পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
অর্থনৈতিক রিপোর্টার : অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেছেন, বাজেট উচ্চাভিলাষী ঠিক, তবে বাস্তব কথা হচ্ছে উচ্চাভিলাষী না হলে ওপরে ওঠা যায় না। তাই তিনি বাজেটকে জনমুখী ও বাস্তবায়নযোগ্য বলে দাবি করেছেন। অর্থমন্ত্রী রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রাকে ‘অবশ্যই উচ্চাভিলাষী’ উল্লেখ করে ৩০ শতাংশ অতিরিক্ত কর আদায়ের কার্যক্রম নিজেই শুরু করে সফল করার কথাও জানিয়েছেন। একই সঙ্গে মধ্যম আয়ের দেশে পৌঁছানোর বিষয়ে তিনি বলেন, বাজেট দিয়ে মধ্য আয়ের দেশ নয়, অগ্রগতি দিয়ে মধ্য আয়ের হওয়া সম্ভব। বিশ্বব্যাংক এটি নির্ধারণ করবে। জাতিসংঘ কমিটিও এটি জানাবে।
এদিকে বাজেটে কালো টাকা ব্যবহারের সুযোগ সম্পর্কে অর্থমন্ত্রী বলেন, এই সরকার যতদিন আছে ততদিন কালো টাকা সাদা করার আইন বলবৎ থাকবে। বর্তমানে নির্দিষ্ট পরিমাণ জরিমানা দিয়ে অপ্রদর্শিত অর্থ প্রদর্শনের সুযোগ রয়েছে। এটা নিয়ে অহেতুক প্রশ্ন করার কোনো সুযোগ নেই। এটা সাধারণ নিয়মে পরিণত হয়েছে। এছাড়া বাজেট নিয়ে বিএনপির প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে অর্থমন্ত্রী বলেন, এই মুহূর্তে বিএনপি কোনো দলই নয়। অর্থমন্ত্রী বলেন, বাজেটের ব্যাপারে সাধারণত দুই ধরনের বিশ্লেষণ পাওয়া যায়। একটি প্রতিক্রিয়াশীল বিশ্লেষণ, আরেকটি হচ্ছে প্রগতিশীল বিশ্লেষণ। বিএনপি আগের মতো এবারও বাজেট নিয়ে প্রতিক্রিয়াশীল মন্তব্য করছে। মূলত রাজনীতির প্রতি দায়িত্বশীল আচরণ না থাকার কারণেই তারা এমন মন্তব্য করে আসছে।
গতকাল (শুক্রবার) প্রস্তাবিত (২০১৬-১৭) অর্থবছরের বাজেটোত্তর সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন তিনি। রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী, পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মোস্তফা কামাল, তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এমএ মান্নান, প্রধানমন্ত্রীর অর্থ উপদেষ্টা ড. মশিউর রহমানসহ সরকারের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা উচ্চাভিলাষী কি নাÑসাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, অবশ্যই উচ্চাভিলাষী। আমি নিজেই বলেছি উচ্চাভিলাষী। গত বছরের রাজস্ব আদায় বেশ নিম্নমানের ছিল। কিন্তু এর আগের বছর দুই ডিজিটের বেশি ছিল। সাত বছর ধরে এ মন্ত্রণালয়ে আছি। সাত বছরে রাজস্ব আদায়ের ক্ষমতা বহুগুণে বাড়ানো হয়েছে। কয়েক হাজার লোক নিয়োগ করা হয়েছে। নতুন নতুন অফিস করা হচ্ছে। প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। এনবিআরে সক্ষমতা রয়েছে। এজন্য আরও অতিরিক্ত ৩০ শতাংশ কর আদায়ের প্রস্তাব করেছি। কিছু কাজ করতে হবে। জুন মাস থেকে সে কার্যক্রম শুরু হবে। আমি নিজেই এ কার্যক্রম শুরু করব এবং এটা সফল করব।
রাজস্ব আদায়ে বিশ্বের সবগুলো দেশ থেকেই বাংলাদেশ তুলনামূলক পিছিয়ে রয়েছে বলে মন্তব্য করে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেছেন, ভালো সেবা পেতে হলে পর্যাপ্ত রাজস্ব দিতে হবে। বাজেটকে কেন্দ্র করে একটু রাজস্ব বেশি দিলে মন্দ হয় না। অর্থমন্ত্রী বলেন, আমরা পৃথিবীর সব দেশের থেকে কম রাজস্ব আদায় করি। একটি না দুটি দেশ আমাদের নিচে আছে। সরকার কী সেবা দিল তা নিয়ে কথা বলি, কিন্তু ভালো সেবার জন্য যে পর্যাপ্ত রাজস্ব দরকার তা নিয়ে মাথা ঘামাই না। আর সেজন্য একটু রাজস্ব বেশি দিলে মন্দ হয় না।
প্রস্তাবিত ২০১৬-১৭ অর্থবছরে বাজেটে ২ লাখ ৪২ হাজার ৭৫২ কোটি টাকা রাজস্ব খাত থেকে সংগ্রহ করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে, যা চলমান ২০১৫-১৬ অর্থবছরের লক্ষ্যমাত্রা তুলনায় ৬৫ হাজার ৩৫২ কোটি টাকা বেশি। এছাড়া এনবিআর বহির্ভূত কর আদায়ের লক্ষ্যমাত্র নির্ধাণ করা হয়েছে ৭ হাজার ২৫০ কোটি টাকা। কর-বহির্ভূত রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৩২ হাজার ৩৫০ কোটি টাকা।
করপোরেট কর কমিয়ে উৎসে কর বাড়ানো হয়েছে, এতে কোনও লাভ হয়েছে কি না জানতে চাইলে অর্থমন্ত্রী বলেন, ব্যবসায়ীরা এ বিষয়ে সন্তুষ্ট। সুতরাং উৎসে কর বাড়ানোর পরিকল্পনা যৌক্তিক। একই সঙ্গে দেশীয় শিল্পের ক্ষতি হবে এমন কোনো কিছু বাজেটে থাকবে না বলে উল্লেখ করেন তিনি।
গত অর্থবছরে ৮৭টি পণ্যের দাম কমানো হলেও সত্যিই দাম কমেছে কি নাÑএমন প্রশ্নের জবাবে মুহিত বলেন, গত সাত বছর ধরে পণ্যের দাম বাড়েনি। তেলের দাম কমানোর বিষয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, এটা বিশ্ববাজারের ওপর নির্ভর করে। অনেক কিছু সমন্বয় করেই এটা নির্ধারণ করতে হয়। তিনি বলেন, ইতোমধ্যে বিশ্ববাজারে তেলের দাম বেড়েছে। আমরা বেশি কমালে এখানটায় বিপাকে পড়তাম। তাই বিশ্ববাজারের সাথে সমন্বয় করেই এগোনো হবে। এটা একটি চলমান প্রক্রিয়া।
মোবাইলে কথা বলার ওপর ট্যাক্স বসানোর বিষয়ে প্রবীণ এ মন্ত্রী বলেন, আগে সিমের মাধ্যমে যে ট্যাক্স আসতো এখন তা আসে না। ১৩ কোটি মানুষের মোবাইল আছে। এর বেশি হবে না। তাই এখান থেকে আর বেশি আয় সম্ভব না। তাই কথা বলার ওপর ১ শতাংশ বেশি ট্যাক্স দিতে কেউ দ্বিমত করবেন না। এর মাধ্যমে একটু বেশি রাজস্ব আয় করতে পারব।
বাজেট নারীর ক্ষমতায়নের বিষয়কে উল্লেখ করে অর্থমন্ত্রী বলেন, এখনও মেয়েদের অর্থনৈতিক কর্মকা-ে আমাদের দেশে ৫১ শতাংশ নারী। বাজেটে তাদের সেরকম শেয়ার। বাস্তবে সেরকম হয় না। শ্রমশক্তিতে তারা সমান নয়। বাজেটের ৩০ শতাংশ তাদের জন্য সবাই গ্রহণ করবেন।
বাজেটকে বাস্তবায়নযোগ্য আখ্যা দিয়ে অর্থমন্ত্রী বলেছেন, বাজেটের সঙ্গে অনেকে দেশকে মধ্য আয়ের বিবেচনা করছেন, কিন্তু বাজেট দিয়ে মধ্য আয়ের দেশ নয়, অগ্রগতি দিয়ে মধ্য আয়ের হওয়া সম্ভব। মন্ত্রী বাজেট উত্থাপনের পর বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত নেতিবাচক প্রতিবেদনের সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, বাজেটের সঙ্গে মধ্য আয়ের দেশ হওয়ার সুযোগ নেই। বিশ্বব্যাংক এটি নির্ধারণ করবে। ২০১৮ সালে তারা মিটিং করে আমাদের বিষয়ে আলোচনা করবে। এছাড়া জাতিসংঘ কমিটিও এটি জানাবে। সব মিলিয়ে ২০২১ সালে এ ধরনের ঘোষণা আসবে।
বাজেট নিয়ে বিএনপির প্রতিক্রিয়ার বিষয়ে অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদও একই সুরে মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, বাজেট নিয়ে বিএনপির প্রতিক্রিয়া সত্যিই দুঃখজনক। বাজেট হয়েছে প্রগতিশীল ধারায় আর বিএনপি মন্তব্য করেছে প্রতিক্রিয়াশীল ধারায়।
এই বাজেটটি গণমুখী দাবি করে তোফায়েল আহমেদ আরো বলেন, বিএনপির যিনি বা যে নেত্রী বাজেট নিয়ে এ এমন মন্তব্য করেছেন, তিনি হয়তো বাজেট বক্তৃতা শোনেননি অথবা পড়েননি। অনেকেই বলেন, বাজেট উচ্চাভিলাষী। বাস্তব কথা হচ্ছে উচ্চাভিলাষী না হলে ওপরে ওঠা যায় না। যেমন, বঙ্গবন্ধু দেশ স্বাধীনের স্বপ্ন দেখেছিলেন বলেই বাংলাদেশ পেয়েছি। তখন অনেকেই বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নকে উচ্চাভিলাষী বলে মন্তব্য করেছিলেন। বাজেট নিয়ে বিভিন্ন সংস্থার নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, অনেক সংস্থা আছে যারা গবেষণা করে। তাদের অনেক কিছইু ভালো লাগে না। আমাদেরকে ছোট করে। প্রত্যেকটা বাজেটের সময় বাস্তবায়নযোগ্য নয় বলছে। অথচ আমরা অনেক এগিয়েছি। প্রস্তাবিত বাজেটকে বাস্তবায়নযোগ্য বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী বলেন, দেশে জমি কমলেও খাদ্য উদ্বৃত্ত আছে। একই সঙ্গে দানাদার খাদ্যই নয়, আমার শাক-সব্জিও রপ্তানি করছি। তিনি বলেন, ‘পেট ঠা-া তো জগৎ ঠা-া’Ñসেখানটা ঠিক রেখে অর্থনীতিকে গতিশীল করছি। বিএনপির প্রতিক্রয়া সম্পর্কে মতিয়া চৌধুরী বলেন, যে রি-অ্যাকশন আমাদের পেছনে টানবে তা প্রতিক্রিয়াশীল। কাজের ক্ষেত্র তৈরি হয়েছে। সবকিছুতেই নারীরা এগিয়েছে। এটাই প্রগতিশীলতার লক্ষণ।
এক সাংবাদিকের প্রশ্নে অর্থমন্ত্রী স্বীকার করেন, সরকার গত ৬ বছরে কর্মক্ষম সবাইকে চাকরি দিতে পারেনি। তবে বর্তমান সরকারের সময় কর্মসংস্থানের তথ্য-উপাত্ত তুলে ধরে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, আমরা মনে হয় কর্মসংস্থানে আমরা টার্গেট অনুযায়ী পিছিয়ে নেই। গত দুই বছরে ১৩ লাখ জনবলের কর্মসংস্থান হয়নি পরিসংখ্যান ব্যুরোর এই তথ্য যথাযথ নয় বলে উল্লেখ করেন আহম মুস্তফা কামাল। তিনি বলেন, প্রথমবার কোয়াটারলি গবেষনা করে তারা এই রিপোর্ট দিয়েছে। যা পরবর্তী কোয়ার্টারেই কমেছে। গত ৫ বছরের পরিসংখ্যান তুলে ধরে প্রতিবছরই দেশে কর্মসংস্থান বাড়ছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
জিডিপি প্রবৃদ্ধি লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের বিষয়ে আহম মুস্তফা কামাল বলেন, ৭ দশমিক ২ অর্জনে বিনিয়োগ বাড়াতে হবে ঠিক। তবে, আমরা কিন্তু ৭ দশমিক শূন্য ৫ প্রবৃদ্ধি অর্জন করে দেখিয়েছি। একই সঙ্গে আমাদের বিনিয়োগ কিন্তু কমেনি। এছাড়া শুধু বিনিয়োগ বাড়নোই নয়; মাথাপিছু উৎপাদনশীলতা বাড়াতে হবে। এর উপরও প্রবৃদ্ধি অকেটা নির্ভর করে। মাথাপিছু উৎপাদনশীলতা বর্তমানে ১০ শতাংশ আছে। ২০২১ সালে এটা ২০ শতাংশে পৌঁছাবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু বলেন, নিন্দুকেরা যাই বলুক না কেন দেশ সমঋদ্ধির সোপানে, উন্নয়নের মহাসড়কে রয়েছে। জঙ্গী দমন ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের চ্যালেঞ্জ নিয়ে বর্তমান সরকার এগিয়ে যাচ্ছে। তিনি বলেন, দেশ এখন ৭ শতাংশের উপরে প্রবৃদ্ধি ধরে রেখেছে। নারীর ক্ষমতায়ন হয়েছে। একই সঙ্গে মাথাপিছু আয় বেড়েছে, খাদ্যে সক্ষমতা বেড়েছে এবং প্রাণী সম্পদে সমৃদ্ধ হয়েছে। সর্বোপরি দেশের সব সূচকই বলছে, দেশ ভারসাম্যপূর্ণ সামষ্টিক অর্থনীতির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।
উল্লেখ্য, গত বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত ২০১৬-১৭ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট পেশ করেন। এবার উন্নয়ন ও অনুন্নয়ন মিলে বাজেটের আকার ৩ লাখ ৪০ হাজার ৬০৫ কোটি টাকা প্রস্তাব করা হয়েছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।