Inqilab Logo

রোববার ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ০২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৪ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

মোহাম্মদী আর ইব্রাহিমী

নাজির আহমদ জীবকন | প্রকাশের সময় : ২৭ জুন, ২০১৯, ১২:০৬ এএম

রাসূল (সাঃ) বলেছেন; “শাবান আ’মার মাস; রমযান আল্লাহর”। আরও বলেছেন; “শাবান; রমযান ও রজব মাসের তুলনায় এমন এক মাস যার শ্রেষ্ঠত্ব সম্পর্কে মানুষের জ্ঞান নাই।” খুব সম্ভবত: এখানে রাসূল (সাঃ) আগামীতে “মোহাম্মদী প্রকাশিত হবে ঐ মাসে সে দিকটার প্রতি ইংগিত করেছেন। হযরত ইব্রাহীম ছিলেন একন নবী। নবী ইব্রাহীম; মুসলমান খৃষ্টান এবং ইহুদী ধর্মাবলম্বীদের আদি পিতা। কিন্তু মুসলমানরা উনাকে যতটা সম্মান করে অন্যেরা করে না। কারন; আমাদের নবীকে ইব্রাহীমী মানতে বলা হয়েছে।

নবী ইব্রহীম, কা’বা ঘর নির্মাণের পর দোয়া করেন, “হে আল্লাহ! তুমি আমার বংশধরদের মধ্য হতে এমন একজন রাসূল প্রেরণ কর যিনি তোমার বাণী সমূহ তাদের পাঠ করে শুনাবে এবং কিতাব ও হিকমত শিক্ষা দিবে। আর তাদের সংশোধন ও পবিত্র করবে। নিশ্চয় তুমি অতিশয় পরাক্রমশালী ও মহাজ্ঞানী! (সূরা বাকারা) তার এ দোয়ার ফলে আল্লাহ, হযরত মোহাম্মদ (সাঃ) কে তার বংশে পাঠান এবং তাঁকে ইব্রাহীম দ্বারা প্রতিষ্ঠিত মিল্লাতের অনুসরণ করতে বলেন; যেমন; এখন আমি তোমার প্রতি ওহী প্রেরণ করলাম যে, তুমি একনিষ্ঠ ইব্রাহীমের দ্বীনের অনুসরণ কর।” (সূরা নাহ্ল)

তাই, রাসূল (সাঃ) এতদিন বায়তুল মুকাদ্দাসের দিকে মুখ করে নামায পড়তেন। আর মনে মনে ইচ্ছা পোষণ করতেন কেব্লা পরিবর্তনের। আল্লাহ বলেন, “ আমি, আপনাকে বারবার আকাশের দিকে তাকাতে দেখি। অতএব, আমি আপনাকে সে কেবলার দিকেই ঘুরিয়ে দেব যাকে আপনি পছন্দ করেন। এখন আপনি মসজিদুল, হারামের দিকে মুখ করেন এবং তোমরা যেখানেই থাক, সে দিকে মুখ কর।” (সূরাঃ বাকারা) সময়টা ১৫ই শাবান ২য় হিজরী। তাহলে এখানে রাসূলের ইচ্ছাতে কেবলা পরিবর্তন হয়ে গেল। মুসলমানদের কিব্লা পরিবর্তনে বিরক্ত হয়ে ইহুদীরা নানা রকম মন্তব্য করতে থাকে। তারা প্রশ্ন করে কোন বিষয় মুসলমানদের কিব্লা পরিবর্তনে উদ্বুদ্ধ করল? এর উত্তরে আল­াহ বলেন; “হে নবী! আপনি বলুন, পূর্ব-পশ্চিম সকল দিকই আল্লাহর।” (বাকারা:১৪২)। যে দিকেই মুখ ফিরাও সেদিকই আল্লাহর।” (বাকারা-১১৫) রাসুল (সাঃ) বলেছেন. “এমন এক যুগ সমাগত প্রায়; যখন জ্ঞানের অন্বেষণে উটের কলিজা বিদীর্ণ করে ফেলবে (অর্থাৎ উটে করে এত ছুটাছুটি করবে) কিন্তু কোথাও মদীনার আলেম অপেক্ষা বিজ্ঞ আলেম খুঁজে পাবে না।” (তিরমিযী) এর ব্যাখ্যা হ’ল, এ হাদীসে রাসুল (সাঃ) শেষ জামানার প্রতি ইংগিত করেছেন। যখন ইসলাম মদীনার দিকে প্রত্যাবর্তন করবে।” সেই যুগে নির্ভর যোগ্য আলেমরা মদীনাতে অবস্থান করবে। অন্যত্র বলেছেন, “ঈমান মদীনার দিকে এমনভাবে প্রত্যাবর্তন করবে যেমন সাপ নিজ গর্তের দিকে প্রত্যবর্তন করে। এ সব হাদীস জ্ঞান ও চিন্তা দিয়ে বুঝতে চেষ্টা করি।

আল্লাহ কোরআনে মদীনাকে “আরদুল্লাহ” অর্থাৎ আল্লাহর যমীন বলেছে।” “সূরা নিসা) আর মদীনাকে রাসূলের ঘর হিসাবে উল্লেখ করেছেন। আর রাসূল এটাকে “হারাম” (সম্মানীত) ঘোষণা করেছেন। এ পবিত্র শহরের শপথ করেছেন আল্লাহপাক। ব্যাখ্যা ঃ সময়টা ছিল ্ইব্রাহিমী তাই এ ঘর কেবলার স্বীকৃতি পায় নাই। সোলাইমান নবীর মসজিদ, ইব্রাহীম নবীর মসজিদ যদি কেবলা হতে পারে, তবে নবী শ্রেষ্ঠ আমাদের নবীর মসজিদ কেন কেবলা হ’লনা তা জানার সময় এসেছে।

বারো শরীফের মহান ইমাম হযরত শাহ সূফী মীর মাস্উদ হেলাল (রাঃ) বলেছিলেন, একদিন পারস্য সম্রাট কর্তৃক কা’বা ঘর ভাঙ্গার পরিকল্পনা আল্লাহ বানচাল করেছেন। আল্লাহ তার ঘর রক্ষার ওয়াদা ঠিকই রেখেছিলেন। তখন প্রয়োজনও ছিল। রাসূল (সাঃ) বলেছেনঃ কেয়ামত ঘনিয়ে এলে এবং পৃথিবীর ধ্বংস ও বিলুপ্তি নিকটবর্তী হলে দস্যু প্রকৃতির এক হাবসী যার পায়ের গোছা অপেক্ষাকৃত সরু সে কা’বা ধ্বংস করবে।” (বুখারী)

এখানে কিন্তু বলা হয় নাই, মদীনা ধ্বংস হবে। রাসূল অনেক কথা রূপক অর্থে বলতেন। তখন আমাদের কেবলা কোনটা হবে। রাসূল কেন চিরদিনের জন্য মক্কা ছেড়ে মদীনায় রয়ে গেলেন? কেন আমাদের ফরজ এবাদত গুলোতে আমাদের নবীর বিষয় নেই? কেন দুই ঈদ দুই নবীর? কেন রাসুল মক্কায় কোন মসজিদ নির্মাণ করেন নাই? এসব বিষয় চিন্তা করার সময় এসেছে কারণ “মোহাম্মদী” প্রচারিত হচ্ছে। বলা হয়েছে ঃ তোমরা আনুগত্য কর আল্লাহ ও তার রাসূলের এবং তোমাদের মধ্যে যারা ইমাম (উলিল আমর) তাদের।”

ধর্মীয় বিধি নিষেধ ও অনুশাসন পালনে নিজেদের বুদ্ধি জ্ঞান ও চিন্তা প্রয়োগ করতে হবে। ধর্মের প্রতিটি কথা ও কাজের অন্ধ অনুসরণ ও অনুকরণ করতে গেলে বর্তমানে আমরা অনেক সমস্যার সম্মুখীন হবো ও হচ্ছি। হযরত আব্দুল্লাহ্ ইবনে ওমর (রাঃ) বলেছেন ঃ রাসূল (সাঃ) নামাজ,, রোজা, হজ্ব ইত্যাদির কথা উল্লেখ করে বলেছেনঃ মানুষ এসব কিছু করে ঠিকই, কিন্তু কেয়ামতের দিন নিজ বুদ্ধি; জ্ঞান; অনুসারে সে এসবের বদলা পাবে।” (মিশকাত) আল্লাহ বলেন, “যখন তাদের প্রভুর নিকট থেকে কোন আয়াত বা নিদর্শন অবতীর্ণ হয়, তখন তারা (বিশ্বাসী ও চিন্তাশীলেরা) সেটাকে অন্ধ বা বোবার মত গ্রহণ করে না।” (২৫ঃ৭৩) কোরআন ও হাদীসের বিভিন্ন বাণীকে আমরা কি তার গভির তাৎপর্যের অর্থে নিব নাকি আক্ষরিক অর্থে গ্রহণ করব তার উপর অনেক কিছু নির্ভর করে। ড. আল্লামা ইকবাল তাই বলেছেন, “ আধ্যাত্মিকতা হচ্ছে ধর্মের মূল বুনিয়াদ। মানুষ যখন তার আধ্যাত্মিকতাকে হারায় তখন তার মৃত্যু ঘটে।”



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ