পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
হাসান সোহেল/আজিবুল হক পার্থ/ইখতিয়ার উদ্দিন সাগর : রাজস্ব আদায়ের উচ্চাভিলাষী লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে জাতীয় সংসদে ২০১৬-১৭ অর্থবছরের জাতীয় বাজেট উপস্থাপন করেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকার। বর্তমান সরকারের দ্বিতীয় মেয়াদের এটা তৃতীয় বাজেট। ৩ লাখ ৪০ হাজার ৬০৫ কোটি টাকার মেগা প্রকল্পের প্রস্তাবিত এই মেগা বাজেটের প্রায় ২৯ শতাংশই ঘাটতি এবং ঋণনির্ভর। বাজেটে সামগ্রিক ঘাটতির পরিমাণ হচ্ছে ৯৭ হাজার ৮৫৩ কোটি টাকা। অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত গতকাল জাতীয় সংসদে ২০১৬-১৭ অর্থবছরের বিশালাকৃতির এ প্রস্তাবিত জাতীয় বাজেট পেশ করেন। একই সঙ্গে চলতি ২০১৫-১৬ অর্থবছরের সংশোধিত বাজেট ও অর্থবিল ২০১৬ সংসদে উপস্থাপন করেন তিনি।
প্রস্তাবিত বাজেটে টেকসই উন্নয়ন, প্রবৃদ্ধি অব্যাহত রাখা, মধ্য আয়ের দেশে চূড়ান্ত পদার্পণের লক্ষ্যে সরকারের সাফল্য ও ব্যাপক কর্মযজ্ঞের কথা বলা হয়। অথচ মোটা দাগে উপেক্ষিত হয়েছে প্রান্তিক কৃষক ও মধ্যবিত্ত জনগোষ্ঠী। বাজেটে জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়ে যাবে অনেক। অন্যদিকে ব্যবসায়ীদের প্রতি বিশেষ নমনীয়তা দেখানো হয়েছে। কিন্তু কৃষিতে কমানো হয়েছে বরাদ্দ। প্রস্তাবিত বাজেটে মোট অভ্যন্তরীণ সম্পদ আহরণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ২ লাখ ৪২ হাজার ৭৫২ কোটি টাকা। এর মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড নিয়ন্ত্রিত রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২ লাখ ৩ হাজার ১৫২ কোটি টাকা। এর ৭১ শতাংশেরও বেশি আসবে ভ্যাট ও আয়কর খাত থেকে। রাজস্ব আদায়ে লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে প্রস্তাবিত বাজেটে কর ও ভ্যাটের আওতা বাড়ানো হয়েছে। এ কারণেই বিভিন্ন ক্ষেত্রে ভ্যাট বাড়ানোয় জনগণের ওপর করের বোঝা ও সম্পদ বণ্টনে বৈষম্য বাড়বে।
অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত উন্নয়নের ধারাবাহিকতা রক্ষায় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের ইতিহাসে ‘সংখ্যার হিসেবে’ বিশাল আকৃতির। গত বারের চেয়ে এবার বাজেটের আকার বেড়েছে ১৪ দশমিক ৪২ শতাংশ বা ৪৫ হাজার ৫০৫ কোটি টাকা। তবে এবারের বাজেটে বেসরকারি বিনিয়োগকে আকৃষ্ট করতে এবং উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে দ্রুত সময়ের মধ্যে বাস্তবায়নের জন্য মেগা প্রকল্পের জন্য পৃথক বাজেট ঘোষণা করা হয়েছে। ১০টি মেগা প্রকল্পের মধ্যে পদ্মাসেতু ও মেট্রোরেলকে গুরুত্ব দিয়ে ৮ প্রকল্পে ২০ হাজার ৫১৮ কোটি ৫১ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
এই বাজেট দৈর্ঘ্যে বড়, আকারে বিরাট এবং প্রতিশ্রুতিতেও বিশাল। গত ৭ বছরের উন্নয়নের খতিয়ান দিতে গিয়ে ৯০ পৃষ্ঠার একটি দীর্ঘ বাজেট বক্তৃতা দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী। প্রায় সাড়ে ৩ লাখ কোটি টাকার বড় আকারের বাজেট তৈরি করেছেন। সবাইকে খুশি করতে প্রতিবারের মতো পৃষ্ঠার পর পৃষ্ঠা প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছে। দেশের বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদরা এ বাজেটকে বড় ঘাটতির বিশাল বাজেট বলে উল্লেখ করেছেন। তাদের মতে, বাজেট বাস্তবায়ন, লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী রাজস্ব আদায় ও কাক্সিক্ষত বৈদেশিক সহায়তা অর্জন করা উচ্চাভিলাষী এ বাজেটের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ড. এবি মির্জা আজিজুল ইসলাম প্রস্তাবিত বাজেটের অর্থায়নকে বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছেন। একই অভিমত ব্যক্ত করেন এফবিসিসিআই’র সাবেক সভাপতি মির নাসির হোসেন। ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেছেন, বাজেট বাস্তবায়নের পথ দেখানো হয়নি। আর প্রতিষ্ঠানিক সক্ষমতা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে।
প্রতিবছরের মতো এবারও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে কালো ব্রিফকেস নিয়ে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বিকেলে সংসদ অধিবেশনে প্রবেশ করেন। অতপর ৩টা ৪৩ মিনিটে স্পীকারের অনুমতি নিয়ে জাতীয় সংসদে ২০১-১৭ অর্থ বছরের এ প্রস্তাবিত জাতীয় বাজেট পেশ করেন। একই সঙ্গে চলতি ২০১৫-১৬ অর্থবছরের সংশোধিত বাজেট ও অর্থবিল ২০১৬ সংসদে উপস্থাপন করেন তিনি। এর আগে জাতীয় সংসদের মন্ত্রিপরিষদ কক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার বৈঠকে বাজেট প্রস্তাব পাস করা হয়। পরে প্রেসিডেন্ট আবদুল হামিদ প্রস্তাাবত জাতীয় বাজেট এবং ২০১৫-১৬ অর্থবছরের সংশোধিত বাজেট জাতীয় সংসদে উপস্থাপনের জন্য সম্মতি জ্ঞাপন করেন।
এবার নিয়ে জাতীয় সংসদে মোট দশম বার ও টানা অষ্টম বারের মতো বাজেট পেশ করলেন আবুল মাল আবদুল মুহিত। বাজেট প্রস্তাবনায় অর্থমন্ত্রী বলেন, গত জানুয়ারি মাসে আমি ৮৩ বছরে পদার্পণ করেছি। আজকের প্রস্তাবিত বাজেটটিসহ আমি এ দেশের মোট ১০টি বাজেট উপস্থাপন করছি। এর মধ্যে আটটিই হচ্ছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বের সরকারের সময়ে। এ ছাড়া ৩৪ বছর আগে সাবেক প্রেসিডেন্ট হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ আমাকে দুটি বাজেট উপস্থাপনের সুযোগ দিয়েছিলেন। এটি ব্যক্তিগতভাবে আমার জন্য অত্যন্ত খুশি ও গৌরবের বিষয়। বাজেটের বিষয়ে অর্থমন্ত্রী আজ শুক্রবার বিকেল ৪টায় রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেবেন।
প্রস্তাবিত বাজেটে টেকসই উন্নয়ন, প্রবৃদ্ধি অব্যাহত রাখা, মধ্য আয়ের দেশে চূড়ান্ত পদার্পণের লক্ষ্যে সরকারের সাফল্য ও ব্যাপক কর্মযজ্ঞের কথা বলেও মোটা দাগে উপেক্ষিত হয়েছে প্রান্তিক ও মধ্যবিত্ত জনগোষ্ঠী। বাজেটে জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়ে যাবে অনেক। অন্যদিকে ব্যবসায়ীদের প্রতি বিশেষ নমনীয়তা দেখানো হয়েছে বাজেটে। তবে এবারের বাজেটে ৮ মেগা প্রকল্পে ২০ হাজার ৫১৮ কোটি ৫১ লাখ টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। যা বাজেটের অন্যতম চমক বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। পদ্মাসেতু নির্মান প্রকল্পের জন্য বাজেটে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৬ হাজার ২৬ কোটি ৪৮ লাখ টাকা। গত বাজেটে বরাদ্দ ছিল ৩ হাজার ৫৯২ কোটি ০৫ লাখ টাকা। প্রকল্পের মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ২৮ হাজার ৭৯৩ কোটি ৩৮ লাখ টাকা। এরই মধ্যে প্রকল্পের ৩৩ শতাংশ আর্থিক অগ্রগতি হয়েছে। ২০২০ সালের মধেই প্রকল্পের কাজ সম্পন্ন হবে।
ঢাকার যানজট নিরসনে ২০ দশমিক ১ কিলোমিটার দীর্ঘ মেট্রোরেল প্রকল্পে এবারের বাজেটে ২ হাজার ২২৭ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। মৈত্রী সুপার থার্মাল পাওয়ার প্রতল্প বা রামপাল প্রকল্পে এবারের বাজেটে ২ হাজার ৪০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রয়েছে। দেশের ক্রমবর্ধমান বিদ্যুৎ চাহিদা মেটাতে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্পে ৪৬৬ কোটি ৮১ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। ঢাকা-ভাঙ্গা ও ভাঙ্গা-যশোর রেললিংক বাস্তবায়ন প্রকল্পে ৬ হাজার ২৬ কোটি ৪৮ লাখ টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। পদ্মাসেতু ও রেলসেতু একই দিনে উদ্বোধন করতে চায় সরকার। দোহাজারি থেকে রামু হয়ে কক্সবাজার এবং রামু থেকে মিয়ানমারের কাছে গুনদুম পর্যন্ত সিঙ্গেল লাইন ডুয়েলগেজ ট্র্যাক নির্মাণ প্রকল্পে প্রস্তাবিত বাজেটে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৬৩১ কোটি ৭৫ লাখ টাকা। সার্ভে ও পরামর্শ নিয়োগে এই অর্থ বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। একই সঙ্গে মাতারবাড়ী আল্ট্রা সুপার ক্রিটিক্যাল কোল ফায়ার্ড পাওয়ার প্রকল্পে এবারের বাজেটে এই প্রকল্পে ২ হাজার ৪০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এছাড়া পায়রা গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণের লক্ষ্যে বাজেটে এই প্রকল্পে ২০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে।
প্রস্তাবিত বাজেটে মূল্যস্ফীতি ৫ দশমিক ৮ শতাংশে নামিয়ে আনার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। মূল্যস্ফীতি এর মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখারও ঘোষণা দেন তিনি। বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেল ও খাদ্য পণ্যের মূল্য কমে যাওয়ায় মূল্যস্ফীতির লক্ষ্য কমিয়ে আনতে সহযোগিতা করেছে বলে বাজেট বক্তৃতায় উল্লেখ করেন অর্থমন্ত্রী। আগামী বছর আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলসহ পণ্যমূল্য কমার সম্ভবনা রয়েছে। ইতোমধ্যে অভ্যন্তরীণ বাজারে জ্বালানি তেলের মূল্য কিছুটা কমানো হয়েছে। যা খাদ্য বহির্ভূত মূল্যস্ফীতি কমাতে ভূমিকা রাখবে। অন্যদিকে কৃষিতে ধারাবাহিক প্রবৃদ্ধির সম্ভাবনা রয়েছে। এছাড়া অভ্যন্তরীণ সরবরাহ পরিস্থিতিরও ধারাবাহিক উন্নতি হচ্ছে। এসবই মূল্যস্ফীতি সহনীয় পর্যায়ে রাখবে বলে মনে করেন অর্থমন্ত্রী। চলতি অর্থবছরে অর্থনীতির অন্যতম প্রধান এই সূচক ৬ দশমিক ২ শতাংশে নামিয়ে আনার ঘোষণা দিয়েছিলেন অর্থমন্ত্রী। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সর্বশেষ তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, এপ্রিল শেষে এই হার দাঁড়িয়েছে ৬ দশমিক শূন্য ৪ শতাংশ।
মূল্যস্ফীতি কমিয়ে আনায় বাড়বে বিনিয়োগ। আদায় হবে রেকর্ড পরিমাণ রাজস্ব। কিন্তু এসব প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন কীভাবে হবে, তার সঠিক পরিকল্পনা বাজেটে নেই। যদিও বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী চলতি অর্থবছরের শুরুতে ব্যক্তিখাতের বিনিয়োগ কিছুটা স্থবিরতার কথা উল্লেখ করেন। কিন্তু পরবর্তীতে ব্যক্তিখাতে ঋণ প্রবাহ, আমদানি-রপ্তানি, মূলধনি যন্ত্রপাতির আমদানি ঋণপত্র খোলা, ও নিষ্পত্তি এবং সরাসরি বিদেশী বিনিয়োগ অনেকখানি বেড়েছে। যা ব্যক্তিখাতের বিনিয়োগ বৃদ্ধির ইঙ্গিত বহন করছে। একই সঙ্গে অবকাঠামোখাতে চলমান কার্যক্রম, অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা এবং প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কারের পাশাপাশি প্রত্যাশিত রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বিনিয়োগ পরিবেশকে স্বাভাবিক করবে এবং ব্যক্তিখাতের বিনিয়োগ চাঙ্গা করবে বলে বাজেট বক্তৃতায় উল্লেখ করা হয়।
প্রস্তাবিত বাজেটে অর্থমন্ত্রী সবাইকে খুশি করতে চেয়েছেন। প্রায় সব খাতেই দিয়েছেন নানা ধরনের কর ছাড়ের সুবিধা। আবার খানিকটা রবিনহুডের ভূমিকাও নিতে চেয়েছেন অর্থমন্ত্রী। আগের বছরের মতো বড়লোকদের কাছ থেকে অর্থ নিয়ে গরিবদের মাঝে বিলানোর মতো করে বেশি সম্পদশালীদের ওপর অতিরিক্ত কর বসানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। তবে বড় সখ্য দেখিয়েছেন কালোটাকার মালিকদের ওপর। এ নিয়ে অর্থমন্ত্রী বাজেট বক্তৃতায় কোন কথাই বলেননি। তাই বিগত দিনের মতোই নির্ধারিত করের অতিরিক্ত ১০ শতাংশ জরিমানায় কালো টাকা বিনিয়োগের সুযোগ বহাল থাকছে। কালোটাকার মালিকদের সঙ্গে এই সখ্য যে রাজনীতিতে এক ধরনের সমঝোতা, তা অর্থমন্ত্রী ৭ বছর বছর আগেই প্রথম বাজেটের সময় বলেছিলেন। বার বার সমঝোতা না করার ঘোষণা দিয়েও আবার সমঝোতা করলেন তিনি। যদিও তিনি বিভিন্ন সময়ে মেনে নিয়েছেন যে, কালো টাকা বিনিয়োগের সুযোগ আগে অনেক দেওয়া হলেও কখনোই তেমন ফল পাওয়া যায়নি।
প্রস্তাবিত বাজেটে সামাজিক নিরাপত্তা ও ভর্তুকী খাতে বরাদ্দ বাড়ানো হয়েছে। পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপ (পিপিপি) নিয়ে অর্থমন্ত্রীর বিশেষ কোন বক্তব্য না থাকলেও প্রস্তাবিত বাজেটে অর্থমন্ত্রী পিপিপিতে ২ হাজার কোটি টাকার বরাদ্দ রাখার কথা জানান।
প্রস্তাবিত বাজেটে মোট অভ্যন্তরীণ সম্পদ আহরণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ২ লাখ ৪২ হাজার ৭৫২ কোটি টাকা। এর মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড নিয়ন্ত্রিত রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা হচ্ছে ২ লাখ ৩ হাজার ১৫২ কোটি টাকা। এর ৭১ শতাংশেরও বেশি আসবে ভ্যাট ও আয়কর খাত থেকে। রাজস্ব আদায়ে লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে প্রস্তাবিত বাজেটে কর ও ভ্যাটের আওতা বাড়ানো হয়েছে। আর বিভিন্ন ক্ষেত্রে ভ্যাট বাড়ানোয় জনগণের ওপর করের বোঝা ও সম্পদ বণ্টনে বৈষম্য বাড়বে। তারপরও সব মিলিয়ে, সরকারের প্রতি জনগণকে আস্থায় রাখতে একটি জনতুষ্টিমূলক বাজেটই দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। ব্যয় বাড়িয়েছেন। ব্যয়ের সঙ্গে সংগতি রেখে বড় আয়েরও পরিকল্পনা নিয়েছেন।
বাজেট ২০১৬-১৭
প্রস্তাবিত বাজেটের মোট আকার বা ব্যয়ের পরিমাণ ধরা হয়েছে ৩ লাখ ৪০ হাজার ৬০৫ কোটি টাকা। এটা জিডিপির ১৭ দশমিক ২ শতাংশ। এবারের প্রস্তাবিত বাজেট বিদায়ী অর্থবছরের মূল বাজেটের চেয়ে ৪৫ হাজার ৫০৫ কোটি টাকা এবং সংশোধিত বাজেটের চেয়ে ৭৬ হাজার ৪০ কোটি টাকা বেশি। চলতি ২০১৫-১৬ অর্থবছরে মূল বাজেটের আকার ছিল ২ লাখ ৯৫ হাজার ১০০ কোটি টাকা।
নতুন বাজেটে আগামী অর্থবছরের জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৭ দশমিক ২ শতাংশ। বিদায়ী অর্থবছরের বাজেটে এটা ৭ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছিল। এ ছাড়া বার্ষিক গড় মূল্যস্ফীতির হার নির্ধারণ করা হয়েছে ৫ দশমিক ৮ শতাংশ।
সম্পদ আহরণ, ঘাটতি ও অর্থায়ন
প্রস্তাবিত বাজেটে মোট অভ্যন্তরীণ সম্পদ আহরণের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২ লাখ ৪২ হাজার ৭৫২ কোটি টাকা। এটা চলতি অর্থবছরের মূল বাজেটের চেয়ে ৩৪ হাজার ৩০৯ কোটি টাকা এবং সংশোধিত বাজেটের চেয়ে ৬৫ হাজার ৩৫২ কোটি টাকা বেশি। চলতি অর্থবছরের মূল বাজেটে এ লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২ লাখ ৮ হাজার ৪৪৩ কোটি টাকা।
অভ্যন্তরীণ সম্পদ আহরণের বাইরে প্রস্তাবিত বাজেটে মোট ঘাটতির পরিমাণ হচ্ছে ৯৭ হাজার ৮৫৩ কোটি টাকা। এটা জিডিপির ৫ শতাংশ। আগামী অর্থবছরে রাজস্ব আদায়ে লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত না হলে পরবর্তীতে ঘাটতি আরও বেড়ে যাবে। বিদায়ী অর্থবছরের মূল বাজেটে মোট ঘাটতির পরিমাণ ছিল ৮৬ হাজার ৬৫৭ কোটি টাকা। সংশোধিত বাজেটে ঘাটতি ৫০৮ কোটি টাকা বেড়েছে।
বাজেট ঘাটতি মূলত পূরণ করা হবে অভ্যন্তরীণ ব্যাংক ব্যবস্থা ও সঞ্চয়পত্র এবং বৈদেশিক ঋণ ও অনুদান থেকে। এর মধ্যে বৈদেশিক ঋণ বাবদ ৩৮ হাজার ৯৪৭ কোটি টাকা (চলতি অর্থবছরে এ খাতে ছিল ৩২ হাজার ২৩৯ কোটি টাকা), বৈদেশিক অনুদান বাবদ ৫ হাজার ৫১৬ কোটি টাকা (চলতি অর্থবছরে এ খাতে ছিল ৫ হাজার ৮০০ কোটি টাকা), ব্যাংকিং খাত থেকে ৩৮ হাজার ৯৩৮ কোটি টাকা (চলতি অর্থবছরে এ খাতে ছিল ৩৮ হাজার ৫২৩ কোটি টাকা) ও ব্যাংকবহির্ভূত খাত থেকে ২২ হাজার ৬১০ কোটি টাকা (চলতি অর্থবছরে এ খাতে ছিল ১৮ হাজার কোটি টাকা) নেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে বাজেটে।
ব্যাংকবহির্ভূত খাতের মধ্যে সঞ্চয়পত্র খাত থেকে ১৯ হাজার ৬১০ কোটি টাকা (চলতি অর্থবছরে এ খাতে ছিল ১৫ হাজার কোটি টাকা) ও অন্যান্য খাত থেকে ৩ হাজার কোটি টাকা (চলতি অর্থবছরে এ খাতে ছিল ৩ হাজার কোটি টাকা) নেওয়া হবে। সংশোধিত বাজেটে সঞ্চয়পত্র খাত থেকে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১৩ হাজার কোটি টাকা অধিক ঋণ নেওয়া হয়েছে।
রাজস্ব বোর্ড বহির্ভূত এবং কর ব্যতীত প্রাপ্তি
প্রস্তাবিত বাজেটে রাজস্ব বোর্ড বহির্ভূত রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৭ হাজার ২৫০ কোটি টাকা। বিদায়ী অর্থবছরে এ খাতে আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৫ হাজার ৮৭৪ কোটি টাকা। সংশোধিত বাজেটে এ খাতে ৫ হাজার ৪০০ কোটি টাকা আয় দেখানো হয়েছে।
রাজস্ব বোর্ড বহির্ভূত খাতের মধ্যে আগামী অর্থবছরে নন-জুডিশিয়াল স্ট্যাম্প বিক্রি খাতে ৪ হাজার ২৬৯ কোটি টাকা, যানবাহন কর খাতে ১ হাজার ৭৭০ কোটি টাকা, ভূমি রাজস্ব খাতে ১ হাজার ৫৯ কোটি টাকা, মাদক শুল্ক বাবদ ১৫০ কোটি টাকা আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।
অন্যদিকে প্রস্তাবিত বাজেটে কর ব্যতীত প্রাপ্তির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৩২ হাজার ৩৫০ কোটি টাকা। বিদায়ী অর্থবছরে এ খাতে প্রাপ্তির পরিমাণ ধরা হয়েছিল ২৬ হাজার ১৯৯ কোটি টাকা। সংশোধিত বাজেটে এ খাতে ২২ হাজার কোটি টাকা আয় দেখানো হয়েছে।
কর ব্যতীত বিভিন্ন প্রাপ্তির মধ্যে কর ব্যতীত অন্যান্য রাজস্ব ও প্রাপ্তি খাতে ১২ হাজার ৩৩১ কোটি টাকা, লভ্যাংশ ও মুনাফা খাতে ৭ হাজার ৯২২ কোটি টাকা, প্রশাসনিক ফি বাবদ ৪ হাজার ৮৩৮ কোটি টাকা, প্রতিরক্ষা বাবদ প্রাপ্তি ২ হাজার ৩৪৪ কোটি টাকা, রেলপথ খাতে ১ হাজার ৩৫০ কোটি টাকা, সুদ বাবদ ৮০০ কোটি টাকা,ম টোল ও লেভী বাবদ ৭৫৮ কোটি টাকা, সেবা বাবদ প্রাপ্তি ৬০২ কোটি টাকা, অ-বাণিজ্যিক বিক্রয় খাতে ৫৪৪ কোটি টাকা, জরিমানা-দন্ড ও বাজেয়াপ্তকরণ খাতে ৩৫৬ কোটি টাকা, ডাক বিভাগ থেকে ৩০৬ কোটি টাকা, ভাড়া ও ইজারা বাবদ ১২৯ কোটি টাকা এবং মূলধন রাজস্ব খাতে ৬৪ কোটি টাকা আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।
কোন খাতে কত ব্যয়
উন্নয়ন ব্যয় : প্রস্তাবিত বাজেটে উন্নয়ন খাতে মোট ১ লাখ ১৭ হাজার ২৭ কোটি টাকা ব্যয়ের প্রস্তাব করা হয়েছে। এর মধ্যে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচী (এডিপি) খাতে ১ লাখ ১০ হাজার ৭০০ কোটি টাকা ও এডিপি বহির্ভূত খাতে ৪ হাজার ১৪৭ কোটি টাকা ব্যয় করা হবে। এছাড়া কাজের বিনিময়ে খাদ্য (কাবিখা) ও স্থানান্তর খাতে ১ হাজার ৮২৬ কোটি টাকা ব্যয় করা হবে।
বিদায়ী অর্থবছরের মূল বাজেটে উন্নয়ন খাতে মোট ১ লাখ ২ হাজার ৫৫৯ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছিল। এর মধ্যে এডিপি-তে বরাদ্দের পরিমাণ ছিল ৯৭ হাজার কোটি টাকা ও এডিপি বহির্ভূত খাতে ৩ হাজার ৩৩৯ কোটি টাকা। এছাড়া কাজের বিনিময়ে খাদ্য (কাবিখা) ও স্থানান্তর খাতে ব্যয়ের পরিমাণ ধরা হয়েছিল ১ হাজার ৫৮৭ কোটি টাকা। সংশোধিত বাজেটে এডিপি খাতে ৯১ হাজার কোটি টাকা ব্যয় দেখানো হয়েছে।
অনুন্নয়ন ব্যয় : প্রস্তাবিত বাজেটে অনুন্নয়ন খাতে মোট ২ লাখ ১৫ হাজার ৭৪৪ কোটি টাকা ব্যয়ের প্রস্তাব করা হয়েছে। বিদায়ী অর্থবছরের মূল বাজেটে অনুন্নয়ন খাতে মোট ব্যয়ের পরিমাণ ধরা হয়েছিল ১ লাখ ৮৪ হাজার ৫৫৯ কোটি টাকা। তবে সংশোধিত বাজেটে অনুন্নয়ন ব্যয় ১ লাখ ৬৩ হাজার ৭৫১ কোটি টাকা দেখানো হয়েছে।
অনুন্নয়ন ব্যয়ের মধ্যে শীর্ষে রয়েছে অনুন্নয়ন রাজস্ব খাতে ব্যয়। মোট বাজেটের অর্ধেকেরও বেশি ব্যয় হচ্ছে এ খাতে। এ খাতে ব্যয়ের পরিমাণ হচ্ছে ১ লাখ ৮৮ হাজার ৯৬৬ কোটি টাকা (চলতি অর্থবছরে এ খাতে বরাদ্দ ছিল ১ লাখ ৬৪ হাজার ৫৭১ কোটি টাকা)। এর মধ্যে সরকারি কর্মচারিদের বেতন-ভাতা বাবদ ব্যয় হবে ৫০ হাজার ৭৭৫ কোটি টাকা।
এছাড়া অভ্যন্তরীণ ঋণের সুদ বাবদ ৩৮ হাজার ২৪০ কোটি টাকা (চলতি অর্থবছরে এ খাতে বরাদ্দ ছিল ৩৩ হাজার ৩৯৬ কোটি টাকা) ও বৈদেশিক ঋণের সুদ বাবদ ১ হাজার ৭১১ কোটি টাকা (চলতি অর্থবছরে এ খাতে বরাদ্দ ছিল ১ হাজার ৭১৩ কোটি টাকা) এবং অনুন্নয়ন মূলধন খাতে ২৬ হাজার ৭৭৮ কোটি টাকা (চলতি অর্থবছরে এ খাতে বরাদ্দ ছিল ১৯ হাজার ৯৮৮ কোটি টাকা), ঋণ ও অগ্রীম খাতে ৮ হাজার ৪২৮ কোটি টাকা (চলতি অর্থবছরে এ খাতে বরাদ্দ ছিল ৭ হাজার ৭৫৫ কোটি টাকা) এবং খাদ্য হিসাবে ৫৯৪ কোটি টাকা (চলতি অর্থবছরে এ খাতে বরাদ্দ ছিল ২২৭ কোটি টাকা) ব্যয় করা হবে।
শেষ পর্যন্ত নতুন অর্থবছরে ৭ দশমিক ২ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জনের মাধ্যমে ২০২১ সালের আগেই দুই অঙ্কের প্রবৃদ্ধি অর্জনকে সম্ভব করার স্বপ্ন দেখছেন অর্থমন্ত্রী। এর মাধ্যমে বাংলাদেশ বিশ্বের মাঝে একটি মধ্যম আয়ের দেশ। দারিদ্র্যের হার ১৮ শতাংশের নিচে নেমে আসবে এবং মানুষের গড় আয় দাঁড়াবে দুই হাজার ডলারের কাছাকাছি। এছাড়া প্রস্তাবিত বাজেটে ২০৪১ সালে বাংলাদেশকে উন্নত সমৃদ্ধশালী রাষ্ট্রে পৌঁছানোর জন্য একটি রূপরেখা দেয়া হয়েছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।