পোশাক রপ্তানিতে উৎসে কর ০.৫ শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাব
আগামী পাঁচ বছরের জন্য তৈরি পোশাক রপ্তানির বিপরীতে প্রযোজ্য উৎসে করহার ১ শতাংশ থেকে হ্রাস করে ০.৫ শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাব করেছে পোশাক খাতের দুই সংগঠন
অর্থমন্ত্রীর প্রস্তাবিত বাজেটে দেশের মুদ্রণ, প্রকাশনা ও প্যাকেজিং শিল্পের কাঁচামাল আমদানির ওপর ২৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের দাবি জানিয়েছে এ খাতের ৬ ব্যবসায়ী সংগঠন।
শনিবার (২২ জুন) রাজধানীর পল্টন টাওয়ারে ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম (ইআরএফ) কার্যালয়ে আয়োজিত যৌথ সংবাদ সম্মেলনে এই দাবি জানানো হয়।
গতকাল রাজধানীর পল্টন টাওয়ারে ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম- ইআরএফ কার্যালয়ে আয়োজিত ছয়টি সংগঠনের যৌথ সংবাদ সম্মেলনে দেয়া লিখিত বক্তব্যে এই দাবি উঠে এসেছে। এতে বক্তব্য রাখেন- বাংলাদেশ পেপার ইম্পোটার্স এসোসিয়েশনের সভাপতি মো. শফিকুল ইসলাম ভরসা, বাংলাদেশ মুদ্রণ শিল্প সমিতির চেয়ারম্যান শহীদ সেরনীয়াবাত, বাংলাদেশ পেপার মার্চেন্টস এসোসিয়েশনের সভাপতি ফজলুর রহমান পর্বত, বাংলাদেশ পাঠ্যপুস্তক মুদ্রক ও বিপণন সমিতির সভাপতি তোফায়েল খান, চট্টগ্রাম কাগজ ও সেলোফিন ব্যবসায়ী গ্রæপের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ বেলাল এবং মেট্রপলিটান প্রেস ওনার্স এসাসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক সালা উদ্দিন খান উজ্জল।
তারা জানান, দেশের মুদ্রণ প্রকাশনা ও প্যাকেজিং শিল্পের প্রধান কাঁচামাল হিসেবে ডুপ্লেক্স বোর্ড, আর্ট পেপার, আর্ট কার্ড, সুইডিস বোর্ড, ফোল্ডিং বক্স বোর্ড এবং সেলফ অ্যাডহেসিভ পেপারের বিপুল চাহিদা থাকলেও এসব পণ্যের আমদানিতে সর্ব্বেচ্চ হারে শুল্ক বিদ্যমান রয়েছে। এর ফলে বন্ড সুবিধায় আমদানিকৃত কাঁচামাল খোলা বাজারে বিক্রি হচ্ছে। এতে অবৈধ্য ব্যবসায়ীরা লাভবান হচ্ছে। অন্যদিকে সরকার হারাচ্ছে বড় অংকের রাজস্ব। পাশাপাশি প্রকৃত ব্যবসায়ীরা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
আমরা মনে করি, রপ্তানিকারকদের বন্ড সুবিধা অব্যাহত রেখে বাণিজ্যিকভাবে ৫শতাংশ শুল্ক আরোপ করে উপরোল্লিখিত বিদেশি কাগজ আমদানি করার সুযোগ দিলে বন্ডের অবৈধ ব্যবহার বন্ধ হবে ও বাজার স্থিতিশীল হবে। সরকারী রাজস্ব বৃদ্ধি পাবে। এদেশের মুদ্রণ শিল্প আরো বিকশিত হবে। ওই সংগঠনগুলোর পক্ষে লিখিত বক্তব্যে বাংলাদেশ মুদ্রণ শিল্প সমিতির চেয়ারম্যান শহীদ সেরনীয়াবাত বলেন, আমরা একটি বিষয় স্পষ্টভাবে উল্লেখ করতে চাই, বন্ড সুবিধার আওতায় আমদানির ক্ষেত্রে আমাদের কোন আপত্তি নেই। কিন্তু বাস্তবতা হলো- আমদানি হওয়া কাগজ পণ্য খোলা বাজারে বিক্রি হচ্ছে। ফলে সরকার রাজস্ব হারাচ্ছে। এখাতের ব্যবসায়ীরা অসুস্থ’ প্রতিযোগিতার সম্মুখিন হচ্ছেন। বন্ড সুবিধায় আমদানি হওয়া কাগজ পণ্য ২০ থেকে ৩০ শতাংশ মুনাফা ধরে বাজারে বিক্রি হচ্ছে। এতে অবৈধ ব্যবসায়িরা লাভবান হয়। সরকার বড় অংকের রাজস্ব হারাচ্ছে। প্রকৃত ব্যবসায়িরা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।
তিনি বলেন, রপ্তানিমুখি তৈরি পোশাক শিল্পের চাহিদার ভিত্তিতে শুধুমাত্র ৩০০ গ্রাম ও তদুর্ধ্ব গ্রামের কাগজ ও বোর্ড বন্ড সুবিধায় আমদানি করার সুযোগ রয়েছে। কিন্তু সাম্প্রতিক কালে বন্ড সুবিধা ভোগকারী কিছু প্রতিষ্ঠান সরকারি এই নীতিমালাও লংঘন করে নির্বিচারে বিভিন্ন গ্রামের কাগজ ও বোর্ড আমদানি করছে। বন্ড সুবিধার আওতায় শূণ্য শুল্কে আমদানি করা ৩০০ গ্রামের চেয়ে কম ওজনের এ সকল কাগজ ও বোর্ড (যেমন- ডুপ্লেক্স বোর্ড, ফোল্ডিং বক্স বোর্ড ইত্যাদি) খোলা বাজারে বিক্রয় হচ্ছে।
শহীদ সেরনীয়াবাত বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত উল্লেখ করে বলেন, গত ফেব্রæয়ারি ও মার্চে ঢাকা কাস্টমস বন্ড ওয়্যারহাউস আটক করা মোট পণ্যের প্রায় ৭০ শতাংশ ডুপ্লেক্স বোর্ড, আর্ট কার্ড, সেলফ কপি পেপার, মিডিয়াম পেপার, লাইনার পেপার, পেপার বোর্ড ইত্যাদি। পরিসংখ্যান হতে এটা সুস্পষ্ট যে- বন্ড সুবিধায় আমদানি করা বিভিন্ন ধরনের পেপার ও বোর্ড আমদানি খাতে সরকার প্রতি বছর প্রায় ২ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব হতে বঞ্চিত হচ্ছে।
সংবাদ সম্মেলনে কয়েকটি প্রশ্নের জবাবে বাংলাদেশ পেপার ইম্পোটার্স এসোসিয়েশনের সভাপতি মো. শফিকুল ইসলাম ভরসা বলেন, বন্ডের কাগজ চোরাচালান ও চোরাকাবারির সঙ্গে জড়িতদেও দায়-দায়িত্ব আমরা নেব না। আমরা দেশিয় বিকাশমান কাগজশিল্পের সুরক্ষা চাই। তারা হাজার হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করে দেশে কাগজের শিল্প গড়ে তুলেছেন। পাশাপাশি আমরা বন্ডের কাগজ আমদানি ও ব্যবহারের ওপর সরকারের কঠোর নজর দেখতে চাই। বন্ডের কাগজ কিভাবে বন্দর থেকে খালাস হয়ে খোলাবাজারে যাচ্ছে, সেটা মনিটরিংয়ের দায়িত্ব কাস্টমসের। তারমতে- প্রতিবছর ৫ লাখ টন কাগজ আমদানি হয়, যা মোট চাহিদার ১০ শতাংশ।
শফিকুল ইসলাম ভরসা বলেন, উচ্চ হারে শুল্ক থাকায় এ শিল্পের ব্যবসায়ীরা অব্যাহতভাবে লোকসানের মুখে রয়েছে। তিনি বলেন, কাঁচামাল হিসেবে ডুপ্লেক্স বোর্ড, আর্ট পেপার, আর্ট কার্ড, সুইডিস বোর্ড, ফোল্ডিং বক্স বোর্ড এবং সেলফ অ্যাডহেসিভ পেপারের বিপুল চাহিদা রয়েছে। কিন্তু এই পণ্যগুলো দেশে উৎপাদন হয় না। কিছু কাগজের মিল কারখানা রয়েছে, যারা শুধু কাঁচামাল হিসাবে সেগুলোতে শুধুমাত্র ছাপা ও লেখার কাগজ, নিউজ প্রিন্ট, মিডিয়া ও লাইনার পেপার, সিগারেট পেপার, টিস্যু পেপার ও নিন্মমানের বোর্ড উৎপাদন করে। এপ্রেক্ষিতে অন্যান্য দেশীয় শিল্পের কাঁচামাল আমদানির ক্ষেত্রে যে হার বিদ্যমান আছে মুদ্রণ শিল্পেও সেই হারে শুল্ক আরোপ করে কাঁচামাল আমদানির সুযোগ দেয়ার জন্য আহŸান জানান ভরসা।
আরেক প্রশ্নের জবাবে বাংলাদেশ পাঠ্যপুস্তক মুদ্রক ও বিপণন সমিতির সভাপতি তোফায়েল খান বলেন, বন্ডের অবৈধ কাগজ ছাপাখানায় যাক, এটা আমরা চাই না। আমরা বন্ডের অপব্যবহার বন্ধ চাই। খোলাবাজারে কাগজ বিক্রি বন্ধ করে ব্যবসায় ভারসাম্যপূর্ণ পরিবেশ দেখতে চাই। তারদাবি- রপ্তানিখাতে কাগজের ৯ শতাংশ প্রিন্টিং ও প্যাকেজিং হিসেবে রপ্তানি হয়।
শহীদ সেরনীয়াবাত বলেন, ২৫ শতাংশ আমদানি শুল্কের কারণে মুদ্রণ, প্রকাশনা ও প্যাকেজিং শিল্পের প্রধান কাঁচামাল আমদানিতে চ‚ড়ান্তভাবে কর আপাতন হয় ৬০ দশমিক ৭৩ শতাংশ। ফলে যারা শুন্য শুল্কে বন্ড সুবিধার আওতায় একই ধরনের পণ্য আমদানি করে ২০-৩০ শতাংশ মুনাফা ধরে খোলা বাজারে বিক্রি করে দেন। এতে ব্যবসায়ীরা অসুস্থ্য প্রতিযোগিতার সম্মুখীন হচ্ছে। তিনি বলেন, সাম্প্রতিক কালে দেশে উৎপাদিত কিছু কাগজ বিদেশে রপ্তানি হচ্ছে। রপ্তানি সংক্রান্ত তথ্য প্রমাণ অনুযায়ী রপ্তানিকৃত কাগজের মূল্য ৭০ হাজার টাকা প্রতি টন। অথচ এর চাইতে নি¤œমানের কাগজও দেশীয় বাজারে বিক্রি হচ্ছে প্রায় ৯০-৯৫ হাজার টাকা প্রতি টন। পেপার মিলগুলো যে হারে ট্যারিফ মূল্যের ওপর ভ্যাট, ট্যাক্স প্রদান করছে আর যে দামে উৎপাদিত কাগজ বিক্রি করছে তার ব্যবধান অনেক বেশি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।