Inqilab Logo

সোমবার ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৮ আশ্বিন ১৪৩১, ১৯ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

চট্টগ্রামে মিশ্র প্রতিক্রিয়া

প্রকাশের সময় : ৩ জুন, ২০১৬, ১২:০০ এএম

রফিকুল ইসলাম সেলিম : জাতীয় সংসদে অর্থমন্ত্রী কর্তৃক উত্থাপিত ২০১৬-১৭ অর্থবছরের বাজেট সম্পর্কে চট্টগ্রামের ব্যবসায়ী নেতারা মিশ্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন। বাজেট বক্তৃতায় চট্টগ্রামের উন্নয়নে বেশ কয়েকটি মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নের ঘোষণা দেওয়ায় অর্থমন্ত্রীকে অভিনন্দন জানিয়েছে চট্টগ্রাম চেম্বার। একইসাথে কয়েকটি খাতে অতিরিক্ত করারোপের প্রস্তাব ভোক্তাদের উপর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে চেম্বারের প্রাথমিক প্রতিক্রিয়ায় উল্লেখ করা হয়েছে। চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন চেম্বারও বাজেটের কিছু দিকের প্রশংসার পাশপাশি অতিরিক্ত কর ও ভ্যাট আরোপের সমালোচনা করে তা পুনর্বিবেচনার দাবি জানিয়েছে। আওয়ামী লীগ ও তাদের সহযোগী সংগঠনের উদ্যোগে বাজেটকে স্বাগত জানিয়ে সন্ধ্যায় নগরীতে মিছিল হয়। এ ব্যাপারে বিএনপি তাৎক্ষণিক কোন প্রতিক্রিয়া দেয়নি। সাধারণ মানুষের মধ্যেও বাজেটের বিভিন্ন দিক নিয়ে নানামুখী আলোচনা শুরু হয়েছে। মোবাইল ব্যবহারসহ কিছুখাতে কর বেড়ে যাওয়ায় উদ্বিগ্ন সাধারণ মানুষ। জীবন যাত্রার ব্যয়বৃদ্ধির আশংকা করছেন মধ্যবিত্ত ও নি¤œবিত্তরা।
তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় চট্টগ্রাম চেম্বার সভাপতি মাহবুবুল আলম যানজট নিরসনে চট্টগ্রাম সিটিতে আউটার রিং রোড, ইউলুপ ও ফ্লাইওভার নির্মাণ এবং লালখান বাজার থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত ১৬.৫ কি.মি. এলিভেটেট এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণে অর্থমন্ত্রীর ঘোষণাকে স্বাগত জানান এবং এসব মেগা প্রকল্প দ্রুত বাস্তবায়নের দাবি জানান। তিনি বলেন, করমুক্ত আয়সীমা অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে। এটা ২ লক্ষ ৭৫ হাজার টাকা পর্যন্ত বৃদ্ধি করা উচিত। যেকোন কোম্পানী বা ৫০ লাখ টাকার অধিক গ্রস প্রাপ্তি আছে এমন প্রতিষ্ঠানের ন্যূনতম করহার ০.৩ শতাংশ থেকে বৃদ্ধি করে ০.৬ শতাংশ করা হয়েছে এবং সারচার্জের ক্ষেত্রে ১৫ কোটি টাকার অধিক কিন্তু ২০ কোটি টাকার কম হলে ২৫ শতাংশ এবং ২০ কোটি টাকার অধিক হলে ৩০ শতাংশ করহার নির্ধারণ করা হয়েছে যা অত্যধিক। এ হারগুলো পুনর্বিবেচনা করা প্রয়োজন।
তিনি বলেন, সিটি কর্পোরেশনের বাইরে রিয়েল এস্টেট খাতে উৎসে কর কমানোর ফলে এসব জায়গায় এ খাতের বিকাশ হবে এবং মহানগরগুলোর উপর চাপ কমবে। এসএমই খাতে টার্নওভার ৩৬ লাখ টাকা করা এ খাতে সম্প্রসারণ ঘটাবে।
প্যাকেজ ভ্যাটের ক্ষেত্রে করহার বিভিন্ন সেøভে বৃদ্ধি করা হলেও একই সাথে উপকরণ কর রেয়াত গ্রহণের সুযোগসহ ১৫ শতাংশ হারে ভ্যাট প্রদানের সুযোগ রাখা এবং নতুন ভ্যাট আইন বাস্তবায়ন না করাতে এক্ষেত্রে কোন সমস্যার আশংকা নেই। তবে পেট্রোলিয়াম জাত পণ্য পরিবহনের ক্ষেত্রে মূসকের হার ২.২৫ শতাংশ থেকে ৪.৫ শতাংশ করা এবং অন্যান্য পরিবহনের ক্ষেত্রে ৭.৫ শতাংশ থেকে ১০ শতাংশ করার কারণে সাধারণ জনগণ ক্ষতিগ্রস্থ হবে।
স্থান ও স্থাপনা ভাড়া গ্রহণকারী সেবার ক্ষেত্রে মূসকের হার ৯ শতাংশ থেকে ১৫ শতাংশ করা অত্যধিক। সরকার কর্তৃক ইসিআর/পিওএস মেশিন সরবরাহ করার উদ্যোগ অবশ্যই ভালো। ট্যারিফ মূল্য ক্ষেত্র বিশেষে ২০-২৫ শতাংশ বৃদ্ধির ফলে হাতে তৈরি কেক, বিস্কুট, পেপার প্রোডাক্ট ও বিভিন্ন শীটের দাম বাড়বে। ভোজ্য তেল, চিনি, ডাল, পেঁয়াজ, রসুন ইত্যাদি ভোগ্যপণ্যে শুল্ক রেয়াত অব্যাহত থাকায় তা সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে থাকবে।
নির্মাণ শিল্প খাতে অনেক উপকরণের শুল্ক হ্রাস করে ১৫ শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাব করা হয়েছে যা এ শিল্পে অচলাবস্থা দূর করে গতি আনবে। বস্ত্র খাতে স্ট্রিপিং কেমিক্যালের শুল্ক ২৫ শতাংশ হতে হ্রাস করে ১৫ শতাংশে এবং কিছু কাঁচামালের শুল্ক ১০ শতাংশ থেকে ৫ শতাংশ নির্ধারণ করায় এ খাতের সম্প্রসারণে তা সহায়ক হবে। সিকেডি মোটরসাইকেল এ সম্পূরক শুল্ক ৪৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২০ শতাংশ এবং হাইব্রিড গাড়ি ও হিউম্যান হলারের ক্ষেত্রে রেয়াতি সুবিধা প্রদান পরিবহন খাতে কিছু পরিবর্তন আনবে বলে মনে করেন চেম্বার সভাপতি মাহবুবুল আলম।
মেট্রোপলিটন চেম্বার
চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন চেম্বারের প্রতিক্রিয়ায় বলা হয়, রাজস্ব ঘাটতি ৯২,৩৩৭ কোটি টাকা আরও কমানো গেলে ভালো হতো। প্রস্তাবিত বাজেটে জিডিপি ৭.২ লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা গেলে সামগ্রিকভাবে অর্থনীতি আরও গতিশীল হবে। বাজেট প্রস্তাবনায় সরকারী কর্মকর্তাদের আয়করসহ নতুন করদাতা সৃষ্টির প্রয়াস অবশ্যই প্রশংসনীয়। তা না হলে বর্তমান কর প্রদানকারীর উপরই চাপ অব্যাহত থাকবে। বিনিয়োগ বৃদ্ধি ও সুষ্ঠ শিল্পায়নের স্বার্থে এলএনজি আমদানীসহ জ্বালানী ও বিদ্যুৎ খাতকে অগ্রাধিকার দেয়াকে সমর্থন করে এ চেম্বার। এতে বলা হয়, ব্যক্তিগত করদাতাদের কর মুক্ত আয় সীমা ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা বর্ধিত করে ৩ লাখ টাকায় উত্তীর্ণ করা হলে ভাল হতো। ১৫ শতাংশ হারে ভ্যাট আদায়ের পরিবর্তে আগের মতই ভ্যাট আদায় প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখা, যা স্থানীয় শিল্প প্রসার অব্যাহত রাখতে সহায়ক। তবে আমদানী করা এবং স্থানীয় ভাবে উৎপাদিত পণ্যের বেলায় কোন কোন ক্ষেত্রে একই হারে রাজস্ব ছাড় যুক্তিযুক্ত নয়। কৃষি ভিত্তিক স্থানীয় শিল্প সুরক্ষা আরও জোরদার করা হলে কর্মসংস্থান বৃদ্ধির সুযোগ আরও প্রসারিত হবে। চালের আমদানীতে আমদানী শুল্ক বৃদ্ধি, কৃষি বান্ধব বাজেট হিসেবেই বিবেচিত। রপ্তানী পোশাক শিল্পের ফায়ার ডোর, এলইডি বাল্ব, এলইডি প্যানেল, স্প্রীংক্যাল, মূলধনী যন্ত্রপাতি ইত্যাদি আমদানীতে রেয়াতি সুবিধা। শুল্ক হার হ্রাস করায় পোশাক শিল্প খাত কমপ্লায়েন্স বাস্তবায়নে সহায়ক হবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: চট্টগ্রামে মিশ্র প্রতিক্রিয়া
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ