পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
সাখাওয়াত হোসেন বাদশা : বর্ষা মৌসুম শুরু হয়ে গেছে। তবু পদ্মায় পানি নেই। এবছর পুরো শুষ্ক মৌসুমজুড়েই পদ্মা অববাহিকার মানুষের মাঝে পানি নিয়ে ছিল হাহাকার। ত্রিশ বছর মেয়াদি গঙ্গা চুক্তি মোতাবেক পানি না পাওয়ায় এই অববাহিকার সকল নদী এখনও নাব্যতা সঙ্কটে ভুগছে। পদ্মার বুকে এখন নৌকার পরিবর্তে চলছে ট্রাক। বালুর ব্যবসা চলছে দেদারছে।
গঙ্গা চুক্তি মোতাবেক শুষ্ক মৌসুমের শেষ দশদিনেও (২১ থেকে ৩১ মে) বাংলাদেশ পানির ন্যায্য হিস্যা থেকে বঞ্চিত হয়েছে। সর্বনিম্ন ৩৫ হাজার কিউসেক পানি বাংলাদেশের পাওয়ার কথা। আর চুক্তির ২ এর ইন্ডিকেটিভ সিডিউল অনুযায়ী এই দশদিনে পাওয়ার কথা ৪১ হাজার ৮৫৪ কিউসেক। কিন্তু ভারত বাংলাদেশকে এই পরিমাণ পানি দেয়নি। এই দশদিনে বাংলাদেশ পানি পেয়েছে ২৯ হাজার ৪৮৯ কিউসেক। একইভাবে ১১ থেকে ২০ মে এই দশদিনে বাংলাদেশের পানি পাওয়ার কথা ৩৫ হাজার কিউসেক। কিন্ত পেয়েছে ২৬ হাজার ১৫৫ কিউসেক। ফারাক্কা বাঁধের ভয়াবহ প্রভাবে কারণে বাংলাদেশ স্মরণকালের সর্বনিম্ন পানি পায় ২১ থেকে ৩১ মার্চ এই দশদিনে। এই সময়ে মাত্র ১৫ হাজার ৬০৬ কিউসেক পানি দিয়েছে ভারত। এরপর ১ থেকে ১০ মে বাংলাদেশকে দেয়া হয় দ্বিতীয় সর্বনিম্ন পানি যার পরিমাণ হচ্ছে ১৬ হাজার ৬৪৮ কিউসেক। আর ১১ থেকে ২০ এপ্রিল ভারত বাংলাদেশকে তৃতীয় সর্বনিম্ন পানি দেয়। যার পরিমাণ হচ্ছে ১৮ হাজার ২৮২ কিউসেক।
চুক্তির পর থেকে বাংলাদেশ গঙ্গার পানি নিয়ে এত ভয়াবহ ভোগান্তির কবলে আর পড়েনি। ভারতের সাথে ত্রিশ বছর মেয়াদি চুক্তি অনুযায়ী প্রতি শুষ্ক মৌসুমেই উভয় দেশের মধ্যে গঙ্গার পানি ভাগাভাগী হয়। চলতি শুষ্ক মৌসুমে পানি ভাগাভাগির যে সূচনা ঘটেছিল ১ জানুয়ারি, ৩১ মে তা শেষ হয়েছে। চলতি শুষ্ক মৌসুমের পুরো সময়টাই পানি নিয়ে গোটা পদ্মা অববাহিকাজুড়েই ছিল হাহাকার।
উল্লেখ্য, ১৯৭৪ সালে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে অনুষ্ঠিত এক সম্মেলনে সিদ্ধান্ত হয়েছিল যে, উভয় দেশ একটি চুক্তিতে না আসা পর্যন্ত ভারত ফারাক্কা বাঁধ চালু করবে না। পরবর্তীতে বাঁধের একটি অংশ পরীক্ষা করার জন্য বাংলাদেশ সরকার ১৯৭৫ সালে দশ (২১ এপ্রিল ১৯৭৫ থেকে ২১ মে ১৯৭৫) দিনের জন্য ভারতকে গঙ্গা হতে ৩১০ থেকে ৪৫০ কিউসেক পর্যন্ত পানি অপসারণ করার অনুমতি দেয়। কিন্তু ভারত ১৯৭৬ সালের শুষ্ক মৌসুম পর্যন্ত গঙ্গা নদী হতে ১১৩০ কিউসেক পানি অপসারণ করে পশ্চিমবঙ্গের ভাগরথি-হুগলি নদীতে প্রবাহিত করে। এরপর থেকে প্রতি শুষ্ক মৌসুমেই ভারত ফারাক্কা বাঁধের মাধ্যমে গঙ্গার পানি নিয়ন্ত্রণ করে আসছে।
ভারতকে পানি অপসারণে বিরত রাখতে ব্যর্থ হয়ে বাংলাদেশ এই বিষয়টি জাতিসংঘে উপস্থাপন করে। ২৬ নভেম্বর ১৯৭৬ সালে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ ভারতকে বাংলাদেশের সাথে আলোচনার মাধ্যমে এই বিষয়টির সুরাহার করার নির্দেশ দিয়ে একটি প্রস্তাব গ্রহণ করে। কয়েকবার বৈঠকের পর উভয় দেশ ৫ নভেম্বর ১৯৭৭ সালে একটি চুক্তি করে। চুক্তি অনুসারে বাংলাদেশ ও ভারত পরবর্তী পাঁচ বছরের (১৯৭৮-৮২) জন্য শুষ্ক মৌসুমে গঙ্গার পানি ভাগ করে নেবে। ১৯৮২ এর অক্টোবরে উভয় দেশ ১৯৮৩ ও ১৯৮৪ সালে পানি বণ্টনের আরেকটি চুক্তি করে। নভেম্বর ১৯৮৫ সালে আরও তিন (১৯৮৬-৮৮) বছরের জন্য পানি বণ্টনের চুক্তি হয়। কিন্তু একটি দীর্ঘ চুক্তির অভাবে বাংলাদেশ তার দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের উন্নয়নের জন্য গঙ্গার পানি ব্যবহারে কোনো দৃঢ় পদক্ষেপ নিতে পারেনি।
কোনো চুক্তি না থাকায় ১৯৮৯ সালের শুষ্ক মৌসুম থেকে ভারত একতরফা প্রচুর পরিমাণ পানি গঙ্গা থেকে সরিয়ে নেয়। ফলশ্রুতিতে বাংলাদেশের নদ-নদীতে পানি প্রবাহের চরম অবনতি ঘটে। ১৯৯২ সালের মে মাসে দুই দেশের প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরসিমা রাও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে এই আশ্বাস দিয়েছিলেন যে ভারত বাংলাদেশকে সমান পরিমাণ পানি দেবার ব্যাপারে সম্ভাব্য সকল কিছু করবে। এরপর দুই দেশের মধ্যে কোন মন্ত্রী বা সচিব পর্যায়ে বৈঠক বসেনি।
১৯৯৬ সালের ডিসেম্বর মাসে দিল্লীতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী দেব গৌড়া ও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ত্রিশ বছর মেয়াদি গঙ্গার পানি বণ্টন চুক্তি সই করেন। ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে চুক্তির প্রায় ১৯ বছর হতে চলল তবুও পানি বণ্টন চুক্তি রিভিউ করা হয়নি। চুক্তি মতে ফারাক্কায় যে পানি জমছে তাই ভাগ করে দেয়া হচ্ছে। কিন্তু গঙ্গা নদীর পুরো পানির ভাগাভাগির প্রসঙ্গ চুক্তিতে উল্লেখ নেই। তাই পদ্মা নদীতে চুক্তির পানি দিয়ে চাহিদার অর্ধেকও পূরণ হচ্ছে না। আবার ত্রিশ বছর মেয়াদি গঙ্গা চুক্তির ইন্ডিকেটিভ সিডিউল মোতাবেক বাংলাদেশকে যে পরিমাণ পানি দেয়ার কথা, তা থেকেও বঞ্চিত করা হচ্ছে।
চুক্তি মোতাবেক বাংলাদেশ পানি না পাওয়ায় বর্ষার শুরুতেও হার্ডিঞ্জ ব্রীজ পয়েন্টে এখন পানি নেই বললেই চলে। এই ব্রীজের ১৬টি স্প্যানের মাত্র ৪টি স্প্যানে (ব্রীজের খাম্বা) পানি আছে। বাকি ১২টি স্প্যান বালুর উপরে অবস্থান করছে। কুষ্টিয়ায় হার্ডিঞ্জ ব্রীজের আশপাশে পদ্মার বুকে চলছে গাছ লাগানো, সবজি চাষ, আর জেঁকে বসেছে বালুর ব্যবসা। পানিশূন্যতার কারণে জেলে ও মাঝিদের নৌকাগুলো বালুর চরে পড়ে আছে।
এ ব্যাপারে পানিসম্পদ মন্ত্রী আনিসুল ইসলাম মাহমুদ বলেন, এবছর অনেক খরা গেছে। ফলে গঙ্গায় পারি প্রবাহ কম ছিল। যেটুকু পারি ফারাক্কা পয়েন্টে জমেছে, তাই উভয় দেশ ভাগাভাগি করে নিয়েছে। এরপরও আমরা পানি কম পাওয়ার বিষয়টি ভারতকে জানিয়েছি। আশা করছি, আগামী শুষ্ক মৌসুমে আমরা চুক্তি মোতাবেক ভারতের কাছ থেকে গঙ্গার পানির ন্যায্য হিস্যা পাব। তবে বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, ভারত আমাদের বন্ধুপ্রতীম দেশ। মুক্তিযুদ্ধের সময়ে তাদের সহযোগিতার কারণে আমরা কৃতজ্ঞ। কিন্তু পানি নিয়ে তারা যা করছে এটি বন্ধু রাষ্ট্রের কাজ নয়। তিনি গঙ্গার পানির ন্যায্য হিস্যা আদায় ও তিস্তা চুক্তি দ্রুত করার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।