতিক্রমী। রোগীদের মস্তিস্ককে আক্রান্ত করছে। যা উদ্বেজনক। প্রায়ই এই ধরনের ডেঙ্গু রোগী পাচ্ছি, এটা খুবই বিরল।
ডা. টিটু মিয়া বলেন, এখন এটা (ডেঙ্গু) মস্তিষ্ক, হৃদযন্ত্র, যকৃত ও কিডনির মতো নানা অঙ্গ আক্রান্ত করছে। খারাপ অবস্থায় হাসপাতালে আসা অধিকাংশ রোগীর ক্ষেত্রে জ্বর চলে যাওয়ার পর পরিস্থিতি আরও খারাপের দিকে যেতে দেখছি।
চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়ে বাসায় ফেরার পরেও অনেকে অসুস্থ পড়ছে বলে জানান প্রফেসর টিটু মিয়া। তিনি বলেন, এবার শুধু সংখ্যায়ই বেশি না। এবার প্রায় সবাই ডেঙ্গু হেমারজিক ফিভারে আক্রান্ত। এদের পঞ্চাশ ভাগেরই শক সিন্ড্রোম।
ডা. টিটু মিয়া বলেন, এবার ডেঙ্গুর প্যাটার্নটা সম্পূর্ণ ভিন্ন। এদের সবার প্ল্যাটিলেট কমে যাচ্ছে, সবাই শকে চলে যাচ্ছে। আগে সামান্য ডেঙ্গু হয়েই ভালো হয়ে যেত। এবার সবারই রক্ত লাগছে। এই পরিস্থিতিতে জ্বর হলে গাফিলতি না করে চিকিৎসকের কাছে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। একই সঙ্গে জ্বর সেরে যাওয়ার পরও কিছু দিন চিকিৎসকের ফলো আপে থাকুন।
হলি ফ্যামিলি রেড ক্রিসেন্ট মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিশু বিভাগের প্রধান প্রফেসর এল ই ফাতমীও এবার ডেঙ্গু আগের চেয়ে মারাত্মক চেহারা নিয়ে আসার কথা উল্লেখ করেছেন।#
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।