Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

বাংলাদেশে অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিংয়ের অপার সম্ভাবনা রয়েছে

প্রকাশের সময় : ৫ জুন, ২০১৬, ১২:০০ এএম

মো. ওবায়েদুল ইসলাম রাব্বি, একজন অ্যাফিলিয়েট মার্কেটার ও এসইও এক্সপার্ট। দীর্ঘদিন ধরে তিনি অ্যাফিলিয়েট মার্কেটার হিসেবে কাজ করছেন। এই সেক্টরে এখন তিনি একজন সফল ব্যক্তি। নিজে কাজ করার পাশাপাশি সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে এবং অনলাইনে এ বিষয়ে তিনি নতুনদের তথা যারা এ সেক্টরে কাজ করতে আগ্রহী, তাদের প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকেন। অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিংয়ের নানা বিষয় নিয়ে তার সাথে আলাপচারিতায় ছিলেন নুরুল ইসলাম।

ক্যারিয়ার : অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং কি?
ওবায়েদুল ইসলাম : উন্নত বিশ্বের দেশগুলোতে মানুষ এখন অনেক বেশি প্রযুক্তিনির্ভর। তারা ঘরে বা অফিসে বসেই ইন্টারনেটের মাধ্যমে বিভিন্ন ওয়েব সাইটে ঢুকে তাদের কেনাকাটা করতে বেশি পছন্দ করে। তাছাড়া তাদের রয়েছে বিনামূল্যে পণ্য ঘরে পৌঁছে দেয়ার ব্যবস্থা। তারা যে ওয়েব সাইটগুলো থেকে পণ্য ক্রয় করে সেগুলোর বেশিরভাগই পণ্যের প্রসারের উদ্দেশ্যে অ্যাফিলিয়েট সুবিধা দিয়ে থাকে। আর মার্কেটাররা এই সুবিধাকে কাজে লাগিয়ে নিজেরা মার্কেটিং করে আয় করে। এটাই হলো অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং। সহজ কথায়, অনলাইনে আপনি কোনো প্রতিষ্ঠানের পণ্য বিক্রি করতে চাইলে তারা আপনাকে তাদের পণ্যের একটা লিংক দিবে। কোন গ্রাহক যদি আপনাকে দেয়া লিংকের মাধ্যমে তাদের ওয়েবসাইটে ঢুকে পণ্য ক্রয় করে, তাহলে ওই প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে আপনি একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ কমিশন পাবেন। এই কমিশন তথা অর্থ আয়ের মাধ্যমটাকে বলায় হয় অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং।
ক্যারিয়ার : অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিংয়ে কাদের আসা উচিত?
ওবায়েদুল ইসলাম : অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিংটা আসলে খুব বিশাল একটা ইন্ডাস্ট্রি। যারা এসইও (সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন), কন্টেন্ট রাইটিংয়ে ভালো তাদের এই সেক্টরে ভালো করার সম্ভাবনা খুব বেশি। তাই বলে কি নতুনরা বসে থাকবে? অবশ্যই না। তাদেরকে কাজ শিখে দক্ষতা অর্জন করতে হবে। নতুনরা যদি ধৈর্য ধারণ করে লেগে থাকে তাহলে তাদের পক্ষেও এখান থেকে ভালো আয় করা সম্ভব। কারণ কোন মানুষই জন্মের সময় অভিজ্ঞতা নিয়ে জন্ম নেয় না। বরং পৃথিবীতে আসার পরেই তাকে সকল দক্ষতা ও যোগ্যতা অর্জন করতে হয়। সুতরাং ইংরেজিতে যারা মোটামুটি ভালো ও কম্পিউটার জানা আছে এমন সকল ব্যক্তিই এই সেক্টরে আসতে পারে।

ক্যারিয়ার : আপনি এই পেশায় কিভাবে এলেন?
ওবায়েদুল ইসলাম : অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিংয়ের পেশায় আসার আগে আমি কম্পিউটারে প্রচুর গেইমস খেলতাম। একবার গেইমের চিট কোড খোঁজার জন্য অনলাইনে যাই। তখন একটি ওয়েবসাইট আমার চোখে পরে। সেটি ছিলো- একটি সাইট কিভাবে গুগল র‌্যাংকে চলে আসে, সে বিষয়ে। ওখান থেকেই আমি এসইওর বিষয়ে ধারণা পাই। বিষয়টি আমার কাছে খুব ভালো লেগেছে। ধীরে ধীরে ওই বিষয়টির প্রতি আমার আগ্রহ বেড়ে যায়। এভাবেই এসইও নিয়ে কাজ করা শুরু করি। পরবর্তীতে কাজের সুবিধার্থে এ বিষয়ে কিছু প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাও নিয়ে নেই। দীর্ঘদিন বিভিন্ন ক্লাইন্টদের জন্য কাজ করার পর, একটা সময় হিসাব করলাম যে, একটা ক্লাইন্টের কাজ করলে ১ বারের জন্য কাজের ওপর ১২০০ থেকে ২৫০০ ডলার পেমেন্ট পেয়ে থাকি। কিন্তু বার বার ওই কাজের জন্য আর কোন পেমেন্ট পাওয়ার সুযোগ নেই। আবার নতুন প্রোজেক্ট খুঁজতে হতো। এক সময় মনে হল- অনেকের সাইট তো গুগল এ প্রথম পেজে নিয়ে আসলাম, নিজের জন্য কিছু করা দরকার। যেই ভাবা সেই কাজ। সেই থেকেই শুরু হলো এই পেশায় কাজ করা।

ক্যারিয়ার : অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিংয়ের কাজ সম্পর্কে সংক্ষেপে কিছু বলুন।
ওবায়েদুল ইসলাম : অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিংয়ে কাজ মোটামুটি চারভাবে করা যায়। সোশ্যাল সাইটে লিংকগুলো শেয়ার করে, ল্যান্ডিং পেইজ তৈরি করে, ব্লগ সাইটের মাধমে আর ওয়েব সাইট তৈরি করে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ফলপ্রসূ ও উৎকৃষ্ট পদ্ধতি হলো ওয়েবসাইট তৈরি করে কাজ করা। সাইটগুলো কিছু নির্দিষ্ট পণ্য বা বিষয়ের উপর নির্ভর করে তৈরি করা হয়, যা অন্যান্য গতানুগতিক ওয়েবসাইট থেকে আলাদা। যেহেতু আমি অ্যামাজান নিয়ে কাজ করি, তাই অ্যামাজানের কাজ সম্পর্কে বলছি। অন্যান্য সাইটের কাজগুলোও প্রায় একই রকম। যখন আপনি অ্যামাজনের কোন প্রোডাক্ট প্রচার ও প্রসার এর জন্য একটি ওয়েব সাইট তৈরি করবেন এবং সেখানে আপনার সিলেক্ট করা প্রোডাক্টের পরিপূর্ণ বর্ণনাসহ যখন সেটা বিক্রির উদ্দেশ্যে দিবেন, তখন আপনার ওয়েবসাইটটি অ্যামাজন নিস সাইট হিসেবে কাজ করবে। যেমন স্বাস্থ্য, ফ্যাশন, টেকনোলজি ইত্যাদি। সাধারণত একটি নিশ সাইটে প্রতিটি পণ্যের জন্য আলাদা আলাদা কন্টেন্ট থাকে। নিস সাইটের জন্য যা দরকার সেগুলো হলো- ১. কিওয়ার্ড রিসার্চ, ২. একটি ডোমেইন বা নাম নির্বাচন ও হোস্টিং সেট আপ, ৩. ওয়েবসাইট তৈরি (ওয়ার্ডপ্রেসে করাটাই শ্রেয়), ৪. মান সম্মত কন্টেন্ট, ৫. ভাল মানের ব্যাকলিঙ্ক বিল্ডিং, ৬. সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং, ৭. প্রয়োজনীয় পেইজ সেট আপ, ৮. কাক্সিক্ষত কনভার্সন রেট।

ক্যারিয়ার : আপনার দৃষ্টিতে কোন কোন মার্কেট প্লেসে কাজ করা উচিত?
ওবায়েদুল ইসলাম : অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং জন্য বেশ কিছু মার্কেট প্লেস রয়েছে। প্রচলিত মার্কেট প্লেসগুলো হচ্ছে- অ্যামাজন অ্যাফিলিয়েট প্রোগ্রাম, ক্লিক ব্যাংক, ক্লিক শিওর, ক্লিক টু সেল, অফার ভোল্ট, জেবিজু, লাইভ স্টিমিং, সিপিএ এম্পায়ার, শেয়ার এ সেল, কমিশন জাংশন ইত্যাদি। আসলে সবাই সব মার্কেট প্লেসের জন্য সবাই পারফেক্ট না। তাই নতুনদের মার্কেট প্লেসে নির্বাচনের ক্ষেত্রে খুব সতর্ক থাকা উচিত। আমার মত হাজারো অ্যাফিলিয়েট মার্কেটারের মতে, অ্যামাজান অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং-ই সেরা।

ক্যারিয়ার : অ্যামাজান অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং কেন সেরা?
ওবায়েদুল ইসলাম : ১৯৯৪ সালে যাত্রা শুরু করার পর থেকে কেনাকাটার অনলাইন প্রচলনে অ্যামাজন বেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। অ্যামাজান অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং সেরা হওয়ার অনেকগুলো কারণ আছে। যেমন- অ্যামাজান হচ্ছে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ই-কমার্স প্লাটফর্ম, যেখানে সকালে ঘুম থেকে উঠে দাঁত ব্রাশ করা থেকে শুরু করে রাতে ঘুমাতে যাওয়ার নাইট ড্রেসটা পর্যন্ত পাওয়া যায়। এক কথায় এমন একটা জায়গা যেখানে সব আছে। এমন হাজারো প্রোডাক্ট আছে যেগুলো বছরের পর বছর ধরে বিক্রি হচ্ছে। অ্যামাজান সাইটটি আমেরিকানদের অত্যন্ত বিশ্বস্ত। ফলে শতকরা ৮০ জন আমেরিকান মানুষের অ্যামাজানে অ্যাকাউন্ট আছে এবং তারা নিয়মিত এখান থেকে পণ্য কিনে থাকে। বর্তমান পরিসংখ্যান অনুযায়ি, প্রতি মিনিটে এই সাইট থেকে সব ধরনের পণ্য মিলে ৮৬ হাজার ডলার বিক্রি হয়। ২ মিলিয়ন মার্কেটার এখানে কাজ করে। বর্তমান ইউজার সংখ্যা ৩০০ মিলিয়ন। প্রতিনিয়ত এর পরিমাণ বেড়েই চলেছে।

ক্যারিয়ার : বাংলাদেশে এই পেশার সম্ভাবনা কেমন?
ওবায়েদুল ইসলাম : বাংলাদেশে অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিংয়ের অপার সম্ভাবনা রয়েছে। আন্তরিকতা ও নিষ্ঠার সাথে কাজ করলে এই পেশার মাধ্যমে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা আয় করা সম্ভব। খ-কালীনের পাশপাশি এটাকে এখন পূর্ণাঙ্গ পেশা হিসেবেও নেয়া যায়। উদাহরণ হিসেবে, আমার অনেক ছাত্রছাত্রী যারা আগে এসইওতে কাজ করত, তারা অনেকেই আজ অ্যামাজন অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং করে সফলতা অর্জন করেছে। বাংলাদেশে এখন শুধু অ্যামাজান অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং না, পুরো ফ্রিলেন্সিংয়ের জয়জয়কার অবস্থা। ফ্রিলেন্সিংয়ে বাংলাদেশের অবস্থান ৩য় । ভালো অবস্থান সত্ত্বেও বাংলাদেশ এখনো অনেক পিছিয়ে। উন্নত দেশগুলো বাংলাদেশের চাইতে অনেক এগিয়ে। তাই শীর্ষ স্থানে পৌঁছাতে এখনো বাংলাদেশকে অনেক কাজ করতে হবে। এ ক্ষেত্রে এক পা দু’ পা করে বড় বড় প্রোজেক্টগুলোতে টিম হয়ে কাজ করলে ভালো ফল পাওয়া সম্ভব।

ক্যারিয়ার : এখান থেকে কেমন আয় করা সম্ভব?
ওবায়েদুল ইসলাম : অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং হচ্ছে একটি খুব দ্রুত এবং কম খরচে অনলাইনে টাকা উপার্জনের মাধ্যম। যেহেতু আপনাকে কোন পণ্য তৈরি করতে হচ্ছে না, শুধু আপনাকে যা করতে হবে তা হলো- ক্রেতার সাথে বিক্রেতার সম্পর্ক স্থাপন। আর আপনি আপনার মাধ্যমে যে পণ্য বিক্রি হবে সেই পণ্যের উপর কমিশন পাবেন। তবে অনলাইনের যে কোন সেক্টর এর আয়ই নির্ধারিত থাকে না। তবে নতুন অবস্থায় কম বেশি ৩০০ ডলার প্রতি মাসে আয় করা সম্ভব। বাকিটা নির্ভর করে ব্যক্তির পরিশ্রমের উপর।

ক্যারিয়ার : নতুনরা কোথায় এবং কিভাবে শিখবে?
ওবায়েদুল ইসলাম : দেশে এখন সরকারি ও বেসরকারিভাবে অনেক প্রতিষ্ঠানই অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিংয়ের উপর প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকে। সম্প্রতি কেউ কেউ অনলাইনেও প্রশিক্ষণ দিচ্ছে। এসব জায়গায় প্রশিক্ষণ নেয়া যেতে পারে। তবে নতুনরা যে কোন প্রতিষ্ঠান থেকে শেখার আগে আমি তাদের বলব- গুগল থেকে আগে ধারণা নেয়ার জন্য। তাহলে মেন্টর বা প্রশিক্ষক যা বলবে তা সহজে বুঝতে পারা যাবে। শেখার ক্ষেত্রে যারা শুধু জানে তাদের কাছ থেকে কাজ না শিখে যারা আয় করছে তাদের থেকে শেখাটা সবচেয়ে বেশি ফলপ্রসূ হবে বলে আমি মনে করি।

ক্যারিয়ার : আপনার পরামর্শ
ওবায়েদুল ইসলাম : অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিংয়ে কাজ করতে হলে ধৈর্য ধারণ করে লেগে থাকতে হবে। আমি প্রথম সেল পেয়েছিলাম ৪ মাস পর। আবার ৩ দিনে সেল করার অভিজ্ঞতাও আমার আছে। তাই বলছি শুধু কাজটাকে ভালোবেসে লেগে থাকুন। সফল আপনিও হবেন। ইন শা আল্লাহ।



 

Show all comments
  • shatil ৫ জুন, ২০১৬, ১০:০৪ এএম says : 0
    good job
    Total Reply(0) Reply
  • Abu Hanif ৭ মে, ২০১৭, ১১:৩১ পিএম says : 0
    Informative . Thanks Rabbi Vai .
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: বাংলাদেশে অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিংয়ের অপার সম্ভাবনা রয়েছে
আরও পড়ুন