Inqilab Logo

মঙ্গলবার ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

হজযাত্রা আল্লাহর সাথে বান্দার মিলন যাত্রা

আফতাব চৌধুরী | প্রকাশের সময় : ১১ জুলাই, ২০১৯, ১২:০৭ এএম

ইসলাম ধর্ম যে পাঁচটি স্তম্ভের উপর প্রতিষ্ঠিত তা হলো- ষ) কলিমা, ষ) নামাজ, ষ) রোজা, ষ) হজ্ব ও ষ) জাকাত। প্রত্যেক সাবালক মুসলমানের জন্য এই পাঁচ স্তম্ভের সংরক্ষণ অপরিহার্য কর্তব্য। ব্যতিক্রম শুধু হজ এবং জাকাতের ক্ষেত্রে। এ দুটি বিষয়ের অপরিহার্যতা নির্ভর করে আর্থিক সামর্থ্য এবং সচ্ছলতার উপর। কালিমা সজ্ঞানে পড়ে আল্লাহতা’লাকে এক এবং অদ্বিতীয় একমাত্র এবাদতের মালিক অন্তর দিয়ে বিশ্বাস করে তাঁরই উপাসনা করা এবং তাঁরই আদেশ ও নিষেধকে যথাযথভাবে পালন করা এবং হযরত মোহাম্মদ (দঃ)-কে নবী মেনে তাঁরই প্রবর্তিত পদ্ধতি অনুসারে জীবনযাপন করা ইসলামের বিধান। যে মানুষ এই কলিমা মুখে বলবে ও এর আনুষঙ্গিক শর্তাবলি মন দিয়ে বিশ্বাস করবে এবং আমলের মাধ্যমে তা প্রকাশ করবে, সে-ই মুসলমান। অন্যান্য অপরিহার্য কর্তব্য সমূহ যেমন-নামাজ দৈনিক পাঁচবার ফরজ, রোজা বছরে ১ চন্দ্রমাস ফরজ হজ্ব সারাজীবনে একবার ফরজ যদি সামর্থ্য অর্থাৎ আর্থিক সচ্ছলতা থাকে, জাকাত ফরজ বিত্তশালীদের উপর। তা হলে দেখা যাচ্ছে, ইসলামের এ পঞ্চভিত্তি প্রত্যেক মুসলমানের ব্যক্তিগত অপরিহার্য দায়িত্ব। যদি কোনো মুসলমান উপর্যুক্ত অপরিহার্য দায়িত্ব পালনে অপর মুসলমানকে স্বেচ্ছায় সহায়তা করে সে অবশ্যই সওয়াব প্রাপ্ত হবে। একজন মুসলমানের জীবনে নামাজের গুরুত্ব, রোজার গুরুত্ব, ফরজ হজ্বের গুরুত্ব, ফরজ জাকাতের গুরুত্ব সমভাবে প্রযোজ্য। কিন্তু অভিজ্ঞতায় দেখা যায়, যৎসামান্য দীনদরিদ্র মুসলমান ছাড়া বাকি অনেকেই হজযাত্রীদেরকে নিয়ে যেভাবে হুলস্থূল এবং হৈচে করেন, সেভাবে অন্যান্য ফরজসমূহ পালন করার ব্যাপারে গুরুত্ব দেন না।

হজ্ব একজন মুসলমানের ব্যক্তিগত ফরজ আমল। যদি কোনো সক্ষম মুসলমান ফরজ হজ্ব আদায় না করেন, তবে তিনি ব্যক্তিগতভাবে গুনাহগার হবেন। যেহেতু হজ্ব কার্য সমাধা করতে হাজীকে সৌদি আরব যেতে হয়, তাই এই ভ্রমণ সরকারের বিদেশ মন্ত্রকের আওতাধীন। বিশ্বের যে-কোনো দেশে মন্ত্রকের বিশেষ পরিকাঠামো আছে। যদি কোনো হজ্ব যাত্রী ইচ্ছা করেন তবে ব্যক্তিগত উদ্যোগে হজ্ব করতে পারেন। পবিত্র হজ্বকার্য সম্পাদন করতে কোনো হাজীকে হজ্ব কমিটির সহায়তা নিতেই হবে, তেমন কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। হজ্বকার্য সম্পন্ন করার জন্য তা কোনো শর্তও নয়। কিন্তু যেহেতু এই হজযাত্রা একটি পবিত্র কাজ, দুনিয়ার কোনো স্বার্থ এর মধ্যে জড়িত নয়, কাজেই জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে প্রত্যেক মানুষ হজযাত্রীগণকে অতিশয় সম্মানের চক্ষে দেখেন এবং অন্তর দিয়ে শ্রদ্ধাও করেন আর সৌদি সরকারের তো কথাই নেই, হাজীদের সেবায় তারা অহরহ সম্পূর্ণ নিবেদিত। লক্ষ লক্ষ হাজীদের মধ্যে একজনেরও হজ্বকার্য যেন কোনো প্রকারে বিঘ্নিত না-হয়, সেদিকে অতন্দ্র প্রহরীর মতো সে দেশের সরকার সচেষ্ট। আমাদের দেশেও এই হজ্বযাত্রীদের সহায়তার জন্য কমিটির সাথে সাথে আবালবৃদ্ধবনিতা প্রত্যেক মানুষ নিজেকে ব্যবহার করাকে গৌরবের কাজ মনে করে থাকেন। একজন হজ্বযাত্রী আল্লাহর মেহমান এবং আল্লাহ স্বয়ং মেজবান। এ কথাটা উপলব্ধি করার জন্য সর্বশক্তিমান আল্লাহর জাত ও সিফাত যেভাবে ক্বোরআন ও হাদিস শরিফে বিবৃত হয়েছে তার পুরো একিন থাকা একান্ত আবশ্যক। এজন্য একজন মুসলমানকে প্রয়োজনীয় পরিশ্রমের মাধ্যমে নির্ভেজাল একনি হাসিল করা চাই। মহানবী হযরত মোহাম্মদ(স.)-এর সাথে থেকে সাহাবাগণ তা হাসিল করেছিলেন একটানা আনুমানিক তেরো বছর পরিশ্রমের পর। অতএব হজ্ব-এর অন্তর্নিহিত তাৎপর্য, এর গম্ভীর, উপলব্ধি, হাজীর সঙ্গে হজ্বের আসল সম্পর্ক, আল্লাহর সঙ্গে হাজীর সম্পর্ক, আল্লাহর নবী (স.) ও তদীয় সুন্নতের সঙ্গে হাজীর সম্পর্ক-এসবের আধ্যাত্মিক অনুপ্রেরণা একজন হাজীকে হাসিল করা একান্ত দরকার। তবেই হজ্ব যাত্রা কষ্টকর হোক না কেন, তাতে থাকে শুধু আনন্দ আর আনন্দ। একজন বিবাহিত স্ত্রীলোক পিত্রালয়ে যেতে কতই না আনন্দ উপভোগ করে, অথচ শ্বশুরালয়ে যেতে কিছুটা হলেও ম্লান, বিষাদ কেন-না অধিক মায়ার পরিবেশ থেকে কম মায়ার পরিবেশে প্রত্যাবর্তন হচ্ছে। যখন একজন মুসলমান হজ্বযাত্রায় অধিক আনন্দিত হবে এবং আপনজন সবকিছুকে ত্যাগ করে আল্লাহর সান্নিধ্যলাভে ছুটবে, তখনই পাওয়ার আনন্দ ছেড়ে যাওয়া বা বিচ্ছেদের উপর প্রাধান্য পাবে।

হজ্ব কার্য মূলত এক ধর্মীয় আমল। এর মাধ্যমে পবিত্র কুরআন ও হাদিসের নির্দেশাবলী প্রতিফলিত হয়। অতএব হজ্ব কার্য যথাযথভাবে আদায় করতে অথবা তা পরিচালনা করতে যারা আগ্রহী, তাদের মধ্যে কুরআন হাদিসের জ্ঞান, খোদাভীরুতা ইত্যাদি থাকা আবশ্যক। আল্লাহর নিকট একজন হাজী কত সম্মানিত, কত দামি তার উপলব্ধি না থাকলে কেউই সঠিকভাবে হাজীদের সেবা করতে পারবেন না। কাজেই হজ্ব কমিটিসমূহে ধর্মপ্রাণ, জ্ঞানবান এবং খোদাভীরু মানুষের অন্তর্ভূক্তি হাজীগণের সুষ্ঠু খিদমতের জন্য হজ্ব কমিটির অবদানকে আরো বর্ধিত করতে সহায়ক হবে। আল্লাহ আমাদের সবাইকে লোক দেখানো সেবা থেকে হেফাজত করুন, সর্বপ্রকার বৈষয়িক ও পার্থিব লাভজনক মানসিকতা থেকে হেফাজত করুন এবং শুধু আল্লাহকে রাজি খুশি করার নিয়তে এখলাছের সজিত হাজী সাহেবগণের খিদমত করার তওফিক দান করুন। আমিন।

সাংবাদিক-কলামিস্ট



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ