দেশে দেশে রোজার উৎসব
মাহে রমজান আরবী নবম মাসের নাম। চাঁদের আবর্তন দ্বারা যে এক বৎসর গণনা করা হয়,
(পূর্ব প্রকাশিতের পর)
কিন্তু এই মসজিদ বাইতুল মুকাদ্দাসের পরিবর্তে মসজিদে হারাম (কাবা) কিবলা নির্ধারিত করা হয়। এর মাঝে রয়েছে অনেকগুলো মুসলিহাত বা উপকারীতা :
১। এটা অত্যন্ত জরুরী ছিল যে, কিবলার জন্য এমন কোনও বস্তুু হবে যার দিকে প্রত্যেক ব্যক্তি সকল স্থান, সকল দেশ হতে মুখ ফিরাতে পারে। এ জাতীয় বস্তুুটি কোন প্রস্তুত বস্তুু বা প্রাকৃতিক বস্তুুও হতে পারত। যেমন কোন চেরাগ, কোন মোমবাতি, কোন মূর্তি, কোন চিত্র, কোন কিতাব, যার বিবরণ আমরা পূর্বেই উল্লেখ করেছি। কোন কোন সম্প্রদায় ও ধর্মের লোকেরা এগুলোকে সামনে রেখে এগুলোর পূজা করত। ইসলাম যদি এসকল মূর্তি, চিত্র, আগুন, পানি, সূর্য ইত্যাদির উপাস্য হওয়াকে স্বীকার করে নিত, তাহলে অবশ্যই মূর্তিপূজার মাঝে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে যেত। পক্ষান্তরে, এ সকল বস্তুু ছাড়া কোনও দিককে যদি নির্দিষ্ট করা হত, যেমন উত্তর, পূর্ব তাহলে প্রথম দিক হতে না মুছে যাওয়া ধ্রুবতারা অবশ্যই উপাস্য হয়ে যেত এবং প্রভাত সূর্যের আরক্তিম লালিমাও উপাস্যের আসনে সমাসীন হয়ে যেত। দ্বীনে তাওহীদের জন্য এমনটি নির্ধারিত করা মোটেও সম্ভব ছিল না যে, গ্রহ-নক্ষত্রের পূজাকে বাতিল করার সাথে সাথে নক্ষত্র; পূজার আলামত ও বৈশিষ্ট্যগুলোকে কায়েম রাখা।
২। একথা বলা সঙ্গত যে, উত্তর এবং পূর্বকে বাদ দিয়ে অন্যদিকে মুখ করাও ছিল নক্ষত্র পূজারই নামান্তর মাত্র। কেননা, একথা সুস্পষ্ট যে, প্রত্যেক দিকেই কোন না কোন গ্রহ-নক্ষত্র রয়েছে। এর একদিকে প্রাধান্য দেয়ার মূলে অবশ্য কোন কারণও থাকত। এমনকি কোনও দিককে প্রাধান্য দিতে গেলে সূর্য ও তারকাপুঞ্জের উদয়াস্তের কথাও বিবেচিত হত। কারণ, গ্রহ-নক্ষত্রের দ্বারাই উত্তর, দক্ষিণ এবং পূর্ব পশ্চিম দিকের নির্ধারণ হয়ে থাকে। তাই যে দিককেই গ্রহণ করা হত, সে দিকের গ্রহ-নক্ষত্রের বৈশিষ্ট্যকেই মেনে নেয়ার প্রবণতা দেখা দিত। এতে করে দ্বীনে তাওহীদের মাঝে অংশীবাদিতার জীবাণু অবশ্যই ঢুকে যেত।
৩। এজন্য মিল্লাতে ইবরাহিমী এসকল মূর্তিসমূহকে বর্জন করে সর্বদাই কোনও কুরবান গাহ অথবা মসজিদকে নিজের কিবলা নির্ধারণ করেছে। যাতে করে শেরেক ও অংশীবাদিতার যাবতীয় সংস্পর্শ হতে এদের নামাজ মাহফুজ থাকে। হযরত ইবরাহীম (আ:)-এর বানানো মসজিদসমূহের মাঝে তার বংশধরগণ দুটি কেন্দ্রীয় মসজিদকে সংরক্ষণ করেছিল। এর একটি বাইতুল মুকাদ্দাস, যাকে হযরত দাউদ (আ:) এবং হযরত সুলাইমান (আ:) নিজেদের শাসনামলে অত্যন্ত যত্ম সহকারে তৈরী করিয়েছেন। এটাই ছিল বনী ইসরাঈলের কিবলা। আর দ্বিতীয় মসজিদটি ছিল কাবা, যা বনী ইসমাঈলের ধর্ম-কেন্দ্র ছিল।
৪। ইসলামের দাবী হচ্ছে এই যে, খানায়ে কাবা নির্মিত হয়েছিল বাইতুল মুকাদ্দাসেরও পূর্বে। এটাই ছিল দুনিয়ার বুকে প্রথম গৃহ,যা আল্লাহর এবাদতের জন্য নির্মিত হয়েছে। এর নির্মাণকারীও ছিলেন স্বয়ং হযরত ইবরাহীম (আ:) ও হযরত ইসমাঈল (আ:)। আর-কুরআনে ইরশাদ হচ্ছে, “অবশ্যই সর্বপ্রথম বরকতময় গৃহ যা মানুষের জন্য নির্মাণ করা হয়েছে, তা মক্কায়।” (সূরা আলে-ইমরান, রুকু-১০) অন্যত্র ইরশাদ হচ্ছে, “এবং যখন ইবরাহীম ও ইসমাঈল বাইতুল্লাহ-এর ভিত্তি সমুন্নত করছিল।” (সূরা বাকারাহ : রুকু-১৫) সুতরাং খানায়ে কাবার কিবলা হওয়া এমন একটি হাকীকত যে, যার অস্বীকার করার কথা ইসলামী শাসনামলে, ইহুদীদের মাঝেও দেখা যায়নি। এ প্রসঙ্গে আল-কুরআনে সুস্পষ্টভাবে ঘোষণা করা হয়েছে, “এবং যাদেরকে কিতাব দেয়া হয়েছে তারাও জানে যে, খানায়ে কাবার কিবলা হওয়া সত্য এবং যথার্থ এর নির্বাচন তাদের প্রতিপালকের পক্ষ হতেই হয়েছে।” (সূরা বাকারাহ : রুকু-১৭) পুলুস (পৌল) একটি চিঠিতে গøীতুনদেরকে লক্ষ্য করে লিখেছে, “লেখা আছে যে, আব্রাহাম (ইব্রাহীম)-এর দু’ ছেলে ছিল। একজন উপহার প্রাপ্তা (হাজেরাহ)-এর গর্ভে এবং দ্বিতীয়জন স্বাধীনা (সারাহ)-এর গর্ভে জন্মেছিল। যে ছেলেটি উপহার প্রাপ্তা উদরের ছিল (ইসমাঈল) সে স্বাভাবিকভাবেই জন্মগ্রহণ করেছিল। আর যে স্বাধীনা রমণীর (সারাহ) এর গর্ভে জন্মগ্রহণ করেছিল (ইসহাক) তার জন্ম হয়েছিল অঙ্গীকারের প্রতিফলনস্বরূপ। এই কথাগুলো উদাহরণ হিসেবেও মেনে নেয়া যায়। তা এজন্য যে, এই মহিলাগণ দু’স্থান ও পরিবেশের ছিলেন। একজন ছিলেন সিনাই পাহাড়ের (হযরত হাজেরা ছিলেন মিশরের, সিনাই মিশরের পথেই অবস্থিত) তাঁর উদরে কেবল অনুগত বান্দাই জন্মগ্রহণ করে। দ্বিতীয়জন সারাহ ছিলেন আরবের ‘কুহে সাইনা’-এর অধিবাসী। বর্তমান যেরুজালেম (বায়তুল মুকাদ্দাস) এর প্রত্যুত্তর ছিল ‘কুহে সাইনা’ যা আরবে অবস্থিত। এখানে সে নিজের সন্তানসহ বন্দী জীবনই যাপন করতো। উপরে বর্ণিত যেরুযালেম ছিল আজাদ ও মুক্ত। (গøীতুনের নামে ২২-২৬ অধ্যায় ৪)
এই উদ্বৃতি দ্বারা একথা সুস্পষ্ট হয়ে উঠে যে, খৃস্টান ধর্মের প্রতিষ্ঠাতাও এই রহস্য সম্পর্কে অবহিত ছিল যে, যেরুজালেম এবং বাইতুল্লাহ (অথবা আরবের কুহে সাইনা) একটি অপরটির প্রত্যুত্তর। বর্তমানের যেরুজালেম হতে প্রতীয়মান হয় যে, এই যেরুজালেম হলো নতুন এবং বাইতুল্লাহ হচ্ছেপুরাতন ও প্রাচীন। আর একথাও বুঝা যায় যে, উভয় মহিলা ছিলেন দুটি অঙ্গীকারের প্রতিফলন। অর্থাৎ এতদুভয়ের সন্তান-সন্ততি সম্পর্কে আল্লাহপাক হযরত ইব্রাহীম (আ:)-এর সাথে দু’টি অঙ্গীকার করেছিলেন। হাজেরা সম্পর্কিত অঙ্গীকার ‘কুহে সাইনা’-এর উপর পূর্ণতা লাভ করেছে। যখন তিনি হযরত ইবরাহীম (আ:)-এর সাথে মিশর হতে আগমন করছিলেন। ‘কুহে সাইনা’ এই পথেই পড়ে। সেই অঙ্গীকার মোতাবেক হাজেরার অনুগত-সন্তান আরবে এবাদতের একটি কেন্দ্রীয় গৃহ নির্মাণ করে। এই অনুগত বান্দা ছেলেটি এই প্রাচীন গৃহের মুতাওয়াল্লী বনে যায়। এই গৃহ পরবর্তীকালে বনী ইসরাঈলের নিকট তাদের জন্য কেন্দ্রীয় এবাদতগাহ বাইতুল মুকাদ্দাসের পূর্ণ প্রত্যুত্তর ছিল। সারা-এ উল্লেখ এখানে নেই। কিন্তু একথঅ জানা আছে যে, বাইতুল মুকাদ্দাসের অভিভাবকত্ব বনী ইসরাঈলকে প্রদান করা হয়েছিল। মনে হয়, রাসূলুল্লাহ (সা:)-এর পূর্ব পর্যন্ত আল্লাহর অঙ্গীকার বাইতুল মুকাদ্দাস এবং বনী ইসরাঈলের সাথে ছিল। যেহেতু বনী ইসরাঈল নিজেদের বিদ্রোহ, শঠতা, রক্তপাত, ও অবাধ্যতার দরুণ এই অঙ্গীকারকে চূর্ণ-বিচুর্ণ করে দিয়েছিল সেহেতু রাসূলুল্লাহ (সা:)-এর আবির্ভাবের পর আল্লাহপাক সতর্কবাণী উচ্চারণ করেছেন, যার উল্লেখ সূরা বনী ইসরাঈলের আয়াতসমূহে রয়েছে। সুতরাং বনী ইসরাঈলের উপর এই সতর্কবাণী যখন কোনই কাজে আসলো না, তখন আল্লাহ পাক স্বীয় অঙ্গীকার ছিন্ন করে বনু ইসমাঈলের সাথে কৃত অঙ্গীকার প্রতিফলিত করার যুগ আরম্ভ করলেন যা সাইনা পর্বতে হাজেরা সম্পর্কে পাকাপোক্ত করা হয়েছিল।
মি’রাজের প্রাক্কালে রাসূলূল্লাহ (সা:)-এর বাইতুল মুকাদ্দাসে (মসজিদে আকসা) নামাজ আদায় করা এবং কয়েক বছর পর খানায়ে কাবাকে কিবলা সাব্যস্ত করা যেন বনী ঈসরাইলের অঙ্গীকারকে পরাজিত করে বনু ইসমাঈলের যুগের শুভ সূচনার ঘোষণা ছিল। যেমন সীরাতুন নবী গ্রন্থের তৃতীয় খন্ডে মিরাজ প্রসঙ্গে বলা হয়েছে, “ঐ পবিত্র সত্তাই মহান যিনি স্বীয় বান্দাহকে রাতের বেলা মসজিদে হারাম (খানায়ে কাবা) হতে মসজিদে আকসা (বাইতুল মুকাদ্দাস) পর্যন্ত নিয়ে গেছেন, যার চতুষ্পার্শ্বে আমি বরকত প্রদান করেছি।” (সূরা বনী ইসরাঈল : রুকু-১)
এই বিশ্লেষণের দ্বারা সুস্পষ্ট জানা হয়ে যায় যে, ‘বাইতুল মুকাদ্দাস’ যা বনী ইসরাঈলের অঙ্গীকারস্থল ছিল, ইসলাম আগমনের পর এর কিবলা হওয়ার শান ও মর্যাদা বাকী থাকেনি, বরং হযরত ইব্রাহীম (আ:)-এর সেই মসজিদকে কিবলা বানানো হয়েছে যার অঙ্গীকার বনু ইসমাঈলের সাথে ছিল (অর্থাৎ খানায়ে কাবা) সেই অঙ্গীকার কি ছিল? এর বিস্তৃত বিবরণ দিতে গিয়ে এরশাদ করা হয়েছে, “এবং যখন আল্লাহ কতিপয় বাক্যে ইব্রাহীম (আ:)-কে পরীক্ষা করলেন, ফলে তিনি এই বাক্যাবলীকে পরিপূর্ণ করলেন, তখন আল্লাহ পাক বললেন, আমি তোমাকে মানুষের নেতা বানাবো। ইব্রাহীম (আ:) বললেন, আমার সন্তান- সন্ততিদের মাঝেও; আল্লাহ বললেন , আমার অঙ্গীকার জালেমদের সাথে সম্পৃক্ত থাকবেনা। এবং যখন আমি গৃহকে (কাবা) মানুষের সমবেত হওয়াার স্থল করলাম এবং শান্তির নিবাস করলাম, (এবং বললাম) তোমরা ইব্রাহীম (আ:)-এর দন্ডায়মান স্থলকে নামাজের স্থল নির্বাচন কর, এবং আমি ইব্রাহীম (আ:) ও ইসমাঈল (আ:)-এর সাথে অঙ্গীকার করেছি যে, তোমরা উভয়ে এই গৃহকে তাওয়াফকারীদের, এতেকাফকারীদের, রুকুকারীদের এবং সেজদাহকারীদের জন্য পবিত্র রাখ।” (সূরা বাকারাহ :রুকু-১৫)
মোটকথা এ ছিল আল্লাহর গোপন রহস্য। যা হাজার বছর পূর্ব হতেই আল্লাহর জানা ছিল। যার দরুন রাসূলুলুল্লাহ (সা:)-এর হিজরতের পর রূহানী জগতের কেন্দ্র, বাইতুল মুকাদ্দাসের পরিবর্তে খানায়ে কাবা নির্ধারিত হয়ে যায়। ইতিহাসের নিরিখে এটা ঐ গৃহ ছিল, যেখানে দাঁড়িয়ে হযরত ইব্রাহীম (আ:) তাওহীদের আওয়াজ বুলন্দ করেছিলেন। এবং যা এই দিকের বিবেচনায় আল্লাহর সর্বপ্রথম গৃহ ছিল। এবং রূহানী দিকের বিবেচনায় এই গৃহটি কিবলা হিসেবে বরিত হয়। যা এই দুনিয়ার আরশে ইলাহীর ছায়া এবং হাজিরাতুল কুদস (পবিত্র নিবাসস্থল)-এর প্রতিবিম্ব। এজন্য হুকুম হলো, “তুমি যেখান হতেই বের হবে, মসজিদে হারামের দিকে মুখ করো।” (সূরা বাকারাহ : রুকু-১৮)
মূলত : প্রত্যেক মুসলমানের অপরিহার্য কর্তব্য হচ্ছে এই যে, সেও এই স্থানেই দাঁড়িয়ে ফরজ ইবাদত সম্পন্ন করবে, যেখানে হযরত ইব্রাহীম দাঁড়িয়ে ছিলেন। যেহেতু প্রত্যেক মুসলমানকে সকল স্থানে সব সময় এমন কাজ করা সম্ভব নয়, সেহেতু কম সে কম নামাজের সময় এদিকে মুখ করে নেবে। অন্যথায় একথা সুস্পষ্ট যে, আল্লাহর রহমত এবং তাঁর মনোনিবেস সবদিকেই বরাবর। একারণে কিবলা নির্দিষ্ট করা প্রসঙ্গে এরশাদ হয়েছে, “তোমরা যে দিকেই মুখ ফিরাবে সে দিকেই আল্লাহর চেহারা বিদ্যমান।” (সূরা বাকারাহ : রুকু-১৪)
খানায়ে কাবার দেয়ালসমূহ এবং এর ছাদ কোনও মুসলমানের উপাস্য ও মাবুদ নয়। মুশরেক, মূর্তিপূজারী, নক্ষত্র পূজারীদের মত নামাজ ও দোয়ার মাঝে কিবলাকে লক্ষ্য করে কিছু বলা হয় না। এমনকি এগুলোর কাছে কিছু চাওয়াও হয় না। এগুলোর দোহাইও দেয়া হয় না। আর এগুলোকে উপাস্য ও প্রতিপালক বলেও মনে করা হয় না। আর এই ধারণাও করা হয় না যে, আল্লাহ পাক এগুলোর ভিতরে বসে রয়েছেন। খানায়ে কাবার দেয়ালসমূহ যদি ভেঙ্গেও যায়, ছাদ ধ্বসে পড়ে, শুধু উন্মুক্ত স্থান বাকী থাকে, তবুও কাবা শরীফই কিবলা থাকবে। অনুরূপভাবে খানায়ে কাবার ভিতরে গমন করে এবং এর ছাদের উপর আরোহণ করেও নামাজ যায়েজ। যদি কিবলা কোন দিকে তা’নির্ণয় করা না যায়, তবে সে দিকেই কিবলা বলে ধারণা বদ্ধমূল হবে, সেদিকে মুখ করেই নামাজ আদায় করা যায়। আরোহী অবস্থায় যানবাহন যেদিকেই গমন করুক, সেদিকে মুখ করেই নফল নামাজ আদায় করা যায। ভীষণ যুদ্ধের সময়ও এমনটি করা যায়। এসকল কথার দ্বারা খানায়ে কাবা সম্পর্কিত ঐ সকল অংশীবাদী ভুল বুঝাবুঝির অবসান হয়, যা তাদের দিক হতে আরোপিত হয়ে থাকে। এই কিবলার বৈশিষ্ট্যই মূলত: দ্বীনে মোহাম্মদী পরিপূর্ণতার প্রতীক হয়ে রয়েছে।
এই কিবলা প্রকৃতপক্ষে মুসলমানদের ভৌগোলিক কেন্দ্রবিন্দু এবং মিল্লাতে ইব্রাহিমীর অনুসারী হওয়ার ব্যবহারিক দলিল। এই কিবলাই হচ্ছে পৃথিবীর প্রাচীন তাওহীদবাদীদের প্রথম নিদর্শন এবং রাসূলুল্লাহ (সা:) অনুসারী হওয়ার নমুনা এবং বিশ্ব মুসলিমের একতার সেতু বন্ধন। এই জন্য রাসূলুল্লাহ (স.) কিবলার দিকে মুখ করাকে ইসলাম কবুলের আলামত হিসেবে নির্ধারিত করেছেন এবং বলেছেন, “যে ব্যক্তি আমাদের কিবলার দিকে মুখ করে নামাজ আদায় করবে এবং আমাদের হাতে যবেহকৃত পশুরু গোশত ভক্ষণ করবে, সে মুসলমান।” (সহীহ বুখারী : কিতাবুস সালাত, এস্তেকবালুল কিবলা পরিচ্ছেদ) যদি খেয়ালের তরণীতে আরোহণ করে নীলাভ আকাশের খোলা চত্বরে দাঁড়িয়ে কেউ দুনিয়ার মুসলমানদের নামাজের অবস্থার প্রতি নজর করে, তাহলে সে কিবরার কেন্দ্রীয় মৌলিকত্বের রূপ অবশ্যই অবলোকন করতে সক্ষম হবে। সে দেখতে পাবে বিশ্বের সকল দিকের মুসলমান বৃত্তাকার কাতার বন্দী হয়ে আল্লাহর এবাদতে সেজদাবনত অবস্থায় রয়েছে। (চলবে)
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।