পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
ইনকিলাব ডেস্ক : আশুলিয়ায় কমার্স ব্যাংকের ডাকাতির ঘটনায় গতকাল ৬ জনের ফাঁসির আদেশ দিয়েছেন আদালত। এছাড়া নেত্রকোনায় শিশু অপহরণের ঘটনায় ৩ জনের ও বরগুনায় শিশুহত্যার ঘটনায় ১ জনের মৃত্যুদ-ের আদেশ দেয়া হয়েছে।
৬ জঙ্গির ফাঁসির রায়
কোর্ট রিপোর্টার জানান, ঢাকার আশুলিয়ায় কমার্স ব্যাংকে ডাকাত দলের হানায় আটজন নিহতের ঘটনায় ছয় জনকে মৃত্যুদ- দিয়েছেন আদালত। এছাড়া একজনকে যাবজ্জীবন কারাদ- দেয়া হয়েছে। পাশাপাশি তিন বছর কারাদ- ও জরিমানা হয়েছে দু’জনের। ১১ আসামির মধ্যে খালাস পেয়েছেন দু’জন। গতকাল ঢাকার জেলা ও দায়রা জজ এসএম কুদ্দুস জামান এ মামলার রায় ঘোষণা করেন।
মৃত্যুদ-প্রাপ্তরা হলেন- বোরহান উদ্দিন, সাইফুল ওরফে আল আমিন, মাহফুজুল ইসলাম ওরফে সুমন ওরফে জামিল, জসিমউদ্দিন, মিন্টু প্রধান ও পলাশ ওরফে সোহেল রানা। এদের মধ্যে শুধু পলাশ পলাতক আছেন।
মাহফুজুল আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের শীর্ষ পর্যায়ের নেতা এবং তার নেতৃত্বে ব্যাংক ডাকাতির ওই ঘটনা ঘটে বলে গ্রেপ্তারদের বরাত দিয়ে জানায় পুলিশ। মৃত্যুদ-প্রাপ্ত অন্যদের মধ্যে মিন্টু প্রধান বাদে বাকিরা জেএমবির সদস্য। মৃত্যুদ-প্রাপ্তদের সবাইকে ১০ হাজার টাকা করে জরিমানা করা হয়েছে। যাবজ্জীবন কারাদ- হয়েছে উকিল হাসানের। তাকে পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে দুই মাসের কারাদ-ের আদেশ হয়েছে।
এছাড়া আব্দুল বাতেন ও শাহজাহান জমাদারের তিন বছর কারাদ- এবং তিন হাজার টাকা করে জরিমানা করা হয়েছে। জরিমানা না দিলে আরও এক মাস কারাভোগ করতে হবে তাদের। মামলায় খালাস পেয়েছেন বাবুল সরদার ও মোজাম্মেল হক।
গত বছর ২১ এপ্রিল দুপুরে সাভারের আশুলিয়ার কাঠগড়া বাজারে কমার্স ব্যাংকের শাখা কার্যালয়ে হানা দেয় ডাকাত দল। সেদিন গুলি করে ও বোমা ছুড়ে হত্যা করা হয় ব্যাংকের ব্যবস্থাপক অলিউল্লাহসহ সাতজনকে, আহত একজন পরে মারা যান।
জঙ্গি অর্থায়নে তহবিল গঠনের জন্য এ ডাকাতি বলে গ্রেপ্তারদের জবানবন্দিতে উঠে আসে। গ্রেপ্তার ১০ আসামির মধ্যে জেএমবি সাত সদস্য দোষ স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন।
রায় ঘোষণায় বিচারক বলেন, ‘এই ঘটনাটি শুধু প্রকাশ্য দিনের আলোয় ডাকতি ছিল না বরং এটা ছিল সুপরিকল্পিতভাবে আটজন বেসামরিক নাগরিককে ঠা-া মাথায় হত্যা। এর মধ্যে চারজনকে ব্যাংক কার্যালয়ের মধ্যেই কোনো প্রকার উস্কানি বা প্রতিরোধ ছাড়া হত্যা করা হয়।” বিচার চলাকালে পলাশ ছাড়া অন্যদের কাঠগড়ায় দেখার অভিজ্ঞতা তুলে ধরে তিনি বলেন, “আমি তাদের চেহারা, অভিব্যক্তিতে, আচরণে অনুশোচনার চিহ্ন দেখিনি। পরিস্থিতির চাপে পড়ে তারা এ ঘটনা ঘটায়নি। সে কারণে সমস্ত সাক্ষী-সাবুদ ও পরিপাঠ্য বিবেচনা করে তাদেরকে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়াই উপযুক্ত মনে করছি।” অমানবিক, নিষ্ঠুর ও ক্রুড় কায়দায় আটজন নির্দোষ মানুষকে হত্যার জন্য একটি জরুরি নজির সৃষ্টি দরকার। অন্যদের জন্য একটি দৃষ্টান্ত স্থাপনে এ রকম শাস্তি জরুরি।” মামলার ৯৭ জন সাক্ষীর মধ্যে ৬৪ জন আদালতে সাক্ষ্য দিয়েছেন। রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপিল করা হবে বলে আসামি পক্ষের আইনজীবী ফারুক আহমেদ জানান।
নেত্রকোনায় তিন জনের মৃত্যুদ-াদেশ
নেত্রকোনা জেলা সংবাদদাতা জানান, মুক্তিপণের দাবিতে ১২ বছরের শিশুকে অপহরণ ও টুকরো টুকরো করে হত্যার পর নদীর পাড়ে লাশ গুম করার দায়ে মামলার তিন আসামিকে মৃত্যুদ- ও প্রত্যেককে ৫০ জাহার টাকা করে জরিমানা করেছে আদালত। নেত্রকোনার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইবুনাল আদালতের বিচারক ড. এ.কে.এম আবুল কাশেম গতকাল মঙ্গলবার বেলা ১টার দিকে আদালতে পিন পতন নীরবতার মধ্যে তিনজন অভিযুক্ত আসামির মধ্যে ২ জনের উপস্থিতিতে এ রায় ঘোষণা করেন।
মৃত্যুদ-প্রাপ্ত আসামিরা হচ্ছে- কেন্দুয়া উপজেলার চিটুয়া নওপাড়া গ্রামের কাঞ্চন খানের পুত্র শামীম খান, আব্দুস সালামের পুত্র মো. সোহাগ এবং তারাকান্দি রাজিবপুর গ্রামের সুলতু মিয়ার পুত্র শরিফুজ্জামান ওরফে হুমায়ুন। এর মধ্যে হুমায়ুন জামিনে বের হয়ে গিয়ে পালিয়ে যায়।
আদালত সূত্রে মামলার সংক্ষিপ্ত বিবরণে জানা যায়, নেত্রকোনা জেলার কেন্দুয়া উপজেলার চিটুয়া নওপাড়া গ্রামের মো. ফারুক ভূঁইয়ার শিশুপুত্র শুক্কুর আলী (১২) বিগত ২০১৪ সনের ৯ জুন বিকালে মায়ের জন্য স্থানীয় বাজার থেকে ওষুধ আনতে গেলে উল্লিখিত আসামিরা তাকে অপহরণ করে। তিন দিন অনেক স্থানে খোঁজাখুঁজির পরও পুত্রের কোনো খোঁজ না পাওয়ায় পিতা ১২ জুন কেন্দুয়া থানায় একটি জিডি করেন। ২৫ জুন অপহরণকারীরা শুক্কুর আলীর পিতা ফারুকের মোবাইলে ফোন করে ৬ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে। অপহরণকারীদের কথামতো মুক্তিপণের টাকা সময়মতো দিতে না পরায় তারা অপহৃত শুক্কুর আলীকে নৃসংসভাবে হত্যা করে লাশ টুকরো টুকরো করে বস্তায় ভরে স্থানীয় সুতি নদী পাড়ে মাটির নিচে চাপা দিয়ে রাখে। পুলিশ মোবাইল ট্র্যাকিংয়ের মাধ্যমে আসামিদের অবস্থান শনাক্ত করে তাদেরকে আটক করে। আটককৃতদের ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে তারা শিশু শুক্কুর আলীকে মুক্তিপণের জন্য অপহরণ ও হত্যা করে লাশ গুম করার কথা স্বীকার করে। আসামিদের স্বীকারোক্তি মোতাবেক পুলিশ ১ জুলাই সুতি নদী পাড়ের মাটির নিচ থেকে শুক্কুর আলীর খ- বিখ- লাশ উদ্ধার করে। পুলিশ দীর্ঘ তদন্ত শেষে ২০১৬ সালের ২৩ মার্চ আদালতে আসামিদের বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করে। বিজ্ঞ বিচারক ১৮ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণান্তে আসামিদের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হওয়ায় উপরোক্ত রায় প্রদান করেন। রাষ্ট্রপক্ষে মামলা পরিচালনা করেন পিপি এডভোকেট গোলাম মোহাম্মদ খান পাঠান বিমল এবং আসামি পক্ষে মামলা পরিচালনা করেন এডভোকেট মানবেন্দ্র বিশ্বাস এবং খাদেমুল ইসলাম।
শিশু রবিউল হত্যা : মিরাজের ফাঁসির আদেশ
বরগুনা জেলা সংবাদদাতা জানান, বরগুনার আলোচিত শিশু মো. রবিউল আউয়াল হত্যার দায়ে আসামি মিরাজকে ফাঁসির আদেশ দিয়েছে আদালত। মঙ্গলবার দুপুর ১২টার দিকে রায় ঘোষণা করেন বরগুনার অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মোহাম্মদ আবু তাহের। রায় ঘোষণার পর আসামি মিরাজকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। রায়ে ৩০১ ও ৩০২ ধারায় মিরাজকে ফাঁসির আদেশ এবং ২০ লাখ টাকা জরিমানা এবং ২০১-এর ৭ ধারায় সাত বছরের সশ্রম কারাদ- এবং ১০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। এই জরিমানার টাকা মিরাজের মা-বাবা, ভাই-বোন এবং নানীর স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তি থেকে আদায় করে রবিউলের বাবাকে প্রদান করতে বলা হয়েছে।
নয়জনের যাবজ্জীবন
বিশেষ সংবাদদাতা খুলনা জানান, খুলনার কয়রা উপজেলার একটি মৎস্য ঘেরের কর্মচারী আবু বক্কর সিদ্দিক ওরফে খোকন মোড়লকে হত্যার অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হওয়া ৯ আসামির প্রত্যেককে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদ-, ১০ হাজার টাকা জরিমানা আনাদায়ে আরো একবছর করে সশ্রম কারাদ-াদেশ দিয়েছে আদালত। গতকাল মঙ্গলবার খুলনার জননিরাপত্তা বিঘœকারী অপরাধ দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক এস এম সোলায়মান এ রায় ঘোষণা করেছেন। রায় ঘোষণার সময় দ-প্রাপ্ত আসামিরা সবাই আদালতের কাঠগড়ায় উপস্থিত ছিলেন।
দ-প্রাপ্তরা হলেনÑকয়রা উপজেলার বায়লা হারানিয়া গ্রামের মৃত ছোরমান গাজীর ছেলে কামরুল গাজী (৩৪) ও মৃত কফিল উদ্দিন সানার ছেলে জুলফিকার ওরফে ফাকু (২৮), পাইকগাছা উপজেলার মৌখালী গ্রামের বাবর আলী সানা ওরফে বাবু সানার ছেলে হুমায়ূন সানা (৩২), কয়রা উপজেলার অর্জুনপুর গ্রামের জব্বার মোড়লের ছেলে সালাম ওরফে ছাকিম মোড়ল (৪০), একই উপজেলার শ্রীফলতলা গ্রামের অজেদ সানার ছেলে বায়েজিদ সানা (৩৭), একই গ্রামের আমজাদ সানার ছেলে আলমগীর সানা (৩২), মৃত মাজেদ সানার ছেলে রুস্তম সানা (৩৪), মৃত নুর আলী সানার ছেলে হবি সানা (৩৮) ও অহেদ আলী সানার ছেলে মফিজুল ওরফে মফি সানা (৩৮)।
স্বামীর ১০ বছর সশ্রম কারাদ-
এদিকে, খুলনা মহানগরীর ৪নং ছোট মির্জাপুর রোডের একটি ভাড়া বাসায় স্ত্রী মুন্নী ওরফে বুড়ী (৩০) হত্যার অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হওয়ায় স্বামী জহিরুল ইসলাম ওরফে সেলিম রেজা ওরফে রনি ওরফে সাগরকে ১০বছর সশ্রম কারাদ-, ৫ হাজার টাকা জরিমানা আনাদায়ে আরো ৬ মাসের সশ্রম কারাদ-াদেশ দিয়েছে আদালত। গতকাল মঙ্গলবার খুলনা মহানগর দায়রা জজ আদালতের বিচারক অরূপ কুমার গোস্বামী এরায় ঘোষণা করেন। রায় ঘোষণার সময় দ-প্রাপ্ত সাগর আদালতের কাঠড়গায় উপস্থিত ছিল।
বগুড়ায় হত্যা মামলায় ৩
জনের যাবজ্জীবন
বগুড়া অফিস জানান, বগুড়ায় এক হত্যা মামলায় ৩ জনের যাবজ্জীবন কারাদ-াদেশ, ১০ হাজার টাকা করে জরিমানা ও অনাদায়ে আরো ২ বছরের সশ্রম কারাদ-াদেশ হয়েছে। বগুড়া জেলা ও দায়ারা জজ আদালত গতকাল মঙ্গলবার এ রায় প্রদান করেন। যাবজ্জীবন কারাদ-াদেশ প্রাপ্তরা হলো- মোমিন ওরফে বাবু ম-ল ওরফে পিচ্চি বাবু, রাফিউল ইসলাম রাফি ও মো. শাহিন।
মামলা সূুত্রে জানা যায়, ২০১০ সালের ৬ এপ্রিল রাতে বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলা দেউলি ইউনিয়েনের মেঘাখদ্দর গ্রামের একটি ভুট্টা ক্ষেতে শিউলি বেগম নামে এক মহিলার হাত-পা বাঁধা লাশ পাওয়া যায়। পরের দিন পুলিশ সেখান থেকে লাশ উদ্ধার করে। প্রথমে অজ্ঞাত লাশ হিসাবে হত্যার রহস্য উন্মাচন না হওয়ায় চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল হয়। পরে উপজেলার মহব্বত নন্দীপুর এলাকার বাবু ম-ল ওরফে পিচ্চি বাবু গ্রেফতার হলে তার স্বীকারোক্তি অনুযায়ী ওই হত্যা মামলার রহস্য উন্মোচন হয়। মামলায় পিচ্চি বাবু ছাড়াও আরেক আসামি রাফি স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দেয়। অসামাজিক কাজে ঢাকা থেকে বগুড়ার শিবগঞ্জে নিয়ে এসে শাপলা নামের ওই মহিলাকে হত্যা করা হয়েছিল।
গাইবান্ধায় মা’কে হত্যার দায়ে ছেলের যাবজ্জীবন
গাইবান্ধা জেলা সংবাদদাতা জানান, মাকে হত্যার দায়ে গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার পশ্চিম সুবর্ণদহ গ্রামের শহিদুল ইসলামকে (৪৫) যাবজ্জীবন কারাদ- দিয়েছেন আদালত। একই সঙ্গে তাকে আট হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরো ছয় মাসের কারাদ-ের আদেশ দেয়া হয়। দ-প্রাপ্ত শহিদুল ইসলাম ওই গ্রামের ভাদু শেখের ছেলে। আজ মঙ্গলবার দুপুরে গাইবান্ধা জেলা ও দায়রা জজ রাশেদা সুলতানা এ রায় দেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।