Inqilab Logo

শনিবার ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৬ আশ্বিন ১৪৩১, ১৭ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

খেজুর-মুড়িতে ক্ষতিকর উপাদান পাওয়া যায়নি

প্রকাশের সময় : ৫ জুন, ২০১৬, ১২:০০ এএম

হাসান সোহেল : দেশের পাইকারি ও খুচরা বাজারের খেজুর ও মুড়িতে ক্ষতিকর মাত্রায় ফরমালডিহাইড (ফরমালিন) ও ইউরিয়া পাওয়া যায়নি। সরকারের জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট পরিচালিত এক গবেষণায় দেখা গেছে, বাজারে বিক্রীত খেজুরে ফরমালিন উপস্থিতি থাকলে তার সহনীয় মাত্রার চেয়ে অনেক কম। আর মুড়িতে ইউরিয়ার কোনো উপস্থিতি পাওয়া যায়নি।
পবিত্র রমজান মাসকে সামনে রেখে বিগত বছরগুলোতে খেজুরে ফরমালিন এবং মুড়িতে ক্ষতিকর ইউরিয়া সার মিশানোর অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে এই গবেষণা পরিচালিত হয়েছে। সরকারের জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের ন্যাশনাল ফুড সেফটি ল্যাবরেটরিতে (এনএফএসএল) চলতি মাসের ১ তারিখ থেকে ২৯ তারিখ পর্যন্ত এই পরীক্ষা চালানো হয়েছে।
ল্যাবরেটরি পরিচালিত পরীক্ষায় খেজুরের ক্ষেত্রে মূল আমদানি পর্যায়, পাইকারি বাজার এবং খুচরা বাজার থেকে ৯টি করে ২৭ টি নমুনা সংগ্রহ ও পরীক্ষা করা হয়। মুড়ির ক্ষেত্রে উৎপাদক পর্যায়ে অর্থাৎ কৃষক, খুচরা ও পাইকারি দোকান থেকে অনুরূপ নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা করা হয়। পরীক্ষায় মানব স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকারক মাত্রার ফরমালিন বা ইউরিয়া সারের উপস্থিতি পাওয়া যায়নি।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, ন্যাশনাল ফুড সেফটি ল্যাবরেটরির ফরমালিনের যে মাত্রা পওয়া গেছে তা শরীরের জন্য ক্ষতিকর নয়। তবে মাত্রা বেশি হলে সেটা দীর্ঘ মেয়াদে ক্ষতিকর। সাধারণত মাত্রাতিরিক্ত ফরমালিনযুক্ত খাবার খেলে পেটে ব্যথা, বমি, ডায়রিয়া ইত্যাদি হতে পারে। এছাড়া দীর্ঘ মেয়াদে নার্ভ, কিডনিসহ শরীরের গুরুত্বপূর্ণ অর্গান ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের সংশ্লিষ্ট বিভাগের একাধিক কর্মকর্তা জানান, রমজান মাসে ইফতারিতে প্রত্যেক মুসলিম খেজুর ও মুড়ি খেয়ে থাকে। কিন্তু এসব খাবারে ফরমালিন ও ইউরিয়া ইত্যাদি থাকতে পারে এমন আশঙ্কায় অনেকে ঠিকভাবে খেতে পারেন না। তবে রমজানের আগে পরিচালিত এই পরীক্ষার ফলাফল অবশ্যই রোজাদারদের দুশ্চিন্তামুক্ত রাখবে। রমজানের শুরুতে পুনরায় পরীক্ষা হতে পারে বলেও জানান তারা।
ন্যাশনাল ফুড সেফটি ল্যাবরেটরির ২৯ তারিখে প্রকাশিত খেজুর ও মুড়ি সংক্রান্ত প্রতিবেদনে দেখা যায়, উৎপাদক, পাইকারি ও খুচরা বাজারের প্রত্যেকটি থেকে ৯টি করে মোট ২৭টি করে নমুনা মুড়ি ও খেজুরের জন্য মোট ৫৪টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। ইউরোপিয়ান ফুড সেফটি এসোসিয়েশনের স্ট্যান্ডার্ড অনুযায়ী খাদ্যপণ্যে ফর্মালিনের মাত্র সর্বোচ্চ কেজিপ্রতি ৩৫ মাইক্রোগ্রাম সহনীয় মাত্রা হিসেবে গণ্য করা হয়। কিন্তু ২৭টি খেজুরের নমুনায় ফরমালিনের সর্বোচ্চ মাত্রা ছিল ২ দশমিক ৫৯ মাইক্রোগ্রাম। অর্থাৎ এই মাত্রা সহনীয় মাত্রার চেয়ে অনেক কম। অন্যদিকে ২৭টি মুড়ির নমুনা পরীক্ষা করে সেখানে ক্ষতিকর ইউরিয়ার উপস্থিতি পাওয়া যায়নি। তবে মুড়ি ধবধবে সাদা করতে হাইড্রোজ নামের একটি রাসয়নিক ব্যবহার করা হয়েছে কিনা সেটি পরীক্ষা করা হয়নি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এনএফএসএলের এক বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা বলেন, বাজারে যে কোনো ধরনের সাদা মুড়ি পরিহার করা উচিত। কারণ এতে কোনো না কোনো ধরনের রাসায়নিক ব্যবহার করা হয়। পরীক্ষায় মুড়িতে ইউরিয়ার উপস্থিতি পাওয়া কঠিন। কারণ ইউরিয়া মুড়িতে মেশানোর সময় সেটা বাষ্পীভূত হয়। তাই অপেক্ষাকৃত কম সাদা মুড়ি খাওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সরকারের রোগতত্ত্ব রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের পরিচালক প্রফেসর ড. মাহমুদুর রহমান বলেন, প্রতিবেদনে যে ফরমালিনের যে মাত্রা উল্লেখ করা হয়েছে তা মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর নয়। তবে এই পরীক্ষা বাজারের সব খেজুর বা মুড়ি নিরাপদ কিনা সেটা নিশ্চিত করে না।
জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের পরিচালক ডা. জাফরউল্লাহ বলেন, নমুনা পরীক্ষায় মানবদেহের জন্য ক্ষতিকারক উপাদানের উপস্থিতি পাওয়া যায়নি। তবে এটা সারাদেশের চিত্র নয়। তিনি বলেন, সারাদেশ থেকে নমুনা পরীক্ষা করা হলে প্রতিবেদন এরকম নাও হতে পারত।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: খেজুর-মুড়িতে ক্ষতিকর উপাদান পাওয়া যায়নি
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ