Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ইসলামের বিধানে পারিবারিক দায়-দায়িত্ব

আফতাব চৌধুরী | প্রকাশের সময় : ২০ জুন, ২০১৯, ১২:০৫ এএম

বাবার জীবদ্দশাতে ছেলের মৃত্যু হলে পুত্রবধু, নাতি-নাতনীরা বঞ্চিত হয়ে পড়ে, তারা উত্তরাধিকার হতে পারে না। এমনতর বিধানের অপপ্রয়োগ করে কত পরিবার বিচ্ছিন্ন হয়, ধ্বংস করে দেওয়া হয় অনাথ শিশু ও বিধবাদের ভবিষ্যৎ জীবন। দাদুর অনুগ্রহের উপর নির্ভর করে নিরুপায় অসহায় অনাথদের শিক্ষা-দীক্ষা। আর বিধবা পুত্রবধুকে শশুর-শাশুড়ি-দেবর-ভাসুর-ননদের দাসত্ব গ্রহণ করে কালাতিপাত করতে হয়। দাসীসুলভ পরনির্ভরতা, আত্বসম্মানবোধের অভাবগ্রস্ত হয়ে মানুষের দ্বারে দ্বারে ঘুরতে হয় অনাথ শিশু, বিধবা নারীদের। এটা ইসলামী বিধান না সামাজিক ব্যাধি? এ বিবেচনায় না গিয়ে অনর্থক প্রশ্নভানে এবং অপপ্রয়োগ করে ইসলামি বিধানকে ঝাঁঝরা করে ফেলা হয়। ধর্মীয় বিধান যথাস্থানে সঠিক ও বাস্তবসম্মত। কিন্তু বর্তমান সমাজব্যবস্থা বিধিসম্মত না হওয়ায় সামাজিক, পারিবারিক জীবন বিপন্নতায় ধুঁকছে।

ইসলাম কাউকে বিপন্ন করেনি, অন্যায়ভাবে বঞ্চিত করেনি। ইসলামি শরীয়ত বিধান দিয়েছে কেউ মারা গেলে তার স্ত্রী, পুত্র-কন্যা, তারই উত্তরাধিকারী। বাবা-মা জীবিত থাকলে পুত্রের সম্পত্তিতে আংশিক অংশিদার হবেন মাত্র, সম্পূর্ণ সম্পত্তির মালিক নন। কিন্তু সামাজিক গৎ-বাঁধা বিধানের মাধ্যমে ছেলেদের পারিবারিক জীবন পঙ্গু করে দেওয়া হয়। পারিবারিক জীবন সুষ্ঠু না হলে সমাজজীবন সুষ্ঠু হয় না। তাই শুরু থেকেই পরিবার সুরক্ষার ব্যবস্থা গ্রহণ করা প্রয়োজন। পরিবার ব্যবস্থার রূপরেখা কী তারও একটি আদর্শ দিয়েছেন আল্লাহতালা, আদম ও হাওয়াকে সৃষ্টি করে তাদের পরিবার গঠন করে দিয়ে। পরিবার গঠনের লক্ষ্য উদ্দেশ্য মানবজাতির বিকাশ। আরও তাদের মধ্যে দিয়েছিলেন এমন একটি আকর্ষণ, প্রেম ও ভালবাসার টান, যাতে তারা দুজন এক সঙ্গে বসবাস করতে পারে। তাই গড়ে দিলেন ভালবাসার বন্ধন, সেই বন্ধনের নামই হচ্ছে বিবাহ। বিবাহের মাধ্যমে দু’জন ব্যক্তি মিলে স্বতন্ত্র একটি পরিবারের জন্ম দেয়। এর মাধ্যমেই সন্তান-সন্ততি জন্ম দিয়ে মানবজাতির বিকাশ ও নব নব পরিবারের জন্ম, মানবজাতির বিকাশ ও পরিবার গড়ে সমাজের সৃষ্টি। কিন্তু পরিবারের স্বাতন্ত্রে ব্যাঘাত ঘটানোর ফলে নানা জটিলতার সৃষ্টি হয় এটা অস্বীকার করা যায়না।

স্বামী-স্ত্রী নিয়ে যখন পরিবার, তখন সে পরিবার পরিচালনার দায়িত্ব একজনকে বহন করে যেতে হয়। সে দায়িত্ব স্বামীর উপর বর্তায়। তাই বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার আগেই স্ত্রীর জন্য ঘর , মোহর, ভরণ-পোষণ ব্যবস্থা ও যোগ্যতা অর্জন করে নিতে হয় স্বামীকে। এ দায়িত্ব স্বামীকে দিয়েছে ইসলাম আর এটাকে বাস্তব রূপ দিতে সমাজকেই এগিয়ে আসতে হবে, পথ করে দিতে হবে স্বতন্ত্র পরিবার গড়ার। স্ত্রীর জন্য এমন একটি ঘরের ব্যবস্থা দিতে হবে যেখানে ওর আসবাবপত্র সুরক্ষিত থাকে এবং বিনা অনুমতিতে অন্য কারোর প্রবেশাধিকার থাকবে না স্বামী ব্যতীত। ইসলামের দেওয়া এ ব্যবস্থা সূচারুরূপে পালন না করার ফলে বহু চর্চিত ইমরানা কান্ড সংঘটিত হয়েছে। শুধু ইমরানা কান্ড নয় ননদ-ভাবি, শাশুড়ি-বউ এ মাঝেমধ্যে ঝামেলা সৃষ্টি হয়। এখানে আরেকটি কথা অপ্রিয় হলেও সত্য যে, ইসলাম স্বামী সেবার দায়িত্ব দিয়েছে স্ত্রীকে, দেবর-ননদ সেবার দায়িত্ব দেয়নি, হ্যাঁ শশুর-শাশুড়ি সেবার অবশ্য উৎসাহ দিয়েছে। (চলবে)



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ