Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

বগুড়াসহ উত্তরের সড়কে চলছে দেদারসে চাঁদাবাজি

প্রকাশের সময় : ৫ জুন, ২০১৬, ১২:০০ এএম

মহসিন রাজু, বগুড়া থেকে : বগুড়াসহ উত্তরাঞ্চলের সড়ক-মহাসড়কের মোড়ে মোড়ে অবৈধ চাঁদা আদায় করা হচ্ছে যাত্রীবাহী বাস-মিনিবাস ট্রাক, ট্যাংকলরী, সিএনজি ও ব্যাটারি চালিত অটোরিকশা ও হিউম্যান হলার নামের যানবাহন থেকে। এক শ্রেণীর আইনের রক্ষক, পরিবহন মালিক/শ্রমিকদের নামে পরিচালিত বিভিন্ন সংগঠনের নামে প্রতিদিন পাখি ডাকা ভোর থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত বিরতিহীনভাবে সড়কগুলোর শত শত পয়েন্টে লাখ লাখ টাকা অবৈধ চাঁদা আদায়ের এই ঘটনা সবার চোখের সামনে সংঘটিত হলেও দেখার কেউ নেই।
এক অনুসন্ধানে জানা গেছে, বগুড়াসহ উত্তরাঞ্চলের ১২ জেলার শতাধিক উপজেলার সাড়ে ৪ হাজার কিলোমিটার সড়ক মহাসড়ক জবর-দখল করে নিয়েছে চিহ্নিত চাঁদা আদায়কারীরা। মহাসড়কের উপরে শত শত পয়েন্টে বিভিন্ন সংগঠনের নামে রশিদ মূলেই অবৈধ চাঁদা আদায় করা হচ্ছে। পরিবহন মালিকদের অনেকের মতে, বর্তমান সময়ে বর্ধিত হারে যে পরিমাণ চাঁদা আদায় করা হচ্ছে তা অন্যায় এবং অবৈধ। অতীতের যেকোনো সময়ের তুলনায় বর্তমানের চাঁদাবাজী দৃষ্টিকটু পর্যায়ে চলে গেলেও এখন আর কেউ প্রতিবাদ করে না। কারণ প্রতিকার করার কেউ আছে বলে বিশ্বাসটাই উঠে গেছে বলে অভিমত ভুক্তভোগীদের। একটি সূত্রে জানা গেছে, এখন সড়ক পরিবহন খাতে বিভিন্ন সরকারি সংস্থা ও বেসরকারি সংগঠনের পক্ষে রশিদ মূলে অবৈধ চাঁদা আদায়কারী হিসেবে হাজারো মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে, এই অবৈধ কর্মসংস্থান যে অসম্মানজনক সেই বোধও (মূল্যবোধ) উঠে গেছে প্রায়।
ভুক্তভোগী যাত্রীবাহী বাস মিনিবাস পরিবহন মালিক-চালকদের মতে, মহাসড়কের পাশে নামে বেনামে ছাপানো রশিদের বিনিময়ে চাঁদা না দিলে চালকদের মারপিটসহ গাড়ির গ্লাস ভাঙচুর করা হয়ে থাকে। এজন্য প্রসাশনের কাছে অভিযোগ করে বিচার পাওয়া যায় না বরং উল্টো হয়রানি আরোও বাড়ে। ভুক্তভোগীদের তাই অসহায় মন্তব্য এখন এ রকম “রাস্তায় চলতে গেলে নানারকম অত্যাচার সহ্য করতে হয়। তাই প্রতিবাদ করে লাভ কি? তার চেয়ে লাখ লাখ টাকার পরিবহনের ক্ষতির চেয়ে চাঁদার টাকা দেয়াইতো ভালো।” আবার অনেক ক্ষেত্রে নির্ধারিত চাঁদার চেয়ে ৫/১০ টাকা কম দিলে আর রশিদ দেয়া হয় না। যার ফলে আদায়কৃত চাঁদার সম্পূর্ণ টাকায় চলে যায় রাস্তায় আদায়কারীদের পকেটে। ফলে সংশ্লিষ্ট মালিক-শ্রমিক পরিবহনের সমিতি ঘরে দিনের শেষে কোনো টাকা জমা হয় না। এর ফলে রাস্তায় আদায়ের কিছু অংশ ভাগ-বাটোয়ারা হয় প্রতিদিন সন্ধ্যা রাতে।
বগুড়ার গোদার পাড়ার পিকআপ চালক পান্না মিয়া জানায়, ঢাকা থেকে বগুড়ায় আসতে রাস্তায় বিভিন্ন পয়েন্টে ন্যূনতম ৫/৬ শ’ টাকা চাঁদা দিতে হয়। এছাড়াও আছে ট্রাফিক পুলিশের মাসিক বিট। একই কথা জানায়, বগুড়ার বৃহত্তর কুষ্টিয়ার পরিবহন শ্রমিক গ্রামের উজ্জ্বল হোসেন। তিনি জানান, “অভিযোগকারী হিসেবে আমাদের নাম প্রকাশ হলে চাঁদার পরিমাণ আরো বাড়তে পারে।” তিনি বলেন, গত প্রায় ১০ বছর হলে দেখা যাচ্ছে রাস্তায় চলতে গিয়ে দিন দিন চাঁদার টাকার পরিমাণ বৃদ্ধি পাচ্ছে।
বগুড়ার শেরপুর উপজেলার চান্দাইকোনা বগুড়া ও পাবনা বাজার পয়েন্টে প্রতিদিন সকাল থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত আদায় হচ্ছে লাখ লাখ টাকা চাঁদা। তথাকথিত মালিক শ্রমিক নেতা আল আমীন, শামীম, শরীফ, ফেরদৌস, প্রদিপ, হাবীব ও সাত্তারের নেতৃত্বে লাঠিবাহিনী দিয়ে আদায় করছে লাখ লাখ টাকা চাঁদা। লাঠির মাথায় লালসালৃু কাপড় মোড়ানো ২০/২২ বছর বয়সের যুবকদের দিয়ে রাস্তায় চাঁদা আদায় করানো হচ্ছে। এরা কখনো কখনো সরকারি দলের জেলা-উপজেলার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদের নাম ভাঙিয়ে রাস্তায় চাঁদা আদায়সহ বিভিন্ন অপকর্মে জড়িত আছে বলে জানায় স্থানীয় লোকজন। কিন্তু এই অপকর্ম রোধ করার মতো কোনো তৎপরতাই কখনো চোখে পড়ে না।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: বগুড়াসহ উত্তরের সড়কে চলছে দেদারসে চাঁদাবাজি
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ