Inqilab Logo

শনিবার ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৬ আশ্বিন ১৪৩১, ১৭ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

ভবিষ্যতে প্রয়োজনে সউদি জোটে সামরিক সহায়তা

প্রধানমন্ত্রী সউদি আরব যাচ্ছেন কাল

প্রকাশের সময় : ২ জুন, ২০১৬, ১২:০০ এএম

কূটনৈতিক সংবাদদাতা : সন্ত্রাস বিরোধী সউদি জোটে ভবিষ্যতে দরকার পড়লে বাংলাদেশ সামরিক সহযোগিতা করতেই পারে। গতকাল বিকালে প্রধানমন্ত্রীর আসন্ন সউদি আরব সফর উপলক্ষে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী একথা বলেন। তিনি বলেন, এর আগেও জাতিসংঘের বাইরে বাংলাদেশের সেনা পাঠানোর নজীর আছে। প্রসঙ্গত ৩ থেকে ৭ জুন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সউদি আরব সফর করবেন।  পররাষ্ট্রমন্ত্রীসহ সরকারের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তা ও বিশেষ ব্যক্তিবর্গ প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী হবেন। ১০ সদস্যের একটি ব্যবসায়ী প্রতিনিধি দলও যাবে তার সঙ্গে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, এর আগে ১৯৯৩ সালে সাদ্দাম হোসেনের বাহিনী কুয়েত আক্রমণ করলে বাংলাদেশ সেনা পাঠিয়েছিল। সউদি আরবে অবস্থিত পবিত্র দুই মসজিদ (মক্কা ও মদীনা) রক্ষার জন্য বাংলাদেশ সেনা পাঠিয়েছিল। কাজেই অতীতে এ ধরনের রেওয়াজ আছে যে, বাংলাদেশ সেনা পাঠিয়েছে। ভবিষ্যতেও বাংলাদেশ সেনা পাঠাতে পারে। যখন সময় আসবে তখন আমরা দেখব।   
সউদি আরবের নেতৃত্বাধীন ৩৪ দেশের সামরিক জোটে যোগ দেয়া নিয়ে বাংলাদেশের অবস্থান ব্যাখা করতে গিয়ে  তিনি আরো বলেন, আইএস জঙ্গিদের মোকাবিলা করার মত যাদের সামর্থ নেই এ জোট থেকে তাদের সামরিক সহযোগিতা করা যেতে পারে। এ জোটের যে দেশ এ সহযোগিতা করতে পারে সেদেশ তা সরাসরি দিবে। সাইবার সিকিউরিটি, টেকনোলজিক্যাল সহযোগিতাসহ এ বিষয়ে যে কোন প্রকার পরামর্শ দিতে পারবে জোটের সদস্যরা। এ সব সহযোগিতা হবে সম্পূর্ণ ভলানটারি বা ঐচ্ছিক। অর্থাৎ কোন দেশের ক্ষমতা থাকলেও সে সৈন্য দিতেও পারে আবার নাও দিতে পারে। এ জোটের সভাগুলোতেও অংশগ্রহণ বাধ্যতামূলক নয়। সামরিক জোটে যেটা হয় যে, অংশগ্রহণ করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। এ জোটে সেটা নেই। প্রচলিত সামরিক জোটে সৈন্য চাইলে সেখানে দিতেই হয় সে জিনিষটা এ জোটে থাকছে না।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, এটা আসলে ঠিক সামরিক জোট নয় যদিও এভাবে বলা হচ্ছে। কিন্তু এটা হচ্ছে সন্ত্রাস ও চরমপন্থার বিরুদ্ধে গঠিতে একটা সেন্টার। এ সেন্টারের সদর দপ্তর সউদি আরবের রাজধানী রিয়াদে অবস্থিত।  এটার কার্যক্রম এখন শুধু আতুরঘরেই সীমাবদ্ধ আছে।
সউদি আরবের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আদেল বিন জুবায়েরের সঙ্গে এ বিষয়ে আলোচনার প্রসঙ্গ টেনে মাহমুদ আলী বলেন, তিনি আমাকে বলেছেন, এ সেন্টারে দুটো ট্র্যাক থাকবে। একটা হচ্ছে রাজনৈতিক-নিরাপত্তা এবং আর একটি হচ্ছে সামরিক ট্র্যাক। এ রাজনৈতিক-নিরাপত্তা ট্র্যাকে সন্ত্রাস ও চরমপন্থা কীভাবে উদ্ভুত হচ্ছে, এটিকে কীভাবে দমন করা যায়, মোকাবিলাসহ রাজনৈতিকভাবে এটাকে কীভাবে ফেস করা যায় তার কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করা।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশসহ যে ৩৪ দেশ এ জোটে যোগ দিয়েছে। তথ্য-আদান প্রদান এবং এ লক্ষ্যে কাজ করার জন্য যে দেশের যে সামর্থ আছে সেটা কীভাবে ব্যবহার করা যায় সে নিয়ে কাজ করবে দেশগুলো। উদাহরণ দিয়ে মাহমুদ আলী বলেন, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সন্ত্রাস ও চরমপন্থার রূপ ভিন্ন। আফ্রিকাতে অনেক দেশে জাতীসংঘের শান্তিরক্ষী বাহিনী নিয়োজিত আছে। মালিতে ফ্রান্সের সৈন্য আছে। এসব জায়গায় এ জোট হতে সাহায্য করার বিষয় নিয়ে কাজ করা যেতে পারে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, এছাড়া সম্প্রতি জোটের অন্তর্ভুক্ত সামরিক বাহিনীর প্রধানদের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। সেখানে বাংলাদেশের সেনাপ্রধানও অংশ নিয়েছেন।
উল্লেখ্য, সউদি আরব গত ১৪ ডিসেম্বর ঘোষণা করে, তারা ৩৪টি মুসলিম দেশ নিয়ে একটি সন্ত্রাস বিরোধী সামরিক জোট গঠন করেছে। এই জোটে বাংলাদেশ, পাকিস্তান, তুরস্ক, মিসরসহ সুন্নি প্রধান দেশগুলো যোগ দিয়েছে। তবে ইরান, ইরাক ও সিরিয়াসহ কয়েকটি মুসলিম দেশ এতে যোগ দেয়নি। সউদি আরব সন্ত্রাসবিরোধী এই জোট গঠনের ঘোষণা দেয়ার পর পরই বাংলাদেশ রিয়াদে সন্ত্রাসবিরোধী কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য হওয়ার সিদ্ধান্ত জানিয়ে এই জোটে যোগদানের কথা ঘোষণা করে।
এদিকে, সউদি আরবে কর্মরত বাংলাদেশী নারীরা নির্যাতন বিশেষ করে যৌন নির্যাতনের শিকার হচ্ছেনÑ এ বিষয়ে জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, এখন থেকে প্রত্যেক নারী শ্রমিকের সাথে হয় তার বাবা অথবা আপন ভাই শ্রমিক ভিসায় সউদি আরব যেতে পারবেন এবং তারা একই বাসায় কাজ করার সুযোগ পাবেন।
কিন্তু এই নিয়ম যদি লঙ্ঘন করা হয় তখন কি হবেÑ এমন প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, যেহেতু নিয়মটিই হচ্ছে ভাই অথবা বাবা সাথে যাবেন, তাই এই প্রশ্ন আসছে কেন?
তবে, সউদি আরবে যেসব নারী এরই মধ্যে গিয়েছেন এবং নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন তাদের উদ্ধারে কোন কার্যকর ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে কীনাÑ এমন প্রশ্নের কোন জবাব দেননি পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৩-৭ জুন সউদি আরবে রাষ্ট্রীয় সফর সম্পর্কে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ৩ জুন অপরাহ্নে ঢাকা থেকে বিশেষ ফ্লাইটে রওয়ানা হয়ে ঐদিন সন্ধ্যায় জেদ্দা পৌঁছাবেন প্রধানমন্ত্রী। ওই রাতেই মক্কা শরীফে পবিত্র ওমরা পালন করবেন তিনি। ৫ জুন সউদি আরবের বাদশার সাথে প্রধানমন্ত্রী জেদ্দায় রাজকীয় প্যালেসে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে মিলিত হবেন। সালমান বিন আব্দুল আজিজ সউদি আরবের বাদশাহ হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পর এটাই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রথম সউদি সফর।
দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে উভয় রাষ্ট্র ও আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে বিভিন্ন ইস্যুতে বাংলাদেশের স্বার্থ সংরক্ষণ, দু’দেশের মধ্যে বিরাজমান সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ককে আরও সুদৃঢ়করণ এবং সহযোগিতার নতুন নতুন ক্ষেত্র চিহ্নিতকরণসহ নানা বিষয়ে আলোচনা হবে। আলোচনায় সউদি আরবে বাংলাদেশীদের জন্য শ্রমবাজার সম্প্রসারণ, দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বৃদ্ধি, বাংলাদেশের বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পে অধিক হারে সউদি সহায়তা, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন ইস্যুতে সহযোগিতা ও হজ ব্যবস্থাপনাসহ নানা বিষয় প্রাধান্য পাবে বলেও জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রীর সফরকালে ফরেন অফিস কনসালটেশন বিষয়ক এমওইউ, সাংস্কৃতিক সহযোগিতা এবং তথ্য-প্রযুক্তি খাতে সহযোগিতা বিষয়ে চুক্তি/সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হতে পারে বলেও জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
এ সফরকালে সউদি আরবের ডেপুটি ক্রাউন প্রিন্স, উপ-প্রধানমন্ত্রী ও প্রতিরক্ষা মন্ত্রী, পররাষ্ট্র মন্ত্রী, শ্রম মন্ত্রী ও অর্থ মন্ত্রীসহ সউদি নেতৃবৃন্দ প্রধানমন্ত্রীর সাথে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন। চারদিনের সফর শেষে ৭ জুন প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশ বিমানের বিশেষ ফ্লাইটে মদীনা থেকে সরাসরি ঢাকা ফিরবেন বলেও সাংবাদিক সম্মেলন জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
সংবাদ সম্মেলনে গত ২৬-২৯ মে প্রধানমন্ত্রীর জি-৭ শীর্ষ সম্মেলনের আউটরিচ মিটিংয়ে যোগ দিতে জাপান সফর সম্পর্কেও বিস্তারিত জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী।



 

Show all comments
  • S. Ahmed ২ জুন, ২০১৬, ৮:৫১ এএম says : 0
    Marhaba. That will be innshaAllah a great move for future.
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ভবিষ্যতে প্রয়োজনে সউদি জোটে সামরিক সহায়তা
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ