পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
নূরুল ইসলাম : সংশয় বা আতঙ্ক কেটে গেছে। এবারও আমে ফরমালিন নেই। বিক্রি হচ্ছে দেদারছে। রাজধানীসহ দেশের কয়েকটি বিভাগীয় ও জেলা শহরে বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অএন্ড টেস্টিং ইন্সটিটিউশন (বিএসটিআই) এর পরীক্ষায় বাজারে আসা আমে ফরমালিন পাওয়া যায়নি। গতকাল শনিবার ঢাকার কয়েকটি বাজারে অভিযান চালিয়ে রাসায়নিক পরীক্ষায় আমে ফরমালিন পাওয়া যায়নি বলে জানান বিএসটিআইয়ের সহকারী পরিচালক রিয়াজুল হক। বিশেষজ্ঞদের মতে, এটা দেশের জন্য দেশের মানুষের জন্য সুখবর। বিশেষ করে যারা বিষাক্ত রাসায়নিকের ভয়ে মৌসুমী ফল খাওয়া ছেড়ে দিয়েছিলেন তাদের জন্য খুবই ভালো খবর এটি। ভেজালবিরোধী অভিযানের এক সময়ের আলোচিত ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ আল-আমীন এ প্রসঙ্গে ইনকিলাবকে বলেন, এখন কৃষক থেকে শুরু করে পাইকারী-খুচরা বিক্রেতা ও ক্রেতা সবাই সচেতন। নিজেদের স্বার্থের কথা বিবেচনা করে কেউই আর ফলে ফরমালিন দেয়ার পক্ষে নন। এটাকে ভেজালবিরোধী অভিযানের সুফল উল্লেখ করে তিনি বলেন, এভাবেই একদিন সবকিছুই ভেজালমুক্ত হবে।
রাজধানীর কয়েকটি এলাকায় ফলের বাজার ঘুরে বিক্রেতাদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, এবার ভরা মৌসুমেও ফরমালিন মিশ্রিত আম আসছে না। এমনকি পুরান ঢাকার পাইকারী আড়তেও ফরমালিন দেয়ার প্রবণতা নেই।
বাদামতলীর পাইকারী ব্যবসায়ী আজিম উদ্দিন জানান, আগে র্যাব-পুলিশের কঠোর নজরদারির মধ্যেও ফরমালিন মেশানো ঠেকানো যেতো না। এখন খুব একটা নজরদারি নেই। তারপরেও কেউই ফরমালিন মেশাচ্ছে বলে তাঁর জানা নেই। আরেক পাইকারী ব্যবসায়ী রুহুল আমিন বলেন, আমরা সচেতন হয়েছি। কেউ আমে বা মৌসুমী অন্য কোনো ফলে ফরমালিন বা কার্বাইড দিচ্ছে এমন খবর শুনলেই মার্কেটের ব্যবসায়ীরাই মিলে প্রতিবাদ করে, বাধা দেয়।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দেশের বৃহত্তম আম উৎপাদন কেন্দ্র চাঁপাইনবাবগঞ্জ এবং সাতক্ষীরায় জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে আম পাড়ার সময় নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছিল। একটা নির্দিষ্ট সময়ের আগে ব্যবসায়ীরা যাতে গাছ থেকে আম না পারেন সেজন্য জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে মনিটরিং করা হয়েছে। চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার বাগানগুলোতে গত ২৫ মে পর্যন্ত আম পাড়া নিষেধ ছিল। জেলার শিবগঞ্জ উপজেলার আম চাষী মোবারক হোসেন টেলিফোনে বলেন, ফুল আসার পর কীটপতঙ্গ থেকে রক্ষার জন্য আম গাছে কিছু ওষুধ দেয়া হয়। কীট মরে গেলে আর কোনো প্রকার ওষুধ ব্যবহার করা হয় না। তিনি বলেন, আগে বাগানেই ফরমালিন বা কার্বাইড ব্যবহার করা হতো একথা সত্য। এখন তা হয় না। প্রশাসন এখন অনেক কঠোর। আমে মুকুল আসার পর থেকেই জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে মনিটরিং করা হয়। র্যাবও মনিটরিং করছে। র্যাবের গোয়েন্দা বিভাগের লোকজন সব সময় খোঁজ খবর নিয়েছে। এর মধ্যে ফরমালিন মেশানোর সুযোগ নাই। চাঁপাইনবাবগঞ্জের আরেক পাইকারী ব্যবসায়ী আব্দুস সালাম বলেন, এখন উৎপাদক থেকে শুরু করে ক্রেতা পর্যন্ত সবাই সতর্ক। কেউই চায় না আমে বিষাক্ত ফরমালিন মেশাতে। এই সচেতনতাই আমকে ‘বিষমুক্ত’ করেছে।
ঢাকার কয়েকজন ফল ব্যবসায়ীর সাথে কথা বলে জানা গেছে, মৌসুমের আগেই ভারতীয় আম বাজারে আসে। সে সব আমে ফরমালিন মিশ্রিত থাকে। ফরমালিনের বদনামটা আসে ভারত থেকে আমদানিকৃত আম থেকেই। যাত্রাবাড়ীর ফল বিক্রেতা সায়মন বলেন, ভারত থেকে আনা আমগুলো অনেক দিন বাজারে রাখতে হয় বলে সেগুলোতে ফরমালিন মেশানো থাকে। বাজারে প্রথম আসার কারণে ক্রেতাদের আগ্রহ থাকে বেশি। দামও থাকে অনেক বেশি। বেশি দাম দিয়ে ক্রেতারা ফরমালিনযুক্ত আমগুলো কেনার পর সেগুলো কেনার পর ‘বদনাম’ হয় দেশী আমের। মীরহাজিরবাগের ব্যবসায়ী আলম বলেন, দেশী আমে ফরমালিন দেয়ার প্রয়োজন হয় না। দেশী আম মোটামুটি ‘পোক্ত’ হলেই বাজারে আসে। ওই আম পাকতেও দেরি হয়। বিক্রিতে সময় পাওয়া যায়। একটানা ১০/১৫দিন রাখলেও ঝুড়ির আম পচে না।
গত কয়েক দিন আগে চট্টগ্রামের বিভিন্ন বাজারে আমের রাসায়নিকের উপস্থিতি পরীক্ষা করে জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সাংবাদিকদের জানান, বাজারের আমে কোনো প্রকার রাসায়নিক পদার্থ বা ফরমালিনের উপস্থিতি পাওয়া যায় নি। ভ্রাম্যমাণ আদালতের ওই টিম অভিযানকালে আম, আপেল, আঙ্গুর এবং মাল্টার ২০টি নমুনা সংগ্রহ করে জেলা প্রশাসন ও বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস এন্ড টেস্টিং ইন্সটিটিউশন (বিএসটিআই)। এসব নমুনা পরীক্ষায় মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর ফরমালিনের উপস্থিতি পাওয়া যায়নি। সংশ্লিষ্টদের মতে, এবার মৌসুমের আগে থেকেই ফলে ফরমালিন ও কার্বাইড ব্যবহারের বিরুদ্ধে জেলা প্রশাসনের কঠোর অবস্থানের সুফল এটি। আতঙ্কে মৌসুমী ফল খাওয়া ছেড়ে দেয়া মানুষের জন্য এটি অনেক বড় সুখবর। এ প্রসঙ্গে বিএসটিআইয়ের সহকারী পরিচালক রিয়াজুল হক গতকাল ইনকিলাবকে বলেন, সারাদেশে বিএসটিআইয়ের ৬টি অফিসের মাধ্যমে ভেজালবিরোধী অভিযান ও মনিটরিং অব্যাহত রয়েছে। এ কারণে ফলে ফরমালিন দেয়ার প্রবণতা কমেছে। তবে বিএসটিআইয়ের এই কর্মকর্তা মনে করেন, অভিযানের পাশাপাশি মানুষের মধ্যে যে সচেতনতার সৃষ্টি হয়েছে সেটা অনেকটাই ফলপ্রসূ হয়েছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।