Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

৬ ধাপে ইউপি নির্বাচনে প্রাণহানি ১৩০ - সহিংসতার রেকর্ড

প্রকাশের সময় : ৫ জুন, ২০১৬, ১২:০০ এএম | আপডেট : ১১:৪২ পিএম, ৪ জুন, ২০১৬

আজিবুল হক পার্থ : দলীয় প্রতীকে প্রথম অনুষ্ঠিত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন নিয়ে বিতর্কের ঝড় বইছে। ৬ দফায় অনুষ্ঠিত এ নির্বাচনে সহিংসতার রেকর্ড ঘটেছে। সহিংসতায় প্রাণ হারিয়েছে ১৩০ জন। আহত হয়েছেন ১০ হাজার। আর পঙ্গু হয়েছে প্রায় ৩ হাজার মানুষ। বিনা ভোটে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ায়ও রেকর্ড গড়েছে। সবশেষ ধাপে গতকালও প্রাণ হারিয়েছে ৩ জন। শুধু তাই নয়, ভোট কেন্দ্র দখল, ব্যালট ছিনতাই, নির্বাচন কর্মকর্তা, পোলিং অফিসার, আইন শৃংখলা বাহিনীর বিরুদ্ধেও জালভোট দেয়ার অসংখ্য অভিযোগ উঠেছে। ভোটের আগের রাতে ভোগ গ্রহণের সচিত্র খবরও মিডিয়ায় প্রকাশ পেয়েছে। নির্বাচন বিশেষজ্ঞ, স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ, নির্বাচন পর্যবেক্ষকরাও এ নির্বাচনকে ‘ভোট ও গণতন্ত্রের কফিনে শেষ পেরেক’ ঠুকে দেয়ার নামান্তর হিসেবে অভিহিত করেছেন। তাদের মতে, ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের নামে নির্বাচনী ব্যবস্থাকে কার্যত ধ্বংস করে দেয়া হয়েছে। এমনকি সুশীল সমাজের কেউ কেউ এ নির্বাচনকে ‘শহীদী নির্বাচন হিসেবে’ও অভিহিত করেছেন।
ইউপি নির্বাচনের ৬ষ্ঠ দফায় গতকাল শনিবার কেন্দ্র দখল, কেন্দ্র ভাংচুর, ব্যালট পেপার ছিনতাই, প্রিজাইডিং অফিসার কর্তৃক ব্যালেটে সিল, দখলে সহায়তা, জালভোটের মাধ্যমে সারাদেশে শেষ ধাপে ৪৬ জেলার ৯২ উপজেলার ৬৯৮ ইউপিতে ভোট হয়েছে। মারপিট করে এজেন্ট বের দেওয়া, গোলাগুলি, বোমাবাজি, পুলিশের উপর হামলা, প্রতিপক্ষের সাথে সংঘর্ষে নিহত হয়েছে ৩ জন। আহত হয়েছে প্রায় ৩০০। শেষ ধাপেও বেশিরভাগ কেন্দ্রে মেম্বরের ভোট সুষ্ঠু হলেও চেয়ারম্যানের ব্যালট ভোটারদের দেওয়া হয়নি। এ ধাপে অনিয়মের শীর্ষে ছিলেন ভোট কর্মকর্তারা। আগের ৫ ধাপের মতোই এ ধাপেও সকাল থেকেই ছিল কেন্দ্র দখল ও ভোট বর্জনের চিত্র। নির্বাচন কমিশনের (ইসি) পক্ষে কোন বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা করা হলেও ভোটে তারা সন্তুষ্ট। এধাপেও ফলাফলে এগিয়ে রয়েছে সরকারি দল। বেশ কিছু ইউপিতে স্বতন্ত্র প্রার্থীরা বিজয়ী হলেও বিএনপির বিজয়ী প্রার্থীর সংখ্যা হাতে গোনা। শেষ ধাপে ৪৬ জেলার ৯২ উপজেলার ৬৯৮ ইউপিতে ভোট হয়েছে। এতে ভোটার ছিল ১ কোটি ১০ লাখের বেশি। ভোটকেন্দ্র ছয় হাজার ২৮৭টি। চেয়ারম্যান পদে তিন হাজার ২২৩ জন, সাধারণ সদস্য পদে ২৫ হাজার এবং সংরক্ষিত পদে ৫ হাজারের বেশি প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের ২৫ জন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন।
গতকাল ইউপি ভোটের চতুর্থ ধাপে সারাদেশে সংঘর্ষে কমপক্ষে ৩ জন নিহত হয়েছে। নিহতরা হলেন, ফেনীর সোনাগাজীতে মো. নাসির (১৮), ময়মনসিংহ গফরগাঁও উপজেলায় শাজাহান (৫২) ও নোয়াখালীতে আরাফাত।
এর আগের পাঁচ ধাপে চেয়ারম্যান পদে নৌকার প্রার্থীরা ২২৬৭ ইউপিতে ও ধানের শীষের প্রার্থীরা ৩১০ ইউপিতে জয়ী হয়েছেন। স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে চেয়ারম্যান হয়েছেন ৬৯৬ জন। ইসি’র হিসাবে প্রথম ধাপে ৭৪ শতাংশ, দ্বিতীয় ধাপে ৭৮ শতাংশ, তৃতীয় ধাপে ৭৬ শতাংশ, চতুর্থ ধাপে ৭৭ শতাংশ ও পঞ্চম ধাপে ৭৬ দশমিক ৮ শতাংশ ভোট পড়েছে। এদিকে ভোটের দিন কেন্দ্রে প্রতিপক্ষের হামলা, সংঘর্ষ ছাড়াও নিহত হয়েছে প্রচারণার সময়। এমনকি নির্বাচনী সহিংসতায় ভোটের আগে-পরে গুপ্ত হামলা, বাড়ীতে হামলা করেও হত্যা করা হয়েছে। ভোটের মাঠে রক্তক্ষয়ের রেকর্ড গড়েছে। এ জন্য চলমান ভোটে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) নেওয়া আইন শৃঙ্খলা রক্ষা ব্যবস্থাকে দায়ী করেছেন অনেকেই। বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রথম ধাপের পরেই ইসির উচিত ছিলো সেনাবাহিনী মোতায়েন করে ভোট করা। প্রথম ধাপের পরে ইসি’র উপলব্ধি থেকে ২য় দফায় আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সাথে বৈঠক করলেও সহিংসতা কমেনি। উপরন্তু এবারের ইউপি ভোটে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী প্রত্যক্ষ মদদে ভোট ডাকাতির অভিযোগ উঠেছে। আর জাল ভোট ও কারচুপির অভিযোগের প্রমাণ মিলেছে খোদ ইসি কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে। খ-কালীন নিয়োগপ্রাপ্তরা (প্রিজাইডিং অফিসার ও পোলিং অফিসার) দিয়েছে জাল ভোট ও গরমিল করেছে গণনায়। আর ইসির উপজেলায় কর্মকর্তা তথা রিটার্নিং অফিসাররা ভোটে বিজয়ীদের পরিবর্তে পরাজিতদের বিজয়ী করেছেন।
গত ২৬ মে এ সংবাদ সম্মেলনে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) এক সংবাদ সম্মেলনে জানায়, ২৫ মে পর্যন্ত ১০১ জন নিহত হয়েছে। এরপরে ২৬ মে ৩ জন, ২৭ মে ২ জন, ৫ম ধাপের ভোটের দিন ১০ জন নিহত হয়। এরপরে শেষ ধাপের ভোটের আগে ২৯ মে ৩ জন, ৩০ মে ৩ জন, ১ জুন ১ জন, ২ জুন ২ জন, ৩ জুন ১জন নিহত হয়েছে। গতকাল শেষ ধাপের ভোট ভোট গ্রহণের সময় নিহত হয়েছে ৩ জন। এ নিয়ে নিহতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৩০-এ।
গত ২৬ মার্চ সুজনের দেওয়া ওই তথ্য মোতাবেক, ১০১ জনের মধ্যে ঢাকা বিভাগে ২২ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে ১৯ জন, বরিশাল বিভাগে ১৬ জন, রাজশাহী বিভাগে ১৬ জন, খুলনা বিভাগে ১৩ জন, ময়মনসিংহ বিভাগে ৯ জন, রংপুর বিভাগে ৫ জন এবং সিলেট বিভাগে ১ জন প্রাণ হারিয়েছেন। দলগত পরিচয়ের দিক থেকে দেখা যায় যে, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নেতা, কর্মী বা সমর্থক ৪০ জন, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীর কর্মী বা সমর্থক ১২ জন, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের ২ জন, জাতীয় পার্টি-জেপি’র ১ জন, জনসংহতি সমিতির ১ জন, স্বতন্ত্র প্রার্থীর কর্মী বা সমর্থক ২ জন, মেম্বার প্রার্থীর কর্মী বা সমর্থক ৩১ জন এবং ১২ জন সাধারণ মানুষ রয়েছেন প্রাণহানির তালিকায়। মৃতদের মধ্যে ৪ জন নারী ও ৩ জন শিশুসহ একজন সম্ভাব্য চেয়ারম্যান প্রার্থী ও ৩ জন মেম্বার প্রার্থীও রয়েছেন। চেয়ারম্যান প্রার্থীদের মধ্যে ৪২টি সংঘর্ষের ঘটনায় ৪৫ জন প্রাণ হারিয়েছেন।
এদিকে এবারের নির্বাচন প্রাণহানির দিক থেকে সব রেকর্ড ছাড়িয়েছে। পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, ইউপি ভোটে এর আগে ১৯৮৮ সালের নির্বাচন সবচেয়ে বেশি সহিংসতাপূর্ণ ও প্রাণঘাতী ছিল। ওই নির্বাচনে ৮০ জনের প্রাণহানি হয়। ২০১১ সালে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ইউপি নির্বাচনে ১০ জনের প্রাণহানি হয়। ২০০৩ সালে বিএনপি সরকারের আমলে ২৩ জন মারা যায়।
বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচনের ক্ষেত্রেও সব রেকর্ড ছাড়িয়েছে। পরিসংখ্যান বলছে, ১৯৮৮ সালে ১০০ জন, ১৯৯২ সালে ৪ জন, ১৯৯৭ সালে ৩৭ জন এবং ২০০৩ সালে ৩৪ জন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। এক্ষেত্রেও ১০০ জন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিতদের নিয়ে ১৯৮৮ সাল ছিল এগিয়ে। তবে অতীতের সকল রেকর্ড মøান হয়ে গিয়েছে এবারের নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিতদের সংখ্যার কাছে। নবম ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে এই সংখ্যা ২১১। প্রথম ধাপে ৫৪ জন, দ্বিতীয় ধাপে ৩৪ জন, তৃতীয় ধাপে ২৯ জন, চতুর্থ ধাপে ৩৪ জন, পঞ্চম ধাপে ৪২ জন এবং ষষ্ঠ ধাপে এ পর্যন্ত ১৮ জন চেয়ারম্যান প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছে। এদের মধ্যে ২জন স্বতন্ত্র ও বাকিরা সরকারি দলের।
এ প্রসঙ্গে সৈয়দ আবুল মকসুদ বলেন, এবারের নির্বাচনে মনোনয়ন বাণিজ্য এতটাই প্রকট ছিলো যা অনেকটা রোযার আগে ছোলা কেনা-বেচার মত করে বেচা-কেনা হয়েছে। নির্বাচনে অনিয়ম কোন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, কোথাও কোথাও মৃত ব্যক্তিরাও ভোট দিয়েছেন। নির্বাচনে নিহতরা আসলে নিহত নন, তারা শহীদ হয়েছেন। তাই এ নির্বাচনকে একটি শহীদী নির্বাচন বলে আখ্যা দেয়া দেয়া যায়।
স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ ড. তোফায়েল আহমেদ বলেছেন, ইউপি নির্বাচন শুধু প্রশ্নবিদ্ধই নয়, গুলিবিদ্ধও। ইউপি নির্বাচনে এ পর্যন্ত প্রাণনাশের সেঞ্চুরি হয়েছে। আহত হয়েছেন প্রায় আট হাজার মানুষ। তাই এ নির্বাচন শুধু প্রশ্নবিদ্ধই নয়, গুলিবিদ্ধও।
শেষ ধাপে ৪৬ জেলার ৯২ উপজেলার ৬৯৮ ইউপিতে ভোট হয়েছে। এতে ভোটার ছিল ১ কোটি ১০ লাখের বেশি। ভোটকেন্দ্র ছয় হাজার ২৮৭টি। চেয়ারম্যান পদে তিন হাজার ২২৩ জন, সাধারণ সদস্য পদে ২৫ হাজার এবং সংরক্ষিত পদে ৫ হাজারের বেশি প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের ২৫ জন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। এর আগের পাঁচ ধাপে চেয়ারম্যান পদে নৌকার প্রার্থীরা ২২৬৭ ইউপিতে ও ধানের শীষের প্রার্থীরা ৩১০ ইউপিতে জয়ী হয়েছেন। স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে চেয়ারম্যান হয়েছেন ৬৯৬ জন। ইসির হিসাবে প্রথম ধাপে ৭৪ শতাংশ, দ্বিতীয় ধাপে ৭৮ শতাংশ, তৃতীয় ধাপে ৭৬ শতাংশ, চতুর্থ ধাপে ৭৭ শতাংশ ও পঞ্চম ধাপে ৭৬ দশমিক ৮ শতাংশ ভোট পড়েছে।
ভোটবর্জন করলেন যারা
এ ধাপে ভোট শুরু আগের দিন থেকেই প্রশাসনের প্রতিপক্ষের হামলা ও হুমকির মুখে ভোট বর্জন শুরু করেছে। ভোটের দিন ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলার ধলহরাচন্দ্র বিএনপি প্রার্থী আব্দুল বারি, হাকিমপুরের নজরুল ইসলাম, মনোহরপুরের আবুল হোসেন ভোট বর্জন করেছে। পাবনার সদর উপজেলার আতাইকুলা ইউনিয়নের বিএনপির প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলম, আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী শামসুল আলম মঞ্জু মাস্টার (আনারস), স্বতন্ত্র প্রার্থী কামাল উদ্দিন (চশমা) ও স্বতন্ত্র প্রার্থী শওকত হোসেন (মোটরসাইকেল) ভোট বর্জন করেছে। নোয়াখালীর সদর উপজেলার এওজবালিয়া ইউনিয়নে ভোটবর্জন করেছেন বিএনপি প্রার্থী মো. শাহজাহান স্বপন। গফরগাঁওয়ের লংগাইর ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে বিএনপি প্রার্থী আব্দুল হামিদ ভোট বর্জন করেছেন। মাদারিপুর জেলার শিবচরের সন্ন্যাসীরচর ইউনিয়নে ভোট কারচুপির অভিযোগ এনে ভোট বর্জন করেছেন বিএনপি প্রার্থী গিয়াস উদ্দিন মৃধা।
স্থগিত অর্ধশতাধিক কেন্দ্র
সকাল থেকেই ভোট কেন্দ্রে বিক্ষিপ্ত হামলা, সংঘর্ষ, গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনায় প্রিজাইডিং অফিসাররা কিছু প্রায় শতাধিক কেন্দ্রের ভোটগ্রহণ স্থগিত করেছে। পরে অবশ্য বেশ কিছু কেন্দ্রের ভোটগ্রহণ করা হয়েছে। ইসির হিসাব মতে শেষ পর্যন্ত ৩৬ কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ স্থগিত রয়েছে।
গফরগাঁওয়ে ১ জন নিহত, আহত ৪০
গফরগাঁও উপজেলা সংবাদদাতা জানান, ময়মনসিংহ জেলার গফরগাঁও উপজেলা ইউপি নির্বাচনে ১ জন নিহত ও ৪০ জন আহত হয়েছে বিভিন্ন ইউনিয়নে। উপজেলার ১৫টি ইউনিয়নের মধ্যে ১৪টি ইউনিয়নে বিএনপি মনোনীত প্রার্থীরা বিভিন্ন ভোট কেন্দ্রে অনিয়ম ও কারচুপির অভিযোগ এনে নির্বাচন বর্জন করেছেন বলে উপজেলা বিএনপির দপ্তর সম্পাদক মো. কামরুল ইসলাম ওরফে কামরুল বিএসসি জানান এ প্রতিনিধিকে। বারবাড়িয়া ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান ও স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান র্প্রাথী মো. জাহিদ হোসেন (চশমা প্রতীক) অনিয়মের অভিযোগ এনে সকাল ১১টার দিকে নির্বাচন বর্জন করেন। ১৫টি ইউনিয়নের ১৪৩টি কেন্দ্রের মধ্যে ২টি কেন্দ্রে ভোট স্থগিত করা হয়েছে। এগুলো হচ্ছে ৪নং সালটিয়া ইউনিয়নের পুখুরিয়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় ও ১৪নং নিগুয়ারী ইউনিয়নের পাতলাশী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়। সালটিয়া ইউনিয়নের পুখুরিয়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ৩নং সাধারণ ওয়ার্ডের সদস্য প্রার্থী মো. মোশারফ হোসেন (মোরগ প্রতীক) ও অপর সদস্য প্রার্থী মো. আবদুল করিম (তালা প্রতীক) কর্মীদের মধ্যে দফায় দফায় প্রথমে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া হয়। পরে একপর্যায়ে গোলাগুলি হয়। এতে উভয় পক্ষের অন্তত ২৫জন আহত হয়। এদের মধ্যে মোশারফ হোসেনের সমর্থিত আওয়ামীলীগ কর্মী মো. শাহজাহান (৫০) নিহত হয়। নিহতের বাড়ী একই ইউনিয়নের বাগুয়া গ্রামে। তার পিতার নাম মো. জামাল উদ্দিন। আহতদের মধ্যে গফরগাঁও ও ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসাপাতালে ভর্ত্তি করা হয়েছে। তাদের মধ্যে মো. নাজমুল হকের (২৫) অবস্থায় আশংকাজনক।
নোয়াখালীতে সদরে ১২ কেন্দ্র স্থগিত, নিহত ১ আহত ৩৫
নোয়াখালী ব্যুরো জানায়, ইউপি নির্বাচনে নোয়াখালীর সদর উপজেলার ১০টি ইউনিয়নের ১শ’টি কেন্দ্রের মধ্যে বিভিন্ন অভিযোগে ১২টি কেন্দ্রের ভোটগ্রহণ স্থগিত করেছে স্ব স্ব প্রিজাইডিং অফিসারগণ। এদিকে কয়েকটি কেন্দ্রে বিচ্ছিন্ন সংঘর্ষে ইয়াছিন আরাফাত (২৭) নামের এক ছাত্রলীগ নেতা নিহত ও গুলিবিদ্ধসহ ৫০ জন আহত হয়েছেন। গতকাল (শনিবার) সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত এসব ঘটনা ঘটে। নিহত ইয়াছিন আরাফাত নেয়াজপুর ইউনিয়ন ৩নং ওয়ার্ড ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন।
জানা গেছে, সকাল ১১টার দিকে আন্ডারচর ইউনিয়নে আব্দুল মান্নান রেজিষ্ট্রার প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোট কেন্দ্রে একদল দুর্বৃত্ত জোরপূর্বক কেন্দ্রে প্রবেশ করে সহকারি প্রিজাইডিং অফিসার থেকে ব্যালেট পেপার নিয়ে সিল প্রদান করে। পরে পুলিশে এসে তাদের ধাওয়া করে। সকাল সাড়ে ১১টার দিকে নেয়াজপুর ইউনিয়নের বেলানগর মোহম্মদিয়া ইফতেদিয়া মাদ্রাসা কেন্দ্রে মেম্বার প্রার্থীর বাচ্চু ও কামালের সমর্থকদের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এসময় প্রতিপক্ষের লোকজন মেম্বার প্রার্থী বাচ্চুর ভাতিজা ইয়াছিন আরাফাতকে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে জখম করে। পরে তাকে উদ্ধার করে ঢাকা নেওয়ার পথে তার মৃত্যু হয়।
এদিকে কেন্দ্রে হামলা, ব্যালট পেপার-বক্স ছিনতাই’সহ কেন্দ্রে বিশৃঙ্খলার অভিযোগে ৬টি ইউনিয়নের ১২টি কেন্দ্রের ভোটগ্রহণ স্থগিত করেছে প্রিজাইডিং অফিসারগণ।
এছাড়া নেয়াজপুর, এওজবালিয়া, কাদিরহানিফ ও অশ্বদিয়া ইউনিয়নসহ প্রায় প্রতিটি ইউনিয়নের বেশিরভাগ কেন্দ্রে বিভিন্ন প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া এবং সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে এওজবালিয়া ইউনিয়নের ফকির হোসেন মাহমুদ নামের এক মেম্বার প্রার্থী গুলিবিদ্ধসহ অন্তত ৫০ জন আহত হয়েছেন।
ভোট কারচুপি, অনিয়ম, ৯ প্রার্থীর ভোট বর্জন
ইউনিয়নে নির্বাচন সম্পন্ন
পাবনা জেলা সংবাদদাতা জানান, ভোট কারচুপি, জাল ভোট প্রদান ও ইউনিয়নে ৯ জন চেয়ারম্যান প্রার্থীর ভোট বর্জনের মধ্যে দিয়ে শনিবার শেষ হলো পাবনা সদর ও চাটমোহর উপজেলার ১৬টি ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন। দুই উপজেলার ১৭৭টি কেন্দ্রে সকাল ৮টা থেকে শুরু হওয়া ভোটগ্রহণ একটানা চলে বিকেল ৪ পর্যন্ত। ভোটগ্রহণ শেষে শুরু হয় ভোট গণনা।
সকাল থেকেই ভোটারদের দীর্ঘ লাইন চোখে পড়ে ভোট কেন্দ্রে। মানুষের মাঝে ভোট দেওয়ার ইচ্ছা পরিলক্ষিত হয়। কিন্তু কোনো কোনো কেন্দ্রে ভোটাররা তাদের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে পারেননি। নৌকায় ভোট দিতে বাধ্য করা হয়েছে বলে অভিযোগ বিএনপি ও বিদ্রোহী প্রার্থী সর্মথকদের। নৌকার এজেন্টরা সিল মেরে বাক্সে ভরে দিয়েছেন। কেন্দ্রের প্রিজাইডিং কর্মকর্তা ছিলেন, চুপচাপ। কার্যত নাকি তাদের কিছুই করার ছিল না। এ নিয়ে ভোটার আর অন্য প্রার্থীরা ছিলেন হতাশার মধ্যে। ভোট কেন্দ্রের বাইরে শান্তিপুর্ণ অবস্থা দেখা গেলেও ভেতরে চলে এমন ভোট কারচুপি। দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে চাটমোহর উপজেলার গুনাইগাছা ইউনিয়নের গুনাইগাছা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ব্যালট নিয়ে নৌকা প্রতিকে প্রকাশ্যে সিল মারে নৌকার পক্ষের সমর্থকরা। একই চিত্র দেখা যায় হরিপুর ইউনিয়নের হরিপুর দুর্গাদাস স্কুল অ্যান্ড কলেজ ভোট কেন্দ্রে। সেখানে নৌকায় ভোট দিতে ভোটারদের বাধ্য করা, প্রকাশ্যে সিল মারা, বিএনপি ও স্বতন্ত্র প্রার্থীর এজেন্টদের মারধর করে কেন্দ্র থেকে বের করে দেয় নৌকার সমর্থকরা। অপরদিকে, সদর উপজেলার ভাঁড়ারা ইউনিয়নের চর ভবানীপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে নৌকার পক্ষে ভোট কাটার চেষ্টা ও জোর করে নৌকা প্রতীকে সীর মারার চেষ্টার অভিযোগে সকাল ১০টা থেকে প্রায় এক ঘণ্টা ভোটগ্রহণ সাময়িক স্থগিত রাখা হয়। বেশ কয়েকটি ইউনিয়নে
নির্বাচনে ভোট কারচুপি, এজেন্টদের মারধর করে জোরপূর্বক কেন্দ্র থেকে বের করে দেওয়া, নৌকার পক্ষে প্রকাশ্যে ব্যালটে সিল, ভোটারদের হুমকী সহ বিভিন্ন অভিযোগে ভোট বর্জনের ঘোষণা দেন দুই উপজেলার ৯ জন প্রার্থী। এর মধ্যে পাবনা সদর উপজেলায় ৬ জন এবং চাটমোহর উপজেলায় ৩ জন। ভোট বর্জনকারীরা হলেন সদর উপজেলার আতাইকুলা ইউনিয়নের চার প্রার্থী বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলম (ধানের শীষ), আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী (স্বতন্ত্র) প্রার্থী শামসুল আলম মঞ্জু মাস্টার (আনারস), স্বতন্ত্র প্রার্থী কামাল উদ্দিন (চশমা) ও স্বতন্ত্র প্রার্থী শওকত হোসেন (মোটর সাইকেল)। হেমায়েতপুর ইউনিয়নের বিএনপি প্রার্থী রিদ্দিক হোসেন (ধানের শীর্ষ) ও চরতারাপুর ইউনিয়নে বিএনপি প্রার্থী রহমত শেখ (ধানের শীষ)। এছাড়া চাটমোহর উপজেলায় ভোট বর্জনকারী তিন প্রার্থী হলেন-হরিপুর ইউনিয়নে বিএনপি প্রার্থী সিরাজুল ইসলাম (ধানের শীষ), স্বতন্ত্র প্রার্থী (আ’লীগের বিদ্রোহী) কাশেম সরদার (আনারস), গুনাইগাছা ইউনিয়নে বিএনপি প্রার্থী গোলাম মওলা (ধানের শীষ)। প্রার্থীরা গণমাধ্যমকর্মীদের কাছে তাদের অভিযোগ তুলে ভোট বর্জনের কথা নিশ্চিত করেন।
নাঙ্গলকোটে কেন্দ্র দখল, ব্যালট পেপার ছিনতাই
নাঙ্গলকোট (কুমিল্লা) উপজেলা সংবাদদাতা জানান, নাঙ্গলকোটে ষষ্ঠ ধাপের ২টি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন গতকাল শনিবার সরকারদলীয় প্রার্থীদের কেন্দ্র দখল, প্রকাশ্যে নৌকা মার্কায় সিল মারা এবং বিভিন্ন কেন্দ্রে ইউপি সদস্য প্রার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষের মধ্যে দিয়ে ভোট গ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে। এ সময় বিভিন্ন কেন্দ্রে সংঘর্ষে ৪জন গুলিবিদ্ধ সহ অন্তত ৩০ জন আহত হয়েছে। এছাড়া কেন্দ্র দখল এবং ব্যালট পেপার ছিনতাইয়ের চেষ্টার অভিযোগে রিটার্নিং অফিসার পেড়িয়া ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ড শ্রীফলিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ স্থগিত করেন। এদিকে পেড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে বিএনপি সমর্থিত প্র্থর্াী অ্যাডভোকেট আবুল বাশার নেতাকর্মীদের নামে মিথ্যা মামলা দায়ের, ভোট কেন্দ্র থেকে তাঁর এজেন্টদের মারধর করে বের করে দেয়া, ভোটারদেরকে চেয়ারম্যান প্রার্থীদের ব্যালট না দিয়ে সদস্য প্রার্থীদের ব্যালট দেয়া এবং সরকার দলীয় চেয়ারম্যান প্রার্থীর নৌকা প্রতিকে প্রকাশ্যে সিল মারার অভিযোগে পেড়িয়া ইউপি কার্যালয় প্রাঙ্গনে এক সংবাদ সম্মেলনে সকাল ১১টায় নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দেন।
এদিকে হেসাখাল ইউপির হেসাখাল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ইউপি সদস্য প্রার্থী আবুল বশর এবং ফরহাদের কর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এসময় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ গুলি চালালে ৪জন গুলিবিন্ধ হয়েছে। একই ইউপির দায়েমছাতি উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে ইউপি সদস্য প্রার্থী সহিদুল ইসলাম ভুঁইয়া ও আবুল হাশেমের কর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এসময় ইউপি সদস্য প্রার্থী সহিদুল ইসলাম ভুঁইয়া সহ অন্তঃত ৫জন আহত হয়েছে। শ্রীফলিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে সকাল ১০টায় কেন্দ্র দখল এবং ব্যালট পেপার ছিনতাইয়ের চেষ্টাকালে পুলিশের পিটুনিতে অন্তত ১০ জন আহত হয়েছে। হামলায় আহতরা হলেন-সাবেক চেয়ারম্যান আওয়ামীলীগ নেতা আবদুল হামিদ, মহিন উদ্দিন, মিজান, মাসুদ, তাজুল ইসলাম, আলাউদ্দিন সহ অন্তত ১০ জন আহত হয়। এছাড়া উত্তর শাকতলী আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়, শিবপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ইউপি সদস্য প্রার্থীর কর্মীদের মধ্যে ধাওয়া, পাল্টা-ধাওয়া এবং সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
কেন্দ্র দখল অবাধে সীল মারার অভিযোগ
স্টাফ রিপোর্টার, নরসিংদী থেকে : ‘উপরে ফিটফাট ভিতরে সদরঘাট’ ধরনের নির্বাচন হয়েছে মনোহরদী উপজেলার ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে। উপজেলার ৯টি ইউনিয়নের ভোট কেন্দ্রগুলোতেই বাইরে লাইন রেখে ভিতরে অবাধে জাল ভোট ও সীল মারামারী করেছে আওয়ামী লীগ প্রার্থীরা। এই অভিযোগ করেছেন বিএনপিধানের শীষ মার্কার প্রার্থীরা। মনোহরদী উপজেলার দৌলতপুর ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ প্রার্থী হাদিউল ইসলাম অধিকাংশ কেন্দ্রে ঢুকে অবাধে সীল মেরেছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপি প্রার্থীর ভাই সাবেক ছাত্র নেতা সানাউল হক নিরু। তিনি জানান, দৌলতপুর ইউনিয়নে পূর্বাঞ্চলের ভোট কেন্দ্রগুলোতে সাধারণ ভোটাররা ভোট দিতে পারেনি। কোচেরচর মুকসুদ আলী উচ্চ বিদ্যালয় ভোট কেন্দ্রে আ’লীগ প্রার্থী হাদিউল ইসলামের সীল মারার ঘটনাকে কেন্দ্র করে সেখানে দুই মেম্বার প্রার্থী মনু মিয়া ও ইসরাত জাহানের সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। এই সংঘর্ষে উভয় পক্ষে বেশ কয়েকজন ভোটকর্মী আহত হয়েছে। এদের মধ্যে মোতালিব মিয়া (৪৫) নামে একজনকে মনোহরদী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। এই সংঘর্ষ থামাতে পুলিশকে দুই রাউন্ড ফাঁকা গুলি বর্ষণ করতে হয়েছে।
খবর পেয়ে মনোহরদীর সহকারী কমিশনার (ভূমি) মুহম্মদ শামীম কিবরিয়া, র‌্যাব ও পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন।
ওই কেন্দ্রের প্রিসাইডিং কর্মকর্তা মো. বোরহানুল ইসলাম সাংবাদিকদের নিকট ঘটনা সত্যতা স্বীকার করেছেন। তিনি জানান, এই কেন্দ্রে ২ হাজার ১৫৬ ভোট রয়েছে। এর মধ্যে বেলা পৌনে দুইটা পর্যন্ত ৭০ শতাংশ ভোট কাস্ট হয়েছে। এছাড়া মনোহরদী উপজেলা ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে নরসিংদী থেকে চুক্তি ভিত্তিতে সন্ত্রাসী দল গিয়ে বিভিন্ন ইউনিয়নের ভোট কেন্দ্রে সীল মেরেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। দুপুর ১২ টায় চন্দনবাড়ী প্রাইমারী স্কুল কেন্দ্রে নরসিংদীর বহিরাগতরা ঢুকে সীল মারতে থাকে। এ খবর পেয়ে নরসিংদীর নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট লুবনা ফারজানা বর্ডারগার্ড নিয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে তাদেরকে কেন্দ্র থেকে বের করে দেন। এ সময় বর্ডারগার্ড সদস্যরা তাদেরকে গ্রেফতার করতে গেলে তারা দ্রুত স্থান ত্যাগ করে পালিয়ে যায়। এসময় তারা একজন বহিরাগত সন্ত্রাসীকে আটক করে। ম্যাজিস্ট্রেট লুবনা ফারজানা দীর্ঘ আধা ঘণ্টা এ কেন্দ্রে অবস্থান করে কেন্দ্রটিতে ভোটদানের পরিবেশ ফিরিয়ে আনেন। এসময় তিনি বেশ কয়েকজন মোটারসাইকেল আরোহীকে আটক করেন। এছাড়া বিভিন্ন ভোট কেন্দ্রে ব্যাপক জালভোট ও সীল মারামারির ঘটনা ঘটেছে বলে ব্যাপক অভিযোগ পাওয়া গেছে। চেয়ারম্যান প্রার্থীর এজেন্টরা ভোটারদের হাত থেকে জোরপূর্বক ব্যালট পেপার ছিনিয়ে নিয়ে নৌকা মার্কায় অবাধে সীল মেরেছে।
সংঘর্ষ ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া
রাজশাহী ব্যুরো জানায়, সংঘর্ষ গুলিবর্ষণ ধাওয়া পল্টা ধাওয়ার মধ্যদিয়ে রাজশাহীর মোহনপুর ও বাঘায় ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন শেষ হলো। অন্য দুই উপজেলার চেয়ে নগরীর উপকন্ঠ পবা ইউনিয়নে সংঘর্ষে একজন গুলিবিদ্ধসহ সাতজন আহত হয়েছে। পারিলা ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ফাইমা বেগমের ভাই মাসুদ রানা ওরফে রঞ্জু গুলিবিদ্ধ হয়। আওয়ামী লীগ প্রার্থী ও বিদ্রোহী প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষে মাসুদ রানা গুলিবিদ্ধ হন। তাকে গুরুতর আহত অবস্থায় রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। বেলা ১২টার দিকে পারিলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে আওয়ামী লীগ প্রার্থী ফাইমা বেগমের সমর্থকদের সাথে বিদ্রোহী প্রার্থীর সমর্থকদের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এক পর্যায়ে তা সংঘর্ষে রূপ নেয়। পারিলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ঢুকে নারী চেয়ারম্যান প্রার্থী ফাহিমা বেগমের লোকজন বেশকিছু ব্যালট পেপারে নৌকা প্রতীকে সিল মারে। খবর পেয়ে পুলিশ ও বিজিবি গেলে তার কর্মী সমর্থকরা পালিয়ে যায়। এরপর কেন্দ্রে প্রায় ৩০ মিনিট ভোটগ্রহণ বন্ধ রাখা হয়। এর আগে হরিপুর ইউনিয়নের বেলপাড়া কেন্দ্রে দুই মেম্বার প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষে আওয়ামী লীগ সমর্থক মেম্বার প্রার্থী সাইদুর রহমান বাদলসহ পাঁচজন আহত হয়। এদিকে, রাজশাহীর মোহনপুর উপজেলার ধুরইল ইউনিয়নের শিবপুর কেন্দ্রে সকালে বিএনপি’র মেয়র প্রার্থীর এজেন্টকে ঢুকতে দেয়নি নৌকা প্রতীকের লোকজন। পরে খবর পেয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আল মাহমুদ সেখানে যান। এ সময় তিনি ওই এজেন্টকে কেন্দ্রে ঢুকিয়ে পুলিশ মোতায়েন করেন।
কাপ্তাইয়ে সংঘর্ষ, কেন্দ্র দখল, গুলি
কাপ্তাই (রাঙ্গামাটি) উপজেলা সংবাদদাতা জানান, কাপ্তাই শেষ দাফের ৪টি ইউপিতে বিএনপি’র ভোট বর্জন,সংষর্ষ, কেন্দ্র দখল, হামলা, গুলি বর্ষণ,আহত ১৪ পাল্টাপাল্টির অভিযোগের মধ্যে দিয়ে কাপ্তাই ইউপি নির্বাচন অনুষ্ঠিত। গতকাল (শনিবার) একটি কেন্দ্র সীমা জটিলতার কারণে বন্ধ থাকায় অন্য ৪টি ইউপি সকাল ৮টা হতে বিরতিহীন ভাবে ৪টা পর্যন্ত ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। এর মধ্যে সকাল ১০-১১টা পযন্ত কাপ্তাই, রাইখালী, চিৎমরম ও ওয়া¹া ইউপিতে সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ১১টার পর হতে কাপ্তাই ওয়া¹া ইউপি শীলছড়ি কেন্দ্র, বড়ইছড়ি সদর ও সাবেক ইউপি কেন্দ্র সরকারী দল ও স্বতন্ত্র দলের মধ্যে হামলা-পাল্টা হামলা হয়। পরিস্থিতি সামাল দিতে গিয়ে পুলিশ ৩ রাউন্ড ফাঁকাগুলি বর্ষণ করে।
পটিয়ায় বিএনপির প্রার্থীর
ভোট বর্জন ঃ ১১২ রাউন্ড গুলি উদ্ধার
পটিয়া উপজেলা সংবাদদাতা জানান, ষষ্ঠ দফায় অনুষ্ঠিত চট্টগ্রামের পটিয়া উপজেলার শোভনদন্ডী ইউনিয়নে গতকাল শনিবার ভোট চলাকালীন ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ড আরফা করিম উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রের পার্শ্বে ফেলে রাখা ৯ এমএম পিস্তলের ১৬ রাউন্ড তাজা ও ৯৬ রাউন্ড পরিত্যক্ত গুলি উদ্ধার করেছে বিজিবি। বিজিবি’র দায়িত্বপ্রাপ্ত মেজর এরশাদুল হক জানান, ‘কেন্দ্রের একশ গজ দূরবর্তী স্থান থেকে ৯ এমএম পিস্তলের ১৬ রাউন্ড তাজা ও ৯৬ রাউন্ড পরিত্যক্ত গুলি উদ্ধার করা হয়। এসময় এক যুবক ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায়।’ এদিকে ভোট কেন্দ্রে প্রভাব বিস্তার ও ভোট জালিয়াতি এবং ভোট ডাকাতির অভিযোগ এনে ভোট বর্জন করেন বিএনপি’র মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থী হাজী সামশুল আলম। শনিবার বেলা পৌনে ১২টার দিকে সংবাদ সম্মেলন করে তিনি ভোট বর্জনের ঘোষণা দেন। পটিয়ার সংসদ সদস্য সামশুল হক চৌধুরীর গ্রামের ইউনিয়ন হচ্ছে শোভনদন্ডী ইউনিয়ন।
মীরসরাই (চট্টগ্রাম) উপজেলা সংবাদদাতা জানান, গতকাল ৪ জুন ৬ষ্ঠ ধাপের নির্বাচনে মীরসরাই উপজেলার ৭টি ইউনিয়নে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত নির্বাচনে বিভিন্ন ইউনিয়নে মেম্বার প্রার্থীদের মধ্যে গোলযোগ, মারামারি ও সংঘর্ষে অন্তত ১০ জন আহত হয়। বিভিন্ন স্থানে বিএনপিধানের শীষের প্রার্থীদের কোন তৎপরতা ও কর্মকা-ই দেখা যায়নি।
সাভারে ভোট বর্জন, সংঘর্ষ, ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া
সেলিম আহমেদ সাভার থেকে জানান, সাভারে ভোট বর্জন, কেন্দ্র দখল ও ভোট কারচুপির মধ্য দিয়ে শেষ হয়েছে ষষ্ঠ ও শেষ ধাপের ইউপি নির্বাচন। এছাড়া বিরুলিয়া ইউনিয়নে সহকারী প্রিজাইডিং অফিসারের বিরুদ্ধে আগে থেকেই ব্যালট পেপারে নৌকা প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থীর পক্ষে সীল মেরে রাখার অভিযোগে প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনায় সাংবাদিকসহ আহত হয়েছেন অন্তত ৩০ জন।
শনিবার সাভার উপজেলার ১০টি ইউনিয়নে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। নির্বাচনে বিরুলিয়া ইউনিয়নে একজন মহিলা সহকারী প্রিজাইডিং অফিসারের বিরুদ্ধে আগে থেকেই ব্যালট পেপারে নৌকা প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থীর পক্ষে সীল মেরে রাখার অভিযোগ উঠেছে।
সরেজমিনে বিরুলিয়া ইউনিয়নের বিএনপি দলীয় চেয়ারম্যান প্রার্থী মাহমুদুল হাসান আলাল কেন্দ্রটি পরিদর্শনে গিয়ে অনিয়মকালে সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার মোশরেফা আশরাফীকে হাতেনাতে ধরে ফেলেন। অন্যদিকে ভবানীপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোট কারচুপির সময় প্রার্থীদের সমর্থকদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনায় সংখ্যালঘু খ্রিস্টানরাসহ আহত হয় অন্তত ১০ জন।
এঘটনায় তাৎক্ষণিকভাবে ভোট কারচুপি, কেন্দ্র দখল, পোলিং এজেন্টদের বের করে দিয়ে জাল ভোট প্রদান, সংখ্যালঘু খ্রিস্টানদের উপর নির্যাতনের প্রতিবাদে ও ব্যালটে সীল মেরে রাখার অভিযোগ এনে নিবার্চন বর্জন করেন বিরুলিয়া ইউনিয়নের বিএনপির চেয়ারম্যান প্রার্থী মাহমুদুল হাসান আলাল। একই অভিযোগে পাথালিয়া ইউনিয়নের বিএনপির’র চেয়ারম্যান প্রার্থী বাছেদ দেওয়ান, ভাকুর্তা ইউনিয়নে বিএনপির চেয়ারম্যান প্রার্থী সরোয়ার হোসেন ও আশুলিয়া ইউনিয়নের বিএনপির চেয়ারম্যান প্রার্থী কাবেল উদ্দিন নির্বাচন বর্জন করেন।
জাল ভোট প্রদান ও কেন্দ্র দখলের চেষ্টা
ঝিনাইদহ জেলা সংবাদদাতা জানান, জাল ভোট প্রদান ও কেন্দ্র দখলের চেষ্টা, ভোট কেন্দ্রে পোলিং এজেন্ট দিতে বাধা ও নির্বাচন বর্জনের মধ্য দিয়ে শনিবার জেলার শৈলকূপা উপজেলার ১৪টি ইউনিয়নে নির্বাচন সম্পন্ন হয়েছে। তবে কোথাও কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। নির্বাচনের পরিবেশ নেই এমন অভিযোগ তুলে ভোটের একদিন আগে নৌকার প্রার্থী মুক্তার আহম্মেদ মৃধা ভোট বর্জন করেন। ভোটের দিন শনিবার বেলা ১১টার দিকে এজেন্টদের বের করে দেওয়া, ভোটারদের নৌকায় ভোট দিতে বাধ্য করা ও ভয় ভীতি প্রদর্শনের অভিযোগে বিএনপির তিন প্রার্থী ভোট বর্জন করে। নির্বাচন বর্জনকারী চেয়ারম্যান প্রার্থীরা হলেন ধলহরাচন্দ্র ইউনিয়নে বিএনপির আবদুল বারী, হাকিমপুর ইউনিয়নে মোঃ নজরুল ইসলাম জোয়ার্দার এবং মনোহরপুর ইউনিয়নে আবুল হোসেন বেলাল। তবে নির্বাচন কমিশন বলছে তারা ভোট বর্জনের কোন কাগজ পায়নি। এদিকে বিকালে উমেদপুর ইউনিয়নের বারইপাড়া কেন্দ্রে জাল ভোট প্রদানের চেষ্টা কালে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর ৭ সমর্থককে ৩৫ হাজার টাকা জরিমানা করেন ভ্রাম্যমান আদালতের বিচারক ও নির্বাহী ম্যজিস্ট্রেট ওসমান গনি।
পুলিশের পিটুনিতে হাসপাতালে ছাত্রলীগ নেতা
ইবি সংবাদদাতা জানান, কেন্দ্র দখল করে জাল ভোট প্রদানের চেষ্টাকালে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্রলীগ নেতা শামছুজ্জামান তুহিন পুলিশের পিটুনিতে আহত হয়েছেন। তাকে উদ্ধার করে শৈলকূপা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। তুহিন বসন্তপুর গ্রামের সেকেন্দার আলী মোল্লার ছেলে। তার বাবা ত্রিবেনী ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
রাঙ্গামাটিতে দুই প্রার্থী’র নির্বাচন বর্জন
রাঙ্গামাটি জেলা সংবাদদাতা জানান, রাঙ্গামাটি জেলায় চেয়ারম্যান পদে কেবল কাউখালী উপজেলার ফটিকছড়ি ইউনিয়নে স্থানীয় আঞ্চলিক দল ইউপিডিএফ সমর্থিত স্বতন্ত্র প্রার্থী ধন কুমার চাকমা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। তাছাড়া সাধারণ আসনে ৮১ জন এবং সংরক্ষিত মহিলা আসনে ২৬ জন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন।
এদিকে নির্বাচন চলাকালে রাঙ্গামাটির ৫টি ইউনিয়নের কেন্দ্রে জাল ভোট কেন্দ্র দখল ও কারচুপির অভিযোগ এনে বিএনপির ৩ জন, আওয়ামী লীগের ১ জন ও ১ জন স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী তাদের নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দেন।
তবে নির্বাচন চলাকালে কাপ্তাই, কাউখালী, লংগদু ও বরকল উপজেলায় কয়েকটি কেন্দ্রে জাল ভোট কেন্দ্র দখলকে কেন্দ্র করে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এছাড়া বড় ধরনের ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি।
কেন্দ্রে যেতে পারেননি বিএনপি ভোটাররা
বেনাপোল অফিস জানায়, পথে পথে সরকার সমর্থকদের বাধার কারণে কম সংখ্যক ভোটার উপস্থিতির মধ্য দিয়ে শেষ হলো সীমান্তবর্তী উপজেলা শার্শার ১০টি ইউনিয়নের ইউপি নির্বাচন।
বিচিছন্ন কিছু সহিংসতার ঘটনা ঘটলেও মোটামুটি শান্তিপূর্ণভাবে শেষ হযেছে এই নির্বাচন। প্রশাসনের কঠোর নজরদারির কারনে কোথাও ভোট কেন্দ্র দখলের কোন ঘটনা ঘটেনি। প্রতিটা কেন্দ্রে পুরুষ ভোটারের উপস্থিতি ছিল খুবই কম। পুলিশ ভোটরদের উপস্থিতি কম হওয়ার কারনে বিভিন্ন কেন্দ্রে ভোট কাস্ট হযেছে ৫০ থেকে ৬০ শতাংশ। উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মহিলা ভোটারদের উপস্থিতি রক্ষা করেছে কেন্দ্রের মান। প্রতিনিটি ইউনিয়নেই আওয়ামী লীগের নৌকার বিপরীতে ছিল বিদ্রহী প্রার্থীদের ছড়াছড়ি। দুটি পক্ষই ছিল মারমুখী অবস্থানে। শার্শা উপজেলার কায়বা ইউনিয়নে নৌকা সমর



 

Show all comments
  • Ruma ৫ জুন, ২০১৬, ১১:৫৭ এএম says : 0
    Ekhane ekta bisoy promamito holo mare kate jai hok sob jaygay nouka mane aowamilig thaktei hoibo
    Total Reply(0) Reply
  • নীল ৫ জুন, ২০১৬, ১১:৫৭ এএম says : 0
    Jara mara gece tader daybar ke nibe?
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ৬ ধাপে ইউপি নির্বাচনে প্রাণহানি ১৩০ - সহিংসতার রেকর্ড
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ