পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
স্টালিন সরকার : ২০১৫ সালের জানুয়ারি মাসে ঢাকায় গরুর গোশতের কেজি ছিল ২৮০টাকা। ভারতীয় গরুর সরবরাহ কম এবং লাগাতার অবরোধের অজুহাতে গোশত ব্যবসায়ীরা একলাফে গোশতের দাম কেজি প্রতি ১০০ টাকা বাড়িয়ে দেন। সে দাম আর কমেনি। হঠাৎ করে গত সপ্তাহে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র সাঈদ খোকন রমজান উপলক্ষে গরুর গোশতের দাম পুনর্নির্ধারণ করে দেন। ৪০ টাকা বাড়িয়ে গরুর গোশত কেজি ৪২০ টাকা, মহিষ ৪০০ টাকা, খাসি ৫৭০ টাকা এবং ভেড়া-বকরির গোশত ৪৭০ টাকা। দাম নির্ধারণের সময় বলা হয়, এককেজি গোশতে ক্রেতাকে হাড় নিতে হবে ২শ’ গ্রাম। এক কেজি গোশতে ২শ’ গ্রাম হাড় দিলে ২শ’ গ্রাম অখাদ্য চর্বিও গছায় কসাইরা। আর ওজনে একশ’ গ্রাম কম দেবেই। গোশত টেকে ৫শ’ গ্রাম। তাহলে মেয়রের বেঁধে দেয়া মূল্যেই প্রকৃত অর্থে এক কেজি গরুর গোশতের দাম পড়ে ৮৪০ টাকা। প্রশ্ন হলো রমজানে গোশতের দাম নির্ধারণ করে দেয়ার মেয়র কে? নাকি তিনি ঢাকায় নিজেই মেট্রোপলিটন সরকার গঠন করলেন? তার কি আইনি ক্ষমতা আছে রমজানে পণ্যমূল্য বৃদ্ধির? নাকি প্রহসনের নির্বাচনে জনগণ ভোট না দেয়ার প্রতিশোধ নিতে কসাইদের কাছে বাট্টা নিয়ে ঢাকাবাসীকে শাস্তি দিচ্ছেন মেয়র খোকন? জনগণতো ভোট দিতে গিয়েছিল; কিন্তু আইনশৃংখলা বাহিনীর সহায়তায় ছাত্রলীগ-যুবলীগ সকাল ১০টার মধ্যেই ভোট সম্পন্ন করেছে। এ জন্য ভোটারদের দোষ দেয়া যায়! যারা রাষ্ট্রের সম্পদ লুট করেন তাদের কাছে গরুর গোশতের কেজি এক হাজার টাকা হলেও সমস্যা নেই। কিন্তু সাধারণ মানুষ যারা নির্ধারিত বেতনে চাকরি করেন এবং নির্দিষ্ট আয়ে সংসার পরিচালনা করেন তারা কি রমজানে গরুর গোশত খেতে পারবেন? ভোক্তা স্বার্থ নিয়ে কাজ করা কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান বলেছেন, ‘এক মাস আগে ৩৮০ টাকা দামের গরুর গোশতের কেজি ৪২০ টাকা নির্ধারণ করাটা অযৌক্তিক।’
রমজান সিয়াম সাধনার মাস। আল্লাহর সন্তুষ্টি আদায় এবং রোজাদারদের কথা চিন্তা করে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে ব্যবসায়ীরা এ মাসে কম মুনাফায় পণ্য বিক্রি করেন। বাংলাদেশের চিত্র একেবারেই উল্টো। রমজান আসার আগেই মুনাফাখোর ব্যবসায়ীরা প্রতিটি পণ্যের মূল্য বাড়িয়ে দেয়। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। রমজানের আগেই ছোলা, ডাল, পিঁয়াজ, রসুন, মসুর ডাল, চিনিসহ কয়েকটি পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি করা হয়েছে। অথচ মুনাফাখোর ব্যবসায়ীদের সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের নেতারা দাবি করছেন রমজানে পণ্যমূল্য বৃদ্ধি হবে না। রোজা শুরুর আগে পণ্যমূল্য বৃদ্ধি করলে রমজানে বৃদ্ধির প্রয়োজন পড়ে কি? রাষ্ট্রীয় সম্পদ লুট, ঘুষ-দুর্নীতি, চাঁদাবাজী, দখলদারিত্ব, অসাধু ব্যবসায়ী, সরকারি নানামুখী সুবিধা এবং বৈধ-অবৈধ পথে অতিরিক্ত অর্থ উপার্জনকারী মানুষের সংখ্যা দেশে নেহাত কম নয়। রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশের চাকরিজীবীরা যেমন নির্ধারিত আয়ে সংসার চালান, তেমনি শ্রমিক, কৃষক, গার্মেন্টসকর্মীসহ স্বল্প আয়ের মানুষের সংখ্যাই দেশে বেশি। রমজানে এরাই রোজাদার। রমজানে সারাদিন রোজা রাখতে অভ্যস্ত ভোক্তা পর্যায়ের এসব মানুষের অধিকাংশেরই বাড়তি আয় বা অতিরিক্ত খরচ করার মতো সংগতি নেই। যার জন্য রমজানে দ্রব্যমূল্য স্বাভাবিক রাখার জন্য ভোক্তাদের পক্ষ থেকে সব সময়ই দাবি ওঠে। রমজানে দেশের কিছু অসাধু বড় ব্যবসায়ী এবং এক শ্রেণির মুনাফালোভী মৌসুমী ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট করে পণ্যের দাম বাড়িয়ে দেয়। সরকারের নজরদারী না থাকায় এবারও সেটাই ঘটেছে। তবে জনগণের ভোটে নির্বাচিত সরকারের জনগণের প্রতি দায়বদ্ধতা থাকলে তারা সিন্ডিকেট ভেঙে দেন। পাশাপাশি রাষ্ট্রীয়ভাবে প্রয়োজনীয় পণ্য আমদানী করে বাজার স্থিতিশীল রাখেন। ’৯০ দশকের আগে টিসিবি নামে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান পণ্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখার লক্ষ্যে পণ্য আমদানী করে খোলা বাজারে বিক্রী করে বাজার নিয়ন্ত্রণে সক্রিয় ছিল। গত ২৫ বছর থেকে টিসিবি কার্যত ‘কাজীর গরু কেতাবে আছে গোয়ালে নেই’ অবস্থা। খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানটি। রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানটিকে ঘুম পাড়িয়ে রেখে মুনাফাখোর ব্যবসায়ীদের যেন সুযোগ করে দেয়া হচ্ছে ভোক্তাদের পকেট কাটার। গণতান্ত্রিক দেশে গণমানুষের দুঃখ কষ্ট দেখার যেন কেউ নেই।
পবিত্র রমজান মাসে নিত্যপণ্যের মূল্যের ঊর্ধ্বগতির লাগাম টেনে ধরতে স্বল্প আয়ের মানুষের সুবিধার্থে সীমিত পর্যায়ে সাশ্রয়ী মূল্যে পণ্য বিক্রি শুরু করেছে সরকারের বিপণন সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি)। ৩০ মে থেকে রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে ১৭৯টি ট্রাকে পণ্য বিক্রি শুরু করেছে সংস্থাটি। ১৬ কোটি মানুষের দেশে ১৭৯ টি ট্রাকে প্রতিদিন টিসিবি গরীব মানুষের কাছে পণ্য বিক্রী করবে ন্যায্যমূল্যে। সরকার ঘোষণা দিয়েছে পুরো রমজান মাস টিসিবি’র পণ্য বিক্রয় কার্যক্রম চলবে। তারা বিক্রী করছে দেশি চিনি, ছোলা, মসুর ডাল, সয়াবিন তেল ও খেজুর। রাজধানী ঢাকায় ৩২টি, বন্দরনগরী চট্টগ্রামে ১০টি, প্রতিটি বিভাগীয় শহরে ৫টি ও জেলা সদরে ২টি করে ট্রাকে এসব পণ্য বিক্রি শুরু হয়েছে। প্রতিটি ট্রাকে ৩শ’ থেকে ৪শ’ কেজি চিনি, দেড়শ’ থেকে ২শ’ কেজি ডাল, ৩শ’ থেকে ৪শ’ লিটার তেল, ৪ শ’ থেকে ৮শ’ কেজি ছোলা ও ৫০ কেজি করে খেজুর বিক্রী হচ্ছে। একজন ক্রেতা একসঙ্গে সর্বোচ্চ ৪ কেজি চিনি, ২ কেজি মসুর ডাল, ৫ লিটার সয়াবিন তেল, ৫ কেজি ছোলা ও ১ কেজি খেজুর কিনতে পারবেন। প্রতি কেজি চিনি ৪৮ টাকা, মসুর ডাল ৯০ টাকা, ছোলা ৭০ টাকা, খেজুর ৯০ টাকা ও সয়াবিন তেল প্রতি লিটার ৮০ টাকা দরে বিক্রি করা হচ্ছে। প্রশ্ন হলো ১৬ কোটি মানুষের দেশে ১৭৯ টি ট্রাকে ন্যায্য মূল্যের পণ্য বিক্রী ‘সাগরে শিশির বিন্দু’ নয় কি? রমজানে টিসিবি রাজধানী, বিভাগ, জেলা শহরে পণ্য বিক্রী করবে; উপজেলা শহর ও গ্রামীণ হাটবাজারগুলোতে নয় কেন? গ্রামের কৃষক, ক্ষেতমজুর ও শ্রমিকরা কি স্বল্প আয়ের মানুষ নয়? তাদের ন্যায্যমূল্যে পণ্য ক্রয়ের অধিকার নেই? রমজানে সবচেয়ে প্রয়োজনীয় পণ্য খেজুর, সয়াবিন কি কৃষকরা উৎপাদন করতে পারেন? আর চিনি, মসুর ডাল, ছোলা কয়টি জেলায় উৎপাদন হয়? টিসিবি’র সুবিধা গ্রামের প্রান্তিক মানুষগুলোর জন্য নয় কেন?
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।