দেশে দেশে রোজার উৎসব
মাহে রমজান আরবী নবম মাসের নাম। চাঁদের আবর্তন দ্বারা যে এক বৎসর গণনা করা হয়,
(পূর্ব প্রকাশিতের পর)
‘উসূল’ বা ‘কায়দা’ দ্বারা ‘জুযঈ মাসআলা’ প্রশ্নে বৈধতা-অবৈধতা নির্ধারিত হয় না। ‘উসূল’ বা ‘কায়দা’ বিধান গবেষণার প্রয়োজনে স্থিরীকৃত। তবে হ্যাঁ তা দ্বারা বিধান বুঝতে সহায়ক হয়। সে কারণে-
“যা পরিচিত বা প্রচলিত তাই যেন শর্তকৃত” শুধু এই নীতিবাক্য দ্বারা হাফেযদের জন্য প্রদত্ত হাদিয়াকে অবৈধ বলা যাবে না। তার কারণ :
(১) গবেষণা মতে বৈধতাদানের মূল উৎস বা প্রসঙ্গ শ্রম/মজুরী নয়।
(২) তেমনটি ক্ষণিকের জন্য ধরে নিলেও, তাতে পারিশ্রমিকের ক্ষেত্রে বিবেচ্য বিষয়াদি তথা পূর্বচুক্তি, মজুরী নির্ধারণ ইত্যাদি বাস্তবে থাকে না বিধায় হাফেযদের সম্মানী ‘ইবাদতে মজুরী’ এর আওতায় গণ্য হয় না।
(৩) হাফেযদের যা দেয়া হয় তা সাধারণত ‘সম্মানী’ এর আওতায়ই পরিগণিত হয়ে থাকে।
(৪) ‘হাদিয়া’ এর বৈধতার পক্ষে মৌলিক নস (দলীল) বিদ্যমান। হাদিয়াদানের উপলক্ষ্য যা-ই হোক না কেন। কেননা, এ ক্ষেত্রে তো আর দাতাদের জাগতিক কোন স্বার্থ কাজ করছে না। আর গ্রহিতাদের অন্তরে কি আছে? তা তো আর কিয়ামতের দিন দাতাদের জিজ্ঞাসা করা হবে না। কারণ-“ তারা যা অর্জন করেছে তা তাদের ,তোমরা যা অর্জন করেছো তা তোমাদের। আর তারা যা করত সে সম্মন্ধে তোমাদেরকে প্রশ্ন করা হবে না।”(সূরা-বাকারা:১৩৪ ও ১৪১)
“আর কোন বহনকারী অন্য কারও ভার/বোঝা/পাপ বহন করবে না।”(সূরা-বনী-ইসরাঈল:১৫)
“কোন বোঝা বহনকারী অন্যের বোঝা বহন করবে না,”(সূরা-আন-নাজম:৩৮)
সার-সংক্ষেপে বলা যায়:
(১) বেতন-পারিশ্রমিক ও হাদিয়া-সম্মানী এক বিষয় নয়।
(২) বেতন-পারিশ্রমিক আইনকেন্দ্রিক হয়ে থাকে আর হাদিয়া-সম্মানী বিবেককেন্দ্রিক হয়ে থাকে।
(৩) মাহে রমযানের হাফেযদেরকে আর্থিক সহযোগিতা ‘ভাতা’ ও ‘সম্মানী’ বিবেচনায় প্রদান করা অধিক উত্তম এবং অনেক সওয়াবের কাজ।বেতন-পারিশ্রমিক বিবেচনায় প্রদান( কোন কোন ফকীহ এর মতানুযায়ী) যদিও বৈধ; তবে তা অধিক উত্তম নয়।
(৪) হাদিয়া বিবেচনার ক্ষেত্রে চাপাচাপি করে অর্থ উসূল সঠিক নয়; পারিশ্রমিক বিবেচনার ক্ষেত্রে জোর দিয়েও উসূল করা যায়।
(৫) আর্থিক সঙ্গতি থাকা সাপেক্ষে মসজিদের সাধারণ তহবিল থেকেও ‘সম্মানী’ প্রদান করা যায়;নতুবা চাঁদা আদায়ের মাধ্যমেও প্রদান করা যায়।
(৬ ) মসজিদটি রাষ্টীয় কোন প্রতিষ্ঠানের আওতাধীন হলে কিংবা সংশ্লিষ্ট অফিসের আওতায় ‘খতমে তারাবী’র ব্যবস্থা করা হলে,বিধি মোতাবেক সম্মানীর ব্যবস্থা অফিস তহবিল থেকেও করা যেতে পারে;নতুবা চাঁদা আদায়ের মাধ্যমেও করা যেতে পারে।
(৭) কেবল তারাবীর হাফেযদের কথা বলে সম্মানী উসূল করলে, তা অন্যদের প্রদান বৈধ হয় না।তবে অন্যদেরও প্রদানের সুবিধার্থে এবং অন্যান্য খরচেরও প্রয়োজনের কথা জানান দিয়ে যৌথভাবে উসূল করা হলে সেক্ষেত্রে উল্লেখকৃত সব খাতে ব্যয় করা যায়।
(৮) কঠোর পরিশ্রম ও সাধনার মাধ্যমে সম্মানীত যে-হাফেযগণ ৩০ পারা পবিত্র কুরআন স্বীয় বক্ষে ধারণ করে রাখেন, তাঁরা প্রকারান্তরে মহান আল্লাহর পবিত্র বাণী,“নিশ্চয় আমিই কুরআন নাযিল করেছি এবং আমি অবশ্যই তার হিফাযত করবো”(সূরা-আল-হিজর:০৯)-এর বাস্তব উদাহরণ-উপায়।সুতরাং এ সব কুরআনের বাহক হাফেযদের সাহায্য,সহযোগিতা ও সম্মান প্রদর্শন অবশ্যই খোদ মহান আল্লাহকে সম্মানের নামান্তর এবং বিরাট সওয়াবের কাজ বটে।
মোটকথা, আমাদের মসজিদ সরকারী হোক বা পাড়া-মহল্লার জনগণের দ্বারা প্রতিষ্ঠিত ও পরিচালিত হোক ; উপরিউক্ত বিস্তারিত ব্যাখ্যার আলোকে আমরা সম্ভাব্য যে কোন ফান্ড থেকেই মাহে রমযানের নিয়োগপ্রাপ্ত হাফেযদের সম্মানী প্রদান করতে পারি। আর ‘হাদিয়া’ শিরোনামে এবং খুশি খুশি যা উসূল হয়, তা কালেকশন করে যাদের কথা বলে নেব, তাঁদেরই বন্টণ করে দেব। এটাই সর্বোত্তম কর্মপন্থা এবং বিরাট সওয়াবের কাজ বলে গণ্য। মহান আল্লাহ আমাদের উক্ত সহীহ নির্দেশনা সামনে রেখে সংশয় ও সন্দেহমুক্তভাবে মসজিদ, ইমাম,মুয়াযযেন,খাদেম ও তারাবীহ এর সম্মানীত হাফেযদের সেবা ও সম্মান করার তাওফীক দান করুন। আমীন!
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।