Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

কিশোর-তরুণদের ভবিষ্যৎ নিয়ে শংকিত অভিভাবকরা

প্রকাশের সময় : ৫ জুন, ২০১৬, ১২:০০ এএম

কুষ্টিয়া থেকে এস এম আলী আহসান পান্না : কুষ্টিয়া শহরে হাত বাড়ালেই মেলে মাদক। যখন দরকার, যার দরকার, যে কোনো সময়, প্রায় যে কোনো খানেই চাইলেই মেলে মাদক। এক্ষেত্রে বয়স কোনো বাধা নয়। বালক থেকে বৃদ্ধ যে কেউই টাকা দিলেই মাদক পেতে পারে। কোনো বাধা নেই, কেউ দেখারও নেই। কুষ্টিয়া জেলার সীমান্ত দিয়ে, এমনকি অন্য জেলা থেকেও বন্যা ¯্রােতের মতো আসছে মাদক। বিজিবি’র সদাসতর্ক সীমান্ত প্রহরার ফাঁক গলে রাতের আঁধারে ওপার থেকে ঢুকছে নানা কিসিমের মাদকদ্রব্য। কুষ্টিয়া শহরসহ সারা জেলার উপজেলা সদর, এমনকি ইউনিয়ন ও গ্রাম পর্যায়েও বিস্তৃত হয়েছে মাদকের সরবরাহ। এসব দেখা যাদের দায়িত্ব সেই মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের কমকর্তারা নিয়মিত মাসোহারা পেয়ে হাত-পা গুটিয়ে অফিসে বসে থাকেন। মাদকের এ বাধাহীন বিস্তারের ঘটনায় বিশেষ করে কিশোর-তরুণদের ভবিষ্যত ভেবে ভীষণভাবে শংকিত হয়ে পড়েছেন অভিভাবক মহল ও সুশীল সমাজ।
পশ্চিম থেকে পূর্বদিকে প্রলম্বিত কুষ্টিয়া জেলার পশ্চিম প্রান্তে সমগ্র দৌলতপুর উপজেলার ৫৩ কিমি জুড়ে রয়েছে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের নদীয়া ও মুর্শিদাবাদ জেলার সীমান্ত। সীমান্তের ২৫ কি.মি. অংশে রয়েছে কাঁটা তারের বেড়া। বাকি অংশ খোলা। এ খোলা অংশ দিনের বেলা প্রায় সুনসান থাকলেও রাতের বেলা সেখানে চলে বহু মানুষের নীরব আনাগোনা। বিজিবি ও পুলিশের অসৎ সদস্যদের সহায়তায় চলে এ মাদক পাচার। সে সঙ্গে ক্ষমতাসীন দলের নেতা-কর্মীদের প্রত্যক্ষ মদদে মাদক ব্যবসা চলছে অবাধে। যেসব এলাকা দিয়ে ব্যাপক মাদক পাচার হয় তার মধ্যে রয়েছে আশ্রয়ণ, ঠোটারপাড়া, চর চিলমারি, উদয়নগর প্রভৃতি। মাদক পাচারে ওপার থেকে আসা আর এপার থেকে যাওয়া বিভিন্ন চোরাচালান পার্টির লোকেরা মিলিত হয় সীমান্তের পূর্বনির্ধারিত পয়েন্টে। হাতবদল সম্পন্ন হওয়ার পর মানুষের মাথায়, ভ্যানে বা মোটর সাইকেলে করে কার্টন ভরা মদ এবং হেরোইন, ফেনসিডিল, গাঁজা প্রভৃতি মাদক নিয়ে আসা হয়। এগুলো প্রথমে জড়ো করা হয় হোসেনাবাদে। সেখান থেকে নেয়া হয় হয় তারাগুনিয়ায়। তারপর ভেড়ামারা দিয়ে তা পাঠানো হয় কুষ্টিয়া শহরসহ বিভিন্ন উপজেলায় এবং অন্যান্য জেলায়। এর রয়েছে বিরাট ও শক্তিশালী নেটওয়ার্ক। ভারত থেকে আসছে হেরোইন, ভারতীয় খোলা বাংলা মদ ও বোতলজাত মদ, ফেনসিডিল ও গাঁজা। আর এপার থেকে যায় ইয়াবা।
কুষ্টিয়া জেলা শহরে প্রায় বিড়ি-সিগারেটের মতোই কিনতে পাওয়া যায় মদসহ অন্যান্য ধরনের মাদক। কুষ্টিয়াতে মদ সরবরাহ করা হয় দর্শনাস্থ কেরু অ্যান্ড কোম্পানি থেকে। এ মদকে বলা হয় বাংলা মদ। গোটা জেলায় ৩টি স্থানে মদের অনুমোদিত এজেন্ট বা ডিলার রয়েছেঃ কুষ্টিয়া, ভেড়ামারা ও কুমারখালি। কুষ্টিয়ার মদের ডিলারের নাম গৌতম চাকি, মদের দোকানের মালিক তিনি ও তার স্ত্রী স্বাগতা চাকি। কেরু অ্যান্ড কোম্পানি থেকে প্রতি ১৫ দিনে ১৪-১৫ ড্রাম মদ সরবরাহ করা হয় ট্রাকে করে। জানা যায়, কেরুর মদ পানোপযোগী করার জন্য ৪০ ভাগ পানি মেশানো থাকে। অভিযোগ আছে যে মদের চালান হাতে আসার পর কুষ্টিয়ার ডিলার এক ড্রাম মদে পানি মিশিয়ে তা ৪ ড্রামে পরিণত করে বিক্রি করে। মদ্যপায়ীদের কাছে যাতে পানি মেশানো ধরা না পড়ে সে জন্য পানি মেশানোর সময় তার সাথে মাদক মেশানো হয়। অন্যদিকে নিয়মানুযায়ী মদ পানের পারমিটপ্রাপ্তদের কাছেই শুধু মদ বিক্রি করার কথা। কিন্তু বাস্তবে যে কেউ চাইলেই মদ কিনতে পারে। এমনকি একটি বালকও যদি মদ কিনতে যায়, সে তা কিনতে পারে সহজেই। মদ বিক্রেতার নীতি হচ্ছে টাকা পেলেই সে মদ দেবে। কে নেবে সেটা তার দেখার বিষয় নয়। একজন পারমিটধারীর জন্য মাসে সাড়ে ৯ লিটার মদ বরাদ্দ। প্রতি লিটারের দাম ৩২০ টাকা। নিয়মানুযায়ী সাধারণ সময়ে সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৪টা ও রোজার সময় সকাল ৯টা থেকে ১২টা পর্যন্ত মদ বিক্রি করার কথা। কিন্তু সারা বছরই সকাল ১০টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত, কখনো তার বেশি সময়ও দোকান খোলা রাখা হয়। সেখানে গ্লাসে করে মদ্যপায়ীদের কাছে মদ বিক্রি করা হয় যা নিয়ম বিরুদ্ধ। তারপর পারমিটধারী ব্যক্তির কাছেই শুধু মদ বিক্রির কথা থাকলেও পারমিট ছাড়া যে কোনো ক্রেতার কাছেই তা বিক্রি করা হয়। আবার ডিলারের দোকান থেকে নিজেদের লোক দিয়ে বাইরে পলিথিন প্যাকেটে করে খুচরো মদ বিক্রি করা হয়। অপরদিকে বাইরের লোকও বাংলা মদ কিনে নিয়ে বিভিন্ন স্থানে ফেরি করে বিক্রি করে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: কিশোর-তরুণদের ভবিষ্যৎ নিয়ে শংকিত অভিভাবকরা
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ