দেশে দেশে রোজার উৎসব
মাহে রমজান আরবী নবম মাসের নাম। চাঁদের আবর্তন দ্বারা যে এক বৎসর গণনা করা হয়,
একজন মানুষ নিজের জন্য এবং তার অধীনস্ত ব্যক্তিবর্গের জন্য যা খরচ করে তাও সাদাকা হিসেবে পরিগণিত হয় বলে হাদীছে উল্লেখ করা হয়েছে। হযরত আবূ উমামাহ (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন- রাসূলুল্লাহ (স.) বলেছেন- “অনিষ্টতা ও খারাপ থেকে বেঁচে থাকার জন্য যে ব্যক্তি নিজের জন্য কিছু খরচ করল তা তার জন্য সাদাকা এবং যে ব্যক্তি নিজ স্ত্রী, সন্তান-সন্তুতি ও পরিবারের অন্য সদস্যদের জন্য কিছু খরচ করল তা তার জন্য সাদাকা হিসেবে পরিগণিত হবে।” (মু‘জামুল আওসাত, হাদীছ নম্বর-৩৮৯৭)। আল মিকদাদ ইবন মা‘দী কারিব (রা.) থেকে বর্ণিত হাদীছে নবী (স.) বলেন- “তুমি নিজে যা খাবে তা তোমার জন্য সাদাকা। তুমি তোমার সন্তানকে যা খাওয়াবে তা তোমার জন্য সাদাকা। তুমি তোমার স্ত্রীকে যা খাওয়াবে তা তোমার জন্য সাদাকা। তুমি তোমার চাকরকে যা খাওয়াবে তা তোমার জন্য সাদাকা”। (মুসনাদু আহমাদ ইবন হাম্বাল, হাদীছ নম্বর-১৭২১৮)। হযরত ‘ইরবাদ ইবন সারিয়া (রা.) থেকে বর্ণিত হাদীছে নবী (স.) বলেন- “একজন ব্যক্তি তার স্ত্রীকে পানি পান করালে সাওয়াব লাভ করবে। তিনি বলেন-এদশ্রবণে আমি আমার স্ত্রীর নিকট আসলাম, অতঃপর তাকে পানি পান করালাম এবং আমি যা রাসূলুল্লাহ (স.) এর নিকট শুনেছি তা বর্ণনা করলাম”। (মুসনাদু আহমাদ ইবন হাম্বাল, হাদীছ নম্বর-১৭১৯৫)।
অপর এক হাদীছে বর্ণিত হয়েছে যে, আপন স্ত্রী যা খায় তাও সাদাকা। হযরত সা‘দ (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন- “নবী (স.) শশ্রæষার জন্য তাঁর নিকট গেলেন। যেই জমিন থেকে তিনি হিজরত করেছেন সে জমিনে মৃত্যুবরণ করতে তিনি পছন্দ করছেন না। তিনি বললেন- হে আল্লাহর রাসূল! আমি আমার সমূদয় সম্পত্তি ওসিয়ত করতে চাই। তিনি (স.) বললেন- না। তিনি বললেন- তবে অর্ধেক ওসিয়ত করি। তিনি (স.) বললেন- না। তিনি বললেন- তবে আমি এক তৃতীয়াংশ ওসিয়ত করি। তিনি (স.) বললেন- এক তৃতীয়াংশ করতে পার, এক তৃতীয়াংশই অনেক। তুমি তোমার সন্তান-সন্তুতিকে মুখাপেক্ষী করে রেখে যাবে, আর তারা মানুষের দ্বারে দ্বারে চেয়ে বেড়াবে এর চেয়ে তাদেরকে তুমি অমুখাপেক্ষী করে রেখে যাবে, এটিই উত্তম। তুমি পরিবারের জন্য যা খরচ করবে তাই সাদাকা। এমনকি তুমি তোমার স্ত্রীর মুখে যে লোকমা তুলে দিবে তাও সাদাকা”। (সাহীহুল বুখারী, হাদীছ নম্বর- ২৫৯১; সাহীহ মুসলিম, হাদীছ নম্বর-৪২৯৬, ৪৩০২; সুনানু আবী দাউদ, হাদীছ নম্বর-২৮৬৬; জামি‘উত তিরমিযী, হাদীছ নম্বর-২১১৬; সুনানুন নাসায়ী আল কুবরা, হাদীছ নম্বর-৬৩১৮, সাহীহ ইবন হিব্বান, হাদীছ নম্বর-৪২৪৯, ৫০৩৯, ৬০২৬, ৭২৬১; মুসান্নাফু ‘আবদির রাযযাক, হাদীছ নম্বর-১৬৩৫৮)।
তবে উপরে বর্ণিত সাওয়াব তখনই পাওয়া যাবে যখন কোন মুমিন তার স্ত্রীকে পানাহার করাবে আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে, দায়িত্ব ও কর্তব্য মনে করে, ঈমানী চেতনা নিয়ে। পক্ষান্তরে কেউ যদি স্ত্রীর ভরণ-পোষণ করে আর মনে মনে এ রকম ধারণা করে যে, আমি তার ভরণপোষণ করলাম, সে আমার কথামত চলবে, আমি যা বলব তা সে মেনে নিবে, সে আমার খিদমত করবে, আমি নির্যাতন করব সে মেনে নিবে। তাহলে সে সাওয়াব পাবে না। মহানবী (স.) বলেন-“তুমি আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে যাই খরচ করবে তাতেই তুমি সাওয়াব লাভ করবে। এমনকি তুমি তোমার স্ত্রীর মুখে যা তুলে দিবে (তাতেও সাওয়াব লাভ করবে)”। (সাহীহুল বুখারী, হাদীছ নম্বর-৫৬; আস সুনানুল কুবরা লিন নাসায়ী, হাদীছ নম্বর-৯২০৬; আল মু‘জামুল আওসাত, হাদীছ নম্বর-১১৪৭)। আবূ মাস‘ঊদ আল বাদরী (রা.) বর্ণিত অপর এক হাদীছে নবী (স.) বলেন-“আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের আশায় যখন কোন মুসলমান তার পরিবারের জন্য কিছু খরচ করে তখন তা তার জন্য সাদাকায় পরিণত হয়।” (সাহীহ মুসলিম, হাদীছ নম্বর-২৩৬৯; আস সুনানুল কুবরা লিন নাসায়ী, হাদীছ নম্বর-৯২০৫; মুসনাদু আহমাদ ইবন হাম্বাল, হাদীছ নম্বর-১৭১২৩, ১৭১৫১)।
সন্তান-সন্তুতির প্রতি অনুগ্রহ করলে জান্নাত লাভ হয় এবং জাহান্নামের আগুন হারাম হয়ে যায়। হযরত ‘আয়িশা (রা.) বলেন- আমার নিকট একটি মহিলা আসল। তার সাথে আছে তার দুটি কন্যা সন্তান। সে আমার নিকট কিছু চাইল। কিন্তু একটি খেজুর ছাড়া অন্য কিছু আমি আমার নিকট পেলাম না। আমি উহাই তাকে দিয়ে দিলাম। সে উহা গ্রহণ করল এবং দুজনের মধ্যে তা বণ্টন করে দিল। সে নিজে কিছু খেল না। তারপর সে দাড়াল এবং সে ও তার সন্তানদ্বয় বেরিয়ে গেল। এরপর আমার নিকট নবী (স.) প্রবেশ করলেন। আমি তার কথা বর্ণনা করলাম। নবী (স.) বললেন-“যে ব্যক্তি কন্যাদের দ্বারা কোনভাবে পরীক্ষায় নিপতিত হয়েছে, অতঃপর সে তাদের প্রতি ভালো আচরণ করেছে, উহা তার জন্য জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচার জন্য পর্দা স্বরূপ হবে।” (সাহীহুল বুখারী, হাদীছ নম্বর-১৩৫২; সাহীহ মুসলিম, হাদীছ নম্বর-৬৮৬২; জামি‘উত তিরমিযী, হাদীছ নম্বর-১৯১৫; মুসনাদু আহমাদ ইবন হাম্বাল, হাদীছ নম্বর- ২৫৩৭১)।
অপর এক বর্ণনায় হাদীছটি এসেছে এভাবে; হযরত ‘আয়িশা (রা.) বলেন- আমার নিকট দুটি কন্যা সন্তানসহ এক মিসকীন আসল। আমি তাকে তিনটি খেজুর দিলাম। সে প্রত্যেককে একটি করে খেজুল দিল এবং সে নিজে খাওয়ার জন্য একটি খেজুর মুখের দিকে উঠাল। কিন্তু তার কন্যাদ্বয় খেজুরটি খাবার জন্য তার কাছে চাইল। ফলে সে যে খেজুরটি খেতে চেয়েছিল তা দুভাগে ভাগ করে দুজনকে দিয়ে দিল। তার বিষয়টি আমাকে বিস্মিত করল। সে যা করল আমি তা রাসূলুল্লাহ (স.) এর নিকট বর্ণনা করলাম। অতঃপর নবী (স.) বললেন-নিশ্চয় আল্লাহ তা‘আলা উহার বিনিময়ে তার জন্য জান্নাত ওয়াজিব করে দিয়েছেন। (চলবে)
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।